অণুগল্প
দশ মিনিটের বাউলিয়ানা
স্বীকৃতি প্রসাদ বড়ুয়া
দুই নগর বাউলের নাম ঠিক জানি না। জিজ্ঞাসা করলে হয়তো জানা যেত। তবে দুইজনের বাড়ি যে কুষ্টিয়া অঞ্চলে তা বোঝা যায় তাদের মুখের বুলি শুনে। নাম দিলাম স্বপন ও রতন বাউলা। পুরো বাউল বলছি না এই কারণে যে তারা দুজনকে আমরা যে বাউলের পোশাকে দেখি সচরাচর সেরকম নয়, ওরা সাধারণত জিন্স ও ফতুয়া পরে। আর হাতে ব্রেসলেট। দুজনের একজনের হাতে থাকে একতারা আর একজনের ঢোলক। অন্য দশরকমের আজিব পেশার মতো স্বপন ও রতন দুই বন্ধু ঢাকার ব্যস্ত জীবনে পেশা হিসেবে নিয়েছে চলন্ত সিটিং সার্ভিস বাসে ১০ মিনিট গান শোনানোর পেশা। আমি আসতে যেতে তিন থেকে চারবার তাদের গান শোনার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তারা সাধারণত এভাবেই গান শুরু করেন বাসে। ‘‘চলন্ত বাসে আপনাদের গান শোনার আমন্ত্রণ জানাই। আমরা লালন সাঁইজির গান পরিবেশন করবো। আপনাদের পছন্দের গান শোনার থাকলে আমাদের অনুরোধ করতে পারেন। আর গান শেষে এই বাউলদের যে যা পারেন সম্মানিত করবেন। সব সময় দেখি প্রথম গান ধরে ওরা ‘জাত গেল জাত গেল বলে, একি আজব কারখানা’। আর ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।’’ এই দুটা গানই ওরা গায় সাধারণত বাসে। গানের সময় বেশীর ভাগ ব্যস্ত বাস যাত্রীরা গান শোনো আনন্দিত হয়। আবার কিছু কিছু লোক বিরক্তও প্রকাশ করে যা তাদের চেহারা দেখে অনুমান করা যায়। তবে তাদের সম্মানী তোলার কায়দাটা আমার বেশ পছন্দের। তারা গান শেষে একতারার খোলে সম্মানী নেন। বাউলারা বাসে গাইতে থাকে একতারা আর ঢোলক বাজিয়ে তালে তালে জাত গেল জাত গেল বলে। আমি চিন্তা করি এই দশমিনিটের পরিবেশনায় চলন্ত বাসে যে একটা মরমী লালনীয় আবেশ ছড়িয়ে পরে তা কোন টিভি অনুষ্ঠানের শো এর সঙ্গে তুলনা চলে না। স্বপন ও রতন বাউলা কেন যে এ পেশা বেছে নিয়েছে তারাই হয়তো জানে, হয়তো গান ছাড়া তারা আর কিছুই শেখেনি, কিছুই পারে না। এভাবেই জীবন যদি চলে তবে চলুক না.....।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৭