somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাবলীগের মেহনত কি আমাদের শিরকী আকিদা শেখায়?

২২ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দু'দিন আগে এক অপরিচিত মুসলিম ভাই এর কাছে থেকে একটা মেইল পেলাম। তিনি আমার ফোন নাম্বার চেয়েছেন, আমার সাথে কথা বলতে চান ধর্ম বিষয়ে। শুরুতে ঘাবড়েই গেলাম, বললাম, ভাই আমিতো কোন আলেম ওলামা না, সাধারণ ইংরেজি শিক্ষিত লোক ! তবে দ্বীনদান লোকজনদের সাথে কিছু ওঠাবসা করে কিছু জেনেছি, যার ভিত্তিতে হয়ত নিজের বুঝ প্রকাশ করে থাকি।

যাহোক, আজকে সকালে তিনি আমাকে জানালেন, আজ রাতে এশার নামাজের পড় তিনি বেশ কয়েক জন হুজুরের সাথে তালিমের জন্য ব্যবহৃত "ফাজায়েলে আ'মাল" বই সম্পর্কে বিরোধিতা করবেন। তার ভাষায়, "সেখানে আমি একা এবং আমার বিপরীত পক্ষে থাকবে অনেকগুলো হুজুর" !

জানতে চাইলাম, আপনি বইটি থেকে কোন বিষয় নিয়ে বিরোধিতা করবেন। উত্তরট ছিল এরকম।

শায়েখ আবুল খায়ের বলেন, একবার মদীনা মোনাওয়ারায় হাজির হইয়া পাঁচ দিন পর্যন্ত আমাকে উপবাস থাকতে হয়। খাওয়ার জন্য কিছুই না পেয়ে অবশেষে আমি হুজুর এবং শায়ইখানের কবরের মধ্যে সালাম
পড়িয়া আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল। আমি আজ রাতে আপনার মেহমান হবো।

এই কথা আরজ করে মিম্বর শরীফের নিকট গিয়ে আমি শুইয়া পড়লাম। স্বপ্নে দেখি, হুজুরে পাক (সাঃ) তাশরীফ এনেছেন। ডানে হযরত আবু বকর, বাম দিকে হজরত ওমর এবং সামনে হজরত আলী রাঃ। হযরত আলী রাঃ আমাকে ডেকে বলেন, এই দেখ, হুজুর সাঃ তাশরীফ এনেছেন। আমি উঠা মাত্রই মহানবী সাঃ আমাকে একটা রুটি দিলেন, আমি অর্ধেক খেয়ে ফেলি।
তারপর যখন আমার চোখ খুলিল তখন আমার হাতে বাকী অর্ধেক ছিল (রুটি অবশিষ্টাংশ)।

সূত্রঃ ফাজায়েলে হজ্জ্ব-২৫৬ পৃষ্ঠা।


ওনার জবাবে আমি যা লিখেছিলাম সেটাই আপনাদের জানাতে চাচ্ছি। হয়ত এ থেকে আপনারা উপকৃত হবেন বা আমিও আপনাদের মতামত থেকে কিছু জানতে পারব।

ঠিক আছে, আপনি এই বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞেস করুন আ’লেমদের। কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, হেকমতের সাথে, সম্মানের সাথে আলোচনা করবেন। প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়, বন্ধু হিসেবে। আমি আপনাকে পরামর্শ দেব, আপনি এলাকার কম জ্ঞানী আ’লেম বা তাবলীগের সাধারণ সাথীদের সাথে এটা নিয়ে আলোচনা না করে বড় আ’লেমদের সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করুন, এতে আপনি মানসম্মত জবাব পাবেন।

আপনি জানেন কি না জানিনা, হাদিস মোতাবেক, আমরা যখন রাসূল (সঃ) এর উপর দুরুদ পড়ি, তখন আল্লাহ সোবহানাতা’লা তার দেহে তার আত্মাকে ফিরিয়ে দেন এবং তিনি আমাদের সালামের জবাব দিয়ে থাকেন।
বাংলা দিতে পারলাম না, ইংরেজিতে হাদিসগুলো তুলে দিচ্ছি, দেখুন।

হাদিস ১:
"There is no Muslim who invokes blessings upon me (salutes me), but Allah returns to me my soul till I respond to him in return."

Reference

►Abu Dawood, Sunan, b. of manasik (rituals of hajj), (2: 218 # 2041)

►Ahmad bin Hambal, Musnad, 2:527

হাদিস ২:
"He who invokes blessings upon me by my grave, I will hear him and he who invokes upon me at a distance it will be conveyed to me."

