আপনি কি ঈদে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন? সবকিছু ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে নিয়েছেন তো? আচ্ছা খেয়াল করে দেখুন তো, একটি জিনিস নিতে ভুলে গেছেন কি না!
অনেক জামা-জুতো কিনেছেন এবার। অনেকগুলো টাকাও খরচ করেছেন আপনি। অনেক জামা আর জুতুর মাঝে আপনি আপনার গরিব প্রতিবেশীর ছেলে বা মেয়ের জন্য একটি ফ্রক, একটি পেন্ট বা একটি গেঞ্জি কিনে নিয়েছেন তো?
আমি কিন্তু নিয়েছি। আমার দাদাবাড়ির আশেপাশে আমার মতো বয়েসের গরিব কয়েকটা মেয়ে আছে। আমি বাড়ি গেলে ওরা ছুটে চলে আসে আমার কাছে। অনেক অনেক খুশি হয় তারা। সারাদিন আমরা একসাথেই থাকি, খাই, ঘুরি, খেলা করি আর করি অনেক আনন্দ। সবদিক থেকেই ওদের সাথে আমার মিল আছে। কিন্তু আমি যখন দামী জামা-জুতো পরে ওদের সাথে বের হই তখন আর মিল থাকে না। এ অমিলটার জন্য আমার খুব কষ্ট হয়। তখন আমার খালি মনে হয় আমি ঈদের আনন্দ করতে এসে কি এই গরিব মেয়েদের সাথে প্রতারণা করছি, না ফেরাই দেখাচ্ছি। নাকি ইচ্ছা করে আমি ওদের মনে কষ্ট দিচ্ছি। লজ্জায় আমার মুখটা লাল হয়ে যায়।
তাই আমি টাকা বাচিয়ে ও বাবা-মার কাছে চেয়ে টাকা নিয়ে চারটি মেয়ের জন্য চারটি জামা আর জুতো নিয়েছি। এখন আমার আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে জামা দেয়ার মাঝে। কখন যাব আর কখন ওদের হাতে দেব জামা-জুতু। তাদের হাতে জামা-জুতো দেয়ার সময় তাদের মুখটা আনন্দে কেমন চিকচিক করে উঠে সেটা ভাবতেই আমি অনেক আনন্দ পাচ্ছি। দাদু বলেছেন, এ আনন্দই ঈদের আসল আনন্দ, পবিত্র আনন্দ। এ আনন্দ টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যায় না।
দেখুন, এ কাজটি করতে মোটেও ভুল করবেন না যেন। আপনি যখন বিরাট গাটরিবোচকা নিয়ে বাড়ির উঠোনে পা রাখবেন তখন দেখবেন সেখানে গরিব প্রতিবেশীর ছোট্ট ছোট ছেলে বা মেয়ে উদোম গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। আপনি দয়া করে তার দিকে একটিবার তাকিয়ে দেখবেন, অনেক কষ্টের মধ্যেও সে হয়তো আপনার আগমনে খুশি খুশি মুখে আপনার চারপাশে ঘোরাফেরা করছে, আপনাকে দেখছে।
আপনি যদি ঠিক সেই মুহূর্তে তার হাতে একটি নতুন জামা তুলে দিতে পারেন তখন কেমন একটা কাণ্ড ঘটে যাবে একটু ভাবুন তো। সে হয়তো জামাটি নিয়ে প্রাণখোলা একটি হাসি দিয়ে আনন্দে পাড়া মাতিয়ে তুলবে।
আপনার ঈদের আনন্দ-ফুর্তির মাঝে ছোট্ট শিশুটির আনন্দ যোগ হয়ে মহা উতসবের সৃষ্টি করবে। আমরা ইচ্ছা করলেই কিন্তু সামান্য কিছুর বিনিময়ে ঈদের আনন্দকে মহা উতসবে পরিণত করে ফেলতে পারি। আমরা যেন কেউ এ পবিত্র আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হই। আপনার ঈদ হোক আনন্দময়।