somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" দ্যা ফরগটেন নেইম - নিকোলা টেসলা "

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সমসাময়িক সময়ের থেকে চিন্তা-চেতনা ও জ্ঞান-বুদ্ধিতে এগিয়ে থাকার সমস্যা ও রয়েছে । কারণ এতে সমাজের মানুষের ভুল বোঝার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে । সময়ের থেকে শত বছর বেশি এগিয়ে থাকা নিকোলা টেসলা ও সেই একই সমস্যার একজন বড় ভুক্তভোগী ছিলেন । নিকোলা টেসলা - এক হারিয়ে যাওয়া মহারথীর নাম ।

নিকোলা টেসলার সমসাময়িক বিজ্ঞানীরাও তাকে ঈর্ষার চোখে দেখতেন । নিকোলা টেসলা নিজেকে বিজ্ঞানী না বলে ইনভেন্টর বলতে পছন্দ করতেন । টেসলা অসম্ভব জিনিয়াস ছিলেন । "পৃথিবীর সবচেয়ে স্মার্ট মানুষ হবার অনুভূতি কেমন" এই প্রশ্নের উত্তরে একবার আইনস্টাইন বলেছিলেন "আমি জানি না , আপনি নিকোলা টেসলা কে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন ।" টেসলা ছিলেন মানবতাবাদী আবিষ্কারক । আজ আমরা যেই AC CURRENT ব্যবহার করি তা টেসলার ই অবদান । অথচ যে থমাস আলভা এডিসন কে আমরা পুঁজো করি , যেই থমাস আলভা এডিসন হওয়া একজন তরুণ মনের লালিত স্বপ্ন , সেই থমাস আলভা ছিলেন টেসলার এই আবিস্কারের ঘোরতর বিরোধী ।

কারণ এডিসন বুঝতে পেরেছিলেন টেসলার এসির কাছে তার ডিসি মার খেয়ে যাবে । এডিসনের ব্যবসায়িক লোকসান হবে । তাই এডিসন টেসলা এবং টেসলার আবিষ্কৃত এসি কারেন্ট কে হেয় করার জন্য জনসমুখে একটি কুকুর কে এসি ইলিক্ট্রিক শক দিয়ে সবার সামনে মেরে ফেলে এবং এসি কারেন্ট এর ভয়াবহ দিক নিয়ে জনগন কে ভুল বোঝাতে থাকেন । মাঝখান থেকে ফায়দা লোটে অ্যামেরিকান পুলিস । তারা টেসলার এসি কারেন্ট কে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি কে ইলেক্ট্রিক চেয়ারে বসিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কাজে ব্যবহার করত যা আমরা অনেকেই গ্রিন মাইল সিনেমায় দেখেছি । কি বীভৎস - এসি / ডিসি যুদ্ধ থেকে জন্ম নিয়েছিল আধুনিক সভ্যতার ঘৃণ্যতম আবিস্কার - ইলেক্ট্রিক চেয়ার । আসলে ব্যধি ই সংক্রামক্ , স্বাস্থ নয় ।



এভাবে বড় বড় অনেক মানুষের প্রাইড অনেক বড় আবিস্কার কে হেয় করেছে । কিন্তু টেসলা নিজেও জানতেন তার আবিস্কারের শক্তি সম্পর্কে । তিনি তার আবিস্কার সম্পর্কে খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন । আজ তো টেসলার আবিস্কার ছাড়া পৃথিবী ই অচল । টেসলা ছিলেন মানবতাবাদী বিজ্ঞানী । তিনি চেয়েছিলেন পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষের জন্য ফ্রি ইলেক্ট্রিসিটি দিয়ে যেতে । তিনি সফল ও ছিলেন সে চেষ্টায় । কিন্তু ক্যাপিটালিজম এর যুগে কোন ব্যাবসায়ি তাতে রাজি হন নি । হবেন ই বা কেন ? পৃথিবীর সবাই ফ্রি এ্যানার্জি পেলে তেল গ্যাস কিনবে কে ? কোটি কোটি ডলার ইনকাম হবে কি করে ? এনার্জি ব্যবসাই তো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যবসা ।

