somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি কেন নাস্তিক?

০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসেবে ছোটকাল থেকেই পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম। তাবলীগ জামাতের সাথেও জড়িত ছিলাম। হুজুরেরা যা বলতো মূগ্ধ হয়ে শুনতাম। আর মনে মনে মুসলমান হয়ে জন্মানোর জন্য গর্ব অনুভব করতাম। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে জিকিরে বসতাম দল বেঁধে। শুধু আল্লাহ আল্লাহ করলেও মনে কেমন জানি এক নির্বোধ প্রশান্তি আসতো।

আমাদেরকে শেখানো হতো দুনিয়ার সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান কোরান থেকে আসছে, তাই বেশি বেশি কোরান এবং ইসলামী সাহিত্য পড়তে হবে। কাফের বেদ্বীনদের কোন লেখা পড়া যাবেনা। আমার মনে আছে আমাদের স্কুলের ধর্মশিক্ষক ক্লাসে এসে রবীন্দ্রনাথ কে কিছুক্ষণ গালাগালি করতো আর আমাদেরকে রবীন্দ্রনাথের কোন লেখা না পড়ার জন্য উত্‍সাহিত করতো। আমাদেরকে কবি ইকবালের ঊর্দু শায়েরী শোনাতো, আর বলতো এই না হলে মহাকবি।

তখনো সাহিত্যের হাতেখড়ি আমার হয় নাই। তাই স্যারের কথা নাক কান বুজে বিশ্বাস করতাম। আর রবীন্দ্রনাথ কে মালাউন কবি বলে কটাক্ষ করতাম।

একদিন শুক্রবারের নামাজের খুত্‍বায় হুজুর ইহুদি, নাসারা আর পশ্চিমা দুনিয়া পাপে ভরা, ওদের কোন ধর্ম নেই, ওরা পশু সমতূল্য ইত্যাদি বলে গালি দিচ্ছিল। এটা শুনে আমার কেমন জানি খটকা লাগা শুরু হলো, যে ওই পশুসমতূল্য মানুষগুলোর জন্যই আমরা প্রাসাদ-তূল্য এ,সি, মসজিদে বসে তাদেরকে গালি দিতে পারছি। নইলে আমাদের খেজুর পাতার মসজিদের উপরে যাওয়ার মত প্রযুক্তিগত ক্ষমতা ছিল না।

একদিন হুজুর বেহেশতের বর্ননা করতেছিল যে ওখানে ইমানদারের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী সুখ। সেখানে কিছু খাইতে মন চাইলেই সামনে এসে হাজির হবে। আমি চিন্তা করলাম যেখানে কোন পরিশ্রম নেই, কোন কষ্ট নেই, সেখানে ক্ষুধাই-বা লাগবে কেন? আর সে ক্ষুধা নিবৃত্তির তৃপ্তি টায় বা কি? আবার হুজুর যখন বললেন বেহেশতবাসীর জন্য ৭২টা করে হুর দেয়া হবে, তাদের যৌনবাসনা নিবৃত্তির জন্য, তখন আমার খুব লজ্জা লাগতো। ভাবতাম আমার বাবা বোন যখন বেহেশতে যাবে আর আমি তাদের সামনে ৭২ টা হুর নিয়ে ঘুরবো? আমার কোরানে বর্নিত বেহেশতটা কে খুব নোংরা মনে হতে লাগলো।

আমি কোরানের বাংলা অনুবাদ ও তাফসীর যোগাড় করে পড়া শুরু করলাম। কারন আমার তখন মনে হয়েছিল যে, নিজে কোরান বুঝে ধর্মকর্ম করাই সেরা। আর আমি কোরানের আগে একমাত্র ক্লাসের বই আর দুই চারটা গল্প উপন্যাস ছাড়া আর কিছু পড়িও নাই। যাইহোক যেদিন থেকে কোরান পড়া শুরু করলাম অর্থবুঝে, সেদিন থেকেই আল্লাহর অস্তিত্বের সন্দেহের বীজ আমার মনে রোপন হলো। আমি তাফসিরে মারেফুল কোরান নামক সৌদি সরকারের দেয়া তাফসীর গ্রন্থটা পড়ে শেষ করলাম; কয়েকবার করে পড়লাম ওইটা। পড়ার পর আমার মনে প্রশ্ন তৈরি হলো --

এটা যদি আল্লাহ লিখে থাকে, তাহলে উনি নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত সবসময় খালি ভয় অথবা চরম সুখের লোভ দেখিয়ে খালি নিজের ইবাদত করাতে চান। এতে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে তার লাভ টা কি?

এটা যদি আল্লাহর কিতাব হয়, তাহলে খালি সমসাময়িক ঘটনাবলীতে কোরান ভরা কেন?

কোরান নাকি আল্লাহ আগেই লিখে রাখছিলো তাহলে কোরানের বর্ননারীতি এইরকম কেন যে নবীর যখন যে কথাটা দরকার তখন সেই কথাটাই নাযিল হলো? আগে থেকে লিখে রাখা কোরানের তাহলে কি হলো?

দুনিয়ার সবকিছুই আল্লাহর নির্দেশে হয়, তাহলে একজন মানুষ হিন্দু খ্রিস্টান অথবা নাস্তিক এতো তার ইচ্ছায়-ই হয়েছে। তাহলে মানুষের দোষ টা কোথায়?

আমি এইসব প্রশ্ন দুই-একটা একজন হুজুর কে জিঞ্জাসা করছিলাম সে তো পুরো চোখমুখ গরম করে আমারে প্রায় মারার অবস্থা। তার কথা আল্লাহকে বিনাপ্রশ্নে মেনে নিতে হবে; কোন প্রশ্ন করা যাবেনা; যে প্রশ্ন করবে সে কাফের মূর্তাদ; তাকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে।

সেদিন-ই ধর্মের ওপর থেকে সমস্ত আস্থা আমার শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেদিন থেকে নিজেকে মুক্ত লাগা শুরু হলো। ধর্ম বিষয়ের বাইরে আমি বিভিন্ন বই পড়া শুরু করলাম -- জানলাম বিবর্তনবাদ ,জানলাম দর্শন, গ্রহণ করলাম বিশ্বসাহিত্যের আস্বাদ। আর এভাবেই ধর্মের নামে ছোটকাল থেকে আমার যে মস্তিষ্কধোলাই করা হচ্ছিল, তা থেকে ধিরে ধিরে বের হতে শিখলাম। এখন আমি গর্ব করেই বলি আমার কোন ধর্ম নেই; আমি একজন মানুষ -- এইটাই আমার চূড়ান্ত পরিচয়।
২৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×