আমার মা-খালাদের নিয়ে গল্প! আমার তিন খালা, আমি তাদের তিন জন কেই সিরিয়াস রকম ভয় পাই। তিন জনেই বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ে চাকুরী করেছেন কিংবা করেন, এবং আমাদের জেনারেশনের কাছে তারা কিছু দিক দিয়ে হার মানেন নাই।
মা-কে নিয়ে ছিল আমার ভীষন ভয়। মেঝো খালার সাথে বের হইনি তেমন, তবে বড় খালা আর আমার মা তীব্র আতঙ্কের মানুষ। কেন পরে ব্যাখ্যা করছি। তখন আমরা ছোট, আপনার বয়স যদি আমার কম হয়, আপনারা আরো ছোট। মা-খালাদের শপিং এর প্রিয় জায়গা ছিল নিউ মার্কেট, গুলশান ডিসিসি মার্কেট, আর হচ্ছে অভিজাত লোকদের ছিল ইষ্টার্ন প্লাজা। ইন ফ্যাক্ট ইস্টার্ন প্লাযা ছিল অভিজাত লোকেদের শপিং মল! ম্যান, সেখানে তখন সিড়ি এমনিই উপরে উঠত, বেয়ে উঠত, আজ তুমরা যাহাকে এস্কেলেটর বল! বিটিভিতে এডভার্টাইজ করত, শপিং এর রাজা, ইষ্টার্ণ প্লাজা! ন্যু-মার্কেট আর গাওছিয়া আমার শুরুর দিকে ছিল খুব প্রিয় জায়গা, ইনফ্যাক্ট সারা মিরপুর রোডে এছাড়া হট-হাট ছাড়া কোন ভাল খাওয়ার জায়গা ছিল না, আর থাকলেও তা ছিল চাইনীজ কুইজিন।
তবে অচীরেই আমার ন্যু-মার্কেট এর এর নাম শুনলে জরুরী খেলা কিংবা কাজ পরে যেত! বাবা ছাড়া সংসারে আমাদের মায়ের দুই বাহন ছিল আমি আর সুইট্যাপু। সে আবার তখন হলিক্রসের প্রিফেক্ট, সেই ভাবস এন পার্টজ তার। আমাকে কয়েকদিন যেতে হল। ইউজুয়ালী আমরা যেতাম বাসে কিংবা রিক্সায়। কিন্তু অচীরেই বাসে উঠে আমি বমির ভাব শুরু করলাম, আমি মায়ের সাথে নিউমার্কেট যাব না। মা লোভ দেখাতেন ফুচকা-বার্গার-টিউলিপ! আচ্ছা, টিউলিপ খেয়েছেন কে কে? স্নো ম্যান এর মত দেখতে, মাথার দিকে ফুটোতে ষ্ট্র ঢুকিয়ে ভেতরের জুস খেতে হত! যাইহোক, কিছুদিনের মাঝেই আমার মত সাধু-সন্যাসী পার্থিব লোভ বিসর্জন দিয়ে ফেলল, আমি কোনভাবেই মা/খালার সাথে শপিং এ যাবনা!
বাবা থাকলে তেমন ভয় পেতাম না। বাবারা হলেন বট গাছ, সারা জীবন ছায়া হয়ে থাকেন। কিন্তু বাবার দেখা পাওয়া মুষ্কিল। তবু শপিং এ তো যেতে হয়, নাকি?
আমার মনে আছে, আমাদের বাসার প্রথম আলনা ছিল ঢাকা কলেজের সামনে থেকে কেনা। আমরা বাবা-মা সন্তানেরা একসাথে রিক্সার পেছনে বেধে নিয়ে এসেছিলাম! কি আনন্দ, কি আনন্দ!
এখনো কি সেখানে ফার্ণিচার বানায়?
আচ্ছা, অনেক স্মৃতিচারণ হল, এখন বলি কিসের ভয়! আমার ধারণা ছিল, যে কোন দোকানদার সবাই মিলে আমাকে কিংবা আম্মুকে পেটাবে। আম্মু মহিলা মানুষ বেচেঁ যাবে, কিন্তু আমাকে যদি ধরে বেধে রাখে, তখন? হাফ প্যান্ট পড়া, হাস মার্কা তেল দেয়া টেরি ছাটের আমি ছোটবেলা থেকেই ভীতু, মারাত্তক রকম ভীতু।
ধরেন আম্মা নিভিয়া ক্রীম কিনতে কোন দোকানে গেছেন, ক্রীম দেখবে, প্যাকেট খুলবে, ষ্টীকার তুলবে, হাতে লাগাবে, তার পর বলবে নাহ ভাই, এইটা তো আসলটা না! কি বিপদ! আবার যখন আসল টা পাওয়া যাবে, তখন বলবে কত করে? দোকান দার বলবে আপা সবার জন্য আড়াই হাজার, আপনার জন্য বাইশশ! অরিজিনিয়াল আম্রিকান! আম্মা মুখ আরো গম্ভীর করে বলতেন এক দাম দুইশ টাকা দিব!
আমি তখন তীব্র আতঙ্কিত হতাম, মাথায় ভো কাট্টা চক্কর লেগে যেত, এই বুঝি দোকানদার দের গণ পিটুনি শুরু হয়, বাইশশ টাকার জিনিস কেউ দুইশ টাকা বলে? কি অপমান, কি অপমান!! আরো খারাপ লাগত যখন দেখতাম অরিজিনিয়াল আড়াই হাজার টাকা দামের বিদেশী ক্রীম আম্মু আড়াইশ/তিনশ টাকায় কিনে ফেলতেন!
তবে মায়েরা ভীষণ বোকা হয় জানেন! একটু আগে জণৈক নায়িকার সাথে আমার আপ্লোড করা ছবি আপনারা কেউ তাকে দেখান, আমার জীবন জেরবার হয়ে যাবে, বাজারী কোন মেয়ের সাথে আমি আসলেই ছবি তুলিনি এটা বোঝাতে!
আমি এখনো ভয় পাই!
নানা রঙের স্মৃতির পালক, যখন আমি ছোট্ট বালক!