somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকার বিরোধিতার নামে জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে আনু মুহাম্মদ গং?

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাম্প্রতিক সময়ে চলা একের পর এক জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এই অভিযানগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। শনিবার দুপুরের দিকে দেয়া এই বিতর্কিত পোস্টকে অনেকেই দেখছেন জঙ্গিবাদের পক্ষে হিসেবে। জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে তার এমন অবস্থানের পর জাতীয় কমিটির পদ থেকে তার অব্যাহতিও চেয়েছেন অনেকে। অতি ‘আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রবণতায়’ তার অবস্থান যে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির প্রতিও ঝুঁকে যায়, এমন মন্তব্যও এসেছে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১৫ মার্চ থেকে দুটি ‘জঙ্গি আস্তানায়’ পৃথক অভিযান চালায় পুলিশ। সীতাকুন্ডের নামার বাজার ওয়ার্ডের আমিরাবাদ এলাকায় ‘সাধন কুটির’ নামে একটি দোতলা ভবনে প্রথম অভিযানে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ এক দম্পতিকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে প্রেমতলা ওয়ার্ডের চৌধুরী পাড়ায় ছায়ানীড় ভবনে দ্বিতীয় অভিযানে ৪ জঙ্গি নিহত হয়।

এরপর গত ২৩ মার্চে সিলেটের শিববাড়িতে ৫ দিন ধরে চলা অভিযানে নিহত হয় ৪ জঙ্গি। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হন ৬ জন। আহত হন প্রায় অর্ধশত। মৌলভীবাজারের বড়হাটে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে ৩ জঙ্গি ও নাসিরপুরে অভিযানে ৭ জঙ্গি নিহত হয়। কুমিল্লার কোটাবাড়িতে অভিযানে কোন জঙ্গি পাওয়া না গেলেও সুইসাইডাল ভেস্ট ও কিছু বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া যায়।

সম্প্রতি একনাগাড়ে আইনশৃঙ্খলা-বাহিনীর বেশকয়েকটি জঙ্গিবিরোধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে শনিবার ১২ টা ৪৪ মিনিটে ফেসবুকে আনু মুহাম্মদ লিখেন,

“বিভিন্ন বাহারী নাম আর বিপুল আয়োজনে ‘জঙ্গীদমন’ অভিযান চলছে। বহুঘন্টার একটি ‘সফল অভিযানের’ ফলাফল হিসেবে জানানো হলো সাতজন ‘জঙ্গী’ নিজেদের ‘আত্মঘাতী বোমায়’ নিহত, পরে জানা গেলো সাতজনের চারজনই শিশু, দুজন বয়স্ক মহিলা, একজন পুরুষ! ময়নাতদন্ত অনুযায়ী, তারা নিহত হয়েছে অভিযানের শুরুর দিকেই। তারপরও বহুঘন্টা চলেছে গুলি ইত্যাদি! আসলে ঘটনা কী? প্রশ্নের জবাব মেলার বদলে আরও বাড়ছেই কেবল। র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান কীভাবে নিহত হলেন? এরকম একজন বড় কর্মকর্তার কাছে যে কেউ পৌঁছে যেতে পারলো কিংবা বোমা রাখলো কীভাবে? গত তিনমাসে ৪৪ জন ‘ক্রসফায়ারে’ অর্থাৎ পুলিশ বা র‌্যাবের হেফাজতে খুন হয়েছে, কেন? র‌্যাব ডিবি পরিচয়ে যাদের বাড়ি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তারাই পরে জঙ্গী বা সন্ত্রাসী হিসেবে আটক হচ্ছে আবার ক্রসফায়ারেই নিহত হচ্ছে, কীভাবে? তদন্ত, সত্য অনুসন্ধান এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচারে সরকারের এতো অনাগ্রহ কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর মিডিয়ার অনুসন্ধানেই পাওয়া যেতো হয়তো। কিন্তু মিডিয়া এখন প্রধানত সরকারি প্রেসনোট আর মন্ত্রীসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার ভাষ্য প্রকাশের মাধ্যম। সেটাতেও আরও ঘোলা হচ্ছে সব, কেননা সরকারেরই একেকজনের বক্তব্য একেকরকম।”
জঙ্গি বিরোধী অভিযান বিষয়ে আনু মুহাম্মদের অবস্থান পরিষ্কার করার পর তার তীব্র সমালোচনা করে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট রাজেশ পাল ফেসবুকে লিখেছেন:

