অণুগল্প
লেখক
স্বীকৃতি প্রসাদ বড়ুয়া
তিনি একজন লেখক। এ সমাজে চোর ডাকাতেরও একটা স্ট্যাটাস আছে, কিন্তু লেখকদের তেমন কোন স্ট্যাটাস নেই । সবাই মনে করে জীবন একটা যুদ্ধ, এই যুদ্ধে তারাই জয়ী হয় যারা রিয়েল যোদ্ধা। তাই সমাজের বড় নেতা, মন্ত্রী, আইনজ্ঞ, ব্যবসায়ী সবাই জীবনের এক একজন রিয়েল হিরো, ফাইটার। তার মধ্যে একজন লেখক জীবনের কাছে পরাজিত সৈনিক। এবং সমাজের সবাই তার লেখাকে হয়তো দাম দেয়, কিন্তু ব্যক্তি লেখক নৈব নৈব চ। যেমন কবি লেখক মানস বাবু, তিনি নিজেই নিজেকে জীবনের কাছে হেরে গিয়ে বলেন মৃত সৈনিক। লেখক সমাজে তার দাম নেই, বন্ধু সমাজে টাকা নেই বলে সমাদর নেই, এমন কি প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর কাছেও দাম নেই সততা আছে কিন্তু টাকা নেই বলে। অথচ কবি লেখক মানসের জীবন দর্শন হলো ‘এক ফালি চাঁদ, এক থালা ভাত’ এই তো জীবন। এখানে চাঁদের ফালি প্রতিকী অর্থে এসেছে। মানে শিল্প হলো চাঁদ, আর বাস্তবতা হলো ভাত। এই ভাতের জন্য লেখক মানস বাবুকে কতো স্যাকরিফাইস করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। মানস বাবুর বইয়ের বাজারে কাটতি আছে তবুও প্রকাশকরা উনাকে ঠকান। বলেন, বইতো এখন লোকজন পড়ে না, আর বাজারে নোট বইয়ের যে চাহিদা শিল্প সাহিত্যের বইয়ের তেমন কোন চাহিদা নেই। তাই উনারা ২ হাজার ছাপিয়ে লেখককে বলেন ৫০০ ছাপিয়েছি, এই সম্মানীটুকু নিন। মানস বাবু হা করে তাকিয়ে থাকেন প্রকাশকের দিকে। ভাবতে থাকেন, জীবনে লেখা টাকেই একমাত্র অবলম্বন করে বড় ভুল হলো, আর তো কিছু পারি না, শুধু লেখাকে সম্মান করে লিখে বাঁচতে চাওয়াটাই মনে হয় আমার বড় ভুল। মানস বাবু একা একা একটা পার্কের বেঞ্চিতে গিয়ে বসে ভাবতে থাকেন- কবি জীবনানন্দ দাশও জীবনে তেমন সুখ শান্তি পান নি। এমন কি টাকার মুখও দেখেন নি, সংসার জীবনেও ছিল না শান্তি । অথচ এখন তাঁর সৃষ্টি নিয়ে কত প্রকাশক কতভাবে ব্যবসা করছেন, নিজেদের সমৃদ্ধ করছেন, কিন্তু জীবনানন্দ দাশের এতে কি যাবে আসবে সারাজীবন তো অপরিসীম কষ্ট করে গেলেন। তাহলে লেখক জীবনটাই কি এ রকম! তাহলে কি হবে ভালো মানুষ হয়ে, শিল্পীত মানুষ হয়ে যদি একটি সত্যিকারের মানুষের জীবন যাপন করতে না পারেন একজন লেখক। এ সব ভাবতে ভাবতে কবি লেখক মানস বাবুর হঠাৎ কি যে হলো : পার্কের পাশের লেকে দিলেন ঝাঁপ। দুদিন পরে পত্রিকায় বড় বড় হেডিং এ খবর বেরুলো কবি লেখক মানস বাবু আত্মহত্যা করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪০