somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশভাগ : দুটো ফিল্ম : কিছু কথা

৩০ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইন্টার নেটে পুরোনো অফ বিট ফিল্ম দেখার আমার অভ্যেস আছে।তবে এই ফিল্মটা একেবারে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলো। ইউ টিউবএ এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতে সাইড বারে দেখছিলাম এই মুভিটা। ক্লিক করে ভাবিনি পুরোটা দেখবো। কিন্তু দেখতে বাধ্য হলাম।

খামোশ পানি : সাইলেন্ট ওয়াটার



ছবির প্রেক্ষাপট ৪৭ সালের দেশ ভাগ ও মেয়েদের উপর এর প্রভাব। স্থান গ্রাম্য পাঞ্জাব। পাকিস্তান। কাহিনী শুরু হয় বিধবা আয়েশা আর তার তরুন ছেলে সেলিম এর গল্প নিয়ে। সেলিম অলস। কাজকম্ম করতে চায় না। দেরী করে ঘুম থেকে ওঠে । বাঁশি বাজায়। প্রেমিকার স্কুলে যাওয়ার পথে অপেক্ষা করে। আর তার মা , আয়েশা ভোরবেলা উঠে এলাকার বাচ্চাদের পবিত্র কোরান পাঠ শেখায়। সবাই তাকে পছন্দ করে। একেবারেই সাদামাটা জীবন তাদের। কিন্তু কে এই আয়েশা? ফ্ল্যাশ ব্যাক থেকে জানা যায় সে একজন শিখ রমনী। ৪৭এর দাঙ্গার সময় বহু শিখ মেয়ে ( ছোটো বা বড়ো) কুঁয়োর জলে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ দেয়। এটা ঐতিহাসিক সত্য । আর এই মুভিতে পরিচালিকা দেখান যে এসবের একমাত্র সাক্ষী ছিল নীরব জল । দেখা যায় এক শিখ তার মেয়েকে বলে জলে ঝাঁপ দিতে। কিন্তু সে বাঁচতে চায়। তাই পালায় সেখান থেকে। যদিও রক্ষা পায় না দাঙ্গাবাজদের হাত থেকে। তবে তাদেরই একজন পরে তাকে নিকাহ করে। আর এসবের কিছুই তার ছেলে সেলিম, বর্তমান এলাকার বাসিন্দা বা প্রজন্ম জানে না। এরপর কাহিনী চলে আসে প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাষন কালে। দেখা যায় পাকিস্থানে কিভাবে মৌলবাদএর উত্থান হচ্ছে। একটা অংশ কিভাবে সেদিকে চলে যাচ্ছে। সেলিমও ধীরে ধীরে তাদের দিকেই যায়। জুবেদা তার প্রেমিকা তাকে বলে ' তেনু উল্লু বানারহে হ্যয় ও' ( ওরা তোকে বোকা বানাচ্ছে) যদিও সেলিম সেকথা শোনে না। একদিন জুবেদা দেখে তাদের স্কুলের সামনে একদল পাঁচিল তুলছে, সেলিমও সেখানে। এমনকি সে যখন সেলিমের সাথে দেখা করতে যায় তখন সেলিম তাকে বলে ' তেনু শরম হায়া কুচ হ্যায় কে নেহি?' ( তোর লজ্জা শরম কিছু আছে কি না?) ।তারপর বিরক্তির সাথে সেখান থেকে যেতে যেতে বলে যে সে নামাজ পড়তে যাচ্ছে। জুবেদা জানায় যে সেও নামাজ পড়েই আসছে। এরমধ্যে ভারত থেকে শিখ তীর্থযাত্রীরা আসে সেখানে। আগে গুরুদ্বার আর মসজিদ পাশাপাশি ছিল। দুই সম্প্রদায়ের তাতে কোনো অসুবিধা হয়নি । কিন্তু এবারে মৌলবাদীরা তাদেরকে হুমকি দিয়ে তাদের মুলুকে গিয়ে প্রার্থনা করতে বলে । নেতৃত্ব দেয় সেলিম। তার মা অসহায় ভাবে তা দেখে। তারমধ্যে একজন শিখ আবার তার ফেলে যাওয়া বোনের খোঁজ করতে থাকে। প্রকাশ্যে আসতে থাকে আয়েশার পরিচয় । কি করে সেলিম তার জন্মপরিচয় জেনে? মা, ছেলের কিরকম সম্পর্কের সাক্ষী থাকে নীরব জল? জানতে ইচ্ছে হলে দেখতে পারেন মুভিটা। শুধু এটা বলি যে ছবির শেষে সেলিম বলে যে মৌলবাদ কায়েম করা একটা ফরম্যালিটি। আখের হামলোগোনে পাকিস্তান বানায়া কিসলিয়ে? সত্যিই তো। পাকিস্তান বানানো হয়েছিল কেনো ? তাই তখন প্রশ্ন আসে মনে তাহলে বাংলাদেশে মুক্তি যুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস কেনো লিখতে হোলো? আশা রাখি পাকিস্তানি কোনো পরিচালক একদিন এরকমই সৎ আর নির্ভীক মুভি বানাবেন। এছবির ক্ষেত্রে পরিচালিকাকে সৎ আর নির্ভীক বলা যায় । আসলে এটা শুধু মেয়েদের নয় , মানুষের গল্প । পরিচালিকা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন যে কিভাবে কোনো ঘটনার ত্রাস মানুষের সুস্থ চিন্তাশক্তি রোধ করে দেয় ।
আর একটা কথা । জীবনে এটাই প্রথম আমার দেখা পাকিস্তানি মুভি । :)
ছবিটা পাকিস্তানে ব্যান হয়েছিল । যদিও একথাটা জানানোই বাহুল্য ।

Genre – Drama, Country – Pakistan, Director – Sabiha Sumar





দ্বিতীয় যে ফিল্মটার কথা বলছি সেটা দেখবো বলেই দেখেছি কয়েকদিন আগে। ছবিটার বাংলা ভার্সান ও হয়েছে। সেটা আমার দেখা হয়নি। হিন্দীটার কথাই বলি। বেগমজান। এ ছবির পটভূমিও দেশভাগ। শুরুতেই দেশভাগ সংক্রান্ত ইতিহাসর ন্যারেশন অমিতাভ বচ্চনের কন্ঠে শোনা যায়। এক কথায় কাহিনীটা হোলো বিদ্যা বালন (বেগমজান ) , এক ব্রোথেলের সর্বময় কর্তী।হিন্দুস্থান, পাকিস্তান বর্ডার লাইন যাবে ব্রোথেলের ঠিক মাঝ বরাবর। তাই সে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু ব্রোথেলের মেয়েরা তাতে রাজি হয় না। তাদের কাছে স্বাধীনতার কোনো মানে নেই। মেয়েরা আদৌ স্বাধীন হয় নাকি। এদিকে তারা রেডিওর দিকে তাকিয়ে নিউজ শোনে ও নেহেরুজী স্বাধীনতা ঘোষণার সাথে সাথে আনন্দ উৎসবে মাতে। যুক্তিটা বোঝা যায় না । এছবিতে কোথাও কোনো যুক্তিই বোঝা যায় না । এখানে ভিলেনরা ভয়ঙ্কর কিন্তু হঠাৎই বিবেকমান হয়ে যায় । কেনো ? জানা নেই । সব রকমের মশলা পরিচালক এছবিতে দিয়েছেন ।কিন্তু সবই বেস্বাদ । যেমন , সাদাত হাসানের বিখ্যাত ছোটো গল্প খোল দোর কনসেপ্ট দুবার ব্যবহার করা হয়েছে । কিন্তু তেমন কোনো আবেগ জাগেনি ।অথচ গল্পটা পড়লে পাথর ছাড়া সকলেই আবেগী হয়ে যাবে । যাঁরা পড়েননি তাঁদের জন্য সংক্ষেপে বলি , সরাজুদ্দিন পাকিস্তানি ক্যাম্পে গিয়ে তার মেয়ে সাকিনাকে খুঁজে পায় না । অনেক খোঁজার পর সে , হাসপাতালের প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে সাকিনার লাশ দেখতে পায় । তখন এক ডাক্তার আলো হাতে সেখানে এসে তাকে বলে ' খিড়কি খোল দো ' ( জানলা খুলে দাও ) । তখন - সাকিনার বেজান হাত সালোয়ারের কটিবন্ধনী খুলে দেয় ........ ( উসনে বেজান হাতো সে আজারবন্দ খোলা ওর সালওয়ার নীচে সড়ক দি )তখন তার বাবা বলে ওঠে আমার মেয়ে বেঁচে আছে । আর সেই ডাক্তার তা দেখে ঘর্মাক্ত হয়ে যায় । ঠিক এখানটাই ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে । যদিও তেমন আবেগ জাগেনি । উল্টে অযৌক্তিক লেগেছে ।
নাশিরুদ্দিন শাহ , বিদ্যা বালনের মতো অভিনেতা , অভিনেত্রীকে স্ক্রীপ্টের কাছে অসহায় লেগেছে । চাংকি পান্ডেকে সারপ্রাইজিং লুকে দেখা যায় । অনেকে ভাবেন , মহিলাদের দিয়ে রাফ কথা বলালে বিরাট নারী স্বাধীনতাটাইপ কিছু হয় । কিন্তু আমার মনে হয় এতে এক শ্রেণীর পুরুষ দর্শকের মনোরঞ্জন ছাড়া আর কিছু হয় না । সবশেষে মনে হয়েছে পরিচালক , কিছু না পেয়ে দেশভাগের আবেগ কাজে লাগাতে চেয়েছেন ।

Cast : Vidya Balan, Gauahar Khan, Ila Arun, Flora Saini, Pallavi Sharda, Rajit Kapur, Ashish Vidyarthi, Pitobash, Naseeruddin Shah, Rajesh Sharma, Chunkey Pandey, Vivek Mushran

Director
Srijit Mukherji
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:৩০
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×