‘দেশটা তো লুটেপুটে খাচ্ছে। এতদিন আমলা আর মন্ত্রী-এমপিরা খেয়েছে; এবার ধরেছে পরিবার’- কথাগুলো শুনছিলাম এক বন্ধুর মুখ থেকে।
ভদ্রলোক বিএনপির বিশেষ ভক্ত বলে তার কোনো কথায় রাজনীতির গন্ধ পেলে কথাগুলো খুব একটা আমল দিই না। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কার কথা বলছেন? কে এবার খাচ্ছে?’ ভদ্রলোকের তেজস্বিক তাৎক্ষণিক উত্তর, ‘প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ের কথা বলছি। আমেরিকা থাকে, উপদেষ্টা করে সরকার তাকে মাসে বেতন দিচ্ছে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।’ প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা হলো এবং প্রতিবাদ করলামও। বললাম, ‘সম্ভবত আপনার তথ্যের মধ্যে কোথাও কোনো ভুল আছে। মাসে এত টাকা সরকার কীভাবে তাকে দেবে? উপদেষ্টাদের বেতনের সীমাবদ্ধতা আছে তো। এটা হতে পারে প্রতি বছরের বেতন।’ ভদ্রলোক জোর দিয়ে বললেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখুন, একেবারেই সত্য বলছি। বিএনপির ওয়েবসাইটে যান, দেখতে পাবেন।’ ভদ্রলোককে আর কিছু বলে চটাতে মন চাইল না। পরের দিন বিএনপির ওয়েবসাইটে গেলাম। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো তথ্যই পেলাম না। মনে মনে ভাবলাম, এ কথাটিও ভদ্রলোকের আওয়ামীবিরোধী অজস্র মিথ্যা কথার মধ্যে একটি। কিন্তু আমি বিষয়টি ভুলে গেলে কী হবে। বর্তমান সরকারবিরোধী কিছু লোক এই তথ্য দ্রুতগতিতে সমাজে ছড়িয়ে দিতে লাগল।
সাধারণ মানুষের কথাও শুনলাম। ‘আরে, যা রটে তার কিছুটা তো বটে। জয় এত টাকা নেবেন কেন? এটা খারাপ কাজ।’ ভাবলাম, তা তো বটেই। এত টাকা দেওয়া বা নেওয়ার যুক্তিটা কোথায়? উপদেষ্টাদের তো একটি বেতন কাঠামো থাকা প্রয়োজন। জয়কে বেশি বেতন কীভাবে দেবে সরকার?
মাথায় আরও একটি প্রশ্ন এসেছিল, কখনও তো জয়কে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা করার ব্যাপারে কোনো গেজেট প্রকাশ হয়েছে বলে শুনিনি। পুরো বিষয়টি আসলে একটি গোলকধাঁধার মধ্যেই ছিল। একদল মানুষ বিশেষ করে বিএনপির লোকজন সেই ঘোলা পানিতেই মাছ ধরার চেষ্টা করেছেন দারুণভাবে। তাদের প্রচারণা বেশ ডালপালা নিয়ে ছড়িয়েও পড়েছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। আসলে তো এসব প্রচারণা ছড়ায় সবার আগে এবং ব্যাপকভাবে। একে তো প্রধানমন্ত্রীর ছেলের বিষয়ে বলা; আবার তার ওপর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছেলে বলে কথা! বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ল এই খবর যে, জয়কে সরকার অন্যায়ভাবে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। মনে পড়ে গেল শেখ কামালের কথা। বঙ্গবন্ধুর ছেলে ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে গুলি খেয়েছেন। এমন মুখরোচক গল্প সেদিনের জাসদের লোকজন সমাজে বিক্রি করেছিল খুব ভালোভাবেই। বঙ্গবন্ধুর ছেলের কথা, তারপর ব্যাংক ডাকাতির মতো এমন একটি লোভনীয় বিষয়Ñ ত্বরিতগতিতে সমাজে ছড়িয়ে গিয়েছিল সেদিন সেই প্রচারণা। বিশ্বাস করে ফেলেছিল কিছু সাধারণ মানুষও। কিন্তু পরবর্তীকালে সেদিন সেখানে উপস্থিত থাকা অনেকগুলো মানুষই প্রমাণ দিয়েছেন, কোনো ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে কখনো শেখ কামালের কোনো স¤পর্ক ছিল না। রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা এমনই লোভনীয় জিনিস যে, বুঝে কিংবা না বুঝে মানুষ তা গলাধঃকরণ করে বসে অনেক সময়। আর সেই প্রোপাগান্ডা যদি আসে বঙ্গবন্ধু কিংবা শেখ হাসিনার পরিবারের কাউকে নিয়ে, তাহলে তো কথাই নেই। একদল লোক তো প্রস্তুত হয়েই আছে লাফিয়ে পড়ার জন্য। সজীব ওয়াজেদ জয় মাসে কত টাকা বেতন নিতেন তা সরকার না জানলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত স¤পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং অপর নেতা আসম হান্নান শাহ ঠিক জানতেন। তারা নিশ্চিতভাবেই জানেন এমনটাই মনে হয়েছিল। কেননা দুজনের উল্লেখিত মাসিক বেতনের হিসাবটিও কাছাকাছি ছিল। মির্জা ফখরুল এক সভায় বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় প্রতি মাসে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বেতন নেন।’ অপর সভায় হান্নান শাহ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রতি মাসে দুই লাখ ডলার বেতন নিচ্ছেন।’ আমার পরিচিত ভদ্রলোককে তো অস্বীকার কিংবা অবিশ্বাস করতে পেরেছিলাম সহজভাবেই। কেননা নিজের বিবেক-বিবেচনা দিয়ে বিচার করেই বিষয়টি সত্য নয় এমনটা মনে হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং অপর একজন শীর্ষ নেতা যখন খোলা সভায় এমন তথ্য প্রচার করেন, তখন তো দ্বিধায় না পড়ে থাকতে পারি না। একটি দলের শীর্ষ পদে থেকে কি তারা মিথ্যা বলবে? এত বড় মিথ্যা বলাও কি সম্ভব? ভাবনাটি নতুন করে মাথায় এসেছিল। তবে কি জয় সত্যি সত্যি আমেরিকায় থেকেই মাসে মাসে বাংলাদেশের গরিব মানুষের কষ্টার্জিত আয়ের করের টাকার একটি বড় অংশ নিয়ে নিচ্ছেন? এটা যেমন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, তেমনি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য মিথ্যা এটা ভাবতেও কষ্ট হয়। আমার মতো আরও অনেক মানুষ যখন এই বিষয়টি নিয়ে গভীর সমস্যায় ছিল, ঠিক তখনই সরকার ভিন্নপথে এর উত্তর দিয়েছে। সরকার এ ব্যাপারে কোনো বাগাড়ম্বর করেনি, কোনো মন্ত্রী কোনো বক্তব্য দেননি। সরকার এবার সরকারিভাবে এর সত্যতা সব মানুষের সামনে এনেছে। ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে সবাইকে জানিয়েছে, সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রজ্ঞাপনটি আরও বলেছে, জয়ের নিয়োগ অবৈতনিক এবং খ-কালীন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জয় এতদিন তার মা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। ২০ নভেম্বর থেকে তিনি প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অপর এক প্রজ্ঞাপনে ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা নিয়োগ করার কথাও বলা হয়েছে। তার নিয়োগও অবৈতনিক এবং খ-কালীন। সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রমাণিত হয়েছে, আমার পরিচিত বন্ধুদের মতো আরও যারা জয়কে নিয়ে প্রোপাগান্ডা প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন, তারা সবাই ভুল তথ্য ছড়াচ্ছিলেন। একই প্রজ্ঞাপন প্রমাণ করেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং অপর বিএনপি নেতা হান্নান শাহ পাবলিক সভায় জয় সস্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, এমন একটি তথ্য নিছক প্রোপাগান্ডা হিসেবে একটি শীর্ষ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা কীভাবে দিতে পারেন? বিবেক বলে, সত্য বলে কি কিছুই অবশিষ্ট থাকতে নেই? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মসজিদ থাকবে না, দেশ ভারতের হাতে চলে যাবে এমন ধরনের পুরনো কৌশল যখন কাজে লাগছে না, তখন কি তারা নতুন কৌশল হিসেবে জয়ের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডায় নেমেছেন? কেন রাজনীতি এমন সস্তা এবং মিথ্যা প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না? কেন এবং কীভাবে নিয়োগ পাওয়ার আগেই এত টাকা নিয়ে গেল বলে মিথ্যা চিৎকার দিয়ে একজন মানুষের চরিত্র হনন করতে পারে আজকের রাজনীতি? কেন রাজনীতি সত্য এবং বস্তুনিষ্ঠ জায়গায় থেকে রাজনীতি করতে পারছে না? এর জবাব শুধু ব্যক্তি নয়, বিএনপির রাজনীতিকেও দিতে হবে। কেননা মিথ্যা তথ্য প্রদানের জন্য দায়ী ব্যক্তিরা এখনো বিএনপিতেই আছেন। বিশেষ করে কোনো দলের সাধারণ সম্পাদক যখন কোনো সভায় বক্তব্য প্রদান করেন, তখন তার বক্তব্য সেই দলেরই বক্তব্য বলে শ্রোতারা ধরে নেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়কে সহ্য করা বা না করা বিএনপির নিজস্ব বিষয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা করে তার চরিত্রহননের অধিকার নিশ্চয়ই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কিংবা অন্য কোনো নেতা রাখেন না। এসব মিথ্যা প্রচারণা করে কোকিল আর কাককে এক জায়গায় নিয়ে আসা যায় না। এমন বোধোদয় তাদের হয়তো এবার নতুন করে হবে। কেননা তাদের মিথ্যা প্রচারণার জবাব সরকার এবার অতি দক্ষতার সঙ্গেই দিয়েছে এবং জনগণ তা সুস্পষ্টভাবেই বুঝতে সক্ষম হয়েছে। সুত্র
আলোচিত ব্লগ
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ
মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!
বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন