একটি মেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলো,
যদি মা, বাবার দায়িত্ব মেয়েদের দেওয়া হত,তাহলে অাজ,
বাংলাদেশে একটাও বৃদ্ধাশ্রম থাকতো না,
ঐ মেয়েটির পোস্টে একটা ছেলে কমেন্ট করলো!
যদি প্রত্যেক-টা মেয়ে তার শ্বশুড় শ্বাশুড়ি কে মা,বাবার মর্যাদা দেয় তাহলে শুধু বাংলাদেশ কেন!
গোটা পৃথিবীতে বৃদ্ধাশ্রম থাকবে না৷৷
এখন আপনারাই বলুন কার কথাটা ঠিক??? ১// মেয়েটির. ২// ছেলেটির
বৃদ্ধাশ্রম আমাদের দেশে এখনও সু প্রতিষ্ঠিত , সার্বিক ধারনার মধ্যে আসে নাই।
অনেকে এটাও ভাবতে শুরু করেছে যে, ঝামেলা হচ্ছে, বাবা/মা বা শ্বশুর /শ্বাশুরী কে বৃদ্ধাশ্রম পাঠায়ে দাও।
আমাদের মতো মধ্যম আয় এর মুসলিম দেশে , বিষয়টি অনেক জটিল এবং আবেগ প্রবন।
আসুন খুজেঁ দেখি বৃদ্ধাশ্রম কি এবং কেন আমাদের দেশে এর প্রয়োজনীতার স্বপক্ষে জনমত তৈরী হচ্ছে :--------
১. বৃদ্ধাশ্রম এর ধারণা এবং উৎপত্তি পশ্চিমা দেশে, সেখানের সামাজিক,অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক
প্রেক্ষাপটে এর অস্তিত্ত বিদ্যমান।
২. ইউরোপ ,আমেরিকার দেশে বৃদ্ধাশ্রম এর বাসিন্দার বয়স : ৫৫ থেকে ৬৫ শুরু এবং মৃত্যু পর্যন্ত ( আমাদের দেশে ৬০)
৩. ইউরোপ ,আমেরিকার দেশে বৃদ্ধাশ্রম শুধু মাত্র থাকার আশ্রয় স্হল নয়, সেখানে মানসম্মত বাসস্হান, স্বাস্হ্য, আহার, বিনোদন,
চিকিৎসা এবং অর্থনৈতিক বিষয় গুলি গুরত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখা হয়।
৪. সেখানে বৃদ্ধাশ্রম এর প্রস্তুতি ডাটা বেইজ থাকে,অর্থনৈতিক সংস্হার সার্পোট থাকে,এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধে র মাধ্যমে
সেবা গ্রহন করতে হয়।
৫. বিদেশে সবাই বৃদ্ধাশ্রম যায় এমন নয়, সামাজিক ভাবে যে সকল পরিবারে দেখাশুনার কেউ থাকে না ,
বা পারিবারিক বন্ধন অত্যন্ত শিথিল বা অর্থনৈতিক সমস্যা আছে , সেখানে বয়:বৃদ্ধ মানুষের ('elderly' or older person)
নিজ থেকে প্রস্তুতি থাকে, সঠিক সময়ে AARP সদস্য কার্ড সংগ্রহ করে । এই সদস্য পদ ২ ধরণের ।
ক) নিয়মিত সদস্য যাদের বয়স ৫০ বা তদূর্ধে বাৎসরিক চাঁদা $16
খ) সহযোগী সদস্য যাদের বয়স ৫০ এর কাছাকাছি বা নিম্নে বাৎসরিক চাঁদা $12.50
প্রতিষ্ঠাতা Dr. Ethel Percy Andrus ১৯৫৮ সালে এই AARP ( American Association of Retired Persons )
স্হাপন করেন যাহার বর্তমান সদস্য ৪০ মিলিয়ন এর উপর। ইহা অলাভজনক, অরাজনৈতিক একটি প্রতিষ্ঠাতা।
৬. এই সদস্য কার্ডের মাধ্যমে বয়:বৃদ্ধ মানুষদের দেশের সর্বত্র বিশেষ সামাজিক মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং
আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহ সুবিধাজনক ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে।
আমাদের এসব এর কিছুই গড়ে উঠে নাই বা আমরা কোন প্রকার প্রস্তুতি র মধ্য দিয়ে যাচ্ছি না, ব্যস মনে হলো বা বনিবনা হলো না ,
বৃদ্ধাশ্রম-এ দিয়ে আসো এটাই আমাদের কারও কারও জীবনের মুক্তি।। অথচ আমাদের ইসলাম সমাজ ব্যবস্হা বিষয়টি কে এভাবে
সমর্থন করে না।
আসুন একটি ছোট্ট হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করতে চাই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের তিনটি কাজ ব্যতিত সকল আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এ তিনটি মধ্যে একটি হলো- নেক সন্তান রেখে যাওয়া। মৃত্যুর পর যদি সন্তান পিতা-মাতার জন্য দোয়া করে, তবে এ সৎ সন্তানের দোয়া পিতা-মাতার আমলের সঙ্গে যোগ হয়।
তাই সন্তানদের প্রতি পিতা-মাতার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। হজরত ইবরাহিম ও ইসমাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে যে দায়িত্ব পালনের পদ্ধতি শিখিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। তুলে ধরা হলো সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্বের সংক্ষিপ্ত রূপ-
প্রত্যেক পিতা -মাতার উচিত সন্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে উত্তম পদক্ষেপ নেয়া। তারা যেন আল্লাহ তাআলার বিধানের আনুগত্য করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। পিতা-মাতা সন্তানকে যে বিষয়গুলোর প্রতি জোর তাগিদ দিবেন, তা হলো-
ক. সন্তানদের দ্বীনি ও সঠিক শিক্ষা দেয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ;
খ. দুনিয়ার জীবন-যাপনে নীতি-নৈতিকতার সঠিক পন্থাসমূহ শিক্ষা গ্রহণের তাগিদ দেয়া;
গ. পরকালীন চিরস্থায়ী জিন্দেগির সাফল্যের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা;
ঘ. আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার মানসিকতা গঠনের প্রতি তাগিদ দেয়া। কারণ যার মধ্যে ক্ষমার মানসিকতা গড়ে ওঠে, সে হয়ে
ওঠে বিনয়ী। বিনয়ী ব্যক্তির দ্বারা ইহ ও পরকালীন জীবনের কোনো বিষয়ে অন্যায় সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ঙ. বিনয়ী ও নীতি-নৈতিকতার সঠিক পন্থাসমূহ শিক্ষা গ্রহণকারী কোন সন্তান বাবা বা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে দিবে না।
অথচ বর্তমান যুগে সন্তান-সন্তুতির দুনিয়ার স্বল্পকালীন জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সকল পিতা-মাতা চিন্তায় অস্থির,
পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনের সাফল্য লাভের বিষয়ে কোনো চিন্তা-চেতনাই পরিলক্ষিত হয় না। যা মানুষকে চূড়ান্ত ক্ষতির দিকেই ধাবিত করে।
বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের কর্তব্য:
ইসলামের দৃষ্টিতে পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়া কোনোভাবেই বৈধ নয়। সন্তান যদি একনিষ্ঠতার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করার পাশাপাশি পিতা-মাতার সেবাযত্ন, খেদমত এবং উত্তম আচরণ করে; তবে সে দুনিয়া ও পরকালে মহাসফলতা লাভ করবে। আর যদি পিতা-মাতার সঙ্গে অসদাচরণ করে অথবা সন্তানের কোনো কাজের কারণে পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট হন, তবে তার জন্য জাহান্নাম সুনিশ্চিত। পিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের কথা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
আল্লাহ তাআলা তাঁর ইবাদতের পর সন্তান-সন্ততির জন্য পিতা-মাতার আনুগত্য করার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। পিতা-মাতাকে সম্মান করা, তাঁদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার, কোমল আচরণ করাকে আবশ্যক করেছেন। এ জন্য তাঁর ইবাদাতের সঙ্গে সঙ্গে পিতামাতার প্রতি উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে (আল্লাহ) ছাড়া অন্য কারও ইবাদাত কর না এবং পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কোনো একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বল না এবং ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বল।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)
