somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রধানমন্ত্রীর ভারত ও ভুটান সফর : ইতিবাচক প্রাপ্তি

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভারত ও ভুটান সফর করেছেন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এ দুটি সফরই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দু'সফর থেকেই বাংলাদেশের প্রাপ্তিই বেশি এবং সফরের ফলাফল বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ সত্য পরিষ্কার দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ভারত সফর করেন। এটা ছিল সরকারি এবং দ্বিপাক্ষিক সফর। অন্যদিকে তিনি ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল ভুটান সফর করেন। এটা একদিকে ছিল দ্বিপাক্ষিক সফর অন্যদিকে অটিজম বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করা। অর্থাৎ এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো সফর। তবে যেভাবেই বিবেচনায় নেই না কেন দুটো সফরই অত্যন্ত সফল এবং ইতিবাচক ছিল।
যেকোন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের অন্য দেশে দ্বিপাক্ষিক সফর, দু'একটি ব্যতিক্রম ছাড়া, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুই ধরনের ফল বয়ে আনে। প্রথমত দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব, আস্থা এবং বোঝাপড়ার সম্পর্ক বিকশিত হয়। এতে দুই দেশের মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়লে অন্য দেশে পরিচিতি বাড়ে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশেই আর্থিক ব্যাপার ঘটে যা অর্থনৈতিক বিকাশেই রূপ নেয়। দ্বিতীয়ত: বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেন ঘটে। এতে দুই দেশেরই উপকার হয়। এই সমীকরণের বাইরে দুই দেশের সরকার প্রধানের দ্বিপাক্ষিক সফরের আরো অলিখিত কিছু বিষয় থাকে যা থেকে দুই দেশই কিছু না কিছু অর্জন করতে পারে, করেও। কোন দুই দেশের মধ্যে সরকার প্রধান পর্যায়ের সফরের আদান-প্রদান শুধু অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে হিসেব করলে চলবে না, এর অন্য ধরনের মূল্যায়নও বিবেচনায় রাখতে হয়। কূটনৈতিক ভাষায় বলা যায়, যেকোন দুই দেশের মধ্যে যেকোন ধরনের আদান-প্রদানেই কিছু না কিছু ফল লাভ হয়ই। তবে সে ফল ঘরে তোলার জন্য দক্ষতা-অভিজ্ঞতা অনেক প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। তা হলো কোন দুই বা ততোধিক দেশ চাইলেই তাদের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা একটি মাত্র সফরে বা একটি মাত্র বৈঠকে সমাধান করে ফেলার আশা করা সমীচিন নয়। যেকোন দুটি দেশের মধ্যে অনেক সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকে, নতুন সমস্যাও উদ্ভব হয়। এসব সমস্যার সমাধানের জন্য দুই দেশের মধ্যে অনেক বোঝাপড়া দরকার। দুই দেশ ঐকমত্যে পেঁৗছতে না পারলে সমস্যা যত বড় বা যত ছোটই হোক না কেন সমাধান বের করা শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভবও। অনেক সমস্যা বছরের পর বছর ধরে অনিষ্পন্ন থেকে যায়, আবার অনেক সমস্যা অল্প দিনেই আলোচনা করে সমাধান হয়ে যায়। এজন্য দরকার দুই তরফেই মাঝে মধ্যে কর্মকর্তা এবং সরকার প্রধান পর্যায়ের সফর। এ বক্তব্যের সমর্থনে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, রাশিয়া, আমেরিকার অসংখ্য উদারহণ দেয়া যায়। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ ও ছিটমহল এবং যৌথ নদীর পানি বণ্টন সমস্যা, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর সমস্যা, ভারত-চীনের মধ্যে তিব্বত সমস্যা, চীন-ফিলিপাইনের মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা সমস্যা, চীন-ভিয়েতনামের মধ্যে মেকং নদীর পানি বণ্টন সমস্যা, জাপান-রাশিয়ার মধ্যে দ্বীপের মালিকানা সমস্যা, যুক্তরাষ্ট্র এবং কিউবার মধ্যকার সমস্যা ইত্যাদি বিষয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে চলছে, সমাধানের চেষ্টা যে হচ্ছে না তা নয়, কিন্তু সাফল্য ধরা দিচ্ছে, আবার দিচ্ছেও না। কোন কোন সমস্যা ৫০/৬০ বছর ধরে চলছে, সমাধানের চেষ্টাও। যেকোন দুই দেশের মধ্যে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষতে হলে এসব বিষয় বিবেচনায় না রাখলে চলবে না।
