অণুগল্প
স্কুল ব্যাগ
স্বীকৃতি প্রসাদ বড়ুয়া
আজ সম্ভবত অফিসে লেট হতে পারে। কি করা যায়? ভাবতে ভাবতে একটি সিএনজির সামনে। দর কষাকষি করে অগত্যা উঠে পড়ি সিএনজিতে। স্টার্ট দিল সিএনজি। চালকের বয়স ৪০ এর মতো। কিন্তু উনাকে দেখাচ্ছে ৪৫ এর মতো। সিএনজি চালকের নিজের গাড়ি। তাই আমি বললাম ভাড়া একটু কম নিলেই তো পারেন। উনি বললেন না ভাই কম নিতে পারবো না। কারণ কিছুক্ষণ আগে আমি মার্কেটে একটি ব্যাগের দোকানে গিয়েছি। আমার একটি স্কুলের ব্যাগ দরকার। বেন টেন ব্যাগটি আমার পছন্দ হয়েছে। দরকষাকষি করে শেষপর্যন্ত ১২ শো তে দেবে বলেছে। কিন্তু আবার ভাবলাম আমার তো মেয়ে বাচ্চা। বেন টেন তো ছেলেদের ব্যাগ। আবার মোটুপাতলু ব্যাগ আমার ভালো লাগেনা। তো বারবি ব্যাগটা বেশি ভালো লেগেছে। ওটাতে তিন চারটা মেয়ের ছবি। ওটাই কিনবো। সিএনজি চালাই তাতে কি হয়েছে। আমার মেয়েকে আমি সেরা ব্যাগটাই দিতে চাই। আমি আমার মধ্যবিত্ত স্বভাবসুলভ উপদেশের ভঙ্গিতে বললাম মেয়েকে বলুন : ব্যাগ বড় কথা নয়, আসল কথা হলো পড়ালেখা। ভালো মতো পড়ালেখা করলেই আপনার মেয়ের ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে। আবার বললাম আমাদের সময়ে তো ব্যাগের কনসেপ্ট ই ছিল না। খালি পায়ে হাতে বই নিয়ে মরিচ পান্তা খেয়ে এক দৌড়ে গ্রামের স্কুলে গিয়েছি। আমরা তো কিছু একটা করে খাচ্ছি। ভালোই আছি। তখন ড্রাইভার বললো না ভাই এখনকার দুনিয়া একটু অন্যরকম। সবাই বড়লোকের ছেলে মেয়ে একসঙ্গে পড়ে। আমি কমদামি ব্যাগ মেয়েকে দিলে মেয়ে মন খারাপ করবে। আজকে আল্লাহ আমারে যা দেয় তাই দিয়ে আমি আমার মেয়ের জন্য পছন্দের সেই ব্যাগ কিনবোই। যথাস্থানে নেমে গেলাম। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বিশটাকা বেশি দিলাম। সিএনজি স্টার্ট দিল ড্রাইভার। আমি হাঁটছি পথে। দূরে দেখা যাচ্ছে সিএনজি চলে যাচ্ছে। হয়তো আজ সুন্দর ব্যাগটা সিএনজি চালক তার মেয়েকে উপহার দেবে। আহা একটি ব্যাগের মধ্যেই কত মমতা, কত আনন্দ। আর আমরা............
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৮