somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Air Pollution and Bangladesh(বায়ুদূষণ ও বাংলাদেশ)

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বায়ুদূষণ ও বাংলাদেশ

দূষণসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ও নিকৃষ্ট হচ্ছে বাতাসের দূষণ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল পারফরসেন্স এ্যান্ড ইনডেক্স নামে যে বৈশ্বিক সূচক প্রকাশ করেছে তাতে মোট ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান-
সার্বিক পরিবেশগত পরিস্থিতি ও জীবনমান বিবেচনায় ১৬৯তম।
শুধু বিশুদ্ধ বায়ু দূষনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৮তম।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এক গবেষণা Study ‘Environmental Performance Index 2012’ প্রকাশিত যে- ঢাকা বিশ্বের ১৩২ টি শহরের মধ্যে ৩১তম সবচেয়ে দূষিত শহর।
সর্বশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বায়ুদূষণ রিপোর্টঃ ৯ মে ২০১৪ সাল, সর্বশেষ তথ্য।
২০০৮-২০১৩ সাল ব্যাপী ৯১ দেশের ১৬০০ শহরের বায়ুমাণ- তথ্যের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তালিকায়

দেশ হিসাবেঃ শহরের বায়ুমান (নিকৃষ্ট) বিবেচনায় ৯১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান (৪র্থ) চতুর্থ। *সমগ্র বাংলাদেশের তথ্য নয়, শুধুমাত্র শহরের বায়ুদূষণ বিবেচিত*।
ক্রমিক নাম্বার (নিকৃষ্ট মাণ থেকে শ্রেয়তর) প্রথম ১০ দেশ (শহুরে বায়ুমান) যথাক্রমে পাকিস্তান, কাতার, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ইরান, মিশর, মঙ্গোলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, বাহরাইন।

দূষিত শহর হিসাবেঃ শীর্ষ ভয়াবহ দূষিত (বায়ুমান অনুযায়ী) নগরীর উপরের ২৫ টির মধ্যে ৩ টি শহর নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর। · নারায়ণগঞ্জ- ১৭ তম · ঢাকা- ২১ তম · গাজীপুর- ২৩ তম
নারায়ণগঞ্জ - বায়বীয় দূষণকারী বেশী।
উত্তরে রাজশাহীতে কণাকার (PM) উপাদান বেশী।
প্রথম ১০ শহরের মধ্যে ৬ টি ভারতীয় শহর, তন্মধ্যে দিল্লি ১ম (প্রথম)। পাটনা, গোয়ালিয়র, রায়পুর,---- আহমেদাবাদ, লক্ষনৌ। করাচী ৫ম ।

বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

বাংলাদেশে পূর্বের ঘাতক ব্যাধি এখনো বিদ্যমান। বর্তমানে এর সাথে যুক্ত হচ্ছে বায়ুদূষণ (কৃষি ও শিল্পের রাসায়নিক, ও অন্যান্য উপাদান) জনিত আকস্মিক ও দীর্ঘকালীন শ্বাস-তন্ত্রীয় রোগ (এজমা, শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, এডেমা, কাশি, সংক্রমণ); রক্ত-স্বল্পতা, স্নায়ুবিক ও শারীরিক দুর্বলতা, ওজন হ্রাস, কিডনি রোগ, বিভিন্ন অন্ত্র-নালীর রোগ।
যুক্তরাজ্যের সহায়তা সংস্থা ডিএফআইডির বাংলাদেশের মৃত্যু ও অসুস্থতা বিষয়ে ২০০০ সালে পরিচালিত এক জরিপে জানা যায় আমাদের দেশের মানবমৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে বায়ুবাহিত রোগসমূহ। অথচ এরপূর্বে বহুবছর যাবত তা ছিল পানিবাহিত রোগসমূহ। ব্যাপক ধূমপানও বায়ুদূষণের আরেকটি কারণ।- (Population Reports, 2000)