“আনু মোহাম্মদ স্যারের আসলে দয়ার শরীর্। তারচেয়েও বেশী মমতায় পূর্ণ অন্তরের অধিকারী তিনি।

তাই জঙ্গি দমন অভিযানে কয়েকজন শিশুও মারা যাওয়ায় তাঁর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু স্যার, আপনি যে এখানে সোয়াট বাহিনীর গুলি চালানোকে বর্বরতা হিসেবে দেখছেন, এই অপারেশনে তো গুলিতে কোন জঙ্গি মারা পড়েনি। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টেই দেখা গেছে যে, এদের কারো গায়ে গুলির কোন চিহ্ন নেই। এরা মারা গেছে নিজেদের সুইসাইডাল ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যার মাধ্যমে। সাথে নিয়ে গেছে নিষ্পাপ শিশুগুলোকে।


কাজেই ধিক্কার জানাতে হলে তাদের প্রকৃত হত্যাকারী জঙ্গিদের প্রতিই জানান। আপনার আমার জীবন নিরাপদ রাখতে যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে দিনরাত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অযথা বিতর্কিত করার আদৌ কোন মানে আছে কি?

রাজাকারদের পেইড এজেন্ট জাতির দুলাভাই বার্গম্যানের জন্য আপনার হৃদয় কেঁদেছিলো, আর আজ কেঁদে উঠছে ধর্মের নামে মানুষের রক্তে হোলিখেলা জঙ্গিদের জন্য। কর্নেল আজাদ বা ইন্সপেক্টর মনিরুলদের জন্য কিন্তু আপনাদের হৃদয় কাঁদেনা কখনো। তাই এদের জন্য কিছু লিখতে গেলে আপনাদের কলমের কালি ফুরিয়ে যায়।

নিজের মনেই ভাবনা জাগে, এই সুশীল মুখোশের আড়ালে আপনারা আসলে কার পারপাস সার্ভ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত?”

আনু মুহাম্মদের সেই পোস্টের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের পক্ষে তার অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট টুডে টোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক কবির য়াহমদ। জাতীয় কমিটি থেকে তার অব্যাহতিও চেয়েছেন তিনি। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃত্ব পর্যায়ে থাকা একজন শিক্ষক অদ্য ইনিয়েবিনিয়ে জঙ্গিবাদের পক্ষে তার অবস্থানকে তুলে ধরেছেন।

জানি না তার এ অবস্থান আলোচনায় আসতে চাওয়ার উদগ্র বাসনা থেকে, নাকি অপরাপর জঙ্গিদের মতো হঠাতই নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার প্রাথমিক পর্যায় থেকে।

সরাসরি জেহাদি হোন আর না হোন, আমাদের আহ্বান থাকবে জঙ্গিবাদের পথ থেকে, এবং জঙ্গিদের পক্ষ থেকে সরে আসতে, অথবা এমন কোনো ধরনের উসকানি না দিতে।

আর একান্তই যদি আহবানে সাড়া না দেন তাহলে মনে করিয়ে দিচ্ছি জঙ্গিবাদের পক্ষ ছাড়লে আছে অর্থের হাতছানি। জঙ্গিবাদের পথ পরিহার করে সরকারঘোষিত অর্থগ্রহণে নিজেকে স্বাবলম্বি করে তুলতে পারেন তিনিও।


জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমার ব্যক্তিগত অবস্থান পরিষ্কার। মনে করি, জেহাদি আর ইনিয়েবিনিয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানের সমালোচনাকারী একই।

সাহসের অভাবে জেহাদি, আত্মঘাতী হতে পারছে না কেউ কেউ, কিন্তু সাহস করে জঙ্গিবাদের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে অনেকেই।

শিক্ষকতা এক অলংকার, এ অলংকারকে সম্মান করি; সম্মান করে যেতে চাই। কিন্তু জঙ্গি, জঙ্গিবাদের প্রশ্রয়দাতা, জঙ্গিবাদের পক্ষে কথা বলা লোক, আর জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানকে প্রশ্নের মুখোমুখি করতে যাওয়ার মতো অবিবেচনাপ্রসূত যেকোনো কিছুর বিপক্ষে আমার অবস্থান। তাই এ দলভুক্তরা শিক্ষক না অন্য কিছু হলেও তাকে শত্রুজ্ঞান করি।

আর এ গোত্রভুক্তদের বিরুদ্ধে কথা বলা পবিত্র দায়িত্বও মনে করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৪৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×