somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এজমা রোগ লক্ষণঃ Clinical features of Asthma

০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এজমা রোগ-বৈশিষ্টঃ Clinical Features

এজমায় বায়ুবাহী শ্বাসনালীর bronchi ও bronchioles এর বৈশিষ্টপূর্ণ সংকোচন জনিত বিভিন্ন সময়ের বিরতিতে বা অনবরত বায়ুপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতায় সৃষ্ট লক্ষণসমুহ- শ্বাসকষ্ট, শ্বাস টান, হাঁপানি, wheeze, বুকে চাপ ও দম বন্ধ অনুভুতি, কাশি (কফ ও কফহীন) প্রকাশ পায়।
এজমা রোগের ৩ টি মৌলিক বিশেষত্ব১,৩ :
১। বিভিন্ন সময়ের বিরতিতে (বিক্ষিপ্ত) লক্ষণের আবির্ভাব (episodic) এবং রোগ বারবার (recurrent) হওয়া।
২। শ্বাসনালীর বিপরীতমুখী (reversible) সংকোচন Û প্রসারণ। প্রসারণ স্বাভাবিকভাবে বা প্রসারক-ঔষধ প্রভাবে।
৩। শ্বাসনালীর অতি-সক্রিয়তা (Hyper-responsiveness) বা অতি-সংবেদনশীলতা এবং শ্বাসনালীর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, যে কোন কারণে।

Clinical Features রোগ বৈশিষ্ট্য১
এজমা উপসর্গ ও লক্ষণ২
সাধারণ লক্ষণ সমুহ নিম্নরূপঃ শ্বাসকষ্ট, শ্বাসটান, হাঁপানি, wheeze, বুকে চাপ ও দম বন্ধ অনুভুতি, কাশি (কফ ও কফহীন)।
এজমার কারণে জীবনধারা বিপর্যস্ত, দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত, কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, recreational, শারীরিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লক্ষণ সমুহ নিম্নরূপ২
• সাধারণত শ্বাসকষ্ট, wheeze, বুকে চাপ ও দম বন্ধ অনুভুতি, কাশি, কফ তৈরি খুবই common লক্ষণ । কাশি প্রায়শ শেষ রাতে ও ভোর-সকালে হয়।
• হঠাৎ করে ক্ষণস্থায়ী শ্বাসকষ্ট, কোন trigger উপাদান উত্তেজক হিসাবে কাজ করতে পারে। ভিন্ন সময়ের বিরতিতে (episodic) বারবার আক্রান্ত (recurrent) হওয়া।
• আপাত সহনীয় মাত্রায় সার্বক্ষণিক লক্ষণ ও উপসর্গ ।
• চলিত সহনীয় এজমা আকস্মিকভাবে প্রকট ও ভয়াবহ রূপে দেখা দিতে পারে।
• এজমা লক্ষণ প্রায়ই রাত্রে বাড়ে, ভোর ৩/৪ টায় (দৈনিক চক্রাবর্তে এসময় নার্ভ ও শ্বাসনালীর সক্রিয়তা tone and reactivity সবচেয়ে বেশী থাকে)।
শারীরিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত চিহ্ন২ (Sign)
• নাকের অতি-নিঃসরণ, সর্দি; নাকের মিউকাস ঝিল্লি লাল, ফুলে থাকা; নাকের ‘পলিপ’। সম্ভাব্য এলার্জি নির্দেশ করে।
• ত্বকীয় রোগঃ একজিমা, এটোপিক চর্মরোগ, ত্বকের এলার্জি।
• স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে অথবা প্রলম্বিত শ্বাস-ফেলার (expiration) সময় wheeze.(শুধুমাত্র জোরে শ্বাস-ফেলার সময় wheeze হলে বলা যাবেনা যে এজমার কারণে হচ্ছে)।
• মৃদু এজমায় বুক-পরীক্ষায় স্বাভাবিকতা (normal) থাকে অনেক ক্ষেত্রে।
• অতিশয় প্রকট এজমা (severe asthma) বৃদ্ধিতে (exacerbation) বায়ুপ্রবাহ খুবই সীমিত থাকায় শ্বাসনালীতে wheeze হয় না। Wheeze এর অনুপস্থিতে তখন এজমা নির্ণয়ক হিসাবে শ্বসন-শব্দ (respiratory sound) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তখন-
 ফুসফুসে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম শ্বসন-শব্দ (respiratory sound) শোনা যায়।
 এমনকি প্রলম্বিত শ্বাস-ফেলার (expiration) সময়,এবং
 সক্রিয় Accessory muscle and shoulder ব্যবহার- কষ্টকর শ্বাসক্রিয়া নির্দেশ করে।

