somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শান্তিরক্ষা মিশন নিয়ে আবার ষড়যন্ত্

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের যেসব বাহিনীর সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেন বা অংশ নিতে আগ্রহী, তাদের দিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল অবলম্বন করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা ও হরতাল-অবরোধে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠার পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোর ২২ জানুয়ারি এবং ৫, ১১, ১২, ১৭, ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তোলা হয়। প্রসঙ্গ ওঠাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিফিংয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গ নিয়ে অবান্তর আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে শান্তিরক্ষা মিশনের ওপর সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়টি সম্পর্কে জাতিসংঘ নিজে থেকে কিছু বলেনি। বরং প্রতিবারই সাংবাদিক পরিচয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য মুশফিকুল ফজল এবং আমেরিকান সাংবাদিক ম্যাথু লির প্রশ্নের সূত্রে সংস্থাটি বাংলাদেশ বিষয়ে তার অবস্থান তুলে ধরেছে। কিন্তু ওই ব্যক্তিরা বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলেও প্রতিবারই এর সঙ্গে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে জুড়ে দিয়েছেন। ফলে শান্তিরক্ষা মিশনের বিপক্ষে এবং বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে তাদের অবস্থান পরিষ্কার। এসব ষড়যন্ত্রকারীর সঙ্গে নিউইয়র্কভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠনও জড়িত। অতীতে তারা একাধিকবার বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে তথাকথিত বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ তুলে এই সংস্থাগুলোর সদস্যদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আবারো এ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল ও তাদের প্রতিনিধিরা প্রকাশ্যেই শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ বিষয়ে আপত্তি তুলছেন। অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন আলোচনায় কথিত বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়টি বিদেশিরা তুললে শেখ হাসিনা সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের ভূমিকা মূল্যায়নের নিজস্ব কাঠামো আছে বাংলাদেশের। কোনো বাহিনীর কোনো সদস্য অনিয়মে জড়ালে তার দায়মুক্তির সুযোগ নেই এবং তার অনেক নজিরও আছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের নিশানা থেকে নিরপরাধ নাগরিকদের সুরক্ষা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এজন্য আইনি উদ্যোগগুলোর বিষয়ে জবাবদিহি করতেও প্রস্তুত। সম্প্রতি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী প্রকাশ্যে বলেছেন, যারা নিজের দেশে শান্তিরক্ষা করতে পারে না, যারা নিজের দেশের মানুষের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করে, যারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করে, যাদের নিজের দেশেই শান্তি নেই, তারা অন্য দেশে কিভাবে শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করবে? দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের পর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ সারিতে আছে পাকিস্তান। দীর্ঘমেয়াদে অস্থিতিশীলতা থাকলেও পাকিস্তানের কেউ এভাবে বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। কাদের সিদ্দিকীর মতো অনেকেই শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদানকে ছোট করে দেখতে চান। এদের ষড়যন্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে। তবে দেশ-বিদেশের এই অপতৎপরতা শেষ পরিণতিতে ব্যর্থ। কারণ বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা আগের মতোই প্রশংসিত হচ্ছেন। আসলে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রে বসে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে চলছে নানা ষড়যন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য তুলে ধরে ওয়াশিংটনকে দিয়ে ঢাকার ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে কূটনৈতিক তৎপরতার নামে বিভিন্ন দপ্তরে কুৎসা ছড়ানোর মিশনে নেমেছেন খালেদা জিয়ার আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্যসচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি সম্প্রতি নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ও জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। নিরপেক্ষ 'সাংবাদিক' পরিচয় দিয়ে এসব বৈঠকে তিনি বিএনপির এজেন্ডাগুলো তুলে ধরেছেন। হোয়াইট হাউসে ওবামা প্রশাসনের নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মকর্তার ব্রিফিং ও নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনগুলোতে তিনি নিয়মিত হাজির থাকছেন। ২০ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) দিনব্যাপী তারা মিশন চালিয়েছেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশকিছু কাগজপত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়েছেন। জাতিসংঘের মিডিয়া অ্যাক্রিডিটেশনের অপব্যবহার করেছেন মুশফিকুল ফজল। বিএনপির মুশফিকুল ফজল, আমেরিকান সাংবাদিক ম্যাথু লি' এবং 'এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস'-বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শক্তিশালী চক্রান্তকারী গোষ্ঠী। শান্তি মিশন নিয়ে আরো অপপ্রচার শুরু করেছে বিচিত্র সংগঠন। নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ' গত বছর ২১ জুলাই র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) পুনর্গঠনের পরিবর্তে যত দ্রুত সম্ভব এ বাহিনীকে বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়েছে। ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সংস্থাটি প্রচার করেছে যে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ঘটনা প্রমাণ করে র‌্যাব 'ডেথ স্কোয়াড' হিসেবে কাজ করছে। অথচ সবাই জানেন বর্তমান সরকার র‌্যাব পুনর্গঠন ও একে জবাবদিহিতার আওতায় এনেছে। এ সংস্থার দোষী ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। অর্থাৎ র‌্যাবের জবাবদিহিতা ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তাও ভিত্তিহীন অপপ্রচার। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের মন্ত্রিপরিষদ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল; তাদের হাওয়া ভবনের নেতা তারেক জিয়া ২১ আগস্ট (২০০৪) জঙ্গিদের দিয়ে গ্রেনেড হামলা করিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল; তখন এই 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ' কোথায় ছিল? তখন তারা সেই সরকারের পদত্যাগ দাবি করেনি কেন? ২০০১ সালের নির্বাচন-উত্তর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ হিন্দু-খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর ওপর নির্মম নির্যাতন করেছিল জামায়াত-বিএনপি; হত্যা-ধর্ষণে মেতে উঠেছিল তারা। তখন এই 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ' কোথায় ছিল? ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচনের আগে জামায়াত-বিএনপি প্রায় প্রতিদিন বোমা মেরে, আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে; তখন এই 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ'-এর কোনো মাথাব্যথা ছিল না কেন? আসলে এই সংগঠনটি বাংলাদেশের বাইরে থেকে এ দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। ফলে তাতে ভ্রান্তি থেকেই যায়। তাছাড়া রয়েছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিরোধীগোষ্ঠীর প্রচারণা। সেই অপপ্রচারের ওপর ভর করে তারা সাহস দেখায় 'র‌্যাব'কে নিষিদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে; পত্র প্রেরণ করে। একটি জনপ্রিয় সংস্থার প্রয়োজনীয়তা তাদের কাছে না থাকলেও আমাদের মিডিয়া এবং জনমানুষের কাছে তার নির্ভরতা খুব বেশি। 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ'-এর পত্র প্রেরণ ও মাথাব্যথার ঘটনার পর কোনো সংবাদপত্র সেই ইস্যুতে সম্পাদকীয় লেখেনি। এমনকি গুরুত্ব দিয়ে সেই সংবাদটি পরিবেশনও করেনি। কারণ 'র‌্যাব' এখনো জনগণের কাছে আস্থার প্রতীক; জননিরাপত্তার অন্যতম অবলম্বন। অনুরূপ ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে 'এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস'-এর রিপোর্ট সম্পর্কে। বিষয়টি দেশের কোনো জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। 'এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস'-এর রিপোর্টের রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ঢাকার সিংহাসনের মূল চালিকাশক্তি বলা হয়েছে। অন্যান্য বাহিনীর ওপর সেনাবাহিনীর সর্বময় কর্তৃত্ব সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে আরো বলা হয়েছে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সৈন্য প্রেরণকারী দেশের অবস্থান দখল করে থাকলেও এ দেশের সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োগের ক্ষেত্রে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করেছে। ফলে বঞ্চিত বিডিআর বাহিনীর সদস্যরা ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ করে সেনা কর্মকর্তা নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। কারণ ওই ঘটনার বিচারকার্য সমাপ্ত হয়েছে এবং বিদ্রোহের নেপথ্যের অনেক প্রসঙ্গই উদ্ঘাটিত হয়েছে। অন্যদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও বিপন্ন দেশে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের কদাচার নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, যা জাতিসংঘের কর্তাব্যক্তিদের করা প্রশংসার বিপরীত মন্তব্য। এ দেশ থেকে আরো বেশি সৈন্য প্রেরণে ২০১৩ সালে উপস্থাপিত জাতিসংঘের প্রস্তাবের বিপক্ষেও এ অভিমত। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সামরিক শাসনের অত্যাচারী ও দখলদার হিসেবে সেনাবাহিনীকে চিহ্নিত করাও মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়। কারণ সেখানে পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুসারে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এই মর্মে আঘাত করা হয়েছে, এই বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মূলত 'উবধঃয ঝয়ঁধফং্থ প্রেরণ করছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে 'এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস'-এর পরিচালক সুহাস চাকমা (চট্টগ্রামের ভূতপূর্ব বাসিন্দা) দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ যেন কোনো ক্রমেই বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষী সদস্য গ্রহণ না করে। কারণ বাংলাদেশ সরকার তাদের 'ডেথ স্কোয়াড'গুলোকে জাতিসংঘে প্রেরণ করে থাকে। এভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অবমূল্যায়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে একটি সুশৃঙ্খল ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে এর সুনাম নষ্ট ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে 'এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস', 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ', আদিলুর রহমানের 'অধিকার'-এর মতো সংগঠন এবং বর্তমানের ওই মুশফিকুল ফজল ও ম্যাথু লির মতো ব্যক্তিরা। 