টেসলা তার সময়ের থেকে এগিয়ে থেকে , পৃথিবীর গ্রেট গ্রেট মাইন্ডদের একজন হয়েও তার নাম যে লোকচক্ষুর অন্তরালে তার অন্যতম কারণ তিনি ব্যবসায়িদের চক্ষুশূল এ পরিনত হয়েছিলেন । আরও একটি কারণ অন্যান্য বিজ্ঞানীদের ঈর্ষা । ইগো খুব খারাপ জিনিশ , আরও খারাপ বড় মানুষদের ইগো । টেসলার নাম কম উচ্চারিত হবার পিছনে আরও একটি কারণ হল - টেসলার আবিষ্কৃত সুত্র ও ইনভেনশন মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং এ গোপন ফিউচারস্টিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে । টেসলা কখন চান নি তার আবিস্কার মানবতার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে । তাই তিনি তার ফর্মুলা কে পাজল আকারে রেখা গিয়েছিলেন এমন কি পাজল কে কয়েক ভাগে ভাগ করে কিছু অংশ অ্যামেরিকায় , কিছু অংশ রাশিয়ায় এবং কিছু অংশ চায়নায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । টেসলার উদ্দেশ্য ছিল এককভাবে কেউ যেন তার আবিস্কার কে মানবতার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে না পারে । এবং পাজলের সমস্যা সমাধানে তিন অংশকেই এগিয়ে আসতে হবে বিশ্ব শান্তির ছায়াতলে । কিন্তু কোন দেশ ই টেসলার মতামত কে গুরুত্ব দিল না । তারা টেসলার পাজলের খণ্ডাংশ নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মারণাস্ত্র তৈরিতে ।

স্যটেলাইট থেকে ডেথ রে মারার যে সিন আমরা সিনেমা তে দেখি তা আসলে সাইন্সফিকশন মনে হলেও প্রায় আরও একশ বছর আগে টেসলা তা ডিজাইন ও এক্সপেরিমেন্ট করে গিয়েছেন । তার ওই এক্সপেরিমেন্ট এর নাম ছিল "হারনেসিং কসমিক রে" (Harnessing Cosmic Ray) তবে টেসলার উদ্দেশ্য ছিল ফ্রি এন্যার্জি । সামনে আমি টেসলা সম্পর্কে আরও যা কিছু বলব তা শুনে আপনাদের শুধু গায়েই কাটা দেবে কারণ আমরা এগুলো শুধু সাই-ফাই মুভিতে দেখেই অভ্যস্ত । এসি কারেন্ট আবিস্কারের পর টেসলা কাজ শুরু করেন কিভাবে ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কে ওয়্যারলেসলি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় । টেসলা টাওয়ার নামে তিনি কিছু ইলেক্ট্রিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন টাওয়ার তৈরি শুরু করেন যেখান থেকে এক কিলোমিটার দুরেও কোন বাল্ব অনায়াসে জ্বলে উঠবে । এটাকে বলা হয় ইলেক্ট্রডিনামিক্স ইনডাকশন । কিন্তু হটাত করে টেসলার ফান্ডিং বন্ধ হয়ে যায় কারণ ফাইন্যান্সার কোনভাবে টের পেয়েছিলেন যে টেসলা তার আবিস্কার টেলিকমিউনিকেশনস এর পরিবর্তে মানুষকে ফ্রি এ্যনার্জি দেওয়ার কাজে ব্যবহার করবেন । টেসলা তার এই আবিস্কার সম্পূর্ণ করতে পারলে আজ ইলেক্ট্রিসিটির জন্য আমাদের দরকার হত শুধু একটি অ্যান্টেনা । আবারও ব্যবসায়ি ও অ্যামেরিকান গভর্নমেন্ট এর বিরোধিতার মুখে পড়লেন টেসলা ।

টেসলার অনেক অনেক ইনভেনশন এর মধ্যে আরেকটি ছিল "টেসলাস্কোপ" । তিনি মহাবিশ্বে এক্সট্রা ট্রেস্ট্রিয়াল যোগাযোগের জন্য টেসলাস্কোপ বানিয়েছিলেন । মহাবিশ্বে তিনি অ্যালিয়েন সিগ্ন্যাল ট্রেস করতে পেরেছিলেন বলে টেসলা বলে গিয়েছেন । তবে এর পক্ষে প্রমাণিত কোন যুক্তি ছিল না । টেসলাস্কোপ যে শুধু এক্সট্রা ট্রেস্ট্রিয়াল যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হত তা না , মহাবিশ্বের কসমিক এ্যনার্জি কে পৃথিবীর জন্য ব্যবহার উপযোগী করার কাজেও টেসলা ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন ।

টেসলা ছিলেন দেশপ্রেমিক । যদিও তিনি যুদ্ধ ঘৃণা করতেন কিন্তু দেশের সুরক্ষার জন্য তিনি ডেথ রে বানানোর প্রোজেক্ট হাতে নিয়েছিলেন । ডেথ রে ছিল ডিফেন্স সিস্টেমের অংশ যা তিনি যুদ্ধ প্রতিরোধ করার কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন । ডেথ রে ছিল আশি হাজার ভোল্ট এর হাই পাওয়ারড পার্টিকেল বিম যা ২৫০ কিমি দূরের যে কোন লক্ষবস্তু কে ছাই বানিয়ে দিতে যথেষ্ট ছিল । ডেথ রে তার যাত্রা পথের সবকিছু ভেদ করে চলে যেতে পারত । ব্রিটিশ ও অ্যামেরিকান সরকার যদিও এই প্রোজেক্ট কে পাত্তা দেন নি কিন্তু রাশিয়ান সরকার টেসলা কে ডেথ রে বানানোর ব্যাবস্থা করে দেন । ডেথ রে নিয়ে অনেক কন্সপিরেসি থিওরি রয়েছে যা আজ আমি আলোচনা করছি না ।

মানব সভ্যতার অনেক আকাংখার মধ্যে একটি ছিল আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা। পৃথিবী ও পৃথিবীর জীবনের জন্য নিরাপদ আবহাওয়া তৈরি করা । এখানেও টেসলা । টেসলা তার আইডিয়া দিয়ে গ্লোবাল থার্মোস্ট্যাট এর মত পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার একটা পদ্ধতি বের করেছিলেন । স্বতন্ত্র্য রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে পৃথিবীর আয়োনস্ফিয়ার কে প্রভাবিত করার মাধ্যমে বিশাল আকারের স্ট্যান্ডিং ওয়েভ (see wiki for standing wave) তৈরি করা যা পরবর্তীতে বায়ুর গতিপথ নিয়ন্ত্রনে ব্যবহার করা হয় । আর বায়ুর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ মানেই আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ । টেসলা প্রমাণ ও করে গিয়েছেন আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় তরঙ্গ সৃষ্টি করা সম্ভব । এখানেও ষড়যন্ত্র । অ্যামেরিকান সরকার বলেন যে এই আবিস্কার ভুল কার হাতে গেলে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হতে পারে । এখানেও দমিয়ে দেওয়া হয় টেসলা কে ।

এছাড়াও "কোল্ড ফায়ার" , "এক্স - রে গান" , "লাইটিং দা ওয়ার্ল্ড থিওরি" , টেসলা অসিলোস্কোপ সহ ৭০০ এর উপর পেটেন্ট রয়েছে এই মহান বিজ্ঞানী ও ইনভেন্টর এর নামে । কিন্তু আফসোস ব্যবসা , রাজনিতি , ষড়যন্ত্র এবং ইগো এর নামে কবর দেওয়া হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা এক নাম কে । চিরজীবন মানব সভ্যতার জন্য কাজ করে যাওয়ার অপরাধে মানব চক্ষুর ই অন্তরালে পাঠিয়ে দেওয়া হল টেসলা কে ।

জানুয়ারির ৭ , ১৯৪৩ - বৃহস্পতিবার । সারা পৃথিবী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত । সমগ্র নিউ ইয়র্ক আলো ঝলমল করছে টেসলার এসি কারেন্টে । রাত সাড়ে দশ টা । নিউ ইয়র্ক হোটেলের একটি ছোট্ট কামরায় অন্ধকারে বসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন নিকোলা টেসলা । আলোর জগতে পৃথিবীকে রেখে একাকি চলে গেলেন নিঃসঙ্গ অন্ধকার জীবনে।

লেখার এই পর্যায়ে এসে আমি আবেগি হয়ে যাই । পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উর্বর মস্তিস্ককে তার মানবতাবাদী আবিস্কারের জন্য ম্যাড সাইন্টিস্ট উপাধি দেওয়া হয় । এমন কি সুপার ম্যান এর মত জনপ্রিয় কার্টুনে ম্যাড সাইন্টিস্ট ক্যারেক্টারে যে ভিলেন কে দেখানো হয় তা নিকোলা টেসলা ই ছিলেন । ইন্টিলিজেন্স এর এমন অপমান দেখলে এই সমাজ কে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হয় । কোন জিনিয়াস কপালে এত অনাদর আর অবজ্ঞা হয়ত কোনদিন ই জুটবে না ।