লক্ষণ পরিচিতি
শ্বাসকষ্ট (breathlessness): স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস আমাদের বোধ বা অনুভবে আসে না। শ্বাস টানা ও শ্বাসফেলা যখন অনুভবে আসে এবং এর জন্য effort (শ্রম) প্রয়োজন হয়, তখন শ্বাসকষ্ট (dyspnoea) বলে। শ্বাসকষ্ট মাত্রা জীবনাচরণে জানা যায়- কি পরিমান কাজে, কতটুকু পরিশ্রমে, বা সিঁড়ির কত ধাপ অতিক্রমে, কতটুকু হাঁটার পর শ্বাসকষ্ট হয়। শুয়ে থাকা অবস্থায় শ্বাসকষ্টকে orthopnea বলে।
শ্বাসকষ্ট ২ভাবে এবং বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসাবে দেখা দিতে পারে৩।
১) তাৎক্ষনিক (acute)ভাবে –এজমা, তীব্র-প্রকট সার্বক্ষণিক এজমা, ARDS, acute pulmonary edema, laryngeal edema. এছাড়া মানসিক, metabolic acidosis, রক্ত-শুন্যতা প্রভৃতি কারণে হতে পারে।
২) সার্বক্ষণিক (chronic)- সার্বক্ষণিক এজমা, COPD, allergic alveolitis, interstitial fibrosis, pneumonitis.
• ছেলেবেলায় wheeze সহ শ্বাসকষ্ট এজমা সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
• রাতে ও বিশ্রামে কোন শ্বাসকষ্ট উপশম হয়, কিন্তু এজমাতে শ্বাসকষ্ট রাতে অবনতি হয়।
• শুকনো কাশি নিয়ে শ্বাসকষ্ট interstitial fibrosis এর লক্ষণ।
• COPD তে মাসের পর মাস, বরসরের পর বৎসর ক্রমান্বয়ে উত্তরোত্তর শ্বাসকষ্ট অবনতি এবং ক্রমাগত স্বাস্থ্যহানি ঘটে।
• শ্বাসকষ্ট মানসিক যদি কেউ ‘আমি ঠিকমত শ্বাস নিতে অক্ষম’ উক্তি সম্বলিত ও দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, এবং আঙ্গুল ও ঠোট- মুখে অসাড়তা প্রকাশ করে। কদাচিৎ বিশ্রাম ও ঘুমের ভিতর হয়।

বুকে আওয়াজ (wheeze): শ্বাস-প্রশ্বাসকালীন বুকে ঘড়ঘড় আওয়াজ, শোঁ শোঁ বা বাঁশির শব্দ, যা stethoscope অথবা আশেপাশের লোক বাহির থেকে শুনতে পায়। শ্বাসফেলার সময় alveoli থেকে বায়ু বহির্গমনজনিত বন্ধ (collapsed) প্রান্তিক-শ্বাসনল খোলার সময় এই ধরনের আওয়াজ (expiratory wheeze) তৈরি হয়। শ্বাসফেলার শেষাংশে একক আওয়াজকে squack বলে, যা COPD ও Obliterative bronchiolitis শোনা যায়। শ্বাসনেয়ার সময় ক্ষণস্থায়ী ভাঙ্গা ভাঙ্গা বুদবুদের মত শব্দ crackles নামে পরিচিত। শ্বাসগ্রহণের সাথে এর সম্প্রিক্ততা তাৎপর্যপূর্ণ। শ্বাসগ্রহণের প্রথমাংশে- বায়ুপ্রবাহের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করে। শ্বাসগ্রহণের শেষাংশে pulmonary edema, fibrosis, bronciectasis কারণে হয়।
এজমার প্রাথমিক পর্যায়ে wheeze হয় না। তীব্র-প্রকট এজমাতেও (স্বল্প বায়ুপ্রবাহের কারণে) wheeze পাওয়া যায় না।

