আজকের প্রথম আলোর এই খবরটি ছোট্ট নুসরাত কী করে ভুলবে এই ভয়ংকর দৃশ্য হয়ত অনেকেরই চোখে পড়েছে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন এই খবরটি তে। এই খবরটির সূত্র ধরেই কিছু অপ্রিয় সত্য কথা বলতে চাই আজ।
আমরা বাংলাদেশী জাতি বড়ই হুজুগে। দুর্ঘটনা ঘটলেই সব দোষ বাস/ গাড়ী চালকের। আমরা খুব সহজেই এখানে যে বড়/শক্তিশালী তার বিরুদ্ধে চলে যাই। রিক্সা চালক আদৌ কিভাবে রিক্সা চালাচ্ছিল সেটা কিন্তু কেউ জানি না! মনে রাখা প্রয়োজন, অধিকাংশ গাড়ী চালকের চেয়ে এই রিক্সা চালকদের ট্রাফিক আইন জ্ঞান কিন্তু আরো অনেক কম! অথচ একটা মেগা সিটিতে আমরা প্রধান সড়কে রিক্সা চলতে দিচ্ছি ! তাহলে আমাদের নগর কর্তারা কতটা জ্ঞানী??
আমি এই মুহুর্তে ইরানের রাজধানী তেহরানে আছি। এই শহরের উদাহরণই না হয় দেই। এখানেও যানযট হয়, কারণ গাড়ীর সংখ্যা অনেক বেশী। এখানকার অধিকাংশ রাস্তাই একমুখী। সড়কের এক পাশ শুধু মাত্র বাস, পুলিশের গাড়ী এবং এম্বুলেন্স এর জন্য বরাদ্দ। আরেক পাশে ব্যাক্তিগত বা ছোট গাড়ী চলে। রাস্তা পারাপারে জন্য জেব্রা ক্রসিং আছে। শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনার কারণেই এখানে চাইলেও দুর্ঘটনা ঘটানো খুবই কঠিন ! এখানে সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলছেন। কেউ যদি মাতাল হয়ে ইচ্ছে করে কোন দুর্ঘটনা না ঘটায়, তবে এখানে সড়ক নিরাপদ। এখানে আপনি রাস্তা পার হতে নিলে ড্রাইভাররা গাড়ীর গতি কমিয়ে দেবেন, বাংলাদেশের ড্রাইভারদের মত গতি বাড়িয়ে আপনার গায়ের উপর তুলে দিবে না। এছাড়া পাতাল রেল আছে, যেটা আরেকটি নিরাপদ বাহন। মহা সড়কে গতির সীমা দেয়া আছে, আছে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার ব্যবস্থা। আপনি বেশী গতিতে গাড়ী চালালে বাড়িতে টিকেট পৌছে যাবে জরিমানার অংকসহ। এ সব ব্যবস্থাই এ দেশের সরকার কিন্তু করেছে, জনগণের জীবনকে নিরাপদ করার জন্য!
কথা হল, আমাদের কর্তা ব্যাক্তিরা কিন্তু প্রচুর বিদেশ ভ্রমন করেন। তারা সবই জানেন। অর্থের অভাব আছে, সেটা আমি বিশ্বাস করি না। দুর্নীতিটা একটু কম করে করলেই যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত করা সম্ভব। কিন্তু তারা এটা করেন না, শুধু মাত্র সদিচ্ছার অভাবের কারণে। ক্ষমতায় এসেই তারা নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অন্যান্য দেশে দুর্নীতি নেই তা নয়, কিন্তু তারা নিজের দেশের জন্য কিছু করেন দুর্নীতির সাথে সাথে। আর আমরাও দেশের জনগণ এই অযোগ্য লোকগুলোকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করি।
মূল প্রসংগে ফিরে আসি, দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে আমরা গাড়ীর চালককে ৩০২ ধারায় মৃত্যুদন্ড দিতে উঠে পড়ে লাগি। অনেকটা সাময়িক মনের ঝাল মেটানো। কিন্তু একবারও ভাবি না, সমস্যার গোড়াটা (Root Cause) কোথায়? দুর্ঘটনায় যিনি মারা গেছে, দোষতো তারও থাকতে পারে? তিনি কি জানেন ট্রাফিক আইন?
অনেক সময় আমরা ফুটওভার ব্রিজের নীচ দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পাড় হচ্ছি। এ কাজের জন্য সেই পথচারীকে কেন শাস্তি দেয়া হচ্ছে না? যদি দোষ ড্রাইভারের হয়ে থাকে, তবে BRTA কে সর্ব প্রথম ফাসিতে ঝোলানো উচিত! কেন তারা টাকা খেয়ে অবৈধ লাইসেন্সগুলো দিচ্ছেন, যাদের ড্রাইভিং করার কোন যোগ্যতা নেই ? একই রাস্তায় আমরা সব ধরণের গতির যান্ত্রিক এবং অযান্ত্রিক বাহন চলতে দিচ্ছি? এই ধরণের একটা পরিকল্পনা কি মানুষ হত্যার একটি কারণ নয়?
আমরা যদি আমাদের চিন্তা-চেতনা, জীবনাচরন, কর্মপন্থায় আমূল পরিবর্তন না আনতে পারি, তবে এ ধরণের সমস্যা কখনোই দূর হবে না। নগরকর্তারা যদি সর্বক্ষণ দুর্নীতি করে টাকা কামানোর ধান্দায় থাকেন তবে এ দেশের জীবন ব্যবস্থা কখনোই পরিবর্তন হবে না। সরকার যদি জনপ্রিয়তা কমে যাবার আশংকায় শক্ত কোন ভাল সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে এদেশের মানুষের জীবন কখনোই উন্নত হবে না। সাধারণ মানুষের রাস্তা ঘাটে চলা ফেরা করতে হবে জান হাতে নিয়ে, ঘরে থাকা পরিবার কখনোই নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে না তার প্রিয়জন আজকে সুস্থভাবে ঘরে ফিরতে পারবে কি না সে চিন্তায়...
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৭