কতকিছু হারিয়ে গেলো জীবন থেকে। খালি মনে হচ্ছে বয়স হয়ে গেছে। মনে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তাল সময়গুলো। যেই সব দিন গুলো পর্যন্ত আমি মানুষ ছিলাম! ঐসব দিনগুলোতে আমি ভাবতাম সাম্যবাদের কথা, পৃথিবী পরিবর্তনের কথা। এর পর পাশ করলাম, কত বছর পর হয়ে গেলো , সেই সাথে আমি হয়ে গেলাম একজন অমানুষ।বাস্তব জীবনে প্রবেশ শুরু হয় ভার্সিটির থার্ড ইয়ারে। সব ছেলে পিলে আস্তে আস্তে বদলে যাওয়া শুরু করলো। আগের সে উচ্ছাস আর কারো মধ্যে পাওয়া গেলো না। সবাই হয়ে পারলো যান্ত্রিক। এক বন্ধুকে কারন জিজ্ঞাসা করলে বললো , " দোস্ত আর কত, অনেক হয়েছে"।আমি কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষ থাকতে চাইলাম, কিন্তু শেষের দিকে আমিও হয়ে পরলাম অমানুষ। হল ছেড়ে দিতে হবে , ক্যান্টিনে আর যেতে পারবে না , এইভাবনা গুলো অনেক কে পাগল করে ফেলেছিল। ইচ্ছা করে অনেকে খারাপ রেজাল্ট করলো রয়ে গেলো ভার্সিটিতে। খুব তারাতারি তারা ভুল বুজতে পারলো । বুজতে পারলো সেই দিন আর নেই, সেই পুরানো মানুষ গুলো আর নেই, বয়স হয়েছে।আস্তে আস্তে তাড়াও পাশ করে বের হলো। আমি ছিলাম শেষের দলে। ভার্সিটি যখন ছাড়ি শুধু মানে হত কি জানি নেই।
কতদিন স্বপ্ন দেখলাম আমি আসলে পাশ করি নাই । একটা বোবা আতঙ্কে রাত্রে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙ্গে যেত। বন্ধুদের সাথে দেখা করতাম , তাড়াও একই কথা বলতো। একটা জিনিস আমরা সবাই বুঝে গিয়েছিলাম যে আমরা কেও আগের মতো নেই। অনেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেলো, কেও বিয়ে করলো। শেষ আড্ডা গুলো আস্তে আস্তে নাই হয়ে গেলো।
চাকরি জীবন আমাকে শিখিয়েছে আমাকে হতে হবে অমানুষ , তৈল মর্দনকারী এবং ধূর্ত । তাহলেই আমার উন্নতি নিশ্চিত। অন্যের অধিকারের কথা বলার চেয়ে নিজের অধিকার আদায় করাই আসল কাজ। অন্যকে বঞ্চিত করলেই প্রফেশনাল উন্নতি হয়।
আজকে সেই পুরনো দিনের কথা মনে হচ্ছে। স্মৃতি গুলো বড্ড কষ্ট দিচ্ছে।অনেক বছর হয়ে গেলো দেশে যাই না। খুব যেতে ইচ্ছা হচ্ছে। পুরোনোতে ফিরে যেতে মন চাচ্ছে। কিন্তু আমার ভয় হয় সেই চেনা মূখ গুলো যদি অচেনা হয়ে যায়!