somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালপড়ী রাজকন্যা….

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাপি আমাকে এইবার জন্মদিনে কি গিফট দিবা?
-তুমি কি গিফট চাও মামনি ?
-কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঝিনুক উত্তর দিলো একটি লাল রঙের শাড়ী দিবা?
-লাল শাড়ি ? কেনরে? বিয়ে করবি নাকি?
– ধুর ! কি বল এসব? আমি ওসব বিয়ে টিয়ে করবনা। এমনি এইবার ইচ্ছে করলো লাল শাড়ি পরে তোমার সাথে ঘুরতে বের হবো।
-তাই? জোরে হেসে উঠলেন কল্যান সাহেব। আচ্ছা ঠিক আছে। দেব।
– ঝিনুকও মুচকি হেসে বাবা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। বাবা মেয়ের এই ভালবাসার মুহূর্ত গুলো এই বাড়ির নিত্যসঙ্গী। ঝিনুকের কাছে তার বাবাই সমস্ত পৃথিবী। বাবা ছাড়া একটা মুহূর্ত থাকতে পারেনা ঝিনুক। শুধুমাত্র বাবার জন্যই অনিক কে জীবন থেকে মুছে ফেলেছে ঝিনুক। যাকে ছাড়া একটা দিনও কাটত না, সেই অনিক আজ ঝিনুকের জীবনের বাইরে। এত বড় আত্মত্যাগ শুধুমাত্র বাবার খুশির জন্যই। ঝিনুক জন্মদিনে লাল শাড়ি চেয়েছে শুধুমাত্র অনিকের জন্য। ঝিনুক জানে বছরে এই একটা দিন অনিক তাকে দেখতে আসবেই। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন সেদিন অনিক আসবে আর লুকিয়ে লুকিয়ে দূর থেকে ঝিনুককে দেখবে। ঝিনুক নিজেও খুঁজে পায়না ওকে। হাসির ছলে সব দিকে চোখ বুলায় ঝিনুক। কিন্তু গত ৩ বছরে একটি বারো চোখে পড়েনি অনিক। কিন্তু সে জানে অনিক তাকে ঠিক দেখছে। লাল রঙের শাড়িতে ঝিনুক কে দেখার জন্য কতই না পাগলামি করতো অনিক। একদিন তো বৃষ্টি তে ভিজে পাক্কা ৩ ঘন্টা কলেগের সামনে দাড়িয়ে ছিল। সেদিন ঝিনুকের কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠান ছিলো। তখন ঝিনুকের সাথে কোনো সম্পর্ক হয়নি তার। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত প্রতিদিন।

এইভাবে ৩ বছর ঝিনুক কে শুধু লুকিয়ে লুকিয়ে দেখাই ছিল অনিকের কাছে মিষ্টি একটা অনুভুতি। ঝিনুক বেপারটা খেয়াল করত কিন্তু এতটা পাত্তা দিতোনা। প্রেম, ভালবাসা কি জিনিস সেটা বুঝতই না ঝিনুক। ঝিনুক শুধু ১ জনকেই ভালবাসত। সেটা তার বাবা।

কিন্তু দিনের পর দিন অনিকের হার না মানা পাগলামির কাছে আত্মসমর্পণ করে ঝিনুক। ভালোবেসে ফেলে অনিককে। অনিকের সত্যিকারের ভালবাসা আদায় করে ঝিনুককে। তার পর শুরু হলো একসাথে পথ চলা। কথা বলা। ভালোলাগা থেকে ভালবাসা। ১ দিন অনিকের সাথে কথা না বললে কেমন জানি অস্বস্তিবোধ করত ঝিনুক। কিছুই ভালো লাগতনা তার। এইভাবে দেখতে দেখতে ১ বছর কেটে গেল। ঝিনুক ছাড়া অনিক যেমন শূন্য, তেমনি অনিক ছাড়া ঝিনুকও অসম্পূর্ণ। কিন্তু ২৫শে আগস্টের সেই রাত বদলে দিলো ভালবাসার নিস্পাপ দুটি জীবনকে। সম্পূর্ণ আলাদা করে দিলো তাদের এক হবার গল্পটা। রাতে দুজন শহরের দুপ্রান্তে থেকেও কথার ফুলঝুড়িতে হারিয়ে যায় স্বপ্নের এক ঠিকানায়। সেদিন তারা মনের রাজ্যে অবাধ বিচরণ করছিল। কথা বলতে বলতে ঝিনুক বুঝতেই পারেনি যে তার মা তার পাশে এসে দাড়িয়ে আছে। কখন যে রুমের দরজা খুলে ভেতরে এসেছে সেটা বলতেই পারবেনা ঝিনুক। অনিকের সাথে কথা বলার সময় ওর চোখ বন্ধ থাকে। দুজনেই মগ্ন থাকে রূপকথার স্বপ্নিল রাজ্যে। আর সেদিনই শেষ হয়ে গেল তাদের একসাথে পাশাপাশি পথচলা। সারারাত কথা বলা।কল্যান সাহেবের কাছে ঘটনাটা একদম অপ্রত্যাশিত ছিলো। একমাত্র মেয়ের এমন ভুল পথে পা বাড়ানো তিনি এতটা সহজ ভাবে নিতে পারেলন না। অন্যদিকে ঝিনুকের মায়ের কান্নাকাটি বাড়ির পরিবেশটা মুহুর্তে ভারী করে তুললো। একটাই তো মেয়ে! কত স্বপ্ন তাকে নিয়ে। আর সে কিনা নিজেকে এইভাবে বিসর্জন দিতে চলেছে? এই মুহুর্তটা সহ্য করার ক্ষমতা খুব কম বাবা মায়েরই থাকে। ঝিনুকের মা এর ব্যাতিক্রম নন। কিন্তু ওর বাবা মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিলেন। খুব সতর্কতার সাথে সামলালেন পরিস্থিতিটা। তিনি ঝিনুককে সেই ছোট্টবেলার দিনগুলোতে নিয়ে গেলেন। যে দিনগুলোতে ঝিনুকের একমাত্র সঙ্গী ছিলেন তার বাবা। আর কেউ না।জীবনের সব চাইতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলো ঝিনুক। সে কিছুই বুঝতে পারলোনা। তার স্বপ্ন তার কাছ থেকে বিদায় চাইছে। সারাজীবনের জন্য হারিয়ে যেতে চাইছে। কিভাবে থাকবে ঝিনুক অনিক কে ছাড়া? কান্না ছাড়া আর কোনো সঙ্গীই ঝিনুক কে সঙ্গ দিতে পারলোনা। অনেক কাদলো ঝিনুক। অনেক। শেষ পর্যন্ত বাবার ভালবাসার কাছে হার মানলো ঝিনুক। বিসর্জন দিল অনিককে। চিরদিনের জন্য।