কিন্তু যতদিন সত্যান্বেষী মন পৃথিবীতে থাকবে তারা খুজে ফিরবে টেসলাকে আর টেসলা বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে । বিকজ আইডিয়াস আর বুলেটপ্রুফ !!!সমসাময়িক সময়ের থেকে চিন্তা-চেতনা ও জ্ঞান-বুদ্ধিতে এগিয়ে থাকার সমস্যা ও রয়েছে । কারণ এতে সমাজের মানুষের ভুল বোঝার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে । সময়ের থেকে শত বছর বেশি এগিয়ে থাকা নিকোলা টেসলা ও সেই একই সমস্যার একজন বড় ভুক্তভোগী । একটি হারিয়ে যাওয়া নাম ।

এমনকি তার সমসাময়িক বিজ্ঞানীরাও তাকে ঈর্ষার চোখে দেখতেন । নিকোলা টেসলা নিজেকে বিজ্ঞানী না বলে ইনভেন্টর বলতে পছন্দ করতেন । টেসলা অসম্ভব জিনিয়াস ছিলেন । "পৃথিবীর সবচেয়ে স্মার্ট মানুষ হবার অনুভূতি কেমন" এই প্রশ্নের উত্তরে একবার আইনস্টাইন বলেছিলেন "আমি জানি না , আপনি নিকোলা টেসলা কে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন ।" টেসলা ছিলেন মানবতাবাদী আবিষ্কারক । আজ আমরা যেই AC CURRENT ব্যবহার করি তা টেসলার ই অবদান । অথচ যে থমাস আলভা এডিসন কে আমরা পুঁজো করি , যেই থমাস আলভা এডিসন হওয়া একজন তরুণ মনের লালিত স্বপ্ন , সেই থমাস আলভা ছিলেন টেসলার এই আবিস্কারের ঘোরতর বিরোধী ।

কারণ এডিসন বুঝতে পেরেছিলেন টেসলার এসির কাছে তার ডিসি মার খেয়ে যাবে । এডিসনের ব্যবসায়িক লোকসান হবে । তাই এডিসন টেসলা এবং টেসলার আবিষ্কৃত এসি কারেন্ট কে হেয় করার জন্য জনসমুখে একটি কুকুর কে এসি ইলিক্ট্রিক শক দিয়ে সবার সামনে মেরে ফেলে এবং এসি কারেন্ট এর ভয়াবহ দিক নিয়ে জনগন কে ভুল বোঝাতে থাকেন । মাঝখান থেকে ফায়দা লোটে অ্যামেরিকান পুলিস । তারা টেসলার এসি কারেন্ট কে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি কে ইলেক্ট্রিক চেয়ারে বসিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কাজে ব্যবহার করত যা আমরা অনেকেই গ্রিন মাইল সিনেমায় দেখেছি । কি বীভৎস - এসি / ডিসি যুদ্ধ থেকে জন্ম নিয়েছিল আধুনিক সভ্যতার ঘৃণ্যতম আবিস্কার - ইলেক্ট্রিক চেয়ার । আসলে ব্যধি ই সংক্রামক্ , স্বাস্থ নয় ।

এভাবে বড় বড় অনেক মানুষের প্রাইড অনেক বড় আবিস্কার কে হেয় করেছে । কিন্তু টেসলা নিজেও জানতেন তার আবিস্কারের শক্তি সম্পর্কে । তিনি তার আবিস্কার সম্পর্কে খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন । আজ তো টেসলার আবিস্কার ছাড়া পৃথিবী ই অচল । টেসলা ছিলেন মানবতাবাদী বিজ্ঞানী । তিনি চেয়েছিলেন পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষের জন্য ফ্রি ইলেক্ট্রিসিটি দিয়ে যেতে । তিনি সফল ও ছিলেন সে চেষ্টায় । কিন্তু ক্যাপিটালিজম এর যুগে কোন ব্যাবসায়ি তাতে রাজি হন নি । হবেন ই বা কেন ? পৃথিবীর সবাই ফ্রি এ্যানার্জি পেলে তেল গ্যাস কিনবে কে ? কোটি কোটি ডলার ইনকাম হবে কি করে ? এনার্জি ব্যবসাই তো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যবসা ।

