প্রথম আলোতে আজ খবর বেরিয়েছে,
ভারতে চলন্ত ট্রেনে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ৪১ দিন পর ফেরত এল বাংলাদেশি নারীর লাশ
নিজের ও জন্মান্ধ মায়ের চিকিৎসার জন্য ১০ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন নার্গিস বেগম (৩৪)। দরজির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। চিকিৎসা শেষে আজমির শরিফ ঘুরে আসারও ইচ্ছা ছিল তাঁর। কিন্তু সেই ইচ্ছা অপূর্ণই রয়ে গেল। দীর্ঘ ৪১ দিন পর লাশ হয়ে দেশে ফিরলেন তিনি।
১০ মার্চ হাওড়া স্টেশন থেকে দিল্লির উদ্দেশে ট্রেনে ওঠেন। ট্রেন কানপুর স্টেশনে পৌঁছালে কয়েকজন যুবক দিল্লি এসে গেছে বলে তাঁদের ট্রেন থেকে নামিয়ে আনে। পরে নার্গিসকে প্ল্যাটফর্মে আটকে মা-মেয়েকে জোর করে ওই ট্রেনেই তুলে দেয়। এরপর ট্রেন ছেড়ে দিলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন নার্গিস।
লাশের গোসল করান লাইলি বেগম। তিনি বলেন, নার্গিসের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর চিহ্ন রয়েছে। বাঁ পায়ের গোড়ালি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চামড়ার সঙ্গে কোনো রকমে আটকে রয়েছে। ডান হাত কাঁধ থেকে ভাঙা। দুই স্তনই কেটে ফেলা হয়েছে।
আমার মনে হয়, সময় এসেছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ ভারত ভ্রমনের উপর ভ্রমন সতর্কতা জারি করা। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে, ভারত নারী পর্যটকদের জন্য এক বিপজ্জনক দেশে পরিণত হয়েছে। তাই ভারতের ভ্রমনের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা দরকার।
১. দিল্লী বা মুম্বাইয়ের মত বড় শহরগুলোতে গেলে অবশ্যই ভাল হোটেলে উঠতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্বস্ত গাইডের সাথে ট্যুর করতে হবে বা নিজেরাই ভ্রমন করলে গভীর রাতে নির্জন এলাকা বা বিপজ্জনক এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয়দের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য চেয়ে নিতে হবে।
২. বাটপারদের খপ্পর থেকে বেচে থাকতে হবে, যার তার কথায় কান না দিয়ে নির্ভরযোগ্য জায়গা থেকেই সেবা নিতে হবে।
৩. মহিলাদের পুরুষ সংগী নিয়ে যাওয়াই উত্তম। এবং পুরুষ সংগী থাকলেও উপরের সতর্কতাগুলো মেনে চলা।
৪. দরিদ্র এবং পড়ালেখা কম জানা মহিলাদের পরামর্শ দিন, তারা যেন পুরুষ সংগী ছাড়া নার্গিসদের মত ভ্রমনে বের হয়ে না পড়ে। দুর্বৃত্তরা এদের সহজেই বোকা বানানো যায় বলে সুযোগ নেয়।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভারতীয় পুরুষদের নৈতিকতা এবং মনুষ্যত্ব এখন সর্ব নিম্ন পর্যায়ে আছে ! দিল্লীকে তো নাকি এখন ধর্ষনের রাজধানী বলা হয় ! হয়ত হিন্দী সিনেমার ভায়োলেন্স এদের মনোদৈহিক জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। সংগত কারণেই ভারতীয় নারীদের জীবনাচরণের কথা এড়িয়ে গেলাম, তবে সমঝদার ব্যক্তিদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। সুস্থ সমাজ গড়তে নারী পুরুষ উভয়ের ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ দরকার। নইলে শুধু একপক্ষকে দোষারোপের এই সংস্কৃতিই চলতে থাকবে, কোন সমাধান আসবে না।
আমাদের সবার একটু সচেতন হওয়া দরকার, যাতে আমাদের দেশটাও আরেকটা ভারতে পরিবর্তিত না হয়। এমনিতেই ভারতীয় সংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের অনেক ক্ষতি করে ফেলেছে। আমরা যদি ঘরে ঘরে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারি, পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে হিন্দী ছবি/সিরিয়াল দেখা থেকে নিবৃত্ত রাখতে পারি, তাহলে হয়ত আমাদের সমাজের অবক্ষয় কিছুটা হলেও কমিয়ে আনতে পারব। পোষাক আশাকের ক্ষেত্রেও ভারতপ্রীতি বাদ দিয়ে আমরা একটু দেশমুখী হতে পারি। এতে আমাদের দেশেরও কিছু উন্নতি হবে। আমরা যেমন ভারতভক্ত, ভারতে গিয়ে দেখেন ওরা আমাদের দুই পয়সাও দাম দেয় না। সীমান্তে বিএসএফতো বাংলাদেশীদের পাখির মত গুলি করে মারে, মানুষই মনে করে না !
