somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জয়তু শেখ রেহানা

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তাঁর একটি পারিবারিক ও রাজনৈতিক পরিচয় আছে। কিন্তু কেন যেন তিনি বেছে নিয়েছেন এক আশ্চর্য আড়ালচারী জীবন। পাদপ্রদীপের আলোয় তাকে কখনও দেখা যায় না। নিভৃত সংসার কোণই যেন তাকে দিয়েছে আশ্চর্য প্রশান্তি। এটাও তো অর্জন করতে হয়। বাঙালী নারীর আরাধ্য সুখী গৃহকোণেই তিনি সৃষ্টি করেছেন আপন জগত। যেখানে বাইরের কারও প্রবেশাধিকার নেই। না, তিনি যে একেবারেই একাকী মানুষ, তা কিন্তু নয়। প্রয়োজনের সময় তিনি ঠিকই বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। পালন করেছেন ঐতিহাসিক দায়িত্বও। কিন্তু আবার ফিরে গেছেন নিজের ঠিকানায়। বাইরের কোলাহল থেকে সব সময় নিজেকে বিমুক্ত রেখেছেন আশ্চর্য নির্মোহ স্বভাবগুণে। অথচ এদেশের এক বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তিনি। তরুণবেলা অবধি বেড়ে ওঠা রাজনীতির আবহে। জন্মের পর থেকেই দেখে এসেছেন, বাড়িতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আসা-যাওয়া। স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক অঙ্গনের মানুষদের সঙ্গে শুধু আলাপ-পরিচয় নয়, তারও ছিল নিত্য ওঠাবসা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতের পর থেকে তিনি যেন নিজেকে নিয়ে যান নেপথ্যে। মৌনতায় নিজেকে সমর্পণ করে বাহ্যত এড়িয়ে চলেন সব ধরনের রাজনৈতিক যোগাযোগ। যদিও জানি তার মগ্নতা ছুঁয়ে আছে মানুষের কল্যাণ কামনা। এই কল্যাণমন্ত্রে দীক্ষা তো হয়েছে পারিবারিক সূত্রেই। আর তাই এই আড়ালচারিতা তার মাহাত্ম্যকে একটুও ম্লান করেনি। বরং পাদপ্রদীপের আলোয় না এসেও তিনি দেশ ও মানুষের কল্যাণে নেপথ্যে যে অবদান রেখে চলেছেন তা তুলনাহীন। দেশমাতৃকার সেবায় মিতবাক এই নারীর নীরব নিবেদন- উৎসর্গ সাদা চোখে সবার গোচরে আসে না। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তিনি বাংলাদেশের তৃতীয় বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন। তিনি শেখ রেহানা- আপন বলয়ে যিনি নিজেকে গড়েছেন সম্পূর্ণ আলাদাভাবে। প্রচার এড়িয়ে চলতে তার সযতœ প্রয়াস লক্ষণীয়।

