somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনোগ্যামির ভুত

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভদ্রলোকেরা শুনলে আশ্চর্য হৈবেন, মাত্র পনের বছর বয়সে আমার ‘অভিষেক’ হয়। সেইটা কবুল করে আমারই দুই বান্ধবী, পিঠাপিঠি দুই বোন সুলেখা আর জুলেখা। ওরা আমার সাথে একই কাশে পড়ত, নিজেদের কমনরুমের দরজায় দাঁড়ায়া দাঁড়ায়া আমারে বর্ম বানায়া আগ্রাসী পোলাপানের সাথে লাগাতার টাংকি চালাইত, আর একান্তে আমারে ‘আব্বা’ কৈয়া ডাকত। আমি দুইজনারেই সমান স্নেহ করতাম, হস্তমৈথুনকালে এদের নিয়া ভাবনার পালাক্রম কোনোদিনও ভাঙতাম না। তবে মনে মনে আমারও ছিল মনোগ্যামাস হৈবার ঝোঁক। কিন্তু কী এক অদ্ভুত নৈতিকতার কারণে ততটুকু ভাববার সাহস হৈত না। তাই আমি ভাবতাম একটা মিরাকলের কথা, একটা দমকা ঝড়, যেটা এই দায়িত্ববোধ ও যৌনমমতার ত্রিভুজ ভাইঙ্গা আমারে হয় সুলেখা না হয় জুলেখা’র সাথে একটি সার্বজনীন পরিবারপ্রথার প্রশ্রয়ে সেফটিপিন দিয়া আটকায়া দেবে। এসব-ই ভাবতাম আমি ঘাড় নোয়াইয়া, কলেজ থিকা বাড়ি ফিরবার সারাটা হাঁটা-পথে।

সুলেখা আর জুলেখা বছরের পর বছর হারমোনিয়াম বাজায়া স্টেজে গান গাইত ; ঠাকুরের ‘শ্যামা’ নাইচা প্রাইজ পাইত ; কাশে পালাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় হৈত ; সিগারেট, ব্রা-প্যান্টি ও প্যাড শেয়ার করত ; একে অপরের প্রক্সি হৈয়া লম্বা লম্বা সব প্রেমপত্র রিসিভ করত। আমি তাদের জীবনে আসলাম দারুণ এক ক্যামোফ্লাজের সম্ভাবনা লৈয়া। আমি যেন সুলেখাদের পানের বরজে একটা সবুজ ঢোঁড়াসাপ, যেন জুলেখাদের খড়ের গাদার মধ্যে একটা সোনালি সূঁই, যেন-বা কলেজের মহিলা হোস্টেলের ডাইলের মধ্যে শুকনা মরিচের বেশে মরা-আরশোলা, অথবা সুলেখাদের মামা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের পাবলিক রিলেশন্স অফিসারের মত কর্পোরেট নিঃস্পৃহা!

একটা দুর্দান্ত গরিবি ছিল আমার চেহারার প্লাসপয়েন্ট। বিরল কিছু ভাঁজ ছিল মুখমন্ডলে, ক্রমাগত অপ্রস্তুত থাইকা থাইকা সেইগুলা অর্জন করেছিলাম আমি। তাতে আমারে নিশ্চয়ই খচ্চরের মত সম্ভাবনাহীন দেখাইত! নইলে, মধ্যদুপুরে আমিসমেত সুলেখাদের শোবার ঘরের দরজা বন্ধ হৈয়া গেলেও সুলেখাদের মা’র ভাতঘুমে তিলমাত্র ব্যাঘাত হৈবে না কেন? বরং সেফসাইডে থাইকা অনেকখানি ‘লিবারাল’ প্রতিবেশ মেয়েদের জন্য নিশ্চিত করার শান্তিতেই যেন তিনি সারা বিকাল নাক-ডাকা ঘুম ঘুমাইতেন। জানতাম, আমার গরিবি-ই আমার শক্তি; যে কারণে ছেলে-সহপাঠীরা আমায় ‘কোদাইল্যা দাঁত’ বৈলা ডাকত, ঠিক সেইখানেই আমার সম্ভাবনা। আপাতত আমার রিপ্লেসমেন্ট নাই। অংশত এ কারণে, আর অংশত হয়ত ‘হাবা’ শব্দের প্রণোদনা থিকা আমারে ওরা ‘আব্বা’ ডাকত। আর পুরুষের পলিগ্যামির উত্তেজনায় দুই বোনের সৌহার্দ্য আরো ঘন হৈয়া উঠত।