তিনদিন ঝিনুকের ফোন বন্ধ পেয়ে পাগলের মত করলো অনিক। সারাদিন ঝিনুকের বাসার সামনে ঘুরা ফেরা করতে লাগলো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডায়াল করতো ঝিনুকের বন্ধ নাম্বারটা। তার এই অনাকাঙ্খিত অপেক্ষার প্রহর শেষ করলো ঝিনুক নিজেই। কিছুদিন পর একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো অনিকের মোবাইলে। ফোনটা রিসিভ করতেই অনিকের চোখ কান্নার জলে ছলছল করতে লাগলো। আজ কতদিন পর ঝিনুকের কণ্ঠ শুনল সে ! কিন্তু ঝিনুক যা বলল সেটার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা অনিক। ঝিনুক তাকে আর চায়না। আর কোনদিনও তাদের যোগাযোগ হবেনা। ২ মিনিটের সেই সমাপ্তি কথন আজও অনিককে কাদিয়ে চলেছে। আর হাজার চেষ্টা করেও ঝিনুককে ফেরাতে পারলনা সে। ভালবাসার সব পরীক্ষায় সফলভাবে উতরে যাওয়া অনিক শেষ পর্যন্ত হার মানলো ঝিনুকের কাছে।
শহর ছেড়ে ঢাকা পাড়ি জমালো অনিক। কিন্তু একটা মুহুর্তের জন্যও ঝিনুককে ভূলেনি সে। আজও ঝিনুককে ভালোবাসে। আগের চাইতেও অনেক বেশি। প্রতি মুহুর্তে ঝিনুকের খোজ নেয় অনিক। কিন্তু একটা প্রশ্ন আজও অনিকের মনে উকি দিয়ে যায়। ঝিনুক কেন এমন করলো তার সাথে?

লাল রঙ্গের শাড়িতে মিস্টি পরীর মতো লাগছে ঝিনুককে। কপালে ছোট্র একটা লাল টিপ। লাল টিপ অনিকের অনেক পছন্দের। আজও সে অনিকের মনের মতো সেজেছে। বাবার হাতে হাত দিয়ে রিক্সায় বসে আছে ঝিনুক। আজ বাবা-মেয়ে রিক্সা করে ঘুরবে। এটাও ঝিনুকের ইচ্ছা। শুধুমাত্র অনিকের জন্য। পাগলটা ঠিক আসবে। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখবে তার রাজকন্যাকে। সারা রাস্তায় ঝিনুকের চোখজোড়া অনিককে খুজে ফিরছিলো। কোথায় অনিক? কতদিন অনিককে দেখেনা সে! পাগলটা এতই রাগ করেছে তার উপরে? একফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ে ঝিনুকের গাল বেয়ে। বাবা হাত ধরে বসে আছে। আজ বাবা অনেক খুশি। বাবার হাসিমুখটা ঝিনুকের মনে প্রশান্তির বাতাস বইয়ে দিলো। সব কষ্ট মুহুর্তেই হারিয়ে গেলো ঝিনুকের মন থেকে। এই হাসিমুখটার জন্যই তো ঝিনুকের এতবড় আত্মত্যাগ। ঝিনুক আজ অনেক সুখী। পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মেয়ে…..

গল্প: শঙ্খনীল দেব

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×