somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরূপ সুন্দর সাজেক ভ্যালি যেনো শিল্পীর নিপুণ হাতে আঁকা ছবি

২৫ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সাজেক ভ্যালির কিছু ছবি আমার হাতে তোলা







চারিদিকে সারি সারি পাহাড় আর মাঝে মাঝে সাদা তুলোর মত মেঘমালা। যেন সবুজের রাজ্যে সাদা মেঘের হ্রদের পাড়ে দাড়িয়ে আছেন আপনি। নিশ্চয়ই ভাবছেন স্বপ্নের মত সুন্দর এরকম দৃশ্য বাস্তবে আদৌ কি দেখা যাবে? আর দেখা গেলেও হয়ত যেতে হবে বহুদূরে কোন অজানা দেশে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হল আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেই রয়েছে এরকম এক মেঘপুরী যার নাম সাজেক ভ্যালী।

















সাজেক বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত। সাজেক থেকে ভারতের মিজোরাম মাত্র আট কিলোমিটার দূরে। সাজেকের চারপাশের উঁচু উঁচু পাহাড়গুলো পড়েছে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই। তবে ঢাকা থেকে সাজেক যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে ঢাকা থেকে ২৬১ কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি শহরে।









যেভাবে যাবেন খাগড়াছড়ি

সাজেকের অবস্থান রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় হলে খাগড়াছড়ি শহর থেকেই সেখানে যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। তাই সাজেক যেতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে চলে যেতে হবে খাগড়াছড়ি শহরে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি রুটে শ্যামালী, হানিফ, এস আলম, সৌদিয়া ও শান্তি পরিবহনের বাস চলাচল করে। গাবতলী, কলাবাগানসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে পরিবহণগুলোর কাউন্টার। ঢাকা থেকে বাস ছেড়ে চট্রগ্রাম রোড হয়ে কুমিল্লা, ফেনী পার হয়ে চট্রগ্রামের মিরেসরাই হয়ে খাগড়াছড়ি শহরে পৌছায়। এতে সময় লাগে ৮ ঘণ্টার মত।









খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক

আপনাকে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে যেতে হবে খোলা জীপে করে। যা চান্দের গাড়ি নামেই পরিচিত। দুই দিনের জন্য ভাড়া করলে আপনাকে গুনতে হবে ৭০০০-৯০০০ টাকা। চান্দের গাড়িতে আসন সংখ্যা ১২টি। সাজেক থেকে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে দীঘিনালায়। দীঘিনালা নেমে আধা ঘন্টার জন্য ঘুরে আসতে পারেন হাজাছড়া ঝর্ণা থেকে। সাথে সেরে নিতে পারেন গোসলটাও। কারণ সাজেকে পানির বড্ড অভাব। তবে চিন্তার কিছু নেই গোসল ও অন্যান্য কাজের জন্য দরকারি পানি প্রতিদিন ট্রাকে করে পৌঁছে যায় সাজেকে।







তবে পানি ব্যবহারে সাজেকে আপনাকে মিতব্যয়ী হতে হবে। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালার দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। দীঘিনালায় একটি সেনানিবাস রয়েছে। এরপর বাকি রাস্তাটুকু আপনাকে যেতে হবে সামরিক বাহিনীর এসকোর্টে। সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনী এই পদক্ষেপ নিয়েছে। দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকোর্ট শুরু হয় সকাল ১০ টা থেকে ১১টার মধ্যে। তাই ঐ সময়ের আগেই আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায়। নইলে একবার সকালের এসকোর্ট মিস করলে আবার এসকোর্টে পেতে অপেক্ষা করতে হবে বিকেল অবধি।

দীঘিনালা থেকে প্রথমে যেতে বাগাইহাট, তারপর মাচালং হাট হয়ে সরাসরি পৌঁছে যাবেন সাজেকে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যেতে মোট সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘন্টার মত। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তাধরে চলা এই ছোট জার্নিটি সাজেক ট্যুরের অন্যতম আকর্ষণ। চারদিকে শুধু পাহাড় আর হরিতের সমারোহ আপনাকে ভুলিয়ে দেবে পথের ক্লান্তি।

















সাজেকে থাকা খাওয়া

সাজকে পৌছাতে পৌছাতে দুপুর একটার মত বেজে যায় তাই পৌঁছানোর সাথে সাথে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে রাতে থাকার কটেজ। বিভিন্ন দামের ও মানের কটেজের অভাব নেই সাজেকে। হানিমুনে গেলে যেমন আলিসান কটেজে থাকতে পারবেন আবার খরচ কমাতে চাইলে ভাল মানের সাশ্রয়ী কটেজেরও অভাব নেই। জনপ্রতি ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০০ টাকা অবধি কটেজগুলোর এক রাতের খরচ।