Reference

►Ahmad bin Husayn Bayhaqī, Shu‘ab-ul-īmān, (2: 218 # 1583)

►‘Ala’-ud-Din ‘Alī, Kanz-ul-‘ummal, (1: 498 # 1583) 5)

দেখুন, উপরের হাদিস অনুসারে, আমরা যখন আল্লাহ’র রাসূল (সঃ) এর উপর দুরুদ পড়ি তখন তিনি তা শোনেন এবং এর জবাব দেন। অন্য সূত্র থেকে আমি শুনেছি, আল্লাহ’র ওলিদের শরীর মাটি গ্রহণ করে না, অর্থাৎ তাদের দেহ কবরে অবিকৃতই থাকে। নিঃসন্দেহে রাসূল (সঃ) এর দেহের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য হবে।

বিভিন্ন বুজুর্গের জীবনে রাসূল (সঃ) এ কে স্বপ্নে দেখার কথা এসেছে, এটা অস্বাভাবিক বিষয় নয়। বুজুর্গদের জীবনে “কারামাত” এর অস্তিত্ব ছিল। সেদিন আমি ডঃ হিসাম আল আওয়াদি’র একটা ইংরেজি লেকচার শুনছিলাম। সেখানে বর্ণনায় এসেছিল, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বাল (রঃ) যখন খাওয়ারিজদের কারণে তৎকালীন শাসক দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছিলেন, তখন এক পর্যায়ে তার পাজামা খুলে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তখন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন যেন তার ইজ্জত রক্ষা হয়। এবং একপর্যায়ে তার পাজামা নীচে খুলে না পড়ে গিয়ে নিজে নিজেই উপরে উঠে এসেছিল।

আপনি ফাজায়েলে আ’মলের যে ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন, সেখানে সেই সম্মানিত আল্লাহর বুজুর্গ শায়েখ আবুল খায়ের কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর কাছে খাবার চাননি বরং তিনি তার মেহমান হতে চেয়েছেন। আপনি যদি আমার বাসায় মেহমান হন, তবে যে খাবার আপনি আমার উছিলায় খাচ্ছেন সেটা কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক! আমি কিন্তু এই সম্পদের মালিক না ! আল্লাহ পাকের যাকে খুশি যেভাবে খুশি দিতে পারেন। এখানে বুজুর্গ রাসূল(সঃ) এর মেহমান অর্থাৎ তার উছিলায় আল্লাহর কাছ থেকে রিজিক প্রদত্ত হয়েছেন। আলেম ওলামারা আমার চেয়ে এই বিষয়টি ভাল ব্যাখ্যা করতে পারবেন।

একটা ব্যাপার হয়ত বিবেচনায় আনা যেতে পারে যে, সব ধরণের ঘটনা সবার সামনে প্রকাশ না করা। বুজুর্গদের কারামাতের কাহিনী হয়ত সবাই সহজভাবে নিতে পারবে না, যেমনটা আপনি পারেন নি। তবে কিছু ব্যাপার বুঝতে হলে আপনাকেও একটা certain লেভেল পর্যন্ত মেহনত করতে হবে, জ্ঞান অর্জন করতে হবে। প্রথমেই যদি আপনি কোন বিষয়ে খারাপ ধারনা পোষন করে বসে থাকেন, তবে আপনি সে বিষয়ের গভীরে ঢুকতে পারবেন না। তাবলীগে আমি যতটুকুই সময় ব্যয় করেছি, সেখানে আমি এমন কোন শিরকী আকিদা পাইনি যেমনটি আপনি বলছেন। সারা জীবন এটাই শুনেছি যে, আল্লাহই সব ক্ষমতার মালিক, যা কিছু আসে তার তরফ থেকেই আসে, মাখলুকের কোন ক্ষমতা নেই।

কিছু ব্যক্তি/গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে তাবলীগের কুৎসা রটনায় লিপ্ত। এদের ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকবেন। তাবলীগের সাথে জড়িত সবার সব কিছু আপনার ভাল না লাগতেই পারে। কিন্তু, সার্বিকভাবে এই মেহনতটার দিকে খেলায় করুন, এর মত সার্বজনীন মেহনত আর নেই। এই মেহনত প্রান্তিক লেভেল এর মানুষের কাছে যাচ্ছে, মানুষকে ঈমান এবং আ’মালের দিকে দাওয়াত দিচ্ছে। আমি কোন দিন তাবলীগের কোন বয়ানে শিরকী আকিদা বয়ান করতে শুনি নাই ! এ বিষয়ে জনাব ইউসুফ সুলতানের একটা খুব ভাল লেখা আমি আমার ব্লগে শেয়ার করেছি, পড়ে দেখবেন।

ব্যাক্তি জীবনে আহলে হাদিস, জামাত-শিবির, তাবলীগ, জসীমুদ্দিন রাহমানি সাহেবের অনুসারী, এরকম বহু মতের মানুষের সাথে মেশার সুযোগ হয়েছে। সুতরাং, কে কি করছে সেটা মোটামুটি জানি। চরমপন্থার নাম ইসলাম না ! কথায় কথায় খুন করে ফেলার নাম ইসলাম না ! তাই যদি হত, তবে আল্লাহ’র রাসূল(সঃ) পর্বতের ফেরেশতাকে বলে তায়েফ শহরকে গুড়িয়ে দিতেন, মসজিদে প্রস্রাব করা কাফেরকে সেখানেই মেরে ফেলতেন। আল্লাহর রাসূল(সঃ) সেটা করেন নি, আমাদেরকেও শিক্ষা দেন নি সেটা। রাসূলের (সঃ) জীন্দেগিতে ছিল উম্মতের জন্য অগাধ ভালবাসা, সেটা শুধু মুসলিম নয়, কেয়ামতের আগ পর্যন্ত যত মানুষ আসবে সবার জন্য…
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×