২০০৯ নয় সালে আমিসহ আরো বেশ কয়েক ভাই ভারতে কারিগরি চাকরি পেয়েছিলাম। ভিসা অফিসার ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকল। সোজা বলে দিল, “দেখুন, আমরা মনে করি, ভারতে পর্যাপ্ত কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন জনবল আছে। আমরা কোন বাংলাদেশীকে চাকরির ভিসা দেই না”। (তবে আপনি যদি কোন বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেন, তবে সেই কোম্পানির ভারতীয় শাখায় বদলি বা চুক্তি ভিত্তিক চাকরি পেলে আপনাকে ভিসা দেবে) আমাদের প্রত্যেকের জন্য রিক্রুটিং কোম্পানি ভারতীয় সরকারের অনুমোদনও যোগাড় করেছিল, কিন্তু ভিসা দেয় নি।
অথচ, বাংলাদেশে নাকি ৬ লক্ষ ভারতীয় কাজ করছে, অধিকাংশই ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ছাড়া ! মানে করটাও ফাকি দিয়ে যাচ্ছে ! আমরা বাংলাদেশীরা তাদের হুজুর হুজুর করে এনে উচু পদে চাকরি দিচ্ছি অথচ আমাদের দেশেও যোগ্য লোকের অভাব নেই! ইরানের টেলিকমিউনিকেশন খাতে এই মুহুর্তে আমরা ১৬ জন চাকরি করছি ৪ টি ভিন্ন কোম্পানিতে ! এর মধ্যে দু’জন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে ! আমাদের মধ্যে বাংলাদেশে গ্রামীনফোন, রবি, এয়ারটেল, এরিকসন, হুয়াউয়ে, ওএনএস এসব কোম্পানিতে সাফল্যের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
মূল কথায় ফিরে আসি, ভারতের ভাল দিকগুলো থেকে আমরা শিক্ষাগ্রহণ করি, তবে খারাপ দিকগুলো বর্জন করি। নারীদেরতো ওরা পণ্য বানিয়েই ছাড়েনি, সিনেমাতে বিকিনি পড়িয়ে ইজ্জতের ফালুদা করে ফেলেছে! অথচ ভারতীয় নিজস্ব আদি সংস্কৃতিও কিন্তু নারীদের এমন নগ্ন উস্থাপন সমর্থন করে না। দুঃখ, অধিকাংশ বোনই এই ব্যাপারটা বুঝতে পারে না! তারা সাময়িক প্রদর্শনের আনন্দে বিভোর। নিজের সম্মান যদি নিজে না বোঝ বোন, তাহলে কে বুঝবে? এই অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ রুখতে আমরা পরিবারের দৈনন্দিন শৃঙ্খলাগুলোর দিকে নজর দেই। ঘরে ধর্মীয় অনুশাসনের চর্চাটা বাড়াই। এতে অপসংস্কৃতির প্রবেশটা কঠিন হয়ে পড়বে। মুসলমানদের জন্য বলি, আল্লাহর হুকুম এবং রাসূল(সঃ) এর সুন্নাহ অনুসারে নিজেদের জীবন চালানোর চেষ্টা করুন। বর্তমানে ইসলাম নিয়ে অনেক অপপ্রচার হচ্ছে, সেগুলো শুনে প্রভাবিত হওয়ার আগে জ্ঞানী লোকের সান্নিধ্যে যেয়ে ইসলামকে জানুন, বুঝুন, পালন করুন, তারপর উপলব্ধি করুন ইসলাম আপনার জীবনে ভাল কিছু দেয় না ক্ষতি করে।
শেষ করার আগে, সমগ্র দুনিয়ার মানুষের জন্য দোয়া করি আল্লাহর কাছে, যাতে আমরা সবাই দুনিয়া এবং আখিরাতে সফল হতে পারি… ভাল থাকুন সবাই…
ভারতে নারীর প্রতি সহিংস আচরণ নিয়ে কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত লেখার লিংকঃ
Click This Link
http://ireport.cnn.com/docs/DOC-1023053
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৭