somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মালয়শিয়ার স্মৃতি... [পর্ব-৩]

১৩ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মালয়শিয়ার স্মৃতি... [পর্ব-১] এখানে
মালয়শিয়ার স্মৃতি... [পর্ব-২] এখানে

রবিবার, আরেকটা ছুটির দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়েশ করে বুফে নাস্তা সারলাম। আসলে এই ধরনের নাস্তা অন্তত ১ ঘন্টা সময় নিয়ে না করলে যারা এত আয়োজন করেছে তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয় না। :P ট্রেনিং এর দিনগুলোতে আসলে শান্তি মত নাস্তা করা যায় না। কারণ, ট্রেনিং এর শেষে অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে ঘোরাঘুরি করে ঘুমোতে যেতে অনেক দেরি হয় যায়। ফলাফলে, সকালে খুব কষ্ট করে ঘুম থেকে ওঠা। আর কোন মতে তাড়াহুড়া করে নাস্তা করেই দৌড়ে বাসে ওঠা !!

যাইহোক, আজকের প্ল্যান কুয়ালালামপুর বার্ড পার্ক, বাটার ফ্লাই পার্ক, ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কয়ার এবং KL এ বিচ্ছিন্ন ঘোরাঘুরি করা। প্রথমেই চলে গেলাম KL বার্ড পার্কে। খুবই ভাল লাগল। KL এর প্রাণ কেন্দ্রে দুর্দান্ত একটা বার্ড পার্ক করেছে। বড় পাখি গুলো সব খোলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুরো পার্কটাই একটা বড় জাল দিয়ে ঢাকা, তাই পাখিগুলো ছাড়া থেকেও আসলে বন্দি। বিশাল এক ময়ূর ঘোরাঘুরি করছে আর আমাদের দেখছে, ওর কত কাছে আমরা যাই হয়ত সেই হিসেব নিকেশ করছে।



বেশী কাছে যাওয়াতে একটু দূরে সরে গেল। তবে যেই মাশাল্লাহ সাইজ ওর, মনে হল ঠোকর দিলে আমার খবর আছে। :P টিয়া, কাকাতুয়া এই জাতীয় পাখিগুলো খাচায় রাখা। বার্ড পার্ক নিয়ে আর বেশী কিছু বললাম না, ছবিতেই দেখে নিন।


এই বেচারার ছবি তুলতে গেলেই খালি কাছে চলে আসে, আমি আবার দূরে সরে যাই, কারণ আদর কইরা যদি আবার চোখে একটা ঠোকর দিয়ে দেয় তাইলে তো বাপের কালের চোখটা গেল...। :P








এরা হইল প্রফেশনাল মডেল, পয়সা দেন, ছবি তুইলা বিদায় হন... :P:D

বার্ড পার্কের প্রবেশ ফি ছিল ৪০ রিঙ্গিত (২০০৬ এর আপডেট, একটু বেশিই, কি বলেন?? :D) এর পর বার্ড পার্ক থেকে একটু দূরেই প্রজাপতি পার্কে চলে গেলাম, প্রবেশ মূল্য ১৫ রিঙ্গিত। ভালই লাগল, নানা রকম প্রজাপতি দেখে।


প্রজাপতি আমার হাতে...



এরপর হাটতে হাটতে চলে গেলাম মালয়শিয়ার জাতীয় মসজিদে। নামাজ পড়লাম।


মালয়শিয়ার জাতীয় মসজিদ


মহিলারা নামায পড়ছেন

দুপুরে খেয়ে দেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কয়ারে চলে এলাম। জায়গাটা বেশ সুন্দর। বিশাল একটা মাঠ আছে। জাদুঘর টাইপেরও কিছু আছে সেখানে।



কয়েক দিন পরই মালয়শিয়ায় F1 racing হওয়ার কথা ছিল। তাই সেখানে আবার রেসিং কার এর প্রদর্শনী চলছে। ছবি তুললাম সেইসব গাড়ীর সাথে।



এর পর হাটা শুরু করলাম ওদের সংসদ ভবনের দিকে। পথে একটা মনুমেন্ট পড়ল, বন্ধ ছিল তাই ভেতরে ঢুকতে পারিনি, বাইরে থেকেই ছবি নিলাম।



আর একটু এগিয়েই ওদের সংসদ ভবন। দেখে হতাশ হলাম। বড়ই সাদামাটা একটা বহুতল ভবন। বুঝলাম না, ওদের দেশে এত সুন্দর নকশার ভবন, কিন্তু জাতীয় সংসদের এই অবস্থা কেন??



