এস আহমেদ লিটন
তপ্ত রোদে, নগ্ন পায়ে হাটিয়া চলেছে দানা মাঝি,
সঙ্গে তার বার বছরে কিশোরী মেয়ে,
পরম প্রেয়সীর শবদেহ তুলিয়া কাঁধে
হেঁটে চলেছে বাবা বেটি কেঁদে ঘেমে নেঁয়ে।
অর্ধশত মাইল আজি দিতে হবে পাড়ি
ভাদ্রের আগুন ঝরা এই রোদে,
চলেছে বাবা, চলেছে মেয়ে, দূর্গম পথ হেঁটে,
হায়! চলেছে তারা কেঁদে কেঁদে।
কখনো শবদেহ গাছের তলায় রেখে
দু মিনিট জিরিয়ে আবার হাটে,
বড় দেরি হবে যে শেষকৃত্যে
জোরছে কদম ছোটে বাড়ির বাটে।
প্রিয়তমারে রাখিয়া কাঁধে চলেছে দানা মাঝি,
রাস্তার দু ধারে দাড়িয়ে শত মানুষ দেখেছে চেয়ে,
এক ফুটা দরদ নিয়ে আসে নি কেউ এগিয়ে,
শত দুখে অশ্রুজল মুছে মুছে চলেছে বাবা মেয়ে।
ঝরছে আগুন, গুমোট হাওয়া রোদ্র দুপুর,
নগ্ন পা দু খানিও তার উঠেছে ফুলে,
তবু যেতে হবে, দিতে হবে অর্ধশত মাইল পাড়ি
ছুটেছে তারা, ছুটেছে জোর কদম তুলে।
প্রিয়তমার যেন না হয় এতটুকু কষ্ট,
না যেন পায় ব্যাথা, পাষাণ বাধিঁয়া বুকে
যতনে তুলেছে কাঁধে, পরম মমতায়
বনের পাখি কাঁদিয়া ফেরে তাহার দুখে।
সুখে দুখে একসাথে কেটেছে কতটা বছর
হয়ত জোটে নি দুবেলা খাবার,
হয়ত দারিদ্র্যের কষাঘাতে বারবার হেরেছে,
তবু হারে নিকো প্রেয়সীর ভালবাসার।
পরম ভালবাসায় স্বর্গরে টানিয়া নামিয়েছে ধুলায়
প্রেয়সীরে তুলেছে তাহার তরে,
শাহজাহানের তাজমোহল ভাঙ্গিয়া প্রেমের স্মৃতি
গড়েছে তাহার কুঁটি ঘরে।
দানা মাঝি মেয়েকে কয়, আয় মা আয় ছুটে
সবে মাইল দশেক, এখনো পুরো পথ বাকি,
মেয়ে তার কখনো হেঁটে, কখনো দৌড়ে
ছুটে চলেছে কেঁদে উঠছে থাকি থাকি।
পরম যত্নে প্রিয়তমাকে তুলেছে কাধেঁ
আজি গাড়িতে হবে মাটির নিচে,
বছর কুড়ির সুখ দুঃখ মিটে যাবে
শুধু তার স্মৃতিটুকু থাকবে পিছে।
চলেছে দানা মাঝি, কাঁদছে বনের পাখি,
বাতাসে ভেসে আসছে সুকরুন সুর,
যেন মাথার উপর সূর্য্য নামে
ভ্যাপসা গরম আগুন ঝরা দুপুর।
ব্যাথাতুর হৃদয়ে ছুটে চলেছে বাবা মেয়ে
মানবতা আজি ঢুকরে কাঁদিয়া মরে,
হায়! খোদা একটু শক্তি দিও সে হৃদয়ে
শোক যেন তারা সইতে পারে।