somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেফাজত দেশবাসীর ভাগ্যনিয়ন্তা?

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এতোকাল পুলিশের হাতে ৫৪ ধারা নামে একটি ‘মারণাস্ত্র’ ছিল। ‘একটি মারণাস্ত্র’ বলা হচ্ছে এ কারণে যে পুলিশের হাতে অপরাধ শনাক্ত এবং অপরাধের শাস্তির বিষয়ে অজস্র ধারা থাকলেও অপার ক্ষমতার ধারাটির নাম ৫৪ ধারা। এই ধারাবলে যে কাউকে যে কোনো সময় গ্রেপ্তার করার এখতিয়ার রয়েছে পুলিশের। কিন্তু সেই ৫৪ ধারাকেই ‘সেকেন্ডারি’ বানিয়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের ধারা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে আইসিটি ৫৭ ধারা। এই ধারা সেই সব ব্যক্তির ওপর প্রয়োগ করা যাবে যারা অনলাইনে বা ওয়েব মাধ্যমে কারো মানহানিকর, অমর্যাদাকর, অশ্লীল, ধর্মবিরোধী বক্তব্য প্রচার করবে। এই ধারার সব চেয়ে মারাত্মক বিষয় হলো ধারাটি জামিন অযোগ্য।
এই ধারায় ন্যূনতম শাস্তিও প্রায় যাবজ্জীবন শাস্তির কাছাকাছি। ন্যূনতম অর্থদ- এক কোটি টাকা! স্মরণ রাখতে হবে গত বছর ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় মৃত্যুদ-ের পরিবর্তে যাবজ্জীবন সাজা হলে ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে শাহবাগ গণজাগরণ গড়ে তোলে। এবং তার পর পরই শাহবাগকে মোকাবেলা করতে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। আরো মনে রাখতে হবে হেফাজতের ‘ঢাকা ঘেরাও’ কর্মসূচি সরকার শান্তিপূর্ণভাবে পালনের অনুমতি দিলে হেফাজতি নেতাকর্মীরা মতিঝিলের শাপলা চত্বর দখল করে সেখান থেকেই ঢাকা দখল তথা বাংলাদেশে তাদের সরকার কায়েমের হুঙ্কার দেয়, এবং তাদের তথাকথিত ১৩ দফা দাবি না মানা হলে কোনো সরকারকেই ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেয়। সেই সঙ্গে তাদের মনগড়া একটা লিস্টও সরকারকে ধরিয়ে দেয় তারা। সেই লিস্টের সবাইকে ‘নাস্তিক’ হিসেবে গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদ- দেয়ারও দাবি করে তারা। আর তার পর পরই সরকার অনেকটা নতজানু হয়ে ২০০৬ সালে তথ্যপ্রযুক্তি আইন সংস্কার করে নতুন ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০১৩’ জারি করে। ৫৭ ধারা সেই আইনেরই একটি ধারা। যে হেফাজতিদের চাপের মুখে সরকার আইন সংশোধন করে কঠোরতম ৫৭ ধারা সংযুক্ত করেছে সেই হেফাজতই একের পর এক ৫৭ ধারা লঙ্ঘন করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, হচ্ছে না।
২০১৩ সালে ৫ এপ্রিলের আগে-পরে হেফাজতি নেতারা কে কী বলেছেন সেটি উল্লেখ না করেও বলা যায় চলতি বছরেও হেফাজতি নেতারা একাধিকবার ৫৭ ধারা লঙ্ঘনকারী হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। কিছুদিন আগে হেফাজতের আমির আল্লামা শফী হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের তথা মহাজোট সরকারের প্রশংসা করে বক্তব্য দিয়ে বসলেন। হঠাৎই এই চমকটি দেখে জনমানসে বিস্ময়ের সৃষ্টি হলো। কেউ কেউ মনে করছিল এটা কোনো চমক নয়। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে একাংশ আওয়ামী লগের নেতৃত্বে আসার পর পরই শফী সাহেব ‘স্বস্তির’ নিঃশ্বাস ফেলেছেন। তিনি দেখলেন শাহবাগের লাখ লাখ ‘নাস্তিক’ এর হাত থেকে নেতৃত্ব চলে এসেছে লাখ লাখ ‘ইমানদার মুসলমানের’ হাতে! আর তাতেই তিনি আওয়ামী লীগকে ‘শত্রু নয়’ বলে বাণী দিলেন। মওলানা শফীর ওই বাণীর কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া অবশ্য প্রকাশিত হয়নি। তবে সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অবশ্যি মওলানা শফীর নারীকে হেয় করে দেয়া বক্তব্য বিষয়ে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কুষ্টিয়ায় শান্তি, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শীর্ষক গণসংলাপে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-
‘আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারের প্রশংসা করায় হেফাজতের ইমাম আল্লামা শফী হুজুরকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি মেয়েদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন, মেয়েদের সর্বোচ্চ চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার কথা বলেছেন। এজন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে (ভোরের কাগজ, ১৯.০৪.২০১৪)।’
এবং ওই একই দিনে মওলানা শফীও কক্সবাজারে ইসলামি মহাসম্মেলনে ‘নাস্তিক’দের কতলের হুমকি দিয়েছেন।