এসব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত ও ভুটান সফরের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব কষলে একটি বাস্তব ধারণা লাভ এবং সেগুলো যে ইতিবাচক তা অনুধাবন করা যাবে। আর সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার ভারত সফরে যেসব ফল লাভের সম্ভাবনা সফরের আগে প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তার বেশির ভাগই পাওয়া গেছে এবং বাংলাদেশের পক্ষেই গেছে সফরের সুফল। এক্ষেত্রে অবশ্য অনেকেই তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির কথা বলবেন, তা জানি। তা নিয়ে পরে কথা বলবো।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এবার যতকিছু হয়েছে অতীতে আর কোন সরকার প্রধানের কোন সফরে একসঙ্গে এত সুফল পাওয়া গেছে_ এমন তথ্য কেউ বলতে পারেন না। এতে বাড়িয়ে বলা মনে হতে পারে কিন্তু এটাই বাস্তব অবস্থা। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সরকার প্রধান হিসেবে ভারত সফর করে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসস্পর্কের ইতি ঘটে। পরের সবগুলো সরকারই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক-বন্ধুত্ব নয় শত্রুতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন বাংলাদেশ শাসন করেছেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর এই তিন জন দেশ পরিচালনা করেছেন। কিন্তু কেউ ভারতের সঙ্গে বিরাজমান কোন সমস্যার সমাধান তো দূরের কথা, সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় নিতে পারেননি অথবা নেননি। শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর ভারতের সঙ্গে বিরাজমান সমস্যার জট খুলতে শুরু করে। এখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক একটি সম্মানজনক অবস্থান পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ২০১০ সালে ভারত সফরে গিয়ে ভারত থেকে ১শ' কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার চুক্তি করেছিলেন। সে ঋণের টাকায় বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। তার সুফল এখন দেশবাসী ভোগ করছেন। এবার শেখ হাসিনার দিলি্ল সফরে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলার (টাকার হিসেবে এক লাখ বিশ হাজার কোটি) ঋণ ও বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। এর আগে কোন সরকার ভারতের সঙ্গে এত টাকার সহযোগিতা আদায় করতে পারেননি। কেন পারেননি সে আলোচনায় গেলে অনেক কারণ উল্লেখ করতে হবে। এর আগে ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এসে আরো ২শ' কোটি ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেন। এবার ভারতের সরকারি তরফে ৫শ' কোটি ডলার ঋণ দেয়ার চুক্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারিভাবে ভারত বাংলাদেশকে ৮শ' কোটি ডলার (টাকার হিসেবে ৬৪ হাজার কোটি) ঋণ দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। অন্যদিকে এবার বেসরকারিভাবে ১০০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৮০ হাজার কোটি) বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার চুক্তি হয়েছে।
ভারত থেকে এত টাকার ঋণ ও বিনিয়োগ আনতে পারেননি আর কোন সরকারপ্রধান। যদিও চীনের কাছ থেকে আরও বেশি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এবং সরকার তাতে সায় দিয়েছেন, তারপরও ভারতের বিনিয়োগের অন্যরকম মূল্য আছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি বিদ্যমান। এ ঘাটতি কমানোর নানা চেষ্টা হচ্ছে দুই তরফেই। কিন্তু সমাধানের ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর একটি কারণ হয়তো ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে অশুল্ক বাধা। কিন্তু সবাই বলেন, বড় কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি পণ্য রপ্তানি প্রয়োজন। এজন্য দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই মনে করেন বাংলাদেশে ভারতের বহুমুখী বিনিয়োগ হলে এবং ভারতীয় বিনিয়োগে স্থাপিত কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ভারতে রপ্তানি করে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এজন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বাংলাদেশে ভারতীয় শিল্পপতিদের বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। সে কাজটি এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে অত্যন্ত কার্যকরভাবে হয়েছে। এ লক্ষ্যে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশের ছোট-বড় ২৪০ জন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিকে দিলি্ল নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরের শেষদিন ১০ এপ্রিল সকালে দিলি্লর তাজ প্যালেস হোটেলে ভারত বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। ভারতের বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো মধ্যে প্রায় দেড়শ'র মতো বিশিষ্ট ব্যক্তি সেখানে শেখ হাসিনার মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। সে সভায়ই বাংলাদেশে দশ বিলিয়ন ডলার (আশি হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগ চুক্তি করেছেন ভারতীয় শিল্পপতিরা। সে সভায় একাধিক বাংলাদেশি ও ভারতীয় শিল্পপতির সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের প্রায় সবারই অভিন্ন অভিমত যে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিদেশি বিনিয়োগ। আর সে বিনিয়োগ ভারত থেকে হলে বাংলাদেশের বেশি সুফল মিলবে। শিল্পপতিদের অনেকেরই কথা হচ্ছে : বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য বিনিয়োগে ঝুঁকি বেশি। রাজনৈতিক হাঙ্গামা এবং এক সরকার চলে যাওয়ার পর অন্য সরকার এসে বিনিয়োগ এবং শিল্পকারখানার সুযোগ-সুবিধা এবং নিয়ম-কানুন সব পাল্টে দেন। ফলে বিদেশিরা বিনিয়োগে ততটা উৎসাহ বোধ করেন না। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্পপতিদের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগে কি কি সুবিধা তারা পাবেন তা তুলে ধরে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। এতে ভারতীয় শিল্পপতিদের বাংলাদেশের প্রতি আস্থা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এর ফল হিসেবে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। এর ফল হাতেনাতেই পাওয়া গেল ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ চুক্তি হওয়ার মধ্য দিয়ে। সফরে সেসব অর্থনৈতিক সুফল পাওয়া যাবে তার কথাই শুধু এখানে বলা হলো। অন্য আরও অনেক সুফলের কথা বলা যেত কিন্তু লেখার পরিসর না বাড়ানোর জন্য এখানেই শেষ করা হলো।
অনেকেই বলছেন তিস্তার পানি চুক্তি না হওয়া প্রধানমন্ত্রীর সফরের বড় ব্যর্থতা। এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু তিস্তা চুক্তি কি এবারই স্বাক্ষর হয়ে যাওয়ার কথা ছিল_ এ প্রশ্ন নিশ্চয়ই অপ্রাসঙ্গিক হবে না। তিস্ত চুক্তির সব কিছু অনেক আগেই ( ২০১১ সালে) দুই দেশ অনুমোদন করে রেখেছে। শুধু বাকি ছিল স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা। দুই দুইবার দুই দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সব কিছুই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরও কেন হয়নি তা সবারই জানা। ২০১১ সালে ড. মনমোহন সিং এবং ২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তা চুক্তি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী সেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিই চুক্তি স্বাক্ষরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সব ভ-ুল করে দিয়েছেন সে খবর তো দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সবাই জানি। ভারতের নেতারা একাধিকবার বলেছেন যে, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী কোন রাজ্যের অধীনের কোন বিষয় নিয়ে সেই রাজ্যের সম্মতি ছাড়া কোন ধরনের উদ্যোগ কেন্দ্রীয় বা অন্য কোন রাজ্য সরকার গ্রহণ করতে পারে না। সবাই জানেন মমতা ব্যানার্জি যতদিন রাজি না হবেন ততদিন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের প্রতিটি অনুষ্ঠানে তিস্তা চুক্তি যে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের বিষয় তা উল্লেখ করেছেন। স্বয়ং মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে শেখ হাসিনা কথা বলেছেন। তাতে বরফ গলেনি। তবে নরেন্দ্র মোদি স্পষ্ট করেই বলেছেন, তিনি আশাবাদী তার সরকার এবং শেখ হাসিনা সরকারের মেয়াদকালেই তিস্তা চুক্তি হবে। এখন বাংলাদেশের এ আশাবাদের ওপর আস্থা রাখা ছাড়া আর কোন পথ এ মুহূর্তে আছে বলে কেউ মনে করেন না। বিরোধী রাজনীতিবিদরা কঠিন কিছু পথে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন সুযোগ পেলেই। কিন্তু সেইসব কঠিন পথে গিয়ে কতদিনে বা আদৌ সমাধান সম্ভব