এভাবেও চলতে পারত অনেকদিন। এইরকম লম্বা একটা ইনট্রো’র মধ্যে এই গল্পটা চিরকালের জন্য আটকায়া থাকতেও পারত।

কিন্তু থাকল না। একদিন আমি মোঃ জালালউদ্দিন, পিতামৃত দবিরউদ্দিন, সাকিন ঘোড়াকান্দা, ভৈরববাজার তিন ভাইবোনের বয়োজ্যেষ্ঠতাসহ সুলেখা বা জুলেখার সামনে নিজেই আস্ত একটা মনোগ্যামি হৈয়া গেলাম। বলাবাহুল্য, সেই বদ্ধ পুকুরে ঝাঁপ দিবার প্রস্তুতি সুলেখা বা জুলেখা কারোরই ছিল না। প্রথম প্রথম ওরা খেয়ালই করল না যে, আমার হাঁটু কাঁপতেছে, কম-কম যাইতেছি তাদের বাড়িতে, গেলেও ঘন-ঘন বারান্দায় যাইতেছি, সিগারেটে বেমক্কা টান দিয়া নাকেমুখে কাশতেছি। ওরা জানলই না যে, আমার হস্তমৈথুন ব্যাহত হৈতেছে, আয়নামোড়া হেয়ারকাটিং সেলুনঘরে গেলে আমার লজ্জা-লজ্জা লাগে, আর আমার ছোট বোন ডলি’র সখের ফেয়ার এন্ড লাভলী’র কৌটা নির্ধারিত সময়ের আগেই খালি হৈয়া যাইতেছে !

বুঝল খালি একজন, আমার মা।

: কি রে, সন্ধ্যাবেলা কী ধুইতেছস ?

: শার্ট, মা।

: কালকা ও তো ধূইছিলি ? ডেলি ডেলি শার্ট ধোয়া ক্যান?

: কেরাসিনের গন্ধ করে, মা।

পিঠাপিঠি ছোট ভাই আলাল বাজারে কেরোসিন বেচে। দুই ভাই এক চৌকিতে ঘুমাই।

: কেরাসিন বেচয়ার গতরে কি আতরের গন্ধ করব নাকি, হারামির পোলা ?

আমি কথা কই না। কাপড়ে সাবান ঘষতে থাকি।

: কিছু একটা হৈছে তোর। চামড়া য্যান ফর্সা ফর্সা লাগে!

: কী যে কও মা ?

আমার সারাশরীর কাঁপতে আরম্ভ করে। মনে হয়, যে চিঠি আমি এখনও লেখি নাই, বা যে চিঠির চেহারা কেমন হবে এখনও ভাইবা শেষ করতে পারি নাই, মা যেন সেই চিঠি পড়ার চেষ্টা করতেছে। মা যেন সেই অস্ফূট চিঠির সামনে আমারে হ্যান্ডকাফ পরায়া দাঁড় করায়া দিতেছে। এরপর থিকা কী এক শংকায় মা অপ্রতিরোধ্য হৈয়া উঠে, পুলিশের মত হানা দিতে আরম্ভ করে আমার একা-একা-থাকা ভাবনার মুহূর্তগুলার মধ্যে।

: কী করস ?

: কিছু না, মা।

: তয় বই খুইলা উপরের দিকে চাইয়া রইছস ক্যান ?

: ঘাড় ব্যথা করতেছে।

আমার মা, চিরকাল ঘাম-না-শুকানো মা, পেঁয়াজের গন্ধ-ভরা মা আইসা পাশে দাঁড়ায়। ঘাড়ে হাত রাখে। কী যেন শোঁকে। হাত সরায়া দেই।

: ঘাড় ভাইঙ্গা ফালামু হারামির পোলা। মিছা কথা কৈছস। হৈছে কি তর? কি হৈছে, কস না বা’জান?