টেসলা তার সময়ের থেকে এগিয়ে থেকে , পৃথিবীর গ্রেট গ্রেট মাইন্ডদের একজন হয়েও তার নাম যে লোকচক্ষুর অন্তরালে তার অন্যতম কারণ তিনি ব্যবসায়িদের চক্ষুশূল এ পরিনত হয়েছিলেন । আরও একটি কারণ অন্যান্য বিজ্ঞানীদের ঈর্ষা । ইগো খুব খারাপ জিনিশ , আরও খারাপ বড় মানুষদের ইগো । টেসলার নাম কম উচ্চারিত হবার পিছনে আরও একটি কারণ হল - টেসলার আবিষ্কৃত সুত্র ও ইনভেনশন মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং এ গোপন ফিউচারস্টিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে । টেসলা কখন চান নি তার আবিস্কার মানবতার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে । তাই তিনি তার ফর্মুলা কে পাজল আকারে রেখা গিয়েছিলেন এমন কি পাজল কে কয়েক ভাগে ভাগ করে কিছু অংশ অ্যামেরিকায় , কিছু অংশ রাশিয়ায় এবং কিছু অংশ চায়নায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । টেসলার উদ্দেশ্য ছিল এককভাবে কেউ যেন তার আবিস্কার কে মানবতার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে না পারে । এবং পাজলের সমস্যা সমাধানে তিন অংশকেই এগিয়ে আসতে হবে বিশ্ব শান্তির ছায়াতলে । কিন্তু কোন দেশ ই টেসলার মতামত কে গুরুত্ব দিল না । তারা টেসলার পাজলের খণ্ডাংশ নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মারণাস্ত্র তৈরিতে ।

স্যটেলাইট থেকে ডেথ রে মারার যে সিন আমরা সিনেমা তে দেখি তা আসলে সাইন্সফিকশন মনে হলেও প্রায় আরও একশ বছর আগে টেসলা তা ডিজাইন ও এক্সপেরিমেন্ট করে গিয়েছেন । তার ওই এক্সপেরিমেন্ট এর নাম ছিল "হারনেসিং কসমিক রে" (Harnessing Cosmic Ray) তবে টেসলার উদ্দেশ্য ছিল ফ্রি এন্যার্জি । সামনে আমি টেসলা সম্পর্কে আরও যা কিছু বলব তা শুনে আপনাদের শুধু গায়েই কাটা দেবে কারণ আমরা এগুলো শুধু সাই-ফাই মুভিতে দেখেই অভ্যস্ত । এসি কারেন্ট আবিস্কারের পর টেসলা কাজ শুরু করেন কিভাবে ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কে ওয়্যারলেসলি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় । টেসলা টাওয়ার নামে তিনি কিছু ইলেক্ট্রিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন টাওয়ার তৈরি শুরু করেন যেখান থেকে এক কিলোমিটার দুরেও কোন বাল্ব অনায়াসে জ্বলে উঠবে । এটাকে বলা হয় ইলেক্ট্রডিনামিক্স ইনডাকশন । কিন্তু হটাত করে টেসলার ফান্ডিং বন্ধ হয়ে যায় কারণ ফাইন্যান্সার কোনভাবে টের পেয়েছিলেন যে টেসলা তার আবিস্কার টেলিকমিউনিকেশনস এর পরিবর্তে মানুষকে ফ্রি এ্যনার্জি দেওয়ার কাজে ব্যবহার করবেন । টেসলা তার এই আবিস্কার সম্পূর্ণ করতে পারলে আজ ইলেক্ট্রিসিটির জন্য আমাদের দরকার হত শুধু একটি অ্যান্টেনা । আবারও ব্যবসায়ি ও অ্যামেরিকান গভর্নমেন্ট এর বিরোধিতার মুখে পড়লেন টেসলা ।

টেসলার অনেক অনেক ইনভেনশন এর মধ্যে আরেকটি ছিল "টেসলাস্কোপ" । তিনি মহাবিশ্বে এক্সট্রা ট্রেস্ট্রিয়াল যোগাযোগের জন্য টেসলাস্কোপ বানিয়েছিলেন । মহাবিশ্বে তিনি অ্যালিয়েন সিগ্ন্যাল ট্রেস করতে পেরেছিলেন বলে টেসলা বলে গিয়েছেন । তবে এর পক্ষে প্রমাণিত কোন যুক্তি ছিল না । টেসলাস্কোপ যে শুধু এক্সট্রা ট্রেস্ট্রিয়াল যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হত তা না , মহাবিশ্বের কসমিক এ্যনার্জি কে পৃথিবীর জন্য ব্যবহার উপযোগী করার কাজেও টেসলা ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন ।

