রাতের বেলা দরজা বন্ধ করে সবকটা বাতি নিভিয়ে গান শুনা ছিলো জাহিদের অভ্যাস। কিভাবে যেনো সেই অভ্যাসটা সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেলো আমার মাঝে। কিছু কিছু সংক্রামক ব্যাধি সম্ভবত খারাপ না। উপশহরের ঐতিহাসিক ২৯ নম্বর রোডের স্মৃতিময় বাসায় আমি জাহিদ, ফয়সল, বাপ্পি মাঝে মাঝে এরকম গান শুনতাম। জিবনের গান শুনতাম, যৌবনের গান, প্রেম ও বিদ্রোহের গানও শুনতাম। মৌসুমী ভৌমিকের "আমি শুনেছি সেদিন তুমি" ছিলো গান নিয়ে ভাবনার জগতে এক বিরাট ধাক্কা। অসাধারন এই গানটা এখনো বেসুরো গলায় গুনগুনিয়ে গাই যেখানে সেখানে। মন খারাপ থাকলে গাই, মন ভালো থাকলেও গাই। তারপর জিবনের একটা গুরুত্বপূর্ন সময় কাটাই ঢাকায়। সেখানেও রাতের বেলা মেসের মধ্যে গান উৎসব হতো। মেসের নাম "হাদারা হাদারা ইন্তাকা হাদারা মেস"। আমি, নূর, জালাল, ফয়সল, ইকবাল, তারেক, কেকে প্রত্যেকেই ছিলো একেকজন হাদারা। রেজা গান গাইতো, আমরা শুনতাম। অসাধারন তার কন্ঠ। গিটারের তারে টুং টাং শব্দের সাথে আয়ুব বাচ্চুর "সেই তুমি" তন্ময় হয়ে শুনতাম। তবে হাসন রাজার গান হতো সবচেয়ে বেশী, তারেক ছিলো আমাদের হাসন রাজা। "মাটির পিঞ্জিরা" গানটা তারেকের চেয়ে সুন্দর কেউ গাইতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করিনা।
আজ লন্ডনের এতো এতো ব্যাস্ততম সময়েও ঘর অন্ধকার করে গান শুনার সেই সংক্রামক ব্যাধিটা যায়নি। মাঝে মাঝে এই ব্যধিটা এত বেশি মাথাচাড়া দেয় যে অতিষ্ঠ হয়ে যাই। ব্যক্তি হিসেবে আমি হয়তো একটু বেশীই আবেগী কিন্তু এই আবেগ খুব ভারাক্রান্ত করে ফেলে কখনো কখনো। গত দুদিন ধরে আতিফ আসলামের কাভার "তাজদার-এ-হারাম" শুনে শুনে কাটাচ্ছি। প্রতিটা শব্দ যেনো মনের মতো করে বুনন করা হয়েছে। হৃদয়ে প্রোথিত হওয়ার মতো একটা গান "তাজদার-এ-হারাম"। আজ লন্ডনে যখন শুনশান নিরবতায়, ঘরের বাতি বন্ধ করে এই গানটি শুনছিলাম তখন সেই সুদূর সিলেট ও ঢাকার জিবনের কিছু টুকরো টুকরো স্মৃতি ভেসে উঠছিলো মনের পর্দায়। সব বন্ধু বান্ধবদের খুব মিস করছি। তোরা সবাই ভালো থাকিসরে। আর পারলে মাঝে মাঝে দরজা-জানালা বন্ধ করে সবকটা বাতি নিভিয়ে গান শুনিস। জিবনের গান, যৌবনের গান, প্রেম ও বিদ্রোহের গান শুনিস। হয়তো তোদের মনের পর্দায় নস্টালজিক কিছু স্মৃতি নিয়ে আমার ছবিটা ভেসে উঠবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:২৬