somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এমন একটা দেশ চাই না আমি!

২৫ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আচ্ছা,মানুষ সবচেয়ে ভালবাসে কোন জিনিসটা?
তার জীবন? সম্মান?
এখন,ওগুলোরই যখন কোন নিরাপত্তা থাকে না, তখন থাকেটা কী?

চিটাগাঙ নিউমার্কেটের পাশেই আমার অফিস। প্রতিদিন বের হয়ে মার্কেটের সামনের ফুটপাথ ধরে কদ্দুর এসেই তবে বাসায় ফেরার গাড়ি ধরি। কালও ব্যতিক্রম হয় নি।

টুকিটাকি কিছু কেনাকাটা করতে গিয়ে একটু দেরিই হয়ে গিয়েছিল। রাত নয়টা করে ফিরছিলাম। হঠাৎ জটলা দেখে একটু থমকালাম। দেখি,মার্কেটের সামনে দোস্ত বিল্ডিঙের অপর পারে একটা সিএনজি ট্যাক্সিকে ঘিরে কিছু উৎসাহী তরুণের চেঁচামেচি- এর সাথে উৎসুক জনতার কমতি নেই। কমদামে ভাল ক্যামেরার এই যুগে কিছু সৌখিন ক্যামেরাম্যানও জুটে গিয়েছে। সিএনজি-এর ভেতরে থাকা লোকজন(ক’জন বুঝতে পারছিলাম না) দরজা আটকে বসে আছে আর ২২-২৫ বছরের ছেলেগুলো অশ্রাব্য গালিগালাজের সাথে ওদের বের করার চেষ্টা করছে। কাঁধে ল্যাপটপের ব্যাগ আর হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে ভীড়ের মাঝে যাওয়ার সাহস-উৎসাহ কোনটাই পেলাম না। একটু দূরে আইল্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে সমস্যা বোঝার চেষ্টা করছিলাম।

আচানক, সিএনজি-এর উপরের কভার ছিঁড়ে ফেলে সে অবস্থাতেই ভেতরে থাকা মানুষগুলোকে হাতের কাছে যা আছে তাই নিয়েই পেটানো শুরু হয়ে গেল। একজন ট্রাফিক পুলিশ কিছুতেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিল না। এর মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে সিএনজিটা কাত হয়ে পড়েই গেল আর তার ভেতর থেকে একজনকে বের করে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে সে কী ধুন্ধুমার মার! মেরেই ফেলবে মনে হচ্ছিল। আর থাকতে না পেরে এক দৌড়ে রাস্তা পার হতে হতে দেখি মানুষটা ইতিমধ্যে সম্ভবতঃ সেন্সলেস হয়ে গেছে আর বীর পুঙ্গবেরা উধাও। বাকি দর্শকেরা গোল হয়ে তামাশা দেখছে।

তাড়াতাড়ি দৌড়ে কাত হয়ে থাকা সিএনজিটার কাছে গিয়ে দেখি ভেতরে একজন নারী, পিটিয়ে বিবস্ত্র করে ফেলা হয়েছে-প্রানভয়ে বাইরে বেরুচ্ছে না। এর মধ্যে আমার পেছনে দাঁড়ানো একজন প্রস্তাব দিয়ে বসল, “জ্বালিয়ে দে”। তাকিয়ে দেখি- এই লোক আমার মতই ঘটনার আগ-পাশ কিছুই জানে না, অথচ, কী মহা উল্লাস আর আক্রোশে জ্বালিয়ে দিতে চাইছে আর জনতার কী উল্লসিত সায়!! যে দুই-একজন(এর মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের চিটাগাঙ নগরের সভাপতি ছেলেটাও ছিল, নাম জানি না) মহিলাকে বাঁচাবার চেষ্টা করছে- তারাও রোষের শিকার!