এ কারণেই হাদিসে এসেছে, হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলে আরাবিকে জিজ্ঞাসা করলেন, সন্তানের ওপর পিতা-মাতার হক কী? উত্তরে বিশ্বনবি বললেন, তাঁরা উভয়েই তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। অর্থাৎ যারা পিতামাতার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে, তারা সফলকাম। আর যারা তাদের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে তাদের জন্য লাঞ্ছনা।
হাদিসে আরো এসেছে- যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পিতা-মাতার আনুগত্য করে তার জন্য জান্নাতের দুটি দরজা খোলা থাকবে; আর যে ব্যক্তি তাদের অবাধ্য হয় তার জন্য জাহান্নামের দুটি দরজা খোলা থাকবে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি বিশ্বনবিকে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাহান্নামের এ শাস্তির বাণী কি তখনো বলবৎ থাকবে? পিতা-মাতা যখন এ ব্যক্তির প্রতি জুলুম করে। উত্তরে রাসুলে আরাবি বলেন, এই শাস্তির বিধান হয়তো তখনো প্রযোজ্য হবে।
কোনোভাবেই পিতামাতকে কষ্ট দেয়া যাবে না। তাদের অবাধ্য হওয়া যাবে না। আর কুরআন ও হাদিসের বিধানও তাই। সুতরাং সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলার ইবাদাত (হুকুম-আহকাম) করা; তারপরই পিতা-মাতার খেদমত করা, তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করাই সকল মানুষের একান্ত কর্তব্য। সর্বোপরি এমন কোনো কাজ না করা, যাতে তাদের মনে সামান্যতম কষ্টও হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগির পাশাপাশি পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, তাদের প্রতি সহনুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের সার্বিক তত্ত্ববধান গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিশ্ব প্রবীন দিবসের প্রাক্কালে আমি খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুল আপনাদের জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে পিতামাতার অপরিসীম ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত, সচ্ছল অনেক সন্তানেই বৃদ্ধ পিতা মাতাকে অবজ্ঞা করছে, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে। যা সত্যই কাম্য নয়।আমরা কি বদলাতে পারি না? অবশ্যই পারি।আমি অত্যান্ত আশাবাদী একজন মানুষ। আমার আশা আগামী প্রজন্মের কাছে। বিংশ শতাব্দির এই ত্রিমাত্রিক জগতে দাঁড়িয়ে, হে নবীন তোমাদের বলছি আজ থেকে হাজার হাজার লাইক হোক পিতামাতার জন্য, সেলফি হোক পিতামাতার হাসির মুখ আঙ্গুল নয় হৃদয় এর স্পশেই যেন জানতে পারো বাবা - মার প্রয়োজন। পৃথিবীর যেখানেই থাকো না কেন Facebook নয় পিতামাতার প্রশান্তি ময় Face হউক দিন শুরুর অনুপ্রেরণা। সন্তান ও পিতামাতার ভালোবাসায় সিক্ত হউক বাংলাদেশ। প্রচন্ড শক্তিশালী পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ হোক আগামীর বাংলাদেশ।
পরিশেষে সবার প্রতি আমার আকুল আবেদন, যে সমস্ত প্রবীনদের আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে কেউ নেই তাদেরকে অবহেলা করবেন না। আমাকে এই অসহায় প্রবীনদের সেবা করার সুযোগ দিন।আমি আমার “বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র” এ আমৃত্যু বিনা খরচে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বিনোদন এর ব্যবস্থা করে আসছি এবং ভবিষ্যতেও তাদের জীবন সুখময় করে তুলতে সচেষ্ট থাকব। ইনশাল্লাহ।
তাহলে আমাদের করণীয় কী ?
সময় এসেছে সময়োচিত সিদ্বান্ত গ্রহন করার,
নাহলে আপনার আমার জীবনেও ঘটবে এমন দু:খজনক ঘটনা।।।
আরও জানতে চাইলে ২য় পর্বে ভিজিট করুন :-
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৫৯