বাড়ি থিকা বাইর হৈয়া নদীপারের বোল্ডারের ওপর বৈসা থাকি। বোল্ডারের ফাঁকফোকড় দিয়া সুড়ুৎসুড়ুৎ কৈরা চিকন সাপ পালায়। এইসমস্ত সাপের হাবভাব রূপকথার সুতাশঙ্খের মত হৈলেও বিষ নাই একফোঁটাও। বোল্ডারের চিপার মধ্যে ঘর বানায়া থাকে, বাইর হৈলে কাউয়াকুলি ঠোকরায়, বদমাইশ পোলাপানে লেজে ধৈরা চরকিঘুরান দিয়া নদীতে ছুঁইড়া মারে। তবু তারাও সাপ। নদীপারে থাকে। আর নদীটারে দেখতেও কত শান্তসুবোধ লাগে, যেন তার কোনোই জিজ্ঞাসা নাই। যেন তার মাংস খাওয়ার দাঁত কবেই সে সাগরে ভাসায়া দিছে! কিন্তু তারও যে অলিতে গলিতে কত মেশামেশি! কত কত প্রকাশ্য ও গুপ্ত প্রণয়!

এইরকম একটা নদীর সামনে নিজেরে কিন্তু খুব যে হিপোক্র্যাট লাগে, এমন না। কিন্তু সারাণ একটাই ভাবনা আমার: কার সাথে প্রকাশ্য হৈতে চাই আমি? সুলেখা না জুলেখা? সুলেখা আমারে ঠোঁটে চুমু খাইতে দেয় না ঠিক, কিন্তু যখন আশ্লেষে জড়ায়া ধরে তখন পূর্বাপর ভুইলা যাই। আবার জুলেখা যদিও বক্ষবন্ধনী না খুইলাই বক্ষবন্দিত হৈতে আদেশ করে -- কিন্তু রাস্তা যখন নিঝুম হৈয়া যায়, তখন বিকাল সাড়ে-তিনটার বারান্দায় অপেক্ষমান জুলেখার কি কোনো তুলনা হৈতে পারে এই জগতে? মনের মধ্যে কে বেশি প্রকাশ্য হৈয়া উঠতেছে? সুলেখা, নাকি জুলেখা?

: ক'স না বা’জান, কী হৈছে তর ? ডাক্তার দেখামু ?

মা’র অপ্রতিরোধ্য উদ্বেগ। মটকা মাইরা থাকি, যেন ঘুমায়া গেছি। পাশে আলাল আইসা শোয়। শুইয়াই ঘুমায়া পড়ে। ঘুমের মধ্যে হাবিজাবি নানাকিছু কয়। ওর গা থিকা বাইর হওয়া কেরোসিনের গন্ধে আমার পেট ফুইলা ঢোল হৈয়া ওঠে। দূরে পাহারাদার হাঁকডাক দেয়। রেলস্টেশনের লোহার পাতে ঢং ঢং ঘণ্টি বাজাইতে বাজাইতে রাত ফুরায়। গলির মোড়ের কাছে দুয়েকটা কুকুর বিরতি দিয়া-দিয়া সারারাতই ঘেউ ঘেউ করে। আর ভ্রাম্যমাণ পতিতার সাথে খদ্দেরের ফিসফিস সমঝোতার আলাপ আমাদের বেড়ার ঘরের পাশ দিয়া কাছেই কোথাও থিতু হৈয়া যায়।

চোখ লাল নিয়া কাশে যাই। পরপর তিনটা ক্লাশটেস্টে ফেল করি। ফিজিক্সের ম্যাডাম এই সুযোগে আমার গরিবিরে খোঁচা দিয়া নানান কটু কথা বলেন। আমার কোদাইল্যা দাঁত নিয়া বলেন, এমনকি কেরোসিনের ব্যবসা নিয়া পর্যন্ত। সুলেখা ও জুলেখা যথারীতি উজ্জ্বল। যথারীতি ফার্স্ট ও সেকেন্ড। মৌমাছির মত একে অপরের পরীক্ষার খাতার মধু খায়। দেইখা আমার কী যে তৃপ্তি হয়, ম্যাডামের কথা আরেক কান দিয়া বাইর হৈয়া যায়। কিন্তু কমনরুমের দরজায় আর দাঁড়াই না। টিফিন পিরিয়ডে নদীপারে বৈসা থাকি। দেখি, নদীর অলিতে গলিতে কত মেশামেশি! কত কত প্রকাশ্য ও গুপ্ত প্রণয়!