আমার গা’ কাঁপতে শুরু করল। নিজের সাহসহীনতা-কাপুরুষতা আর মানুষের উদগ্র মনুষত্বহীনতায় বোধশক্তিহীন আমি আস্তে করে ভীড় ছেড়ে বেরিয়ে এসে রাস্তার পাশে একটা টুলে বসে পড়লাম।

কপাল ভাল, মাত্র তিনশ গজ দূরে থাকা কোতোয়ালী থানা থেকে পুলিশ ফোর্স ততক্ষনে এসে পড়ল( তিনশ গজ পেরুতে আধঘণ্টার বেশি লাগল-তাও তো এলো)! এবং পুলিশ আসার সাথে সাথে শুধু যারা বাঁচাতে চাইছিল তারা ছাড়া বাদ বাকি তামাশা দেখনেওয়ালারা চোখের পলকে উধাও- মারপিটকরনেওয়ালারা তো নাইই। আসলে কী ঘটেছিল- কোথা হতে সূত্রপাত কিছুই নিশ্চিতভাবে জানা গেল না। যদ্দুর জানা গেল, তা হচ্ছে- রাতে ঐ সময়ে নিউ মার্কেটের ওখানে দেহপশারিনীরা খদ্দেরের জন্য দাঁড়ায়। মেয়েটা এমনই একজন আর লোকটা তার দালাল। দু’জনে মিলে কাঊকে ফাঁসাবার চেষ্টা করছিল- তাও নিশ্চিত না। আহতদের থানায় কিংবা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপন কর্তব্য সম্পাদন করলেন।

জন্মদিনের শেষবেলাটা এমন হবে ভাবতেই পারি নি আমি।

আচ্ছা, যারা কিছু না জেনে, না বুঝে মানুষ দু’টোকে পেটালেন, তারা কি কাল রাতে অন্য দিনের মতই বাসায় ফিরে স্ত্রী-সন্তানের সাথে বসে ভাত খেতে পেরেছেন? ঘুমন্ত সন্তানের কপালে চুমু খেয়ে স্ত্রী সাথে শুয়ে ভাব-ভালবাসা করেছেন? মানুষের ভেতরে ঠিক কোন জিনিসটার অভাব হলে- এমন দ্বৈত জীবনযাপন করা সম্ভব? আমি তো ঘুমাতে পারি নি অনেকক্ষন। ঠিকমত গলা দিয়ে ভাত নামে নি!
আচ্ছা, আমি কি পেছনে পড়ে যাচ্ছি। ব্যাকডেটেড থেকে যাচ্ছি। শহুরে হতে পারছি না!

সব মিলিয়ে কী দাঁড়ালো?

১। একটু ভীড়ের মাঝে দুই-চারজন মিলে আমাকে কোনদিন চোর বলে চিৎকার দিলে আমার আর বাঁচার উপায় নেই- আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও আমি পাবো না!
২। একজন মানুষ দালাল হতে পারে- দেহপশারিণী হতে পারে। কিন্তু, তার জীবনের, তার সম্মানের কোন দাম নেই! বিবস্ত্র করে পেটাতে হবে? জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলতে হবে?
৩। ৩০০ গজ দূর থেকে আমাদের আইনের রক্ষকদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে অকুস্থলে আসতে আধা ঘন্টা লেগে গেলে, আমার ট্যাক্সের টাকায় এই অথর্বদের পুষে লাভটা কার?
৪। গনপিটুনির সময় আমি জনতার যে আক্রোশ দেখি- তার সিকি ভাগ যদি এদেশের সত্যিকারের চোর-বাটপারদের উপর, অধিকার হরণকারীদের উপর দেখানো যেত- দেশটা বহুদুর এগিয়ে যেত। কিন্তু, না। আমরা এদের পেছনেই ‘জয়-জিন্দা-নারায়ে’ ধ্বনি তুলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি!
৫। ঐ দেহপশারিনী-দালালের চাইতেও নিকৃষ্ট আমি-আমরা। জঠরজ্বালা নেভাতে আর দেহের ক্ষুধা মেটাতে এরা অর্থের বিমিময়ে সম্মান বিক্রি করে। আর আমরা কোন দায়িত্ব না নিয়েই হাতের সুখ মিটিয়ে- নগ্ন নারী দেহ উপভোগ করে পুলিশ আসার আগমূহুর্তে সটকে পড়ি।

এমন একটা রাষ্ট্র কেমন করে চাইতে পারি আমি?

রাষ্ট্রদ্রোহিতা হলে হোক, আদালতে দাঁর করিয়ে রাখলে রাখুক, তবু বলছি- এ ব্যবস্থা উলটে দিতে হবে- নপুংসক এই আমাদের ভেতরের নষ্ট বীজটাকে দিনের পর দিন বাড়তে দিয়ে যে বিষবৃক্ষের চাষ আমরা করেছি, এর জাড়সুদ্ধ উপড়ে দিতে হবে।
আর নয়তো পালাতে হবে- বহুদুরে।
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×