পরিসংখ্যান
বিশ্বব্যাংকের রিপোট অনুযায়ী বায়ুদূষণের ফলে বাংলাদেশে বার্ষিক ১৫০০০ লোক মৃত্যুবরন করে।
যানবাহন দুর্ঘটনা থেকে বেশী লোক মৃত্যুবরন করে বাস-ট্রাক, ও অন্যান্য যান-বাহন জনিত বায়ুদূষণের ফলে।
যানবাহন জনিত বায়ুদূষণের কারনে প্রধানত শহুরে লোকেরা শ্বাসকষ্টে ভুগে।
গর্ভকালে বাচ্চার অপমৃত্যু/অকাল মৃত্যু ঘটে। প্রসবকালীন বাচ্চার ওজন কম হয়।
সাম্প্রতিক কাশি ও ব্রঙ্কাইটিস বৃদ্ধির কারণ বায়ুদূষণ। National Institute of Diseases of Chest and Hospital (NIDCH), প্রাউ ৭০ লক্ষ উপর লোক এজমায় আক্রান্ত, এবং এর অর্ধেকেরও বেশী শিশু।

বায়ুদূষণ- বাংলাদেশ
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। শিল্পায়ন প্রধানত নগরকেন্দ্রিক- ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, নারায়ন গঞ্জ, ও কিছু বিভাগীয় শহরে কেন্দ্রীভূত। স্বাভাবিকভাবে এসব এলাকায় বায়ুদূষণ খুব বেশী।
অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের ছাড়াও পুরানো যানবাহন (২ ঘাত ইঞ্জিন, আংশিক দগ্ধ ডিজেল-জ্বালানী), যানজট প্রভৃতির ফলে বায়ুদূষণ আরো তীব্র আকার ধারন করেছে। যানবাহনের রাবার চাকা পোড়ানোয় কালো ধুঁয়া (black carbon) ও বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। -(UNEP, 2001)
গ্রামাঞ্চলে বায়ুদূষণ এখনো কম, কারণ কম যান্ত্রিক বাহন ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না উঠা। -(UNEP, 2001)। গ্রামাঞ্চলে বায়ুদূষণ মূলত প্রচলিত পদ্ধতির রান্না ও শুকনো মওসুমে ইট-ভাটিতে ব্যবহৃত কাঠ ও কয়লা। আবাসস্থলের স্বল্প পরিসরে, বায়ু চলাচলে অব্যবস্থা আবাসিক (indoor) বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধরা এই বায়ুদূষণে আক্রান্ত হয় বেশী। - (UNEP, 2001)।
ইট-ভাটিতে ব্যবহৃত কাঠ ও কয়লা পোড়ানোয় বিভিন্ন দূষণকারী উপাদান- কনাকার বস্তু, সালফার-অক্সাইড, বায়বীয় জৈব পদার্থ (VOC)।
এছাড়াও অতিরিক্ত দূষণকারী হিসাবে চিহ্নিত- পরিবেশ বিভাগের (Department of Environment) এক অধিকর্তার মতে ‘বিভিন্ন ধাতু (সীসা, আর্সেনিক, পারদ, ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল), বেনজিন, ফরমালডিহাইড, PCB (polychlorinated biphenyles), ডাইওক্সিন, এবং অন্যন্য জৈব উপাদান’।
শিল্পে ব্যবহৃত আর্সেনিক, সীসা, পারদ, তামা এবং অন্যান্য ধাতু কিছু সংখ্যক মৃত্যুর কারণ।
কীটনাশক ও অন্যান্য রাসায়নিক যা POP (persistent organic material) নামে পরিচিত – ক্যান্সার ও genetic abnomality করে। - (Population Reports, 2000)
একনজরে কারণিক উৎস ও সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া
কারণিক উৎস/ সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া

