somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতারণার ফাঁদ

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফয়েজ লেকের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এমন সময়ে এক জায়গায় প্রচুর ভিড় দেখে কৌতূহলবশে দাঁড়িয়ে পড়লেন। উঁকি দিয়ে দেখে হয়তো চমকে যাবেন। রাস্তায় খেলা দেখানোর জন্য যেসব বানর ব্যবহার করা হয়, সেই আকারের একটি পুতুল চেয়ারে বসে আছে। একেবারেই ছোট একটা মুখ আর শরীর। ধবধবে সাদা শরীরের পুতুলটিকে মাথা নাড়তে দেখে আরেকবার চমকে যাবেন। এ যে পুতুল নয়। সত্যিকারের একটা মেয়েশিশু!


‘এটা কি কথা বলতে পারে?’ ‘পারে তো। মেরী বলে ডাক দিলে সাড়া দেবে’। উৎসাহী দর্শকদের প্রশ্নের জবাব দেন পাশে দাঁড়ানো এক মহিলা। ‘মেয়েটা আপনার কি হয়? বয়স কত?’ হাতে, গলায় আর শরীরে নানান গহনা পরা মহিলাটি মুখে থাকা পান চিবুতে চিবুতে হেঁসে উত্তর দেন, ‘এইটা আমার মেয়ে। বয়স নয় বছর।’
আশ্চর্য শারীরিক গঠনের শিশুটিকে দেখে দর্শকদের কৌতূহল বাড়ে। ভিড়ও বাড়ে। ‘পাটকাঠির মত শরীর’ প্রবাদটি হয়তো কেবল বইয়ের লাইন বলে আওড়ানো মানুষেরাও দেখে স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। শিশু মেরীর শরীর আসলেই পাটকাঠির মত। নয় বছরের একটা শিশু অদ্ভুতভাবে একটা ছোট শরীরে আটকে গেছে বলে মনে হয়। ছোট প্লাস্টিকের চেয়ারে পা মুড়ে বসলে একটা বানরের সাইজের চেয়ে বেশি বলে মনে হয় না। মুখটাও এতটুকুন।
নিজেকে মা দাবি করা রওশন আরা নামের মহিলাটি থেকে জানা গেলো, জন্মের পর একটি সুস্থ শিশুর মতই ছিলো মেরীর স্বাস্থ্য। কিন্তু বাড়ন্ত শরীরের পর থেকেই নাকি এমন অসুস্থতার শিকার সে। তিনি জানালেন, ‘ডাক্তার বলেছে ওর ব্রেইনে শর্ট। অনেক চিকিৎসা করাইছি। কিন’ এমন হবে জানলে আগে চিকিৎসাও করাইতাম না।’


‘ব্রেইন শর্ট’ কি আর তার চিকিৎসায় কত খরচ হয়েছে জানা না গেলেও, মেরীর শারীরিক আকৃতি দেখিয়ে তিনি ভালো আয় করছেন বলে মনে হলো। ভিড়ের দর্শকেরা শিশুটিকে দেখে তার সামনে বিছিয়ে রাখা কাপড়ে দুই থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দান করে। সেখানে ১০ টাকার নোটই বেশি দেখা গেলো। প্রায় ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেলো, ১০ মিনিট পর পর গামছায় থাকা টাকা যখন বেশি হয়ে যাচ্ছে, রওশন আরা তা কুড়িয়ে নেন।
মেরীকে দেখিয়ে এভাবে কত আয় হয় জানতে চাইলে মহিলা উত্তর দেন, আমি তো প্রতিদিন বের হই না, সপ্তাহে একদিন দুইদিন ওকে নিয়ে বের হই। একবারে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। এই টাকা দিয়ে চলে? জিজ্ঞেস করলে তার আরো তিনটি ছেলে মেয়েকে নিয়ে টিভি সেন্টার এলাকার একটি বস্তিতে থাকেন বলে জানালেন রওশন আরা। তিন মেয়ের মধ্যে ছোট মেরী। বড় মেয়ে শারমিনের বিয়ে দিয়েছেন আগেই। এখন মেজ মেয়ে রুমী আর ছেলে মামুন থাকে। মামুন বাজারে মজুরের কাজ করে।


কিন্তু নিজের মেয়েকে এমন দর্শনীয় বস্তুর মত দেখিয়ে ভিক্ষা করার কারণ কি? ‘ওমা! ও দেখার মত জিনিস না? ধরুন, আপনি ওকে দেখলেন, দেখে ছবি তুললেন। আপনি ওর ছবি দেখিয়ে আরেকজনকে জানাবেন। তারাও ওর সম্পর্কে জেনে ওকে দেখতে আসবে।’ এতে মহিলার লাভ কি জানতে চাইলে তিনি উত্তর দেন, ‘তারা মেরীকে দেখতে এসে টাকা দেবে। ওকে দেখার জন্য কত জায়গা থেকে লোক আসে! চিড়িয়াখানায়ও ওকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। এক লাখ টাকা দেবে বলেছিলো তারা!’
চিড়িয়াখানা সত্যিই মেরীকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কি-না জানতে চাওয়ার আর সুযোগ পাওয়া গেলো না। পুলিশের একটি টহল গাড়ি এসে তাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলো। মহিলাও ভিড় করা লোকজনদের চলে যেতে বলেন। শুক্রবার বিকেলে টহল দলে থাকা খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক হেলাল উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘ওদের আগেও দেখেছি। সবসময় বসে। একেক দিন একেক মহিলা বাচ্চাটাকে নিয়ে আসে।’
নিজের দুই মেয়েকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী মো. আক্কাস আলী। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, এর আগে শহীদ মিনারে এদের দেখেছিলাম। তখন মেয়েটার বাবা ছিলো সাথে। এখন এটা ব্যবসা হয়ে গেছে। বিকলাঙ্গ শিশু দেখিয়ে তারা ভিক্ষা করে।
এসআই হেলাল উদ্দিন বিভিন্ন সময়ে মেরীর সাথে ভিন্ন ভিন্ন মহিলা এবং ব্যবসায়ী আক্কাস আলী এর আগে একজন লোককে দেখলেও রওশন আরা দাবি করেন, তিনিই মেরীর মা। মেরীর বাবা মারা গেছে তিন বছর আগে।

http://suprobhat.com/বিকলাঙ্গ-শিশু-দেখিয়ে-ভিক/
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×