সত্যি কথা কি, বাংলাদেশের সংসদ ভবন দেখার পর হয় আর কোন দেশের সংসদ ভবনই ভাল লাগবে না... আমাদের এই একটি জিনিসই খুবই সুন্দর, যদিও ওর ভেতরে যাদের যাতায়াত তারা কতটুকু সুন্দর সেটা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে... :P ফিরে এলাম কোটারায়া এলাকায়, আসলে এখান থেকেই আমরা সানওয়ের বাস ধরি, পাশেই চায়না টাউন, ওখানে ঘুরে ফিরে কিছু সুভেনির কিনলাম। চায়না টাউনে যদি কেনাকাটা করেন, একটু বুঝে শুনে কিনবেন। ওদের সাথে ভাল দর কষাকষি করতে হবে, তবে আপনি যখন ওদের কে ও যা চেয়েছে তার কয়েক ভাগের এক ভাগ দাম বলবেন, তখন ওরা বেশ খারাপ ব্যবহারও করবে, কিন্তু আপনি ধৈর্য হারাবেন না, এটাই ওখানকার চাইনিজগুলোর প্রকৃতি। কিন্তু ধৈর্য ধরে কিনে ফেলতে পারেন তবে অন্তত বড় দোকান থেকে বেশ কমে সুভেনিরগুলো কিনতে পারবেন।

এর মধ্যে একদিন রাতে টুইন টাওয়ারেও গিয়েছিলাম। কিছু ছবি শেয়ার করলাম।




Suria KLCC এর পেছনের পার্কে ফোয়ারা...

ট্রেনিং শেষ হল। এরিকসন মালয়শিয়ার এত ঝাক্কাস একটা অফিস ছেড়ে আসতে কষ্টই হচ্ছিল। কিছু ছবি শেয়ার করলাম।







আমি রাতে বাইরে থেকে ফেরার পর প্রায়ই সানওয়ে শপিং মলে দাঁড়িয়ে আইস স্কেটিং দেখতাম। হোটেলে শেষ দিনে আবার গিয়ে দাড়ালাম।





অনেকের পারফরমেন্স দেখেই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ছবিতে যেই কিউট কিশোরীটিকে দেখতে পাচ্ছেন, সে ছিল সেদিন আমার দেখা বেস্ট পারফরমার। অসাধারণ দেহ শৈলী প্রদর্শন করছিল সে। আমি বিভোর হয়ে ওর স্কেটিং উপভোগ করছিলাম। ছবি তোলাটা বেশ কষ্ট সাধ্য ছিল, কারণ সে চলমান ছিল। জুম করে অনেক কসরত করে ওকে এক পর্যায়ে ক্যামেরা বন্দী করলাম। :D

রাতের বাসের টিকেট কাটা ছিল। পুডুরায়া বাস স্টেশন থেকে রওনা হবে। গন্তব্য পেনাং, সেখানে একদিন থেকে স্বপ্নের দ্বীপ লাংকাউই। বাসগুলো বেশ বিলাসবহুল, স্ক্যানিয়া বাস, প্রতি সারিতে ৩ টা করে আসন, তাই বেশ সুপরিসর। এ প্রসংগে বলে নেই, আমারদের সাথে এরিকসন বাংলাদেশ থেকে দুই ভাইয়াও ট্রেনিং এ ছিলেন। এবার আমরা পাচ জন মিলেই রওনা হয়েছি। রাত সাড়ে বারটার দিকে বাস ছাড়ল। বাসে বসেই টের পাচ্ছিলাম, সেই রকম টানে বাস চলছে, রাস্তা খুবই ভাল। ফলাফলে চার ঘন্টার মাথায় পেনাং পৌছে গেলাম। তখনো চারিদিকে আধার, সুতরাং বাস স্ট্যান্ডে বসার আসনেই ব্যাগের উপর মাথা রেখে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। আলো ফুটলে বের হয়ে বাসে করে শহরে চলে এলাম। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এক হোটেলে নাস্তা করলাম পরটা আর ডিম ভাজি দিয়ে। ভিন দেশে এরকম মেনু পেয়ে আমরা যারপরনাই খুশি। :D এর পর সময় নষ্ট না করে আমরা বের হলাম একটা বীচের উদ্দেশ্যে, নাম বাটু ফিরিঙ্গি। প্রায় এক দেড় ঘন্টা লোকাল বাসে চড়ে পৌছালাম। প্রচন্ড রোদ, সাইজ হয়ে গিয়েছিলাম। এদের বীচ গুলোতে আমাদের কক্সবাজারের মত ঢেউ নেই, কারণ এগুলো ব্রোকেন বীচ। কিছুক্ষণ বীচে ঘোরাঘুরি করে ফিরে এলাম। বিকেলে আরেকটা জায়গায় বেড়াতে গেলাম, জায়গাটার নাম মনে নেই। একটা ছোট ট্রেনে করে পাহাড়ের ওপরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পেনাং শহর দেখা যায়, আমরা উঠতে উঠতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল, তাই রাতের পেনাং দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হল।


রাতের পেনাং

রাত পোহালেই আমরা লাংকাউইর উদ্দেশ্যে রওনা করব। আচ্ছা আমার মনে হয় সেই গল্প শেষ পর্বেই বলি, আপনারা কি বলেন??? :)

মালয়শিয়ার স্মৃতি (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৯
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×