১। নগরায়ন
যানবাহন নির্গত উপাদান
নগরের বাতাস কলুষিত হওয়া
২। শিল্প, কলকারখানা নির্গত-
SO2, NOx, Pax, Gases, Vapours
পরিবেশ দূষণ, বায়ুর গুনগত পরিবর্তন
- জনস্বাস্থ্য হানিকর
- গাছপালা না জন্মানো, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
- ইমারত ক্ষয়প্রাপ্ত(corrosion)
- পরিবেশের সামগ্রিক ক্ষতি
৩। যানবাহন নির্গত-
PM, CO, NOx, SO2, VOC
পরিবেশ দূষণ, বায়ুর গুনগত পরিবর্তন
- জনস্বাস্থ্য হানিকর
- গাছপালা না জন্মানো, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
- ইমারত ক্ষয়প্রাপ্ত(corrosion)
- পরিবেশের সামগ্রিক ক্ষতি
৪। ইটভাটি-
PM, CO, NOx, SO2
পরিবেশ দূষণ, বায়ুর গুনগত পরিবর্তন
- জনস্বাস্থ্য হানিকর
- গাছপালা না জন্মানো, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
৫। ইমারত/construction স্থল- PM
- স্বাস্থ্য হানিকর
৬। উম্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা –
- দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস ও বাস্প নির্গমন
- পরিবেশ দূষণ, বায়ুর গুনগত পরিবর্তন
৭। কাঠ, কয়লা, শক্ত জ্বালানী, biomass- PM, VOC, Sox
- পরিবেশ দূষণ, বায়ুর গুনগত পরিবর্তন
- স্বাস্থ্য হানিকর
৮। জ্বালানীর গুণ-মাণ - VOC
- স্বাস্থ্য হানিকর

রাজধানী ঢাকায় বায়ুদুষনঃ

সাম্প্রতিক কালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষত দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক শহরের বায়ুদূষণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এক গবেষণা Study ‘Environmental Performance Index 2012’ প্রকাশিত যে- ঢাকা বিশ্বের ১৩২ টি শহরের মধ্যে ৩১তম সবচেয়ে দূষিত শহর।
পরিবেশ, অবকাঠামো, ভারসাম্যতা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ও শিক্ষা-সংস্কৃতি factor বিবেচনায়, ২য় বারের মত Economist Intelligence Unit (EIU) রিপোর্টে ঢাকা বসবাসের জন্য ২য় খারাপ অবস্থানে আছে। জরীপের ফলাফল এই ভাবে বিবেচিত- গ্রহনযোগ্য, সহনীয়, অস্বস্তিকর, অবাঞ্চিত, অসহনীয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বায়ুদূষণ রিপোর্টঃ ৯ মে ২০১৪ সাল, সর্বশেষ তথ্য।
ঢাকা- ২১ তম দূষিত শহর।