সাজেকে আদিবাসী ও বাঙ্গালি দুই রকমের হোটেলে খাবার ব্যবস্থা আছে। ইচ্ছা করলে আদিবাসী হোটেলগুলো থেকে ব্যাম্বু চিকেনের স্বাদ নিয়ে আসতে পারেন । তবে যারা হালাল খাবার খুজছেন তাদের হয় খাগড়াছড়ি থেকে হালালভাবে জবাই করে মুরগি নিয়ে যেতে হবে না হয় নিজেদের জবাই করে দিতে হবে। তবে বাঙালি হোটেল খাওয়া দাওয়া করলে সে চিন্তা আপনাকে করতে হবেনা। তবে মুরগি ছাড়া ডিম, ডাল, ভর্তা সহ অন্যান্য ননভেজ খাবারও পাওয়া যায় সাজেকে। তবে যেখানেই খান না কেন আপনাকে আগে থেকে অবশ্যই অর্ডার করে রাখতে হবে খাবারের কথা। বিশেষ করে সাজকে পৌঁছানোর দিন দুপুরের খাবারাটা খাগড়াছড়ি থেকেই অর্ডার করে গেলে সুবিধে হয়। আপনার জীপ চালকেরই মাধ্যমেই তার পরিচিত কোন দোকানে খাবারের অর্ডার করিয়ে নিতে পারেন। আরেকটি কথা সাজেকে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সবকিছু চলে সোলারে পাওয়ারে। তাই আগে থেকেই মোবাইল ফুলচার্জ দিয়ে নিয়ে যাওয়া ভাল। সাথে পাওয়ার ব্যাঙ্ক থাকলে তো সোনায় সোহাগা। সাজেক রবি ও টেলিটক ছাড়া অন্য অপারেটরর নেটওয়ার্ক নেই। তাই সাথে নিতে হবে এই দুই অপারেটরের যেকোন একটি সিম।









সাজেক বিলাস করবেন যেভাবে

সাজেক পৌঁছে খাওয়া দাওয়া করার পর দীর্ঘ যাত্রার শেষে আপনাকে একটু বিশ্রাম নিতেই হবে। এছাড়া সাজেকের কাঠফাটা দুপুরের রোদে না ঘোরাঘুরি করে রোদ পড়ার অপেক্ষা করাই ভাল। বিকেলে জীপে করে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সাজেক ভ্যালির আরও ভেতরে। সেখানে একটু উঁচু টিলায় উঠলেই উপভোগ করতে পারবেন সূর্যাস্ত। সাজেকের সন্ধ্যা নামে অপরূপ এক সৌন্দর্য নিয়ে। দেখবেন মেঘমুক্ত নীলাকাশ একটু একটু করে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে আর মিটিমিটি করে জ্বলে উঠছে একটি দুটি করে তারা। দেখবেন অল্পকিছুক্ষণের মধ্যে একটি দুটি থেকে সহস্র তারা আপনার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠবে। হয়ত আপনি এরকম তারা ভরা আকাশ জীবনে কখনও দেখেন নি।

সন্ধ্যার তারাভরা আকাশ দেখতে দেখতে মৃদুমন্দ হাওয়ায় চায়ের কাপে চুমুক দিলে আপনার হৃদয়ে যে অনুভূতি আসবে সেটাই হতে পারে আপনার সাজেক ভ্রমণের সবচেয়ে বড় আনন্দ। যারা তারা দেখতে ভালবাসেন তাদের জন্য সাজেক খুবই আদর্শ একটি জায়গা। এমনকি যারা এখনও মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ দেখেননি তারাও সাজেক ভ্যালিতে এসে জীবনে প্রথমবারের মত দেখা পেতে পারেন মহাবিশ্বে আমাদের আশ্রয়স্থল আকাশগঙ্গার।

রাতে চাইলে বারবিকিউ পার্টি করতে পারেন। সাথে চলবে জমপেশ আড্ডা। তবে এত আনন্দের মাঝে মশার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে ভুলবেন না। পার্বত্য এলাকায় মশা একটি বড় সমস্যা। একটু অসতর্ক হলে আক্রান্ত হতে পারেন ম্যালেরিয়ায়। ভোরে সূর্যোদয় দেখতে চাইলে হ্যালিপ্যাডে চলে যাবেন অবশ্যই। সেজন্য উঠতে হবে খুব ভোরে আর চলে যেতে হবে এক বা দুই নম্বর হ্যালিপ্যাডে। সাজেকে সূর্যোদয়ের সময় সোনালি আভা সাদা মেঘের উপর যখন ঠিকরে পড়ে তখন আসাধারণ এক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

সচরাচর সাজেক একরাতের বেশি থাকার প্ল্যান নিয়ে কেউ যায়না। তবে বেশি ভাল লেগে গেলে থেকে যেতে পারেন যতদিন খুশি। ফেরার দিনও আপনাকে এসকোর্ট ধরতে হবে। সাজেকে থেকে এগারটার দিকে শুরু হয় এসকোর্ট। খাগড়াছড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর হয়ে যাবে। তবে চাইলে দুপুরে বেশি সময় নষ্ট না করে ঘুরে আসতে পারেন আলুটিলা ও শহরের আশে পাশের দর্শনীয় স্থানগুলো থেকে।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৩
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×