নদীপারে বৈসা থাকতে থাকতে সন্ধ্যা হৈয়া যায় কোনো-কোনো দিন। ঘাটে নোঙর-করা কার্গোলঞ্চগুলার আনলোড চলতেই থাকে। এর মধ্যেই মাস্টার-ব্রিজের ছাদে উইঠা সারেং মাগরিবের নামাজ পড়ে। কার্গোর পিছনের ঝুলন্ত টয়লেট থিকা পানির মধ্যে ঝুপ ঝুপ কৈরা গু পড়ে, নাতিদীর্ঘ একটা আলোড়ন হয় নিচে প্রায়ান্ধকারে, সান্ধ্যকালীন মৎস্যসমাজে। তারপর আস্তে আস্তে নদী আবার নিস্তরঙ্গ হৈয়া যায়। বুঝি, আজ এইটুকই তার প্রকাশনা। জগত প্রকাশ্য হৈবার গতি এত ধীর -- দেইখা বিস্ময় লাগে! গর্ভিনীর মত স্নেহে আর যত্নে ঐ বিস্ময়টারে বাড়ি নিয়া যাই আমি। সেদিন রাতে ভাল ঘুম হয়, স্বপ্ন দেখি আমার নিজের একটা ড্রয়ার হৈছে -- তালা দেয়া যায়। খালি ড্রয়ারে তালা লাগায়া রাস্তাঘাটে আতিপাঁতি কৈরা গোপন জিনিস খুঁজতেছি। ড্রয়ারে রাখার জন্য। কিন্তু কোথাও কোনো গোপন জিনিস পাওয়া যাইতেছে না। শেষে মিউনিসিপ্যালিটির ড্রেনের ধারে বৈসা পেশাব করতেছি আর হু হু কৈরা কাঁদতেছি। নিজের জন্য গোপন একটা জিনিস খুঁইজা না-পাওয়ার শোকে।

: কী হৈছে তোমার?

সুলেখা ও জুলেখা একদিন জিগায়। এম্নিতেই। রুটিন জিজ্ঞাসা।

: ক্যান? কী হৈব?

আমার রুটিন উত্তর।

: কম কম আসো ক্যান?

: আসি তো!

: উহু...কিছু একটা হৈছে।

: না না।

: আমার বুকে হাত রাইখা কও।

: না।

: ক্যান?

সুলেখা চমকায়। চমকায় জুলেখা। শোয়া থিকা উইঠা বসে সে।

: ক্যান? না করলা ক্যান?

: ভাল্লাগে না।

: ভাল্লাগে না! ওরে? নাকি আমারে?

আমি নিরুত্তর।

: কারে ভাল্লাগে না? কও?

আমি অধোমুখ।

অপমানে হাউমাউ কৈরা কাঁদে সুলেখা, জুলেখার কাঁধে মাথা রাইখা। জুলেখাও কাঁদে, তার মাথা রাখার জন্য আমি আমার নিজের কাঁধ বাড়ায়া দেই। কিন্তু সে মাথা সরায়া নেয়, দেখি চোখ দিয়া আগুন ঠিকরাইতেছে। যেন সে জুলেখা নয় -- যেন জোহরা, আর আমিই সেই ইব্রাহিম কার্দি, তার পিতার বুকে ছুরি বসায়া দিছি! জুলেখা তার বোনেরে পরম মমতায় আগলায়া রাখে, তারপর দ্বিতীয় দফায় জড়াজড়ি কৈরা দুইবোনে অনেকক্ষণ কাঁদে। এই রক্তাক্ত প্রান্তরে যথার্থ ট্র্যাজিক নায়কের মতই আমি মাথা নিচু কৈরা থাকি, মনে মনে খুব ভারমুক্ত লাগে। সেই শয়তানটা আজ গর্ত থিকা বাইর হৈতেছে তাইলে? কল্পনায় আমার স্বপ্নের ড্রয়ারটার হ্যান্ডেলে হাত বুলাই।

: শোনো, তুমি আমাদের বাসায় আর কোনোদিন আসবা না। কোনোদিন না। আর কাউরে যদি কিছু কও, তাইলে ধৈরা আইন্যা কাইট্যা ফালাইব বাবায়। আমার বাপে কিন্তু খুব খারাপ মানুষ!

