somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরোধী শিবিরের রাজনীতি কেমন চলছে?

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দেশের বর্তমান বিরোধী শিবিরের রাজনীতি এক গভীর শীতনিদ্রার (hibeation) মধ্যদিয়ে কাল কাটাচ্ছে। ভাদ্রের তালপাকা গরমেও তার নিদ্রাভঙ হচ্ছে না। ‘বিরোধী শিবির’ কথাটি অবশ্য বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হলো। কারণ, বাংলাদেশের রাজনীতি বলতে আমরা যে সরকার বনাম বিরোধী দলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে বুঝতাম তা বর্তমানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এখন বিরোধীদল বলতে যা বোঝায় তা বস্তুত সরকারেরই বি-টিম হিসেবে অস্তিত্বশীল। কাগজে-কলমে বিরোধী দল হিসেবে উপস্থিত থাকলেও মূলত সরকারের অংশ হিসেবেই কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার পদ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় কতোটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখা যায়, তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু এছাড়া আর কিইবা করার ছিলো? সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রাখতে গিয়ে আপাতত এই বাধ্যগত বিরোধী দলকে সহ্য করা ছাড়া আর কি উপায় আছে? দেশের ভালোমন্দ এখন পুরোটাই সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। বিরোধীদল রচিত ছায়া সরকারের ওপর নয়। এদিকে বিরোধী শিবির বলতে যে বিএনপিও তার মোর্চাবদ্ধ সমমনা দলগুলোর কথা বলা হচ্ছে, তাদের অবস্থা তো আরো শোচনীয়। বিএনপির পরাক্রমশালী মিত্র জামায়াত-যুদ্ধাপরাধের দায় মাথায় নিয়ে এবং শীর্ষ নেতাদের হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এদিকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে এই দল অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ায় তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বও চিকন সুতোয় ঝুলছে। অধিকন্তু, পরপর দু’দফার সহিংস আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা পূর্ণ ভরাডুবির শিকার হয়। ডোবায় বিএনপিকেও। বিএনপি, ঠিক এ-মুহূর্তে, একরাশ ব্যর্থতার বোঝা মাথায় নিয়ে রাজনীতির অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। সরকারকে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে খড়কুটো ধরে বাঁচতে চাইছে। অথচ এই সমঝোতার প্রস্তাব একদিন সরকারই তাদের দিয়েছিলো ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে। সে প্রস্তাব গ্রহণ করে নির্বাচনে গেলে তাদের যে আজ পোয়াবারো অবস্থা হতো—তা তাদের নিজেদের উপলব্ধি থেকেই জানা গেছে। জামায়াতের প্ররোচনা বিদ্যমান পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থতা সর্বোপরি দলীয় বিশৃঙ্খলা-বিএনপিকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে।

সত্যিই, বিএনপি প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছরে দলটির এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি আর কখনো আসেনি। এমন ‘যে ডাল ধরি ভেঙে পড়ি’ অবস্থা আগে কখনোই বিএনপিকে অতিক্রম করতে হয়নি। এমনকি ১৫ ফেব্রুয়ারির (১৯৯৬) নির্বাচনে মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়ার পরও বিএনপিকে এমন শোচনীয় রাজনৈতিক দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি, যা পোহাতে হচ্ছে এ-মুহূর্তে। অবশ্য এই সংকটাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যে দলটি সাধ্যাতীত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক পুরনো সংস্কার বিকিয়ে দিয়ে ভারতের দ্বারস্থ হয়েছে। আমেরিকা, জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পেছনে ধর্ণা দিয়েছে। একমাত্র দাবিতে যে, বিগত দিনের মতো (৫ জানুয়ারি ২০১৪ পূর্ব) একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচন হওয়া দরকার। কিন্তু সঙ্গত কারণেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের তাকে যতোটুকু মৌখিক আশ্বাস দিয়েছে, ততোটুকু কার্যকর সহায়তা দিতে পারেনি। নানান নাটকীয়তা করেও নরেন্দ্র মোদীর পেছনে-ছুটন্ত-খালেদাকে খালি হাতে ঘরে ফিরতে হয়েছে। কিছুতেই কিছু না হওয়ায় আপন রাজনীতির ঘর গোছানোর দিকে নজর দিতে হয়েছে। ব্যর্থতার ভারে ন্যুব্জ বিএনপির আধমরা নেতাকর্মীদের ঘা মেরে বাঁচাবার শেষ চেষ্টা করতে চান দলনেত্রী স্বয়ং। তাতেও বাধা। কেন্দ্র ও প্রান্তের মধ্যে কোনরূপ সমন্বয় নেই দলটির। কেন্দ্র ডানে গেলে প্রান্ত যায় বামে। আবার কেন্দ্রের সবাই যে একপথমুখী তাই বা বলি কী করে! কেন্দ্রের ভেতরেও নানা মুনির নানা মত। এদিকে কঠিন হাতে দলের স্টিয়ারিং ধরে সকল মতভেদ ঠেলে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো শারীরিক-মানসিক সামর্থ্য দলনেত্রীর এখনও বর্তমান আছে কিনা- তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। নেতৃত্বের যে দক্ষতা ও দৃঢ়তা দিয়ে শেখ হাসিনা তার দলকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে সক্ষম হচ্ছেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে তা কতোটুকু সম্ভব হচ্ছে— তা তো দৃষ্টির অন্তরালের বিষয় নয়। মঈনউদ্দীন-ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্কার অভিযানের অভিঘাতে-আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে যে বড় রকমের ভাঙ্গন দেখা দিয়েছিলো, তা হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ যতোটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে, খালেদাধীন বিএনপি ততোটা পারেনি। সেই ব্যর্থতার বীজ এখন বিএনপিতে মহীরুহ হয়ে উঠেছে।

