somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহিংস রাজনীতির মাশুল গুনছে জামায়াত-শিবির

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সহিংস রাজনীতির মাশুল গুনছে জামায়াত-শিবির। বিগত নির্বাচনের আগে এক বছর লাগাতার সহিংস 'আন্দোলন' করে দলটির লক্ষ্য পূরণ হয়নি; বরং আরও বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সহিংসতার জন্য দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়ে নমনীয় ধারায় ফিরলেও মামলার কারণে প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরতে পারছে না। দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাদের প্রায় সবাই সহিংসতার মামলার আসামি। দলের সর্বোচ্চ ফোরাম নির্বাহী পরিষদের ২০ জনের ছয়জন কারাগারে। বাকিদের ১২ জনই একাধিক মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে অথবা বিদেশে রয়েছেন। ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে বিগত সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে তাণ্ডব চালায় জামায়াত ও ছাত্রশিবির। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর এ সহিংসতা চালানো হয়। এ সহিংস তাণ্ডবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় একশ' ব্যক্তি নিহত হন। আগুনে পুড়ে ছাই হয় সহস্রাধিক যানবাহন। প্রকাশ্যে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা ও সরকারি কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার অভিযোগে ব্যাপক সমালোচিত হয় জামায়াত।
জামায়াতের হিসাবে, এসব ঘটনায় সারাদেশে ছয় হাজার মামলায় দলের লক্ষাধিক নেতাকর্মী আসামি হয়েছেন। নেতাদের কেউ
জেলে, কেউ আত্মগোপনে, কেউ আবার নিষ্ক্রিয়। দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কার্যালয় তালাবদ্ধ প্রায় তিন বছর। প্রকাশ্যে দলীয় কার্যক্রম নেই।
জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের ২৩ সদস্যের তিনজন মৃত। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পাঁচজন কারাগারে। বাকি ১৫ জনের ১২ জনই বিভিন্ন সহিংসতার মামলার আসামি। তাদের একজন জেলে। দু'জন দণ্ডিত হয়ে পলাতক। আটজন আত্মগোপনে, একজন গ্রেফতার এড়াতে বিদেশে। বাকিরা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়।
জামায়াত সমর্থিত জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই পলাতক। ৩৬ উপজেলা চেয়ারম্যানের ১৮ জন কারাগারে। বাকিরাও প্রকাশ্যে নেই। তাদের সবার বিরুদ্ধে সাঈদীর রায়পরবর্তী সহিংসতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা মহানগরের শীর্ষ দুই নেতা দণ্ডিত হয়ে পলাতক। চার মহানগর আমির কারাগারে। কর্মপরিষদের ৫৪ সদস্যের ৪১ জনই মামলার আসামি। ৭৭ জেলা আমিরের প্রায় সবাই মামলার আসামি। ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি, সেক্রেটারিসহ কার্যকরী পরিষদের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে।
জামায়াতের দাবি, এসব মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে দাবি করেন দলের কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেন, 'আমাকেও ২৯ মাস কারাগারে রাখা হয়েছিল। কিন্তু একটি অভিযোগও প্রমাণ করতে পারেনি।' জামায়াতকে নির্মূলে যে যড়যন্ত্র চলছে, তার অংশ হিসেবেই এসব মামলা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এ বক্তব্যের জবাবে পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে বলেন, রাজনীতির নামে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিও রাজপথে কম-বেশি সহিংসতা করেছে। কিন্তু জামায়াত যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। এটা ছিল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক প্রকার অঘোষিত যুদ্ধ। রাজপথে পুলিশ সদস্যকে যেভাবে পিটিয়ে মেরেছে, তা আন্দোলন হতে পারে না। গাছ কাটার রাজনীতি আগে কখনও দেখা যায়নি।
২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল থেকে ব্যাপক সহিংসতা হয়। দলটির কর্মীরা সেদিন প্রকাশ্যেই পুলিশের তিনটি গাড়িতে আগুন দেয়। এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ। তার বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগে আরও পাঁচটি মামলা রয়েছে। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর মতিঝিলে অগি্নসংযোগ মামলারও আসামি তিনি। চার বছর ধরে আত্মগোপনে থাকলেও কখনোই আদালতে হাজির হননি মকবুল আহমাদ।
ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ১৩ মামলার আসামি। সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনেই আছেন। নায়েবে আমির মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ২৩। তিনি দুই দফায় প্রায় দু'বছর কারাবাসের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গত বছরের নভেম্বর থেকে কারাগারে। তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১১। খুলনাতেও তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ২। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যান এ নেতা। ওই দিনই তার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় হত্যা ও অগি্নসংযোগের অভিযোগে দুটি মামলা হয়। এর পর আর দেশে ফেরেননি তিনি।
নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগর আমির ও নায়েবে আমির রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ আদালত অবমাননার অভিযোগে দণ্ডিত আসামি। তিন মাসের কারাদণ্ড হলেও আত্মসমর্পণ না করে আত্মগোপনে আছেন। রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৩টি এবং হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে। নির্বাহী পরিষদ সদস্য তাসনীম আলম দুই দফায় কারাবাসের পর চলতি বছরে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে আছেন। ১৯ সেপ্টেম্বরের সহিংসতার মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি। তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১৬।
নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুল হালিম দুই মামলা ও নূরুল ইসলাম বুলবুল সাত মামলার আসামি। মাওলানা রফিউদ্দিন ও এটিএম মাছুমের বিরুদ্ধে মামলা সংখ্যা জানা যায়নি। তারাও আত্মগোপনে। মামলা নেই ইসলামী ব্যাংক চেয়ারম্যান ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবু নাসের মুহম্মদ আবদুজ্জাহের এবং আবু তাহেরের বিরুদ্ধে।
বিএনপি ও অন্য দলের নেতারা হরতালের মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিলেও জামায়াত নেতারা তা করেন না। ডা. তাহের এ প্রসঙ্গে বলেন, আদালত ও আইনের প্রতি জামায়াত নেতাদের আস্থা রয়েছে। কিন্তু আদালতে গেলে সরকারের হয়রানির শিকার হতে হবে_ এ আশঙ্কা থেকেই আদালতে যেতে পারছেন না তারা।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, জামায়াত বাংলাদেশের আইন-আদালতে বিশ্বাস করে না বলেই আদালতে আত্মসমর্পণ না করে পালিয়ে বেড়ায়। তারা যদি নির্দোষই হয়, তাহলে আইনিভাবে মামলা মোকাবেলা করা উচিত। তিনি বলেন, বিএনপির পরামর্শে জামায়াত যে সহিংসতা করেছে, তার খেসারত দিচ্ছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দলের আমির ও পাঁচ নির্বাহী পরিষদ সদস্য কারাগারে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে আরও মামলা আছে। আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অস্ত্র মামলাসহ ছয়টি মামলা রয়েছে। আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তিনি।
সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ২৮ অক্টোবর হত্যাকাণ্ড ও দুর্নীতির অভিযোগে আরও তিনটি মামলা রয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে জাকাত দুর্নীতির মামলা রয়েছে। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম সহিংসতার অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনে দুই মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি।
সুত্র
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×