somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাতাসে বসন্তের ঘ্রান, মাতাল মওসুম - সরিষার তেল মেখে ঘুমিয়ে পড়ুন।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাগবার দিন আজ, দুর্দিন চুপি চুপি আসছে;/যাদের চোখেতে আজো স্বপ্নের ছায়া ছবি ভাসছে -/তাদেরই যে দুর্দিন পরিণামে আরো বেশী জানবে,/মৃত্যুর সঙ্গীন তাদেরই বুকেতে শেল হানবে।

আগেই সাফ সাফ জানিয়ে রাখি। চির কিশোর কবি সুকান্তের উপরের পংক্তিগুলোর কোন ভিন্ন মানে ধরার দরকার নেই। আজকের এই ‘মহতী’ দিনে আমরা সরিষার ব্যবহার সংক্রান্ত আলোচনা করব।

মূলতঃ সরিষার ব্যবহার বহুবিধ। এটি একটি ‘তেল প্রদায়ক’ দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। এর পাতা সর্ষে শাক হিসেবে খাওয়া হয় আর এর দানা মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এ দানা পানির সাথে মিশিয়ে ভিনেগারসহ বিভিন্ন তরল তৈরি করা হয়। এ দানা পিষেই সরিষার তেল তৈরি করা হয়, যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। ভূত তাড়াতে সর্ষের ব্যবহার অনেক প্রাচীন। তবে কীনা, সর্ষের মাঝেই ভূতের বাড়ি-ঘর হলে- কী করণীয় তা জ্ঞানী-গুণীরা বাতলে দেন নি। অন্যদিকে, জীবনে চিন্তা-ভাবনা কম থাকলে এই তেল মেখে ঘুমাবার পরামর্শও বেশ জনপ্রিয়।

আজ সে পরামর্শই দেব। কেননা, এখন কেউই আর ‘বোকা’ নয়- সবাই ‘সচেতন’। কেউই আর ‘কম’ বোঝেন না- বরং দুই-এক চামচ বেশিই বোঝেন! বিশ্বায়নের এই যুগে ‘ঘর-মন-জানালা’ বন্ধ করে বসে থাকার সুযোগ নেই। এদেশের দন্ড-মুন্ডের কর্তারা আরো কয়েক কাঠি সরেস। আইন-শৃংখলা, শেয়ারবাজার, সীমান্তহত্যার মত ‘ছোটখাট’ বিষয়ে মাথা ঘামানোর সময় তাঁদের নেই। বড় বড় হাতি-ঘোড়া শিকারে তাঁরা এখন সিদ্ধহস্ত।

তাইতো আমাদের চিন্তাও নেই। আমরা বোকা বাক্সের সামনে বসে ‘কুড়মুড়ে’ Lays এ কামড় দিয়ে শ্বাশুড়ী-বৌয়ের অন্তহীন ‘কূটকাঁচালী’ উপভোগ করব- দুধের শিশুর ঠোঁটে বিজাতীয় ভাষা শুনে ‘গর্বে গর্বে গর্ভবতী’ হয়ে যাবো! ‘শীলার জওয়ানি’ চেটে পুটে খেতে লক্ষ রূপী ব্যয় করব। ‘মমতাময়ী’ দিদি মমতার বিজয়ে বগল বাজাবো। তিস্তা-টিপাইয়ের বাঁধ না হওয়ায় প্রবল ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করব।

তখন যদি ভুল করে কেউ বলে ওঠে, “সংগ্রাম শুরু করো মুক্তির,/দিন নেই তর্ক ও যুক্তির।/আজকে শপথ করো সকলে/ বাঁচাব আমার দেশ, যাবে না তা শত্রুর দখলে;/তাই আজ ফেলে দিয়ে তুলি আর লেখনী,/একতাবদ্ধ হও এখনি”, সাথে সাথে তাতে নানাবিধ ‘কানেকশন’ আবিষ্কার করব। ‘তাচ্ছিল্যে’ নাক সিঁটকাবো। ‘প্রতারিতবোধ’ করব।

এক বছর আগে বাংলাদেশ নামের দুঃখিনী দেশটার সার্বভৌমত্বকে আঁকড়ে ধরে কাঁটাতারে লটকে থাকা অভাগিনী ফেলানীর অসহ্য তৃষ্ণায় কাতরে কাতরে মরা যাওয়া দেখে যদি কারো ‘অসহ্য দেশপ্রেম চেগিয়ে’ উঠতে চায়, তবে তার পিঠে ছুরি বসিয়ে দিয়ে বলব, “এদেশে তোমার অধিকার নেই, এখানে তুমি প্রতিবাদ জানাবার যোগ্যতা অর্জন কর নি। প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-সংগ্রাম সব আমার পৈতৃক সম্পত্তি!”

আর আজ বিবস্ত্র হাবিবের মত নগ্ন আর রক্তাক্ত লুৎফরের মত নখদন্তহীন নপুংশক আমার দেশতাকে দেখে, যারা আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়, তাদেরও ছেঁটে ফেলতে হবে। নিদারুন এই শীতের ঘোরে ঘুম ভাঙাতে আসে! কোন সে বেয়াদব- বরাহ শাবক?!

বন্ধুগণ! এখন আবহাওয়া দারুন, মোটা কম্বলের নীচে রাজ্যের ওম, বাতাসে বসন্তের ঘ্রান, মাতাল মওসুম!!

‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ’ নিয়ে কোনকালে কে বলেছিলেন, “এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।” বাকোয়াজ সব! এখন, এই নয়া জামানায় এ সব বলে ফায়দা আছে? বন্ধুর সাথে আবার লড়ালড়ি কিসের, একটু-আধটু মান-অভিমান হতেই পারে!

আসুন! আমরা সবাই নাকে ‘সরিষার ত্যাল’ মেখে ঘুমিয়ে পড়ি!!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:৫২
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×