somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবার সিগারেট ছাড়ার গল্প

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসায় বিরাট গণ্ডগোল!
রাত এগারোটা। মা ওয়াক ওয়াক, গগগ করতে করতে এক দৌড়ে এসে বেসিনে হাঁপিয়ে পড়লেন। আমরা দুই ভাই-বোন রিডিং রুমে পড়ছিলাম। দৌড়ে গেলাম। মা বকবক করে বাবাকে বকে যাচ্ছেন। অর্ধেক বকা দিতেই আবার গগগ ওয়াক থুঃ। ঘটনার কিছুই বুঝতে পারছি না আমরা।

মা বমি করে দিয়ে বেসিনে উপুড় হয়ে হাঁপাচ্ছেন। চোখ-মুখ বেয়ে পানি পড়ছে।
ভাইয়া মার মাথাটা একটু ধরতে গেলেন। কিন্তু মা বিছার মতো লাফিয়ে উঠে একটা ঝেংরা মেরে বললেন, ‘সর, সর, আমার সামনে থেকে, সর। ধরতে হবে না।’ ভাইয়া ভয়ে দুই পা সরে গিয়ে বলল, ‘আমি আবার কী করলাম? আমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেন? কী হয়েছে তোমার এমন করছ যে?’
মা হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, ‘তোমার বাবা জোর করে আমার মুখের ভেতর সিকেরেটের ধুমা দিছে। ওয়াক থুঃ।’
ভাইয়া বলল, এ জন্য এমন করতে হবে নাকি তোমার?
মা বললেন, ‘এমন করতে হবে না মানে? ইন্দুর পচা গন্ধ। ওয়াক থুঃ।’

মা নিজে নিজেই বকবক করতে লাগলেন। ‘আর সম্ভব না। আমি আলাদা থাকব। যার ইমান আমল নেই, তার সাথে কীসের সংসার? একশ বার কিরা-কসম কেটে সিকারেট খাওয়া ছাড়ে; আবার একশবার সিকারেট ধরে। বিদ্যা নিয়ে কিরা, পশ্চিম দিকে ফিরে কিরা, কানে ধরে কিরা, আমার মাথায় ধরে পর্যন্ত কিরা কসম কেটেছে। কিরা-কসম কেটে সিকারেট ছেড়ে ধরে পান। কদিন বাদে দেখি, পান সিকারেট দুটোই সমানে খায়। লোকটার মনে আল্লা-খোদার ভয় নি আছে।’

বাবা খুব রাগী মানুষ হলেও মাঝে মধ্যে খুব দুষ্টুমি করে আমাদের সাথে। আমি ভয়ে ভয়ে বাবার ঘরে চুপি দিয়ে দেখি, বাবা সমানে সিগারেট টানছে শুয়ে শুয়ে। পায়ের উপর পা দোলাচ্ছে। আর মুখে মুচকি হাসি। হাসি দেখে সাহস করে গিয়ে বললাম, ‘এহ্ কিরা কেটে কেটে সিগারেট খাও আবার মাকেও খাওয়াও, নাহ্? আবার হাসে? এখন বকা খেতে মজা লাগে তোমার, হেহ্?’ এ কথা বলে এক দৌড়ে চলে এলাম রিডিং রুমে। ভাইয়া বলে, ‘তোর তো সাহস কম না! এখন না দুজনেই থাপ্পড় খামু।’ ভাইয়া ভয়ে জোরে জোরে পড়তে লাগল মাথা ঝাকিয়ে।
বাবা কিছুই বললেন না।

মা হনহন করে এসে বললেন, ‘এই লোকের সাথে থাকা সম্ভব না। ওই রুমে কেউ যাবি না। রুমে বিষ। আমি অন্যরুমে থাকব। মা বালিশ নিয়ে ধপ থপ করে অন্যরুমে গিয়ে ঠাস করে শুয়ে পড়লেন।
সব কিছু নীরব হয়ে গেল।

২.
দাদির ডাক পড়ল।
খোকা, ‘আমার ঘরে আসো।’ (বাবার ডাকনাম খোকা)।
বাবা সার্ট পরে কুলি করে দাদির সামনে গিয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ালেন।
দাদি বললেন, ‘তুমি তিন দিনের মধ্যে সিগারেট খাওয়া ছাড়বে। এটা আমার নির্দেশ।’
বাবা কী যেন বলতে চাইলেন, দাদি বললেন, ‘কোনো কথা শুনতে চাই না আমি। যাও।’
বাবা মুখটা ইঁদুরের মুখের মতো চোখামোখা করে বেরিয়ে এসে চুপ করে শুয়ে রইলেন।

