somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসংগঃ লা মাযহাবী - সহীহ হাদিস এবং আমার সাধাসিধে ভাবনা

১৩ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন ফেইসবুকে জনাব লুতফর রহমান ফরায়েজী সাহেবের একটা ভিডিও শেয়ার দিয়েছিলাম, যেখানে তিনি ইদানিং কালে নতুনভাবে জেগে ওঠা লা মাযহাবী গ্রুপের বিশিষ্ঠ আলেম মুফতী কাজী ইব্রাহীম সাহেব নারী পুরুষের নামাযের ভিন্নতার ব্যাপারে কিভাবে একটি হাদিসকে আংশিক উদ্ধৃত করত সত্য লুকিয়েছেন সেটা চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়েছেন। লুতফর সাহেব একেবারে তাওহীদ পাবলিকেন্সের প্রকাশিত বুখারী গ্রন্থ থেকে পুরো হাদিসটা শুনিয়ে স্পষ্টই বলে দিলেন কিভাবে কাজী ইব্রাহিম সাহেব হাদিসের অপব্যাখ্যা করেছেন। বাস্তবতা হল, ওনারা এটা প্রতিনিয়তই করে যাচ্ছেন। কেন করছেন সেটা আল্লাহ ভাল জানেন।

ভিডিওটি এখানে দেখুনঃ


সেখানে আমার এক বন্ধুও তার কিছু বক্তব্য রেখেছিলেন এবং ওনার সাথে আমার কিছু আলাপ হয়েছিল। মনে হল যে আমি আমার স্বল্প জ্ঞানে যে ব্যাপারগুলো উপলব্ধি করেছি সেটা ব্লগেও শেয়ার করি।

লা মাযহবী ভাইয়েরা বলে থাকেন ওনারা কুরআন এবং সহীহ হাদিস এর অনুসরণ করে থাকেন। যদিও বাস্তবতা হল, ওনাদের এই বিশেষ স্টাইলটাই একটা নতুন মাযহাব হয়ে গিয়েছে!

বর্তমানে লা মাযহাবী ভাইয়েরা যেইভাবে “সহীহ হাদিস” টার্মটার অপব্যবহার শুরু করেছেন, তাতে এই লা মাযহাবী মাযহাব মূলতঃ একটা অসম্পূর্ণ মাযহাব হয়ে গিয়েছে। “সহীহ হাদিস” এর নামে ওনারা মূলতঃ মানুষকে কিছু অসম্পূর্ণ বিষয়ের দিকে দাওয়াত দিচ্ছেন। কিভাবে? আচ্ছা, বলি।

কালামুল্লাহ ডট কম নামে একটা ওয়েব সাইট আছে। সেখানে এই লিংকে ডঃ হিসাম আল আওয়াদি সাহেবের (http://www.kalamullah.com/hesham-alawadi.html) কিছু লেকচার নামিয়ে আমি শুনেছি। ভদ্রলোকের আলোচনা আমার বেশ ভাল লেগেছে। কি শুনেছি?

১। The Four Great Imams
২। Life of Imam Bukhari

এই দুটো আলোচনা শুনে আমি আপনাদের একটা সারাংশ বলি। চার ইমামের মধ্যে ইমাম আবু হানিফা (রঃ) সবচেয়ে সিনিয়র (৮০ হিজরিতে জন্ম, ইরাকের কুফা নগরীতে)। কুফায় হিজরত করা সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর এলেমের সিলসিলা থেকে মূলতঃ জ্ঞান লাভ করেছেন। ইমাম হাম্মাদ (রঃ) ওনার প্রধাণ ওস্তাদ ছিলেন। বড় মাপের মুহাদ্দিসও ছিলেন, প্রায় ৫৫ বার হজ্জ্ব করেছেন এবং এসব সফরে মক্কা মদীনার আলেম ওলামাদের থেকে জ্ঞান লাভ করেছেন। প্রায় ৭ বছর মক্কাতেই ছিলেন। উপরন্তু হযরত আলী (রাঃ) এর খিলাফাও কুফাতে ছিল, সুতরাং আলী (রাঃ) এর সিলসিলা থেকেও ওনার কাছে জ্ঞান এসেছে। ইমাম মালেক (রঃ), ইমাম শাফিই (রঃ), ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ), এনারা পরপর এসেছেন, এক ইমাম আরেক ইমামের ছাত্র/বন্ধু ছিল। চার প্রধান মাযহাবের ইমামগণ মুজতাহিদ হওয়ার সাথে সাথে বড় মাপের মুহাদ্দিসও ছিলেন, তা না হলে তারা আমাদের জন্য ফিকহী মাসয়ালা মাসায়েল প্রণয়ন করে যেতে পারতেন না। জানা যায়, ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর দশ লক্ষের উপর হাদিস জানা ছিল।

প্রথম বিষয়/বিভাগ ভিত্তিক হাদিস লিপিবদ্ধকারী ইমাম বুখারী (রঃ) কিন্তু ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) এর বন্ধু/ছাত্র ছিলেন। সময়ের বিচারে উনি চার প্রধান ইমামের খুব বেশী দূরে ছিলেন না। এমনিভাবে সিহাহ সিত্তা সংকলনকারী ইমামগণ কিন্তু সম সাময়িক ছিলেন। ইমাম বুখারী (রঃ) কে যখন একটা বিষয়ে ভুল বোঝাবোঝির কারণে তার নিজ শহর বুখারায় প্রবেশ করতে দেননি তখনকার শাসক, তখন ইমাম বুখারী (রঃ) বর্তমান ইরানের খোরাসান রাজাভি প্রদেশের শহর নেইশাবুর শহরে আসেন এবং সেখানে একমাত্র ইমাম মুসলিম (রঃ) তাকে সাপোর্ট দেন। আর কোন আলেম ওলামা সেই সময় ইমাম বুখারী (রঃ) এর পক্ষ নেন নি। আলহামদুলিল্লাহ, ইমাম মুসলিম (রঃ) এর স্মৃতি বিজড়িত নেইসাবুর শহর সফর করার সৌভাগ্য হয়েছে। ইমাম মুসলিম (রঃ) নেইসাবুরেই জন্মগ্রহণ করে এবং সেখানেই ইন্তেকাল করেন।