বুকে চাপ (oppression) অনুভবঃ মনে হবে বুক ভার হয়ে আছে বা বুকের উপর কিছু বসে আছে।

দম বন্ধ অনুভব (shortness of breath): মনে হবে ঘরে বাতাস নাই, শ্বাস নিতে পারছে না অর্থাৎ দম বন্ধ হয়ে আসছে।

কাশি (cough): সবচেয়ে common উপসর্গ। শ্বাস তন্ত্রের বিভিন্ন অংশ থেকে ভিন্ন ধরণের কাশি হয়। এজমাতে হঠাৎ রাতে খুসখুসে হয়। স্বল্প পরিশ্রম ও জোরে শ্বাস নিতে কাশি হতে পারে। খুসখুসে কাশ বা কফ সহ কাশ। এজমাজনিত কাশি সচরাচর শেষরাত্রে বা ভোর-সকালে বৃদ্ধি পায়। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং ঘুম ভেঙ্গে যায়।

বিভিন্নভাবে প্রকাশিত এজমা২ (manifestations)
 সাধারণত typical বৈশিষ্ট্য বারবার শ্বাসকষ্ট, wheeze, বুকে চাপ ও দম বন্ধ অনুভুতি, কাশি, কফ তৈরি খুবই common লক্ষণ। ১০ দিনের অধিক সর্দি ও সংক্রমণকে এজমা মনে হতে পারে, সচরাচর হয় না।
 এজমা রোগীর উপরোক্ত সব লক্ষণ থাকতে হবে এমন নয়, আর এগুলো থাকলেই যে এজমা হয়েছে এমন মনে করার কারণ নাই।
 প্রধান লক্ষণ: wheeze ও episodic শ্বাসকষ্ট।১
• রাত্রে লক্ষণের অবনতি (marker of uncontrolled asthma).
• শিশুদের রাত্রিকালীন কাশি (nocturnal cough) প্রাধান্য বেশী।
 সব রোগীর একই রকম লক্ষণ ও উপসর্গ হয় না। সামান্য উপসর্গতে শুরু হয়ে মারাত্নক উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে; এমন কি হঠাৎ তীব্র আকারে আক্রমণ করতে পারে।
• এজমায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা, স্থায়িত্ব, লক্ষণের বৈচিত্র থাকে।
• এজমা বৎসরে ১-২ বার, যা কয়েক ঘন্টা থাকতে পারে। কারো কারো সপ্তাহব্যাপী থাকতে পারে।
• লক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী চলতে থাকে, মাঝে মাঝে হ্রাস-বৃদ্ধি পায়।
• বিস্তৃত বর্ণালীর উদ্দীপক উপাদান এজমা precipitate করে।
 ব্যক্তিভেদে লক্ষণ ও উপসর্গে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। একই ব্যক্তির বৎসরের বিভিন্ন ঋতু/সময়, এমনকি একই দিনের ভিন্ন সময় ভিন্ন লক্ষণ প্রকাশিত হয়।
 এজমা যে কোন বয়সে হতে পারে, প্রায়ই ছেলেবেলাতে শুরু হয়। হাঁপানি যে কোনো বয়সের নারী বা পুরুষের হতে পারে।
 যে কোন সুস্থ ব্যক্তিও এজমাতে আক্রান্ত হতে পারে। সামান্য উপসর্গ হতে শুরু করে মারাত্মক উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে; এমন কি হঠাৎ তীব্র আকারে আক্রমণ করতে পারে।
 বারে বারে আসা মৃদু-এজমা মধ্যবর্তী সময় লক্ষণমুক্ত থাকে।
 সার্বক্ষণিক এজমায় (persistent) সর্বদা wheeze ও শ্বাস টান থাকে, কিন্তু লক্ষণের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে- দিনের বিভিন্ন সময়ে, দিনে দিনে, মাসে মাসে।
• লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট হলো দৈনিক-চক্রে ভোর সকাল বেলায় ফুসফুসের কর্মক্ষমতা ও লক্ষণের অবনতি হয়। বিশেষত অনিয়ন্ত্রিত এজমায় কাশি ও wheeze রাতে ঘুমের ব্যাঘাত করে- যা nocturnal asthma নামে অভিহিত।
 কোন কোন রোগীর কাশিটাই প্রধান লক্ষণ, যাতে শ্বাসটান ও wheeze থাকে না বিধায়- রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হয়- কথিত cough-variant asthma.
 কোন কোন এজমায়, পরীক্ষায় wheeze ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায় না, শারীরিকভাবে নাকে ‘পলিপ’ ও ত্বকে ‘একজিমা’ দেখা যেতে পারে। ত্বকে রক্তিমাভ rash থাকা বিরল।
 কোন কোন এজমা রোগীর ঊর্ধ্ব-শ্বাস তন্ত্রে (upper respiratory airway) একই ধরণের প্রদাহ থাকে। পরীক্ষা করে পাওয়া যায়- sinusitis, severe headache, বন্ধনাক, নাকে পানি পড়া, ঘ্রাণ অনুভুতিহীন।
 খুব কম-সংখ্যক নারীর ভয়ানক তীব্র এজমা হয়, এদের ক্ষেত্রে এলার্জি উদ্দীপক (trigger) কম গুরুত্বপূর্ণ। শ্বাসনালীতে neutrophilia প্রাধান্য পায়।
 এজমার কারণ বিভ্রান্তিমুলক (elusive) হলেও সম্ভাব্য ‘উৎপাদক ও উদ্দীপক উপাদান’ লক্ষণের প্রকোপ বৃদ্ধি (precipitate) করে। সুতরাং সম্ভাব্য ‘উৎপাদক ও উদ্দীপক’ অনুসন্ধান ও সনাক্তকরণে সচেষ্ট থাকতে হবে।
• সম্ভাব্য এলার্জেন হতে পারে- মাইট, ফুলের রেনু, পোকামাকড় ও ছত্রাক এবং আবাসস্থলের পোষা বিড়াল, কুকুর, গিনিপিগ, ইঁদুরের লোম প্রভৃতি।
• বিশেষ পরিস্থিতিতে ঔষধ সেবন- এজমা উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। b-blocker (এমনকি চোখের ড্রপেও); , aspirin, NSAID’s .
 বৈশিষ্টপূর্ণ লক্ষণ ও চিহ্নের (S/S) উপস্থিতি এবং অন্য বিকল্প রোগের সম্ভাবনার অনুপস্থিতি -এজমা রোগ নির্ণয়ে সহায়ক৫।
Aspirin সংবেদনশীল ব্যক্তির নিন্মোক্ত উপাদানেও এজমা- লক্ষণ প্রকাশ পায়-
• White এলকোহল • salicylate সমৃদ্ধ খাবার • Cholinergics, PG-F2a • সুপারিতে acerroline (যা methacholine এর মত) এজমা বৃদ্ধি করে।

এজমা উদ্দীপক- Classical precipitants
• ব্যায়াম ও পরিশ্রম, বিশেষত ঠাণ্ডা আবহাওয়া।
• বায়ুবাহিত এলার্জেন ও দুষিত বায়ু সেবন।
• শ্বাসনালী ও শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাস সংক্রমণ।

এজমা সম্ভাবনা বৃদ্ধি৫ করে, নিম্নের একাধিক লক্ষণের উপস্থিতি
- শ্বাসকষ্ট, wheeze, কাশি, বুকে চাপ ও দম বন্ধ অনুভুতি,-
• বিশেষত বারবার, ঘনঘন হওয়া
• রাত্রে বা প্রত্যুষে লক্ষণের অবনতি।
• ব্যায়াম বা পরিশ্রম, ঠাণ্ডা বাতাস ও কোন উদ্দীপক (trigger exposure) সংস্পর্শে লক্ষণের আবির্ভাব, প্রকট অথবা অবনতি।
• Aspirin, NSAID’s, -blocker নেওয়ার পর উপসর্গের উৎপত্তি।
• ঠাণ্ডা ও আদ্র বাতাস গ্রহণ, আবেগ, ভয় বা হাঁসি- লক্ষণের শুরু।