বায়ুদূষণের কারণ

ঢাকায় বর্ধিত জনসংখ্যার প্রয়োজনে গগনচুম্বী অট্টালিকা তৈরির পাশাপাশি বস্তি ও বস্তিবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যার এই অতিরিক্ত চাপ শহরের বিশুদ্ধ বায়ুপরিবেশ বজায় রাখা অত্যন্ত কষ্টকর। -(UNEP, 2001) ।
ঢাকার আকাশ প্রচ্ছন্ন কালচে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন এবং দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা কোন কোন এলাকায় সর্বদা বিরাজমান। চোখে জ্বালা, গন্ধ, ও শ্বাসরোধ অবস্থা নৈমিত্তিক ঘটনা।- (Khaliquzzaman, 1998).
পরিবেশ দপ্তরের (Department of Environment) মতে ঢাকার আশেপাশে বায়ুদূষণের প্রধান কারণ পুরানো, নাম-মাত্র মেরামত করা যানবাহন, ইটভাটি (ঢাকার আশেপাশে ১০০০ অধিক), construction site ও রাস্তার ধূলা, এবং শিল্প, কল-কারখানার বিষাক্ত ধুঁয়া ও বর্জ্য ইত্যাদি।
Bangladesh Road Transport Authority (BRTA) হিসাবে ঢাকায় ২০০৮ সালে ১৫,০০০ অধিক (২০০৭ সালের থেকে ৪৬% বেশী) মেরামত করা (reconditioned) গাড়ি বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মতে ঢাকার বায়ুদূষণনে প্রধান কারণ যানজট ও ইটভাটি। দূষণ হ্রাসে বিশ্বব্যাংক সহায়তায় সরকারি প্রকল্প ‘Clean Air and Sustainable Environment’ (CASE), ঢাকার ধোঁয়াশে (smog) বাতাসের জন্য সরাসরি দায়ী করেছে সীমিত রাস্তায় প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টার যানজট, এবং শহরের আশপাশের বিপুল সংখ্যক ইটভাটি।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় হিসাবে ঢাকায় যানবাহনের গতি ঘণ্টায় গড়ে ১৫ কিমি, যা ২০২৫ সালে ঘণ্টায় ৪ কিমি, নেমে আসবে- পরিস্থিতির উন্নতি না হলে। স্লথ গতির কারণে একই স্থানে দীর্ঘক্ষণ জ্বালানী নষ্ট (পোড়ানো) হয়।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে ‘বিশুদ্ধ বায়ুর’ মান বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৮তম।
ঢাকাসহ সমগ্র দেশ আজ ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে নিপতিত। ঢাকা শহরের বায়ু­­দূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন ঢাকা শহরের চারপাশের ইটভাঁটি, তীব্র যানজট, পুরনো মোটরগাড়ি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া এবং ধুলা। এসব মিলিয়ে ঢাকার পরিবেশ এখন রীতিমতো অস্বস্তিকর।
ইটভাঁটি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া কমপক্ষে ৩০% বায়ুদূষণের জন্য দায়ী।
এছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকা মোটরগাড়ি থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ঢাকার বাতাসকে আরও ভারি করে তুলছে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যৌথ গবেষেণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা এখন এত বেশি যে, বাতাসে এখন প্রতিকিউবিক মিটারে এয়ারবোর্ন পার্টিকুলেট ম্যাটারের পরিমাণ সহনীয় মাত্রার থেকে পাঁচগুণ বেশি। এর পরও রয়েছে বিভিন্ন ধূলীয় বস্তুকণা।