একরকম কোরাসেই বলে তারা। নাক কোঁচকায়া রাখে, বুঝিবা আমার গা থিকা এই প্রথম কেরোসিনের গন্ধ পাইল। আস্তে কৈরা বাইর হৈয়া যাই। খুব ফূর্তি লাগে আমার তখন, রাস্তায় রাস্তায় হাঁটি আর হাঁটি। খুব হালকা লাগে। জগতের সবচেয়ে সুখী মানুষের মত বাকিতে একটা ফেয়ার এন্ড লাভলী ক্রিম কিনি -- বোনের জন্য। আর বাড়িতে ঢুকবার পথে ঠিক বুঝতে পারি, আমাকে আরো যাইতে হৈবে ঐ বাড়িতে। আরো আরো অনেকবার।

আমি যাইতেই থাকি। প্রতিদিন একবার কৈরা।

ওরা আমার সাথে ওদের সাক্ষাৎ ড্রয়িং রুমে শিফ্ট করল। তবু আমি যাইতেই থাকি। এক গ্লাস শরবত দিয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসায়া রাখল একা একা। তবু আমি যাইতেই থাকি। ভিতরে থাইকাই কাজের মেয়েলোক দিয়া ‘বাসায় নাই’ বৈলা দিল পত্রপাঠ বিদায় দিল অনেকবার। তবু আমি যাইতেই থাকি। গিয়া, প্রবেশাধিকার পাইলে, চুপচাপ বৈসা থাকি। ওরা আমায় কিছুই জিজ্ঞেস করে না। আমিও বলি না কিছু। কিন্তু আমি যাইতেই থাকি। কে জানে, আমারে দেখলেই হয়ত বোঝে ওরা। ভুতে পাইছে আমারে। মনোগ্যামির ভুত।

একদিন সুলেখা-জুলেখাদের পাড়ার রোমিওরা আমার পথ আগলায়া দাঁড়াইল। খুচরা চড়চাপড় দিল, শার্টের কলার ধৈরা ঝাঁকাইল, ঘাড়ে চুন লাগায়া দিল।

: কী মামু, আপনেরও খাড়ায় নাকি?

: খুব রাস্তা চিন্যা ফালাইছস, হওরের পোলা!

: ধর। বিচি কাইট্টা খাসি কৈরা দে হালারে।

: ঐ ... কেরাসিনের লিটার কত রে!

আমি তাদের দিকে শূন্যদৃষ্টিতে তাকায়া থাকি। কথা ফুরাইলে পিছন দিক ফিরা হাঁটা দেই। পিছন পিছন ধাওয়া করে সমবেত হাসির হুল্লোড়। ঐ হুল্লোড়ের মাঝ থিকা আমি সুলেখার আর জুলেখার হাসি ঠিক ঠিক চিনতে পারি। কিন্তু চমকাই না, ঘাড়ও ফিরাই না। এই প্রকাশ্য মহড়ায় আমার এখন কী যায় আসে? আমার তো জানতে হবে কে প্রকাশ্য হৈতেছে আমার ভিতরে। খালি ড্রয়ারটা যে তালাবদ্ধ হৈয়া হা হা করতেছে!

বাড়িতে ফিরার পথে আলাল আমারে থামায়।

: ভাইজান, কৈ থিকা আসছ? জুতা কৈ তোমার? শার্ট ছিঁড়লা কেম্নে?

আমি কিছু কওনের আগেই মা আইসা আমারে বেড় দিয়া ধৈরা আগলায়া ফেলে। মা’র হাতের ফাঁকফোকড় দিয়া আলালের তেড়ে-তেড়ে আসা নিস্ফল আগ্রাসন দেখি:

: ছাড় মা... ছাইড়া দেও! পুঙ্গির পুতের পাগলামি আজগা ছুটামু। নিজের রক্ত পানি কৈরা লেখাপড়া করাইতেছি বড়লোকের মাইরধর খাওনের লাইগা? ঐ...তুই না বড়ভাই! শরম করে না তর? তর কারণে মাইনষে যে আমারে মারল, আমার দোকান উঠায়া দিল!

আমি বিড়বিড় কৈরা কী যেন বলি। মা মাতম শুরু করে বুক চাপড়ায়া। আমার মাথার চুলে পুরা দুইকোশ হিমসাগর তেল দিয়া চুবা-চুবা কৈরা দেয় ডলি। মা’র মাতম চলতেই থাকে।

: কেডা আমার এই সর্বনাশটা করল? কোন্ পেট-লাগানি আমার বাপ-মরা সিধা পোলাটার মাথা খাইল গো! কেডা রে , বাপ?

সেইটাই তো আমি জানতে চাইতেছি, মা!


সেপ্টেম্বর ২০০৫

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:৩৩
৫৮টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×