এজমার সম্ভাবনা হ্রাস পায়৫ যদি-
• শ্বাসকষ্ট ও wheeze এর অনুপস্থিতিতে দীর্ঘকালীন কফসহ কাশি।
• শুধুমাত্র ঠাণ্ডা/সর্দির সময় লক্ষণ থাকে, অন্য সময় নয়।
• লক্ষণের সময় বারবার বুক-পরীক্ষায় স্বাভাবিকতা।
• লক্ষণ চলাকালে Spirometry পরীক্ষায় normal PEF/FEV1.
• ধূমপানের ইতিহাস (>২০ প্যাক-বৎসর)
• হৃদরোগের উপস্থিতি
• অন্য কোন বিকল্প রোগের সম্ভাবনা থাকলে।

এজমা ভয়াবহতার শ্রেণি বিভাগ৩,৪

এজমা শ্রেণিবিভাগ৪ তীব্রতা অনুযায়ী পর্যায়ভিত্তিক
১) প্রায় মাঝে মাঝে (Intermittent)
২) মৃদু (Mild)
৩) মাঝারি (Moderate)
৪) তীব্র (Severe)

বিভিন্ন পর্যায়ের ভিন্ন প্রকৃতির এজমা
• মৃদু এজমা লক্ষণ, যা নিজে নিজে বা সামান্য চিকিৎসায় ভালো হয়।
• আরো প্রকট এজমা লক্ষণ হলে, মাঝারী পর্যায়ের এজমা বলে।
• ভালো অবস্থা থেকে হঠাৎ লক্ষণ দেখা দিলে, flareup এজমা বলে।
• সবসময়ের মৃদু, সহনীয় ও নিয়ন্ত্রিত এজমা প্রকোপ আকস্মিক বৃদ্ধি পেলে- এজমা exacerbation বলে।
• রোগ বৃদ্ধির প্রকটতা এবং মাঝের সময় বিবেচনায় নিতে হবে।
যে কোন পর্যায়ে রোগের তীব্রতা ও মাত্রা কমবেশি (fluctuate) হতে পারে এবং সময়ের ব্যবধান কমতে পারে।

প্রকটিত আকস্মিক তীব্র এজমা৩ (Asthma Exacerbations)
ঔষধ চলাকালীন নিয়ন্ত্রিত এজমা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিনে ক্রমাবনতি ঘটতে পারে। যদিও স্বাভাবিকভাবে এজমা আকস্মিকভাবে প্রকট (exacerbation) আকার ধারণ করতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর কারণ চিকিৎসায় ব্যত্যয়, (সঠিকভবে চিকিৎসা পালিত না হওয়া); শ্বাসযন্ত্রীয় ভাইরাস সংক্রমণ; সর্দি, ঠাণ্ডা; এলার্জেন ও উদ্দীপক উপাদান পুন-exposure. অধিকাংশ ক্ষেত্রে হঠাৎ করে ভাইরাস সংক্রমণ, বায়ুদূষণ, ঝড়-তুফানের পর Mould (Alterneria, Cladosporium), ফুলের রেনু, প্রভৃতির বৃদ্ধি।
পূর্ব-অনুমান (anticipation) অথবা শুরুতে আসন্ন এজমা প্রকট হওয়ার লক্ষণ ও উপসর্গ অনুধাবন কল্পে ব্যক্তি-নির্ভর ‘সতর্কতা’ লিখিতভাবে রোগীর জানা থাকা উচিত।
খূব কম সংখ্যক রোগী সতর্ক-সংকেত অনুধাবন বা বুঝতে পারে। কোন রকম সতর্ক সঙ্কেত ছাড়া শুরু হতে পারে, যাকে Brittle asthma বলা হয়।
এজমার তীব্রতা বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্য হলো- ক) প্রকটিত লক্ষণ, খ) ফুসফুসের কর্মক্ষমতা হ্রাস ও গ) শ্বাসনালীর প্রদাহজনিত সংকোচন বৃদ্ধি।