বিভিন্ন সময়ে দূষণকারী উপাদানের মাত্রা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) air quality guidelines অনুযায়ী অনুমোদিত PM মাত্রা- 20 মাইক্রো-গ্রাম /m3 এবং শহরে 70 মাইক্রো-গ্রাম/m3 মাত্রায় উচ্চ মাত্রার দূষণ বিবেচিত।
পরিবেশ দপ্তরের মতে ঢাকা শহরে কনাকার বস্তুর (PM) ঘনত্ব 463 মাইক্রো-গ্রাম/m3 শুষ্ক মওসুমে (ডিসেম্বর ~ মার্চ) – বিশ্বে সর্বোচ্চ মাত্রা। এর পরে আছে যথাক্রমে মেক্সিকো (383 মাইক্রো-গ্রাম/m3) ও মোম্বাই (360 মাইক্রো-গ্রাম/m3)।
ঢাকা শহরের বাতাসে সহনীয় মাত্রার অধিক ‘বায়বীয় জৈব পদার্থ’ (VOC) বিদ্যমান, যার কিছু ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। দুইঘাত’ বিশিষ্ট ইঞ্জিন থেকে সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার ৪~৭ গুণ বেশী VOC নির্গত হয়।
ফার্মগেটে বাতাসের নমুনায় (১৯৯৮, খলিকুজ্জমান)ঃ- SO2: 64-143 ug/m3 : NO2: 25-32 ug/m3.
১৯৯৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৭ জুন পরিচালিত জরীপে দেখা যায়- ফার্মগেটে ভাসমান কণার মাত্রা সর্বোচ্চ ~2465 মাইক্রো-গ্রাম/m3 (অনুমোদিত সহনীয় মাত্রা 400 মাইক্রো-গ্রাম/m3 )। অন্যদিকে তেজগাঁ শিল্প এলাকায় সর্বোচ্চ ~630 মাইক্রো-গ্রাম/m3 (অনুমোদিত সহনীয় মাত্রা 500 মাইক্রো-গ্রাম/m3 )।
সম্প্রতি ঢাকা শহরের শেওয়া পাড়া থেকে নেয়া বাতাসের নমুনা বিশ্লেষণে ২০০ জৈব উপাদাণের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
চিহ্নিত VOC সম্পকিত উপাদানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাঃ হাটখোলা, মানিক মিয়া এভেনিউ, তেজগাঁ, ফার্মগেট, মতিঝিল, লালমাটিয়া, ও আন্ত-জিলা বাস টার্মিনাল সমুহ।
গ্যাসোলিনে সীসার (lead) পরিমাণ বাংলাদেশে- খনিজ তৈল পরিশোধনের পর Tetraethyl lead (TEL) যোগ করা হয় ‘অকটেন’ নাম্বার বৃদ্ধির জন্য।
ঢাকায় মানবদেহে সীসার মাত্রাঃ রক্তে ~50 mg/dl (adult).
বাতাসে 1mg/m3 মাত্রার সীসায় ১ পয়েন্ট বুদ্ধি-মাণ (IQ) হ্রাস পায়।
পথের ধুলার (dust) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এলার্জি ও এজমার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
গবেষকদের মতে, রাজপথের খুব নিকটতম বসবাসকারীদের পথের ধুলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এলার্জি ও এজমার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি এবং রাস্তার ১০০ মিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে কাশি, হুইজ, রানিংনোজ এবং নির্ণীত এজমার প্রকোপ অধিক।- ডা. এ,কে,এম, মোস্তফা হোসেন
বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যৌথ গবেষেণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা এখন এত বেশি যে, বাতাসে এখন প্রতি ঘনমিটারে এয়ারবোর্ন পার্টিকুলেট ম্যাটারের (PM) পরিমাণ ২৫০ মাইক্রোগ্রাম (250 মাইক্রো-গ্রাম/m3) এর অধিক, যা সহনীয় মাত্রার থেকে পাঁচগুণ বেশি (সহনীয় মাত্রা ৭০ মাইক্রোগ্রাম 70 mg/m3)। এর পরও রয়েছে বিভিন্ন ধূলীয় বস্তুকণা।

জনস্বাস্থ্য উপর প্রভাবঃ শ্বাস-রুদ্ধকর ও ভয়াবহ - April 2009 (IRIN)
যৌথভাবে সরকার ও বিশ্বব্যাংক কর্তৃক ‘দেশীয় পরিবেশ মুল্যায়নে’ সনাক্ত হয় যে পরিবেশীয় ব্যাধিগ্রস্ততা ও মৃত্যুর প্রধান কারণ বায়ুদূষণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মতে যানবাহন জনিত বায়ুদূষণ শহুরে লোকদের শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসতন্ত্রীয় রোগের প্রধান কারণ।

দূষণজনিত রোগ
ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন ঢাকা ও পার্শ¦বর্তী এলাকায় বসবাসকারীরা। ঢাকা ও আশপাশে বসবাসকারী প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
বায়ুদূষণ জনিত অসুস্থতাসমূহের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী কাশি, সর্দি, শ্বাসনালি ও ফুসফুসের প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট, সংক্রমণ, ব্রংকাইটিস, নিউমোনাইটিস, নিউমোনিয়া, ব্রংকায়াস্টেসিস, এমফাইসেমা, ক্যান্সার প্রভৃতি।
রাজধানীতে বার্ষিক শহুরে গরীবদের হাজার হাজার মৃত্যু, এবং লক্ষাধিক শ্বাস-তন্ত্রীয়রোগের কারণ বায়ুদূষণ।
বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত Air Quality Management Project (AQMP) হিসাবে ঢাকার খারাপ বাতাস (poor air quality) গ্রহণে ১৫,০০০ লোক অকাল মৃত্যু এবং কয়েক মিলিয়ন লোকের শ্বাসতন্ত্র, ফুসফুস, স্নায়ুবিক রোগের কারণ।
Institute of Maternal and Child Health এর শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ সুফিয়া খাতুন বলেন “ গর্ভকালীন সময়ে অত্যধিক বায়ুদূষণের কবলে গর্ভের শিশুর অপমৃত্যু হতে পারে”।
National Institute of Diseases of Chest and Hospital (NIDCH), মতে প্রায় ৭০ লক্ষ উপর লোক এজমায় আক্রান্ত, এবং এর অর্ধেকেরও বেশী শিশু। যানবাহন জনিত বায়ুদূষণের কারনে প্রধানত শহুরে লোকেরা শ্বাসকষ্টে ভুগে। সাম্প্রতিক কাশি ও ব্রঙ্কাইটিস বৃদ্ধির কারণ বায়ুদূষণ।
বায়ুবাহিত সীসা সব চেয়ে ক্ষতিকারক PM. “শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশিত ও বাহিত হয়ে স্নায়ুতন্ত্রের অপরিবর্তনীয় ক্ষতি, ও কিডনি-হৃদ রোগ এবং প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে”। -বলেছেন হুমায়ুন কবির, মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান, বরিশাল মেডিকেল কলেজ, আরো যোগ করেছেন “শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ব্যহত হয়”। বাতাসে 1mg/m3 মাত্রার সীসায় ১ পয়েন্ট বুদ্ধি-মাণ (IQ) হ্রাস পায়।
সীসা দূষণে শিশুদের মানসিক সক্ষমতা হ্রাসের ফলে অদুর ভবিষ্যতে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ঘাটতি দেখা দিতে পারে। -- Shakeel Ahmed Ibne Mahmood, ASPA member, also a member, BAPA,
পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এই দূষণ হ্রাস করতে পারলে স্বাস্থ্য-ব্যয় বাবদ ১৭~৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় এবং একই সময়ে শহরবাসীর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় মনে করে বায়ুদূষণ হ্রাসে বার্ষিক ৮-২৩ কোটি শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। -হাজার মৃত্যু সেলিম সামাদ ফেব্রুয়ারি ২০১২

WHO REPORT May 7, 2014 : The 2014 version of the Ambient Air Pollution (AAP) database

সদ্য প্রকাশিত ৭ মে ২০১৪ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) রিপোর্টে বিভিন্ন শহরের বাতাসের গুনগত মাণ বিবেচনায় (গুনাগুণ) উল্ল্যেখ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষত দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক শহরের বায়ুদূষণ ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে।
বিশ্বের ৯০% লোক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে অধিক দূষিত-বায়ু সেবন করে।
শহরে বাসকারী মাত্র ১২% বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুমোদিত মাত্রার বায়ু গ্রহনের সবিধা পায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বিশেষজ্ঞ প্রধান দূষণকারী হিসাবে সনাক্ত করেছে- যানবাহন, জ্বালানী কয়লা, দাহ্য তেল ও গ্যাস, সাথে দূষণ-প্রতিরোধী (badly insulated house) আবাস স্থল।
“বর্তমানে অনেক শহর-কেন্দ্র ধুঁয়াশা-কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে যে আকশ অদৃশ্য থাকে” বলেছেন Flavia Bustreo, the WHO’s family health chief.
বায়ুদূষণে ২০১২ সালে ৬০ বৎসরের নিচে ৩৭ লক্ষ লোক অকাল মৃত্যুর শিকার হয়েছে।- The UN health agency.
তথ্য আহরন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বায়ুদূষণ রিপোর্টঃ ৯ মে ২০১৪ সাল, সর্বশেষ তথ্য।
বাংলাদেশ পরিবেশ বিভাগ ও মন্ত্রনালয়
-হাজার মৃত্যু সেলিম সামাদ ফেব্রুয়ারি ২০১২
Shakeel Ahmed Ibne Mahmood, ASPA member, The University of Maine, is also a member, BAPA,
DHAKA, 3 April 2009 (IRIN) ও অন্যান্য।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×