দাদি আবার ডাকলেন, ‘গালিব সুমাইয়া আমার কাছে আসো।’
আমরা দাদির পাশে গিয়ে গাল ফুলিয়ে বেজার মুখে দাঁড়ালাম। দাদি বললেন, ‘আজ সালাম দিতেও ভুলে গেছ তোমরা।’ এ কথা শুনে আমরা দুজনেই হাতে মুখে সমানে সালাম দিলাম। দাদি বললেন, ‘এটা সালাম নয়। সালাম দিতে হয় মন থেকে। তোমাদের মন ভালো নেই।’

কতক্ষণ চুপ থেকে দাদি বললেন, ‘মা-বাবার ঝগড়া দেখার ভাগ্য সব সন্তানের হয় না। তোমাদের হয়েছে। আজ বড় আনন্দের দিন। কোনো পড়া হবে না এখন। বই বন্ধ করে আনন্দ করো গিয়ে, যাও।’
আমরা পা টিপে দাদির ঘর খেকে এসে চুপ করে শুয়ে পড়লাম।

সকালবেলা ভাইয়া আমাকে বলে, ‘একটা চুপি দিয়ে দেখে আয়, আব্বু আর আম্মু এখন কী করছে. যা।’
আমি পা টিপে গিয়ে চুপি দিলাম। দেখি, ‘মা কফিতে টোস্ট ভিজিয়ে বাবার মুখে দিচ্ছে। আর হাসি হাসি মুখে কথা বলছে। দেখে রাগের চোটে আমি ফোরে একটা উষ্ঠা মেরে চলে এলাম।

ভাইয়া বলে, ‘দেখছস, রাতে কেমন ঝগড়া করলো। এখন কেমন খাতির? আমাকে কেমন একটা বকা দিয়েছিল মনে নেই? আর এখন? আয় আমরা আবাবু-আম্মুর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই, হে?
আচ্ছা।
আমরা গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম।
মা আমাদের জন্য কফি আর টোস্ট নিয়ে এসে পাশে বসলেন। ভাইয়া চেয়ার ঘুরিয়ে একদিকে আর আমিও মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে ফিরে বসে রইলাম। রাগে আমাদের শরীর কাঁপছে।
আমাদের ভাব দেখে মা বললেন, ‘শোনো, রাগ করে তিন ঘণ্টার বেশি কথা না বললে ভীষণ পাপ হয়, নইলে আমি বুঝি এ ভদ্রলোকের সাথে কথা বলি? জীবনেও না।’
মা আমাদের রাগ দেখে হাসতে হাসতে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে গেলেন।

৩.
বাবা অফিস থেকে বাসায় দেরি করে এলেন। মা বললেন, এতো দেরি কেন আপনার? বাবা বলে, ‘নিউ মার্কেট গিয়েছিলাম।’
‘নিউ মার্কেটে কেনো?’
বাবা ব্রিফকেস থেকে একে একে বের করতে লাগল ইয়া বড় বড় সিগারেট। দেশ-বিদেশের যত পদের সিগারেট আছে সব কিনে এনেছেন। কোনটা মশলার তৈরি। কোনটা চিকন, কোনটা আবার ছয় ইঞ্চির মতো লম্বা, কোনটা মোটা সিগারেট। আমরা অবাক।
বাবা বললেন, ‘জীবনের শেষ টানা টানবো এই তিন দিন। আমাকে কিছু বলতে পারবে না তোমরা। মা তিন দিন সময় দিয়েছেন। এটা আমি ষোলোআনা কাজে লাগাবো। এমন খাওয়া খাবো, যাতে কোনদিন আফছুছ করে বলতে না হয়, এই ব্র্যাণ্ডের সিগারেটটা তো খাওয়া হয়নি আমার!’
বাবা অনেক রাত পর্যন্ত বারান্দায় বসে এই সিগারেট টানেন।

আজ তিনদিনের শেষ দিন। এমনভাবে সিগারেট টানলেন যে, ঠিক রাত বারোটাও বাজল, বাবা সিগারেটে শেষ টান দিলেন।
বাবা ঝিমাতে ঝিমাতে ঘরে এসে বললেন, ‘তোমরা আমার পাশে এসে বসো। আজকে একটা ভাল সিদ্ধান্ত নেবো আমি।’
আমরা হাসি হাসি ভাব নিয়ে বাবার দুপাশে গিয়ে লাফিয়ে বসলাম। মা-ও এএসে বসলেন।

বাবা খুব বিনয়ের সাথে বললেন, ‘তোমাদের সবার সামনে শপথ করে বলছি, আমি আর ধূমপান করবো না, আজ আমি মুক্ত, আমি পবিত্র ।’
দিলাম জোরে হাততালি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×