কিনা তা নিয়ে সবাই সন্ধিগ্ন। ফলে সুসম্পর্কে সুযোগ নিয়েই তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের পথে এগিয়ে যেতে হবে বলেই দুই দেশে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সে অবস্থা মেনেই অপেক্ষা করা যুক্তিযুক্ত মনে হয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা, একাধিক মন্ত্রী এবং কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সফর করে দুই দেশের সম্পর্কে ভিন্নমাত্রা এবং নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এর প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভুটান সফর আরও বেশি সুফল বয়ে আনার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনা সফরে ভুটানের সঙ্গে ৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হয়েছে। এ সফরের মধ্য দিয়ে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তেলার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সফরের পর দুই দেশের যৌথ ঘোষণায় বাংলাদেশ ও ভুটান পারস্পরিক স্বার্থে বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ খাতে সহযোগিতা জোরদারে দ্বিপক্ষীয় এবং উপ-আঞ্চলিকভাবে কাজ করার ব্যাপারে সম্মত হওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেয়ার মনোভাব পুনর্ব্যক্ত করেছে দুই দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাসো তেরেসিং তোবগে তাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থে বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার সুযোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। আঞ্চলিক কাঠামোয় নীতিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জলবিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) বিষয়কে তারা স্বাগত জানিয়েছেন। দুই প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তিনটি দেশের নেতারা যখন একত্রিত হবেন, তখন এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জ্বালানি চাহিদা অর্থাৎ বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা। বাংলাদেশে এখন যেভাবে শিল্পায়ন হচ্ছে তাতে আগামী এক দশকে বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বাড়বে। বাংলাদেশ মনে করে, বিদ্যুতের এ চাহিদা পূরণে নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থা ছাড়াও ভারত, ভুটান, নেপালের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে ভুটানে জলবিদ্যুতের যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে, তা কাজে লাগাতে সেখানে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। ভুটান মনে করে, তাদের জলবিদ্যুতের মাধ্যমে এ অঞ্চলের 'দৃশ্যপট পরিবর্তন' করা সম্ভব। আলোচনা হচ্ছে, তিন দেশ মিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা আঞ্চলিকভাবে বণ্টন করা হবে। আর এসব কিছুই এবারে প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরের সময় একটি বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনার রূপ পাচ্ছে। এছাড়ও প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে যোগাযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক সমপ্রসারণে কয়েকটি চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের। সহযোগিতার নতুন পথ খুঁজতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পর দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বাংলাদেশের নৌপথ ভুটানকে ব্যবহার করতে দেয়া, কৃষি, সংস্কৃতি ও পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর হয়েছে। এসব চুক্তি ও সমঝোতার সুফল বেশি ভোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।
এসব তথ্য-উপাত্ত বিবেচনায় নিলে বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত ও ভুটান সফর বাংলাদেশকেই বেশি সুফল দেবে। তবে একই সঙ্গে একটি কথা যোগ করা দরকার। তা হচ্ছে এসব সুফল ঘরে তুলতে দরকার দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে আমাদের দরকার সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সৃজনশীল মানুষের কর্মদক্ষতা। সে দিকে এখন আমাদের নজর দিতে হবে।

সুত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৫৭
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×