শফী বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের প্রধানমন্ত্রীকে গালি দিই নাই, শুধু শুধু আমাদের দিকে চোখ বড় করে তাকাও কেন? নাস্তিকরা তোমরা মুরতাদ হয়ে গেছো, তোমাদের কতল (হত্যা) করা আমাদের ওপর ওয়াজিব হয়ে গেছে।’
আল্লামা শফী আরো বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কাউকে গদিতে বসাতে-নামাতে আন্দোলনে নামে নাই। আমরা আন্দোলন করছি ১৩ দফা মানার জন্য। সরকার, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নাই। তারা মুসলমান হলে আমাদের ১৩ দফা মেনে নেবে। ১৩ দফা মানলে ভালো, না মানলে নাই। তিনি আরো বলেন- ‘নাস্তিকদের গালি দিলে কারো গায়ে লাগলে আমার করার কিছু নাই। আল্লাহর দেশে থাকতে হলে আল্লাহকে না দেখে আল্লাহর অস্তিত্ব মানতে হবে, না হলে তুমি আল্লাহর দেশে থাকতে পারবে না (প্রথম আলো, ১৯.০৪.২০১৪)।’
এই যে মওলানা শফী সরাসরি হেফাজত বিরোধিতাকারীদের বা যারা তাদের ১৩ দফাকে কূপম-ূক এবং দেশকে পিছিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র বলছেন, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের সংবিধানকে পর্যন্ত অস্বীকার করে তথাকথিত ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের জঙ্গিবাদী কর্মসূচি বলছেন তাদের কতলের (হত্যার) হুমকি দিলেন এটা কি ৫৭ ধারাবলে বিচার্য নয়? তিনি বা তার দল কি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো ভাঙতে পারেন? তার অনুসারীরা কি কাউকে ‘নাস্তিক’ ঘোষণা করার অধিকার রাখেন? কুরআনের কোথাও কি লেখা আছে যে, ‘নাস্তিকদের’ কতল করতে হবে? কে নাস্তিক আর কে আস্তিক সেটা নির্ধারণের ভার কি আল্লাহ কোনো মানুষকে দিয়েছেন? শফী হুজুর কী করে সেই নির্ধারণের ক্ষমতা ‘অর্জন’ করলেন? আর কে-ই বা তাকে এই ক্ষমতা দিলো? একটি রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধ শেষে প্রাপ্ত স্বাধীন ভূখ-ে কিভাবে একজন মাদ্রাসা শিক্ষক মানুষকে হত্যার হুমকি দিতে পারেন আমাদের জানা নেই। কিভাবেই বা বলতে পারেন ‘আল্লাহর দেশে থাকতে হলে আল্লাহকে না দেখে আল্লাহর অস্তিত্ব মানতে হবে, না হলে তুমি আল্লাহর দেশে থাকতে পারবে না।’ বাংলাদেশ কিভাবে ‘আল্লাহর দেশ’ হয় সেটাও আমাদের জানা নেই। ‘দ্বীন-দুনিয়ার মালিক আল্লাহ’ শব্দটি দিয়ে বোঝায় সমগ্র দুনিয়ার মালিক আল্লাহ। সেটা সেই দুনিয়া যে দুনিয়ায় মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদি, শিখ, জৈন, বাহাই, আহমদিয়াসহ অগুনতি বিশ্বাস বা মজহাবের মানুষ একত্রে বসবাস করে। সেই দুনিয়া কি মওলানা শফীকে নেতা মেনেছেন? তিনি কোন ক্ষমতাবলে এসব রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য দিতে পারছেন?
এবং বিস্ময়কর হচ্ছে তার এ ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহী এবং সাংবিধানিক অধিকারপ্রাপ্ত নাগরিকদের বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যার হুমকি এবং এদেশে থাকতে হলে আল্লাহকে মানতে হবে বলে এদেশের লক্ষ লক্ষ অমুসলিমকে অপমান করার পরও তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো পদক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন- ‘মদিনা সনদের ভিত্তিতে দেশ চলবে’। তার মানে তো এটা নয় যে হেফাজতের ১৩ দফা মেনে নেয়া হয়েছে? বা সেই ১৩ দফাই ‘মদিনা সনদ’? তাহলে মওলানা শফী কোন সাহসের বলে বলীয়ান হয়ে এমন হত্যার হুমকি দিতে পারেন? আমরা মনে করি হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে প্রাপ্ত যে স্বাধীন সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ, এবং যে দেশের আইন ও শাসনতন্ত্র একটি রক্তস্নাত সংবিধান দিয়ে পরিচালিত সেই দেশটি মওলানা শফীর ‘হাটহাজারী’ নয়, আর এই দেশের তামাম জনগণ শফী হুজুরের মুরিদও নয়। সুতরাং এই প্রসঙ্গে সরকারের ভূমিকা স্পষ্ট করতে হবে। দেশে নির্বাচিত সরকার রয়েছে। রয়েছে সংবিধান নির্ধারিত আইন-আদালত। সেই সব আইন নিশ্চিতভাবেই জনগণের রক্ষাকবজ। নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংবিধানই আমাদের পথনির্দেশক। এতো সব থাকার পরও কী করে একটি মাদ্রাসার মওলানা দেশের তাবৎ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিতে পারে, এবং কেন তা পারে সেটাও সরকারকে তলিয়ে দেখতে হবে। হেফাজতের ১৩ দফা মেনে দেশের সংবিধান পরিবর্তন করে হেফাজতের আদর্শ অনুযায়ী দেশ চলবে, এমন কথা সরকারের তরফে বলা হলে আমাদের কিছু বলার নেই। সেক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। অথবা বাংলাদেশ যে সংবিধান এবং আইন দ্বারা চলছে সেখানে এ ধরনের ফতোয়াবাজিকে বেআইনি ঘোষণা করে যথাযথ ব্যস্থা নিতে হবে। সুত্র
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×