somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিয়া-মঞ্জুর হত্যা এবং এরশাদের ক্ষমতা দখল

২৯ শে মে, ২০১৫ সকাল ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৩০ মে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। জিয়া হত্যার দু'দিন পর ১ জুন দিবাগত রাত ১২টার আগে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জে. মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়। জিয়াকে যখন হত্যা করা হয় তিনি তখন রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার মালিক-মোক্তার। তিনি রাষ্ট্রপতি, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং সশস্ত্র বাহিনী প্রধান ছিলেন। জেনারেল এমএ মঞ্জুর তখন চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি। জিয়া ও মঞ্জুর দুজনই ছিলেন সেক্টর কমান্ডার। একাত্তরের ৯ মাসে রণাঙ্গনে জিয়ার যুদ্ধ করার তেমন কোন ঘটনা আজ পর্যন্ত কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে সেক্টর কমান্ডারদের মধ্যে কর্নেল তাহের, মেজর জলিল, মেজর রফিকুল ইসলাম, জে. খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হায়দার, জে. সফিউল্লাহ, জে. মঞ্জুর, কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরীসহ আরও অনেকে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় সবচেয়ে লাভবান ব্যক্তি হচ্ছেন জে. জিয়াউর রহমান আর জিয়া হত্যায় সবচেয়ে লাভবান মানুষটি হচ্ছেন এরশাদ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করলে যেমন জিয়া কোনদিনই রাষ্ট্রপতি হতে পারতেন না, তেমনি জিয়া-মঞ্জুরকে হত্যা না করলে এরশাদ কোনদিনই রাষ্ট্রপতির গদিতে বসতে পারতেন না। আরও স্পষ্টভাবে বলা যায়, জিয়া এবং এরশাদকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যই প্রথমে বঙ্গবন্ধু এবং পরে জিয়া-মঞ্জুরকে হত্যা করার হয়। মুক্তিযোদ্ধা জিয়া এবং অমুক্তিযোদ্ধা এরশাদ দুজনই হলেন পাকিস্তানের বিশ্বস্ত খাদেম। উচ্চ আদালতের রায়সহ এটা এখন সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত সত্য যে, মুক্তিযোদ্ধা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না। ২০১৩ সালে কর্নেল তাহেরসহ অন্যদের গোপন বিচার নিয়ে করা রিটের ওপর দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে উচ্চ আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে_ 'মুক্তিযোদ্ধা জিয়া ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী।'
এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই স্বাধীনতাবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের এদেশীয় চর মোশতাক, জিয়া, ফারুক, রশিদ, ডালিম, নূর ও এরশাদ গং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনককে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার ১০ দিনের মাথায় ১৯৭৫-এর ২৪ আগস্ট রোববার খুনিচক্র সেনাপ্রধান কেএম সফিউল্লাহকে বরখাস্ত করে উপপ্রধান জিয়াকে পদোন্নতি দিয়ে সেনাপ্রধান এবং ভারতে প্রশিক্ষণরত এরশাদকে ব্রিগেডিয়ার থেকে মেজর জেনারেল করে উপ-সেনাপ্রধান নিযুক্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা-ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন বলেই জিয়া এরশাদকে জনক হত্যার ৯ দিন পর এই পদোন্নতি দেয়া হয়। ২৪ আগস্ট জিয়া-এরশাদের পদোন্নতিতে আবারও স্পষ্ট হলো দুজনই ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।
