একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত জোটের আগুন-সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের ভিডিওচিত্র সারা দেশে প্রচার করবে আওয়ামী লীগ। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে ওই ভিডিওচিত্র দেখা যাচ্ছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অগ্নি-সন্ত্রাস নৈরাজ্যের বিএনপি-জামায়াত জোট’।
গত শনিবার গণভবনে দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় জেলা পর্যায়ের নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ওই সিডি। প্রায় ১৮ মিনিটের ভিডিওচিত্রটিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশসংবলিত টেলিসংলাপের অংশ রয়েছে। আগুন-সন্ত্রাস ছাড়াও ওই ভিডিওতে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্মের অপব্যবহার করে চালানো সন্ত্রাসের সচলচিত্র আছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ভিডিওচিত্রটি উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হবে প্রচারের জন্য। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিটি জেলার তথ্য ও গবেষণা এবং দপ্তর সম্পাদকদের নিয়ে কর্মশালা হয়েছে। প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় একটি করে ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে। জনসভা, কর্মিসভা, হাটে-মাঠে এ ভিডিওচিত্র দেখানো হবে। ’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা শুনেছি নির্বাচন সামনে রেখে ওরা ভিডিওচিত্রটি তৈরি করেছে। আমরাও তো গুম-খুনের ওপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কথা বলছি। এ নিয়ে আমরাও ভিডিও তৈরি করতে পারি। তবে তা তৈরি করা হবে কি না এ বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নেবে। ’
আওয়ামী লীগের ভিডিওচিত্রে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের দৃশ্য দেখানোর পাশাপাশি নেপথ্যে পুরুষ কণ্ঠের ধারাভাষ্যে সন্ত্রাসের ভয়াবহতা বর্ণনা করা হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা, ট্রেনে আগুন, রেলপথে নাশকতা, উপাসনালয়ে হামলাসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসে তিন বছরে ১৭২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, একই সময়কালে আহত হয় তিন হাজার ৮৬ জন। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে তিন হাজার ২৫২টির বেশি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে। ট্রেনে হামলা হয়েছিল ২৯ বার।
১৭ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের ভিডিওচিত্রে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রেনে আগুন লাগানো, মানুষের শরীর ঝলসে যাওয়া, বার্ন ইউনিটে অগ্নিদগ্ধ ও তাদের স্বজনদের আর্তচিৎকারের দৃশ্য রয়েছে। শুরুতেই ভাষ্যকারের কণ্ঠে শোনা যাবে—‘ক্ষমতার লোভে মানুষ কতটা হিংস্র, বর্বর হতে পারে, বাংলাদেশের মানুষ তা দেখেছে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালজুড়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের মধ্যযুগীয় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও তাণ্ডবলীলায়। মানুষ পুড়িয়ে, যাত্রীবাহী বাসে, ট্রেনে আগুন দিয়ে, রাস্তায় গাছ কেটে মধ্যযুগীয় কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করে, শত শত মায়ের কোল খালি করে কী স্বার্থ উদ্ধার করতে চেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত? দেশের ক্ষমতা? যে দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে, জঙ্গিবাদে মদদ দিয়ে পৃথিবীর কাছে সম্মানহানি করতে চেয়েছে, সে দেশের মানুষ কিভাবে মেনে নেবে তাদের?’
ভিডিওচিত্রে খালেদা জিয়া ও সাদেক হোসেন খোকার স্থিরচিত্র দেখিয়ে সেই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে এক ব্যক্তির সংলাপ যোগ করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে দেখিয়ে বলা হচ্ছে, ‘ইনি সেই ম্যাডাম, যার ক্ষমতার লোভের লেলিহান শিখায় পুড়ে গেছে মানবতা, পুড়ে গেছে রাষ্ট্র। যার নির্দেশে দেশজুড়ে বিএনপি-জামায়াত এক জোট হয়ে তাণ্ডব চালায় দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। ’ খালেদা জিয়ার যে সংলাপ আছে তাতে শোনা যায় তিনি বলছেন, ‘কেউ হাঁটবে না, সব রাস্তায় থাকবে। ...বেশি করে লোক নামাবে। আপনি কথা বলেন...। ওরা এখনো নামেনি কেন?’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে সারা দেশ থেকে জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছিল বিএনপি। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আগতদের ওপর পুলিশি হামলা হয়। তারপর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ও পরে দেশজুড়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় বোমা বিস্ফোরণে একজনের প্রাণহানিও ঘটে। পোড়ানো হয় বেশকিছু গাড়ি। আগুনে সিলেটে পুড়ে মারা যায় এক যাত্রী।
একটি অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা খালেদা জিয়ার একাধিক কথোপকথন, তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকটি টেলিফোন সংলাপের অডিও টেপ ঘুরতে থাকে ইউটিউবে। তার থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসনের একটি কথোপকথন রয়েছে ভিডিওচিত্রে।
খালেদা জিয়ার কথোপকথনের একটি অংশ এমন—‘এখন পর্যন্ত অন থাকবে। কিন্তু ওখানে কেউ থাকবে না। ছেলে-পেলেরা সব রাস্তায় থাকবে। ভেতরে কাউকে আমি দেখতে চাই না। ছেলেরা সব রাস্তায় যাবে। ’
ঢাকা মহানগর বিএনপির তখনকার আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালামকে ‘লোক নামানোর’ নির্দেশও দিতে শোনা যায় খালেদা জিয়াকে। তাঁর কণ্ঠে শোনা যায়, ‘খোকা আর সালামকে বলে দেন, বেশি করে লোক নামাতে। ওরা যদি লোক নামাতে না পারে, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিক। আমি রাস্তায় লোক দেখতে চাই। ’ এরপর খালেদা জিয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি কি ওদের সঙ্গে কথা বলেছেন?’ অপর প্রান্ত থেকে তখন ‘জি’ বলা হয়।
বিএনপির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বর্তমানে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন।
প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ২৪ দিন অবরোধ পালন করেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। তার আগে ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও নাশকতা শুরু হয়।
সুত্র