মুখ থুবড়ে পড়া সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। দল পুনর্গঠনের চেষ্টা চলছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ত্যাগী ও সাহসী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভালো কথা। আত্মনির্ভরশীলতা এ মুহূর্তে বিএনপির জন্যে সবচেয়ে বড়ো পলিসি। স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়, পরধর্ম ভয়াবহ। বিএনপির জন্য সবচাইতে ভয়াবহ হিসেবে দেখা দিয়েছে পরধর্ম—অর্থাত্ জামায়াতের রাজনীতি। আজও মানুষ বিএনপি জোটভুক্ত-জামায়াতী মন্ত্রীদের জাতীয় পতাকাখচিত গাড়ির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে। আজও শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী-জামায়াত নেতাদের বিচারে, দণ্ডে এবং দণ্ড বাস্তবায়নে বিএনপির রহস্যময় নীরবতার দিকে আঙ্গুল তাক করে। তরুণ প্রজন্মের ভেতরে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতার পাল্লা হালকা করেছে যে ক’টি কারণ, তাদের প্রধানতমটি হলো বিএনপির জামায়াত-সংলগ্নতা। তাই আত্মনির্ভরশীল হয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইমেজ উঁচিয়ে সামনের দিকে এগুনো বিএনপির জন্য এ মুহূর্তে সবচাইতে বড় বাস্তবতা। এতে বিজয় হয়তো বিলম্বিত হবে, তবে আসন্ন ধ্বংসের হাত থেকে দলটি বেঁচে যাবে। এই আদর্শে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিএনপির নবজন্ম হলে হয়তোবা দলটি এ যাত্রায় রক্ষা পাবে।

কোনো আন্দোলনের ডাক দেয়া কিংবা চলমান কোনো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থা একেবারে ঘরপোড়া গরুর মতো। সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পাচ্ছে। গত জানুয়ারির ত্রৈমাসিক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ঐ যে তারা ঘরে ঢুকেছে, তারপর থেকে আর বেরোয়নি। বর্তমানে সরকার কর্তৃক গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর লাগাতার কর্মসূচি দেয়ার অতীত অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও বিএনপি একটি দায়সারা সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষান্ত থাকছে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচনের দাবিতে কঠোর আন্দোলন চালানো—ভয়কাতুরে বিএনপির পক্ষে কতোটুকু সম্ভব, তা বলাই বাহুল্য। তাই হয়তো তারা তাদের রাজনৈতিক সুর খানিকটা পাল্টেছে। আন্দোলনের পরিবর্তে সমঝোতার প্রস্তাব দিচ্ছে। আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে আলোচনার টেবিলের দিকে অগ্রসর হতে চাইছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামজপ বন্ধ রেখে যে কোনো ধরনের নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও তাদের চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু বড্ড অসময়ে। সময়মতো এই বোধোদয় হলে হয়তো বিএনপিকে এই কৃত্রিম বদান্যতা দেখাতে হতো না। তাদের দলীয় মর্যাদাও এভাবে ক্ষুণ্ন হতো না।

এই হলো বর্তমানের বিরোধী শিবিরের রাজনীতির চালচিত্র। এই বিপর্যন্ত, ক্লান্ত, পীড়িত বিভ্রান্ত ও সন্ত্রস্ত রাজনীতি দিয়ে সরকারের শক্ত সমালোচনা কিংবা সরকারি কর্মকাণ্ডের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখা কতোটুকু সম্ভব তা সহজেই অনুমেয়। এভাবে পোশাকী বিরোধী দল এবং ব্যর্থ বিরোধী শিবিরের রাজনীতি অব্যাহত থাকলে গণতন্ত্রের ধারা ব্যাহত হবে। আর গণতন্ত্রের ধারা ব্যাহত হলে তার পরিণাম সবাইকেই ভোগ করতে হবে। সরকারের ভিশন ২০২১ সফল করতে হলে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জায়গাগুলো সুরক্ষিত রাখতে হবে। সেজন্যে সরকার এবং বিরোধী দল বা বিরোধী শিবির উভয়েরই ইতিবাচকভাবে ক্ষমতায়িত হবার প্রয়োজন আছে। ভারসাম্যহীন রাজনীতি কোনোভাবেই সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে না।
সুত্র
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×