শাসনামলের ৬ বছরের মাথায় জিয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে সরিয়ে এরশাদকে ক্ষমতায় বসায়। জিয়া হত্যার ১০ মাসের মাথায় সেনাপ্রধান এরশাদ দেশের সম্পূর্ণ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে সরিয়ে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। জিয়া হত্যার পরেও এরশাদের ক্ষমতা দখলের পথে প্রধান বাধা ও প্রতিবন্ধক ছিলেন জেনারেল মঞ্জুর। জে. মঞ্জুর দু'চোখে দেখতে পারতেন না এরশাদকে। এরশাদের নাম উচ্চারণ না করে তাকে বলতেন 'থিফ'। মঞ্জুর হত্যা মামলার সাক্ষ্য, তৎকালীন আইজিপির বক্তব্য, বিদেশি সাংবাদিক লিফশুলজের ধারাবাহিক লেখা, মঞ্জুর হত্যা মামলার এজাহার ও চার্জশিট এবং মেজর আরেফিনের গ্রন্থের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, সেনাপ্রধান এরশাদের নির্দেশেই ঠা-া মাথায় মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়েছিল।
আমাদের দেশের দুই আলোচিত জেনারেলের হত্যাকা- নিয়ে এ পর্যন্ত বহু লেখালেখি হয়েছে। তবে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এএসএম সামসুল আরেফিন 'জিয়া-মঞ্জুর হত্যাকা- এবং তারপর' শিরোনামে ১৯৯৮ সালে একটি তথ্যবহুল বই প্রকাশ করেন। এ গ্রন্থের বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়_ জে. জিয়া হত্যার জন্য যে জে. মঞ্জুরকে দায়ী করা হয়, সম্ভবত এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জে. মঞ্জুরের কোন সম্পর্কই ছিল না। ঐ গ্রন্থে সানাউল্লাহ লিখেছেন, '৩০ মে ভোর সাড়ে ৪টার কিছু পরে টেলিফোন বেজে উঠলে ঘুম ভেঙে ফোন ধরেন জে. মঞ্জুর। অন্য প্রান্ত থেকে মেজর মোজাফফর জানান, ্তুঞযব চবৎংরফবহঃ যধং নববহ শরষষবফ্থ. মঞ্জুর তার দফতরে গিয়ে দেখলেন, তার জন্য সেখানে ৪০ জন সাময়িক অফিসার অপেক্ষা করছেন। উপস্থিত অফিসারদের জেনারেল বললেন, 'কিছু সেনা অফিসার প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করেছে। এ হত্যাকা- ঘটার পেছনে অবশ্যই অফিসারদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ কাজ করেছে। সেনাবাহিনীর ভেতরে মুক্তিযোদ্ধা এবং অমুক্তিযোদ্ধাদের একটা দ্বন্দ্ব অনেকদিন থেকে বিরাজ করছে। মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের মাঝে জমে থাকা দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই এ হত্যাকা-ের অন্যতম কারণ। ঘটনা যখন ঘটে গেছে তখন আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আপনারা আপনাদের মতামত নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। উপস্থিত ৪০ জন অফিসারই সমর্থন জানালেন হাত তুলে।' উপস্থিত একজন অমুক্তিযোদ্ধা অফিসার দাঁড়িয়ে বলেন, 'আমাদের শুধু হাত তুলে এ ঘটনার প্রতি সমর্থন জানালে চলবে না, শপথ নিতে হবে। নিজ উদ্যোগে দফতরে রাখা একটা কোরআন শরিফ নিয়ে এলেন তিনি। মেজর জেনারেল মঞ্জুরের সামনে পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে একে একে শপথ নলেন সবাই।' (পৃ,. ১৯২)। অর্থাৎ হত্যার সঙ্গে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও জিওসি হিসেবে এর দায়-দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন মঞ্জুর।
জিয়া হত্যার পর সবচেয়ে বেশি তৎপর ছিলেন সেনাপ্রধান জে. এরশাদ। অসুস্থ উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে সিএমএইচ থেকে এনে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ করানো হয়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের বিদ্রোহীদের বার বার বলা হয় আত্মসমর্পণ করতে। সেনপ্রধান এরশাদ প্রতিশ্রুতি দেন, 'আত্মসমর্পণের পর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের পরিবারসহ বিশেষ বিমানযোগে বিদেশে প্রেরণ করা হবে এবং ৬ মাসের মধ্যেই ওদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার নিশ্চয়তা দেন তিনি। জে. মঞ্জুর একজন ব্রিগেডিয়ারকে ঢাকার সাথে আলোচানর দায়িত্ব দেন। এরশাদের দেয়া আত্মসমর্পণের প্রস্তাব কর্নেল মতিউর ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে জানান_ 'আমাদের সারেন্ডার করার প্রশ্নই ওঠে না। প্রয়োজনে আপনারা সারেন্ডার করবেন।'