যে জন্য এত কথা, ইমাম বুখারী (রঃ) নিজে বলেছেন যার সারকাথাটা এরকম, “আমার এলেমের ভান্ডারে ৬ লক্ষের বেশী সহীহ হাদিস রক্ষিত আছে, কিন্তু, সহীহ আল জামাতে (বুখারী শরীফে) আমি মাত্র ৭২৭৫ টি হাদিস লিপিবদ্ধ করে গেলাম, তা নাহলে বইয়ের আকার অনেক বড় হয়ে যাবে।“ ওনার জীবনী শুনে দেখেন, এক বসাতে হাজার হাজার হাদিস বলে গেছেন মজলিশে। অন্য ছাত্ররা ওনার হাদিস শুনে নিজেদের লেখা সংশোধন করত। ইমাম মুসলিম (রঃ) একবার এক হাদিস শুনেছেন যেটা তার জানা ছিল না। এত দিন পরেও কেন উনি এই হাদিস পান নাই, সেই জন্য উনি ওনার নিজের দলিল দস্তাবেজ ঘাটছিলেন আর একটা একটা করে খেজুর মুখে দিচ্ছিলেন। এতটাই মগ্ন ছিলেন যে কত খেজুর খাচ্ছেন তার খবর ছিল না। অতিরিক্ত খেজুর খেয়ে ঐ হাদিস খুজতে খুজতে ইমাম মুসলিম (রঃ) ইন্তেকাল করে যান! আল্লাহু আকবার!

যাহোক, ইমাম বুখারী (রঃ) ঐ ৭২৭৫ টি হাদিসকে বিভিন্ন অধ্যায়ে টপিক ওয়াইজ ভাগ করেছেন, তাতে একই হাদিস বিভিন্ন অধ্যায়ে এসেছে। তাই বুখারী শরীফে ইউনিক হাদিস আছে ৪৩৭৫ টির মত। ইমাম বুখারী (রঃ) যদি আজকের যামানার এই অবস্থার কথা জানতেন, আমি নিশ্চিত উনি সারা জীবন হাদিসের বই লেখার পেছনে ব্যয় করে দিতেন যাতে ৬ লক্ষ হাদিস পুরোটাই লিপিবদ্ধ করা যায়! ইমাম বুখারী (রঃ) তার গ্রন্থে যেই হাদিসগুলো রেখেছেন, ইমাম মুসলিম (রঃ) চেষ্টা করেছেন সেগুলোর বাইরের হাদিস লিপিবদ্ধ করতে। একই কাজ করেছেন ইমাম নাসাঈ (রঃ)। সব মিলিয়ে সিহাহ সিত্তায় আছে সম্ভবতঃ ২৭/২৮ হাজারের মত হাদিস।

তাহলে, আজকে যদি কেউ বলে যে আমরা শুধু সহীহ হাদিসের উপর আ’মল করব, তাহলে কি ওনারা আল্লাহর নবীর (সঃ) সম্পূর্ণ সুন্নাহ এর উপর আ’মল করতে পারবেন? সব হাদিস কি আমাদের কাছে এসেছে লিপিবদ্ধ আকারে? পূর্ববর্তী ইমামগণ যদি তাদের মাসয়ালা মাসায়েল প্রণয়নের ক্ষেত্রে সেসব হাদিসের সাহায্য নিয়ে থাকেন যেগুলো আমাদের কাছে লিপিবদ্ধ আকারে আসেনি, তাহলে সেটা কি আজকে আমাদের কাছে ভুল হয়ে গেল?? আজকের লা মাযহাবী আলেম ওলামাদের কাছে সব দলিল আছে, আজ থেকে ১৩০০ বছর আগের ওলামাদের কাছে কোন দলিল ছিল না?

চার মাযহাবের এত বড় বড় ইমামদের ওনারা তুচ্ছ জ্ঞান করেন, এইটা ভুল, সেইটা ভুল, এই ধরণের কথা বলার যোগ্যতা কি এই যামানার কোন আলেম ওলামার আছে? মুফতি কাজী ইব্রাহীম সাহেবের আলোচনা আমারো খুব ভাল লাগত। আমি নিজে উত্তরা ৭ নাম্বার সেক্টরের মসজিদে বসে ওনার নতুন নতুন মাসয়ালা মাসায়েল শুনেছি আর অবাক হয়েছি, হায় কি ভুলই না এত দিন করেছি! পরে যখন বিষয়টার আরো গভীরে গেলাম, তখন বুঝলাম যে এনাদের কিছু দায়িত্বহীনতাও আছে। হাজার বছর ধরে ওলামারা যে মাসয়ালা মাসায়েল আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন, সেটাকে "সহীহ হাদিস" এর কথা বলে মহুর্তেই বাতিল করে দেয়াটা মোটেই কোন দায়িত্বশীল আচরণ নয় যেখানে সাধারণ মানুষের মধ্যে "এখতেলাফ" এর নূন্যতম ধারণাও নেই!

আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন আর আল্লাহ আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন, আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×