'র‌্যাব'কে 'ডেথ স্কোয়াড' হিসেবে চিহ্নিত করে প্রচার চালানোর উদ্দেশ্য পরিষ্কার। কারণ 'র‌্যাব'-এর শতকরা ৪৪ ভাগ সদস্য সশস্ত্র বাহিনী থেকে নেয়া। ফলে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করাই তাদের রিপোর্টগুলোর উদ্দেশ্য। অথচ এ দেশের সেনাবাহিনীর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শান্তিরক্ষা সর্বত্রই তাদের বিচরণ সমুন্নত রয়েছে এখনো। জাতির প্রয়োজনে অর্পণ করা কঠিন দায়িত্ব পালনে সশস্ত্র বাহিনীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা অনন্য। দেশের প্রতিরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ আর জনগণের জন্য ভালোবাসা এ দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর দেশপ্রেম। অনুরূপভাবে বর্তমান বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একটি পরিচিত ও আস্থার প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্যোগময় পরিবেশে শান্তি স্থাপন করে অপরিচিত দেশের অচেনা মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। জাতিসংঘ সনদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা এবং সপ্তম অধ্যায়ে শান্তি প্রয়োগের বিধান রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংঘর্ষে লিপ্ত দুই পক্ষের সম্মতি এবং মতৈক্যের ওপর ভিত্তি করে শুরু হয়। শান্তিরক্ষা বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো কর্তৃক অনুমোদিত একটি শান্তিচুক্তি বা শান্তিব্যবস্থা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মোতায়েন করা হয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের মধ্যে ৫৪টিতে ১,১৮,৯৮৫ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্য অংশগ্রহণ করেছে। শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সদস্যসংখ্যা ৮,৯৩৬ জন যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান শান্তি মিশনে যোগদানের মধ্যদিয়ে এ দেশের সেনাবাহিনীর ১৫ জন সদস্য জাতিসংঘের পতাকাতলে একত্রিত হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী শান্তি মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয় নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা মিশন এলাকায় বিবদমান দলকে নিরস্ত্রীকরণ, মাইন অপসারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা প্রদান, সড়ক ও জনপথ এবং স্থাপনা তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। কঙ্গো, নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা/রুয়ান্ডা, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর প্রভৃতি স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল নাম। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর মোট ৯৬ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন; পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন ১৪ জন। অন্যদিকে ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আয় হয়েছে ২০ হাজার ৪৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে পোশাকশিল্পে ব্র্যান্ড হওয়ার আগেই শান্তিরক্ষায় ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। যে দেশের শান্তিরক্ষীরা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোয় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে, প্রাণ দেয়, এখন সেই দেশে রাজনৈতিক অনৈক্যের কারণে সংঘাত-সহিংসতা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। এর পেছনে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। মূলত বিএনপির মুশফিকুল ফজল, আমেরিকান সাংবাদিক ম্যাথু লি', 'এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস' এবং নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ' প্রভৃতি বাংলাদেশবিরোধী ব্যক্তি ও সংস্থা যে অপতৎপরতায় যুক্ত তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। তারা বর্তমান সরকারের প্রতি সেনাবাহিনীর আনুগত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে; শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে। অথচ এ দেশের বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে বৈরী সম্পর্ক অনুপস্থিত। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যক্তি বা সংগঠনের উস্কানি কোনো কাজে লাগছে না। কারণ প্রতিটি বাহিনীর রয়েছে পেশাদারী আচরণ। তাছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মান্য করার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। তবু বিভিন্ন অপপ্রচার থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য, রাষ্ট্রের অনিবার্য অঙ্গ সেনাবাহিনীকে বিতর্কের ঊধর্ে্ব রাখার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে অপপ্রচার মোকাবেলায় মিডিয়ার কার্যকর অবদান রাখা জরুরি। গত বছর ২৬ জুলাই ঢাকার প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে শাহদীন মালিক বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষী নিয়োগ না দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সফরকারী হার্ভে ল্যাডসাউ বরাবর দাবি উত্থাপন করেছিলেন। অন্যদিকে ২৫ জুলাই আদিলুর রহমান একটি অনলাইন পত্রিকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেন আর ২৬ জুলাইয়ের ওই সংবাদ সম্মেলনে ৩০ আগস্টের পর কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন। এসব ব্যক্তিরা বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের মতোই কথা বলেন এবং বাংলাদেশবিরোধী প্রকাশনা ও মন্তব্য করে আমাদের শঙ্কিত করেছেন। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে মিডিয়া ও সমাজের বিশিষ্টজনদের। কারণ
ষড়যন্ত্রকারীরা অনেক বেশি তৎপর রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায়। জরুরি ভিত্তিতে তাকে মোকাবেলা না করলে জনগণের আস্থা হারাবে শেখ হাসিনা সরকার। ত্বরিত দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রবিরোধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণই হবে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক।
সুত্র
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×