somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিপ্লবী কিংবা আঁতেল কবি

৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর পাঁচেক আগের কথা। এক অনুষ্ঠানে আমাকে আবৃত্তি করতে অনুরোধ করা হয়। আমি কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর “আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি” কবিতাটি আবৃত্তি করি। আমি যতদূর জানতাম আমার আবৃত্তি খুব একটা খারাপ নয়। আর সেজন্যেই বোধ হয় আয়োজকপক্ষ আমাকে অনুরোধটি করার স্পর্ধা করেছিলেন। আমি আমার কণ্ঠের আর হৃদয়ের সমস্ত দরদ উজার করে আবৃত্তি করার চেষ্টা করি। কিন্তু কবিতাটি বেশ দীর্ঘ। আর অনুষ্ঠানটি ছিল মুলতঃ একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান। উপস্থিত দর্শক এক পর্যায়ে তাদের বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। আমি চরম লজ্জিত আর অপমানিত হই। এবং প্রতিজ্ঞা করি মানুষের বোধোদয় না হওয়া পর্যন্ত আর কোনদিন কোন মঞ্চে উঠে কবিতা আবৃত্তি করব না।

সঙ্গত কারণেই “আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি” কবিতার কিছু লাইন উদ্ধৃতি দিচ্ছিঃ
‘যে কবিতা শুনতে জানে না
সে সন্তানের জন্য মরতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে ভালোবেসে যুদ্ধে যেতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে সূর্যকে হৃদপিন্ডে ধরে রাখতে পারে না’

‘যে কবিতা শুনতে জানে না
শস্যহীন প্রান্তর তাকে পরিহাস করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মাতৃস্তন্য থেকে বঞ্চিত হবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে আজন্ম ক্ষুধার্ত থেকে যাবে’

সত্যি করে বলুন তো, আপনার চারপাশের কতজন মানুষ মন থেকে আজ কবি আর কবিতা ভালবাসে? আপনি ভালবাসেন কি? আপনি ভালবাসলেও আপনার স্ত্রী বা বান্ধবী ভালবাসে কি? আপনার স্ত্রী ভালবাসলেও আপনার সন্তানেরা ভালবাসে কি? কিংবা আপনার পিতা মাতা? আপনার খুব কাছের বন্ধুরা? আমি জানি, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উত্তরটা ঋণাত্মক হবে। আজ আপনার কাছে কবি মানেই চুল দাঁড়ি না কাটা একটি অমানুষ। কবি মানেই গঞ্জিকা সেবক কিংবা পাড়ার বখাটে। কবি মানেই পাঁচবার প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া কোন আধপাগল। কবি মানেই শীতকাল এলে গোসল না করা একটি অস্বাস্থ্যকর এবং অস্বস্তিকর কোন বাউন্ডুলে। কবি মানেই দুশ্চরিত্র কিংবা নারীমাংসলোভী কোন বদমায়েশ। কথাগুলো খুব মিথ্যা বললাম কি? আজ আমাদের দেশের আমজনতার মনে ঠাই পাওয়া বিশ্বাস আর ধারনার কথা বলছি।

আমাদের সমাজে কবি আর পতিতার মধ্যে আজ কোন পার্থক্য নাই। দুই দলকেই আম জনতা এক চোখে দেখে। ধিক্কার দেয়। পতিতা যেমন অন্ধকার ঘরে পতিতা, বাইরে এসে সে তার আসল পরিচয় তুলে ধরতে লজ্জা পায়, তেমনি কবি পরিচয় বাইরের মানুষ জেনে যাওয়া যেন অসীম লজ্জার।

আজ আমাদের কবিতা শুনতে চরম বিরক্তি। রাজনীতিবিদদের অখাদ্য প্রলাপ কিংবা মিথা প্রতিশ্রুতি শুনতে কোন বিরক্তি নেই। মহানায়ক অনন্ত জলিলের মুখে ইংরেজী শুনতে কোন বিরক্তি নেই। রাম শাম যদু মদুর কণ্ঠে অশ্রাব্য গান শুনতেও কোন বিরক্তি নাই। আপনি সারাদিন টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন উনাদের কণ্ঠনিঃসৃত অমর শ্রুতিমধুর বাণী শুনতে। বিরক্তি তো দুরের কথা, উৎসাহ আর উচ্ছ্বাসে কোন কমতি হবেনা আপনার ।

আপনি একজোড়া রামছাগলের প্রেম উপাখ্যান লিখেছেন। নাম দিয়েছেন “বোরকা পরা সেই মেয়েটি” কিংবা “ময়না, জল আনিতে যায়না”। প্রকাশক সাহেব নিশ্চিন্তে, নির্দ্বিধায় তা ছাপাতে রাজি হবেন। যদি শুধু একবার বলেছেন, ভাইয়া আমি একটি কবিতাগ্রন্থ প্রকাশ করিবার ইচ্ছা পোষণ করিয়াছি। প্রকাশক সাহেবের ভ্রু সাথে সাথে কুঞ্চিত হয়ে যাবে। আপনাকে পাল্টা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হবে। আর তার প্রথম প্রশ্নটি হবে, “কবি সাহেব, আপনি কতটাকা দিতে পারবেন আপনার কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের জন্য?”

আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কবে বদলাবে? আমাদের দেশে আর কোন রবীন্দ্রনাথ-নজরুল কেন জন্মায় না? কবিতা কি রাষ্ট্রের কিংবা সমাজের কোন উপকারে আসেনি? কবিতা কি বলেনি “আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন! আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন” কিংবা “ভাত দে হারামজাদা তা না হলে মানচিত্র খাবো”? কবিতা কি আমাদের সাম্যের, দ্রোহের, প্রেমের, প্রতিবাদের, অধিকার আদায়ের কিংবা ঐকতানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি? তাহলে কেন আজ আমরা কবিতাবিমুখ? কবিতার প্রতি আমাদের কেন এই অবজ্ঞা?

কবি মানে কেন আজ বিপ্লবী নয়? কবি মানে কেন প্রেমিক কিংবা সংগ্রামী নয়? কবি মানে কেন একজন স্বাভাবিক মানুষ নয়? এর আংশিক উত্তর আমার নিজেরই জানা আছে। উত্তরটা হল, কবিতার গুনগত মান আজ চরমভাবে নিম্নমুখী। কবির সংখ্যা বেড়েছে, গুণগত মানসম্পন্ন কবিতার সংখ্যা খুব একটা বাড়েনি। “গাছ থেকে খেজুর পরে, তোমার কথা মনে পরে” মার্কা কবিতা দিয়ে আজকের দিনের পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবেনা। এই দেশে কিন্তু একসময় জনৈক এক বিখ্যাত রাজনীতিক আর অখ্যাত কবির কবিতাকে কটাক্ষ করে বলা হয়েছিল “সব শালাই কবি হতে চায়”।

আজ আমায় আঁতেল কবি বলতে চান, নির্দ্বিধায় বলে ফেলুন। শুধু একটা অনুরোধ, কবি কিংবা কবিতা শব্দগুলি শুনেই অবজ্ঞাভরে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন না। ভালবাসতে বলছিনা, শুধু সাথে থাকার অনুরোধ করছি। জেনে রাখুন কাল এই বাংলা ভাষায় কবিতার বিপ্লব হবে। তখন দেখব, কী বলেন আমাকে। আঁতেল কবি বলবেন নাকি বিপ্লবী বলবেন? হ্যাঁ, আমি এবং আমরাই ঘটাবো সেই বিপ্লব। ওয়েট এন্ড অবজার্ভ ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:১৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×