Classifying severity of asthma exacerbations1
লক্ষণ ও চিহ্ন (S/S) প্রাথমিক PEF (or FEV1) Clinical course

মৃদু (Mild)
শুধু পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট PEF≥ ৭০% অনুমিত বা ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ
• সাধারণত ঘরে পরিচর্যা করা হয়
• সত্বর উপশম হয় inhaled SABA দ্বারা
• Short course of Oral systemic corticosteroids. দেওয়া যেতে পারে

মাঝারী (Moderate)
শ্বাসকষ্ট নিয়মিত কাজে সীমিত প্রতিবন্ধক PEF ৪০- ৬৯% অনুমিত বা ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ • সাধারনত জরুরি বিভাগে/ইমারজেন্সি যেতে হয়
• বারবার inhaled SABA দ্বারা উপশম হয়
• Oral systemic corticosteroids দেওয়া হয়, চিকিৎসা শুরুর ১-২ দিন লক্ষণ থাকতে পারে

তীব্র (Severe)
বিশ্রামে শ্বাসকষ্ট, কথোপকথনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, এক নিশ্বাসে এক বাক্য শেষ করতে না পারা। PEF- ৩৩~৫০% ( অনেক রোগীই হাঁপানি চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা বলে কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত হাঁপানি আরো ভয়াবহ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
>> সঠিক চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবহারের মাধ্যমে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ না করলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং অকেজো হবে।
>> এজমা রোগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্রে স্বাভাবিক কাজ ও ব্যাহত হয়।
>> প্রায়ই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় এবং মৃত্যুও হতে পাওে কারো কারো।
>> শিশুদের হাঁপানির ঠিকমত চিকিৎসা না করালে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং মায়েদের বেলায় গর্ভস্থ ভ্রণের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়৬।
এজমায় জটিলতা২ (complications)
অবসাদ, ক্লান্তি, পানিস্বল্পতা শ্বাসনালীর সংক্রমণ, কাশতে কাশতে জ্ঞান হারানো। অক্সিজেন O2 স্বল্পতা এবং মাত্রাধিক CO2 জনিত জীবন ঝুঁকি।

এজমা ঝুঁকি২ (who is at risk of asthma)
যে কোন বয়সে এজমা হতে পারে , তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছেলেবেলাতে শুরু হয়।
• ছোট ছেলেমেয়েদের নির্দিষ্ট কিছু ঝুঁকি factor বিদ্যমান থাকায় ঘন ঘন জীবাণু সংক্রমণে এলার্জেন বেশী মাত্রায় প্রবেশিত হয়, তারাই খুব বেশী এজমা ঝুঁকিতে থাকে। ৩-৫ বৎসরের বাচ্চাদের এজমা ও এলার্জি শুরু হয়। এজমা ৬ বৎসরের অধিক চলতে থাকলে, পরবর্তীতে এজমা continue করে।
• মাতাপিতার এজমা ও এলার্জি।
• বাচ্চাদের মধ্যে ছেলেরা বেশী ভুগে মেয়েদের থেকে।
• প্রাপ্ত বয়স্ক নরনারী সমভাবে আক্রান্ত হয়।
• অধিকাংশ এজমা রোগীর এলার্জি থাকে, তবে সবার নয়।
• নির্দিষ্ট পেশাভিত্তিক ব্যক্তি - নির্দিষ্ট কিছু কেমিক্যাল, উত্তেজক, শিল্পজ উপকরন ও বর্জ্য occupational এজমা করে।
Reference
1. Kumar and Clark’s Clinical Medicine 7th edition.
2. NIH
3. Davidson’s Principle and Practice of Medicine 21st edition.
4. CMDT-2012
5. British Guideline 2009
6. ডাঃ এ, কে, এম, মোস্তফা হোসেন। পরিচালক, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×