জাতির জনকের কন্যা হলেও জীবনের এক একটি ধাপ পেরিয়ে আসার পথটি মোটেও সহজ ছিল না তাঁর। বলতে গেলে জীবনের শুরুতেই জীবনযুদ্ধের সৈনিক তিনি। অনেকটা পথ রীতিমতো লড়াই করেই কাটাতে হয়েছে তাকে। কৈশোর-উত্তীর্ণ বয়সে হারিয়েছেন মা-বাবা, ভাইদের। হারিয়েছেন স্বদেশের আশ্রয়। আশ্রয়হীন পরিবেশে দেশে দেশে ঘুরেছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত ছিল না কোথাও। ছিল না নিশ্চিত জীবনযাপনের নিশ্চয়তাও। লড়াই করেছেন। উপার্জনের জন্য নিজেকে নিযুক্ত করতে হয়েছে নানা কাজে। বড় বোন শেখ হাসিনা রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের নেতৃত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের হাতে। শেখ রেহানা নেপথ্যে বড় বোনকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। শেখ হাসিনা যখন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফিরে আসেন, তখন তার দুই সন্তান জয় ও পুতুলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন শেখ রেহানা। আবার পালন করেছেন অনেক রাজনৈতিক দায়িত্বও। ১৯৭৯ সালের ১০ মে স্টকহোমে অনুষ্ঠিত সর্ব ইউরোপীয় বাকশালের সম্মেলনে বিশ্ববাসীর কাছে তিনিই সর্বপ্রথম পঁচাত্তরের কলঙ্কজনক ও অমানবিক হত্যাকা-ের বিচারের দাবি তোলেন। সেদিন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, জাতিসংঘের মহাসচিব, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান, আমেরিকার কংগ্রেসের হিউম্যান রাইটস কমিটির চেয়ারম্যান, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রধানের কাছে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচারের প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার দুই ইচ্ছা প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘কেবল মানুষই বলে, আশার অন্ত নেই। পৃথিবীর আর কোন জীব এমন কথা বলে না। আর সকল প্রাণী প্রকৃতির একটা সীমার মধ্যে প্রাণ ধারণ করে এবং তার মনের সমস্ত আকাক্সক্ষাও সেই সীমাকে মানিয়া চলে। জন্তুদের আহার বিহার নিজের প্রাকৃতিক প্রয়োজনের সীমাকে লঙ্ঘন করতে চায় না। এক জায়গায় তাদের সাধ মেটে এবং সেখানে তাহারা ক্ষান্ত হতে জানে। অভাব পূর্ণ হলে তাদের ইচ্ছা আপনি থামিয়া যায়, তাহার পরে আবার সেই ইচ্ছাকে তাড়না করিয়া জাগাইবার জন্য তাহাদের দ্বিতীয় আর-একটা ইচ্ছা নাই।’ শেখ রেহানার সব ইচ্ছা কেন্দ্রীভূত দেশের কল্যাণ কামনায়। কয়েক বছর আগে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, ‘কোন ক্ষমতাই বঙ্গবন্ধুর সন্তানদের বদলাতে পারে না। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। জনগণের মধ্যে থেকে তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আমার বাবা হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের জনক। আমরা সেই বঙ্গবন্ধুর সন্তান, জনগণের মধ্যে এখনও আমরা খুঁজে ফিরি আমাদের মা-বাবা ও পরিবার সদস্যদের, সেই জনগণের ভালবাসা নিয়েই জীবনের বাকি সময়টুকুও পাড়ি দিতে চাই।’ কোন ক্ষমতা বা পদ-পদবির প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে ওই সাক্ষাতকারে শেখ রেহানা বলেছেন, ‘আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া আমরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এই লন্ডনেও যখন রাস্তায় বের হই, তখন দেখি বিভিন্ন বর্ণের অনেকেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে সম্মান করছে। সঙ্গে নিয়ে একটি ছবি তুলতে চাইছে। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে আমাদের।’ কী অকুণ্ঠ উচ্চারণ!

মানুষের ধর্ম নিবন্ধে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘মানুষের একটা দিক আছে যেখানে বিষয়বুদ্ধি নিয়ে সে আপন সিদ্ধি খোঁজে। সেখানে আপন ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা নির্বাহে তার জ্ঞান, তার কর্ম, তার রচনাশক্তি একান্ত ব্যাপৃত। সেখানে সে জীবরূপে বাঁচতে চায়।

কিন্তু মানুষের আর একটা দিক আছে যা এই ব্যক্তিগত বৈষয়িকতার বাইরে। সেখানে জীবনযাত্রার আদর্শে যাকে বলি ক্ষতি তাই লাভ, যাকে বলি মৃত্যু সেই অমরতা। সেখানে বর্তমান কালের জন্য বস্তু সংগ্রহ করার চেয়ে অনিশ্চিতকালের উদ্দেশ্যে আত্মত্যাগ করার মূল্য বেশি। সেখানে জ্ঞান উপস্থিত-প্রয়োজনের সীমা পেরিয়ে যায়, কর্ম স্বার্থের প্রবর্তনাকে অস্বীকার করে। সেখানে আপন স্বতন্ত্র জীবনের চেয়ে যে বড় জীবন সেই জীবনে মানুষ বাঁচতে চায়।...

...ইতিহাসে দেখা যায়, মানুষের আত্মোপলব্ধি বাইরে থেকে অন্তরের দিকে আপনিই গিয়েছে, যে অন্তরের দিকে তার বিশ্বজনীনতা, যেখানে বস্তুর বেড়া পেরিয়ে সে পৌঁছেছে বিশ্বমানসলোকে। যে লোকে তার বাণী, তার শ্রী, তার মুক্তি।’ শেখ রেহানা যেন এই মুক্তির আরাধনাই করে এসেছেন আজীবন। নিজেকে উৎসর্গ করেছেন আগামী দিনের জন্য। বোনের ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন। নিজের ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। তার মেয়ে আজ ব্রিটিশ পার্লমেন্টের সম্মানিত সদস্য। নির্বাচিত হয়েছেন বিপুল ভোটে।

বিশ্ব সংসারে এমন আড়ালচারী কিছু মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা নিভৃতে কাজ করেন দেশ ও মানুষের কল্যাণে। ব্যক্তিগত মোহের উর্ধে উঠে দেশচিন্তায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি। জš§দিনে আজ তাকে জানাই শুভেচ্ছা। তিনি দীর্ঘায়ু হোন। বাংলার মানুষের পাশে সব সময় থাকুন। অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাহস যুগিয়ে যান দেশে ও বিদেশে। জয়তু শেখ রেহানা।
সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৩৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×