টেসলা ছিলেন দেশপ্রেমিক । যদিও তিনি যুদ্ধ ঘৃণা করতেন কিন্তু দেশের সুরক্ষার জন্য তিনি ডেথ রে বানানোর প্রোজেক্ট হাতে নিয়েছিলেন । ডেথ রে ছিল ডিফেন্স সিস্টেমের অংশ যা তিনি যুদ্ধ প্রতিরোধ করার কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন । ডেথ রে ছিল আশি হাজার ভোল্ট এর হাই পাওয়ারড পার্টিকেল বিম যা ২৫০ কিমি দূরের যে কোন লক্ষবস্তু কে ছাই বানিয়ে দিতে যথেষ্ট ছিল । ডেথ রে তার যাত্রা পথের সবকিছু ভেদ করে চলে যেতে পারত । ব্রিটিশ ও অ্যামেরিকান সরকার যদিও এই প্রোজেক্ট কে পাত্তা দেন নি কিন্তু রাশিয়ান সরকার টেসলা কে ডেথ রে বানানোর ব্যাবস্থা করে দেন । ডেথ রে নিয়ে অনেক কন্সপিরেসি থিওরি রয়েছে যা আজ আমি আলোচনা করছি না ।

মানব সভ্যতার অনেক আকাংখার মধ্যে একটি ছিল আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা। পৃথিবী ও পৃথিবীর জীবনের জন্য নিরাপদ আবহাওয়া তৈরি করা । এখানেও টেসলা । টেসলা তার আইডিয়া দিয়ে গ্লোবাল থার্মোস্ট্যাট এর মত পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার একটা পদ্ধতি বের করেছিলেন । স্বতন্ত্র্য রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে পৃথিবীর আয়োনস্ফিয়ার কে প্রভাবিত করার মাধ্যমে বিশাল আকারের স্ট্যান্ডিং ওয়েভ (see wiki for standing wave) তৈরি করা যা পরবর্তীতে বায়ুর গতিপথ নিয়ন্ত্রনে ব্যবহার করা হয় । আর বায়ুর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ মানেই আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ । টেসলা প্রমাণ ও করে গিয়েছেন আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় তরঙ্গ সৃষ্টি করা সম্ভব । এখানেও ষড়যন্ত্র । অ্যামেরিকান সরকার বলেন যে এই আবিস্কার ভুল কার হাতে গেলে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হতে পারে । এখানেও দমিয়ে দেওয়া হয় টেসলা কে ।

এছাড়াও "কোল্ড ফায়ার" , "এক্স - রে গান" , "লাইটিং দা ওয়ার্ল্ড থিওরি" , টেসলা অসিলোস্কোপ সহ ৭০০ এর উপর পেটেন্ট রয়েছে এই মহান বিজ্ঞানী ও ইনভেন্টর এর নামে । কিন্তু আফসোস ব্যবসা , রাজনিতি , ষড়যন্ত্র এবং ইগো এর নামে কবর দেওয়া হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা এক নাম কে । চিরজীবন মানব সভ্যতার জন্য কাজ করে যাওয়ার অপরাধে মানব চক্ষুর ই অন্তরালে পাঠিয়ে দেওয়া হল টেসলা কে ।

জানুয়ারির ৭ , ১৯৪৩ - বৃহস্পতিবার । সারা পৃথিবী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত । সমগ্র নিউ ইয়র্ক আলো ঝলমল করছে টেসলার এসি কারেন্টে । রাত সাড়ে দশ টা । নিউ ইয়র্ক হোটেলের একটি ছোট্ট কামরায় অন্ধকারে বসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন নিকোলা টেসলা । আলোর জগতে পৃথিবীকে রেখে একাকি চলে গেলেন নিঃসঙ্গ অন্ধকার জীবনে।

লেখার এই পর্যায়ে এসে আমি আবেগি হয়ে যাই । পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উর্বর মস্তিস্ককে তার মানবতাবাদী আবিস্কারের জন্য ম্যাড সাইন্টিস্ট উপাধি দেওয়া হয় । এমন কি সুপার ম্যান এর মত জনপ্রিয় কার্টুনে ম্যাড সাইন্টিস্ট ক্যারেক্টারে যে ভিলেন কে দেখানো হয় তা নিকোলা টেসলা ই ছিলেন । ইন্টিলিজেন্স এর এমন অপমান দেখলে এই সমাজ কে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হয় । কোন জিনিয়াসের কপালে এত অবজ্ঞা আর অনাদর হয়ত কোনদিন ই জুটবে না ।

কিন্তু যতদিন সত্যান্বেষী মন পৃথিবীতে থাকবে তারা খুজে ফিরবে টেসলাকে আর টেসলা বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে । বিকজ আইডিয়াস আর বুলেটপ্রুফ !!!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০৫
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×