শেষ পর্যন্ত যা হবার তাই হলো। চট্টগ্রাম বিদ্রোহ ব্যর্থ হলো। যে তরুণ সেনা কর্মকর্তারা জে. জিয়াকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল, তাদের জানা উচিত ছিল, চট্টগ্রামে বিদ্রোহ করে ঢাকায় গিয়ে ক্ষমতা দখল করা যাবে না। বিদ্রোহের দ্বিতীয় দিনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদরে বসে সেনা কর্মকর্তারা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। সভায় বিদ্রোহীদের শীর্ষ পর্যায়ের একজন লে. কর্নেল মতিউর এক পর্যায়ে বলেন, ্তুএবহঃষবসবহ বি যধাব ষড়ংঃ ঃযব নধঃঃষব. আমাদের সামনে এখন ২টি পথই খোলা আছে, হয় আত্মহত্যা না হয় এসকেপ (পলায়ন) করতে হবে।' সন্ধ্যা ৬টায় জে. মঞ্জুর অফিসারদের বৈঠক ডাকেন। সভায় ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ (বর্তমানে বিএনপি নেতা)কে আবারও ঢাকার সঙ্গে সমঝোতা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। ৩১ মে সন্ধ্যা থেকেই বিদ্রোহীরা যে যেমনে পারে, সেনানিবাস ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। জে. মঞ্জুরকেও সেনানিবাস ছেড়ে যেতে অনুরোধ করা হয়। প্রথমে পালাতে কোনভাবেই তিনি চাচ্ছিলেন না। অবশেষে মঞ্জুর রাজি হলেন। রাত ১টার পর বাসায় ঢুকেন তিনি; সঙ্গে ছিলেন মেজর মোজাফফর। মেজর রেজা রয়ে গেলেন গাড়িতে। মেজর মোজাফফর বলেন, 'স্যার, যাওয়ার আগে আপনি কি কিছু বলে যেতে চান।' মাথা নেড়ে সম্মাতি দেন জেনারেল। ক্যাসেটে ১৫ মিনিটের বক্তব্য রেকর্ড করে প্রচারের জন্য চট্টগ্রাম বেতারে পাঠানো হয়েছিল। সেটা অবশ্য প্রচারিত হয়নি। বক্তব্যে বিদ্রোহের ঘটনাবলী মঞ্জুর খোলাখুলি বলেন। এতে আরো ছিল জে. এরশাদের ষড়যন্ত্রের কথা। ঐ ক্যাসেটটি কোথায় আছে জানি না। ক্যাসেটটি পাওয়া গেলে অনেক অজানা সত্য জানা যেতো। জানা যেত, কীভাবে জিয়া-মঞ্জুরকে হত্যার মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি মেরে ক্ষমতা দখলের পথ প্রশস্ত করা হয়েছিল।
জে. মঞ্জুর ও বিদ্রোহীদের কয়েকজন ৩১ মে দিবাগত রাত ২টার পর সেনানিবাস ছেড়ে রওয়ানা হন অজানার পথে। একজন অমুক্তিযোদ্ধা বেঈমান অফিসার বিদ্রোহীদের এসকেপ রুটের কথা সরকারপক্ষকে জানিয়ে দেয়। তিনটি সেনাভর্তি ট্রাক নিয়ে মেজর মান্নান বিদ্রোহীদের পিছু রওয়ানা হন। পথিমধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বিদ্রোহীদের এক দলের সঙ্গে পিছু ধাওয়া করা সৈনিকদের গুলিবিনিময় হয়। এ সময় বিদ্রোহীদের দুই শীর্ষ নেতার একজন কর্নেল মতিউর চেচিয়ে বলেন, 'শুট মি মাহবুব শুট মি।' এক সঙ্গে দুজনের দুটি স্টেনগান থেকে গুলি বেরুলো। দুজনেই চিরতরে শেষ হয়ে গেলেন। একজুন দুপুর ১২টার পর জে. মঞ্জুরকে আটক করে প্রথমে ফটিকছড়ি ও পরে হাটহাজারী থানায় নিয়ে আসা হয়। মুহূর্তে খবরটি প্রচার হয়ে যায়। পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা এবং ট্রাকভর্তি সৈন্য নিয়ে ক্যাপ্টেন (পরে মেজর) এমদাদ সেখানে আসেন। চোখ, হাত, পা বেঁধে জেনারেলকে এক গাড়িতে এবং স্ত্রী-সন্তানসহ অন্যদের আরেকটি গাড়িতে উঠানো হয়। ডিআইজি (পরে আইজি) এএসএম শাহজাহানসহ পুলিশ সদস্যরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসকট করে বন্দি মঞ্জুরকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের গেট পর্যন্ত পেঁৗছে দেন।
জিয়া হত্যার পর বিচারপতি সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হলেও তখন থেকেই সেনাপ্রধান এরশাদ সর্বময় ক্ষমতার মালিক বনে যান। গ্রেফতারের পর সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, সেনানিবাসে আনার পর উত্তেজিত সৈনিকরা জেনারেল মঞ্জুুরকে হত্যা করে। আসল ঘটনা তা নয়। ঢাকার নির্দেশেই যে মঞ্জুরকে ঐ রাতে ঠা-া মাথায় হত্যা করা হয় তার বিবরণ রয়েছে ঐ গ্রন্থে। যে ক্যাপ্টেন এমদাদ জে. মঞ্জুরকে গ্রেফতার করেন, তাকে চট্টগ্রামের সিও ব্রিগেডিয়ার আজিজুল ইসলাম (মারা যান '৯২ সালে) ব্রিগেডিয়ার (পরে জেনারেল) লতিফের উপস্থিতিতে জানিয়ে দেন, হাটহাজারী থানা থেকে নিয়ে আসার পথে অথবা সেনানিবাসে এনে মঞ্জুরকে হত্যা করতে হবে। এ সময় ব্রিগেডিয়ার আজিজ, ব্রিগেডিয়ার লতিফকে বলেন, 'বিষয়টি আরও একবার ভেবে দেখবেন স্যার?' লতিফ জানান, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে, এটা এখন কার্যকর করতে হবে।' (পৃ. ২০৯)। জে. মঞ্জুর বুঝতে পেরেছিলেন, কি হতে যাচ্ছে। সেনানিবাসের ফায়ারিং রেঞ্জে ঢুকে জীপ থেকে নামানো হলো জেনারেলকে। শেষ কথাগুলো ক্যাপ্টেন এমদাদ ও জওয়ানদের মঞ্জুর বলেন, 'আমার স্ত্রীকে বলবেন আমাকে মাফ করে দিতে। তার জন্য, সন্তানদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারলাম না। মেজর এমদাদ ও জওয়ানরা ক্ষমা চাইলেন জেনারেলের কাছে। দোয়া-দরুদ পড়লেন সবাই। হাবিলদার আবদুল মালেক অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে পয়েন্ট বস্নাংক রেঞ্জে মঞ্জুরের মাথায় একটা মাত্র গুলি করে। ১ জুন দিবাগত রাত ১২টা বাজতে তখনো কয়েক মিনিট বাকি। (পৃ. ২১২)।
এর পরের কাহিনী সবারই জানা। তড়িঘড়ি করে অতিশয় দ্রুততার সঙ্গে গোপন বিচারে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে ফাঁসিতে হত্যা করা হয়। যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তারা এবং তাদের স্বজনরা প্রায় সবাই বলেছেন, তারা ছিলেন সম্পূর্ণ নির্দোষ। চেইন অব কমান্ড ভাঙা এবং বিদ্রোহের দায়ে ১৩ জন অফিসারকে ফাঁসি দেয়া হলেও গত ৩৪ বছরে জিয়া-মঞ্জুর হত্যার বিচার হয়নি। জিয়া হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কারা জড়িত আজও দেশের মানুষ জানতে পারেনি। জিয়া হত্যার বিচার না হওয়াটা এক হিসেবে ইতিহাসের প্রতিশোধ। কারণ এই জে. জিয়া জাতির পিতা হত্যা-ষড়যন্ত্রে শুধু জড়িত ছিলেন না, তিনি ঐ বিচার বন্ধ রেখেছেন এবং আত্মস্বীকৃত খুনিদের রাষ্ট্রীয় উচ্চপদে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। কাজেই জিয়া হত্যার বিচার বন্ধ থাকাটা ইতিহাসের প্রতিশোধ ছাড়া আর কিছুই নয়। আর জে. জিয়ার সহধর্মিণী বেগম জিয়া দু'বার ১০ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকেও স্বামী হত্যার বিচার করেননি। কিসের ভয়ে বা কোন গোপন রহস্য উদ্ঘাটিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বেগম জিয়া স্বামী হত্যার বিচার করেননি, তা জানার এবং বলার সময় এসেছে।
রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার লক্ষ্যেই যে, জিয়া-মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জিয়া হত্যার রহস্য উন্মোচনের জন্যই মঞ্জুরকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন ছিল। কাজেই যারা জিয়াকে হত্যা করেছে, তারাই মঞ্জুরকে হত্যা করেছে বলে পর্যবেক্ষক মহলের নিশ্চিত অভিমত। জিয়া হত্যায় যে মঞ্জুর জড়িত ছিলেন না_ এটাও অভিজ্ঞ মহলের বিশ্বাস। যদ্দূর জানা যায়, কর্নেল মতিউর ও কর্নেল মাহবুবের নেতৃত্বে একটি দল জিয়াকে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যায় সবচেয়ে লাভবান ব্যক্তি জিয়াউর রহমান আর জিয়া হত্যায় একইভাবে লাভবান হয়েছেন জে. এরশাদ। জিয়া মঞ্জুর হত্যার সঙ্গে এরশাদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বিয়ষটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফাঁসিতে নিহত ব্রিগেডিয়ার মোহসীন ও কর্নেল মাহফুজ দুজনই জিয়া হত্যার জন্য এরশাদকে দায়ী করেছেন। (জিয়া-মঞ্জুর হত্যাকা- এবং তার পর, পৃ. ১৫৪)। এই অবস্থায় যতদিন জিয়া-মঞ্জুর হত্যার বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উদ্ঘাটিত না হবে_ ততদিন এ দুটি হত্যা এবং ফাঁসিতে ১৩ অফিসার হত্যার দায়-দায়িত্ব অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী জে. এরশাদের ওপর বর্তাবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মঞ্জুর হত্যা মামলার বিচারটি সম্পন্ন করা হচ্ছে না। মঞ্জুর হত্যার সাজা থেকে বাঁচার জন্যই এরশাদ মহাজোট সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন। এরশাদের জীবিতাবস্থায় যদি মঞ্জুর হত্যার মামলার বিচার সম্পন্ন না হয়, এটা হবে আরেকটি বড় ধরনের অপরাধ।
- See more at: Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×