পোড়ো (১ম পর্ব)
পরদিন সকালে দুই ভাই ঘুম থেকে ওঠে। সকালের নাস্তা সেরে চারপাশটা ঘুরে দেখায় জন্য বেরিয়ে পড়ে। বনের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আড় চোখে ভাইকে লক্ষ্য করতে থাকে স্টিভেন্স। গতকাল রাত থেকেই কেমন যেন চিন্তিত আর অন্যমনস্ক লাগছিল রোনাল্ডকে। তখন ভেবেছিল ক্লান্তির কারনেও হতে পারে, এখন মনে হচ্ছে কোথায় যেন একটা সমস্যা আছে।
তুমি কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত স্টিভেন্স জিজ্ঞেস করে ভাইকে। একটু চমকে উঠে রোনাল্ড উত্তর দেয় কই কিছু না তো। গতকাল থেকেই তোমাকে কেমন যেন চিন্তিত লাগছে। কোন ব্যাপার থাকলে আমাকে খুলে বল, বলে স্টিভেন্স। না, তেমন কিছু না বলে এড়িয়ে যায় সে।
আর কথা বাড়ায় না স্টিভেন্স।
রোনাল্ড বলে ওঠে চল ভাই্য়া কালকে আমরা যেদিকে গিয়েছিলাম ওইদিকটা আবার একটু দেখে আসি। আবার কেন? প্রশ্ন করতে গিয়েও থমকে যায় স্টিভেন্স। বলে, 'চল।' তার মনে হতে থাকে সব প্রশ্নের উত্তর ওখানেই আছে।
গতকালকের জায়গায় উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকে দু'জনে। যে জায়গা পর্যন্ত গিয়ে তারা গতকাল ফিরে এসেছিল তার কিছুটা আগ পর্যন্ত গিয়ে কিছুটা ইতঃস্তত ভাবে পা ফেলতে থাকে রোনাল্ড।
এগিয়ে যেতে থাকে দু'জনে, বেশ খানিকটা এগোনোর পর হঠাৎ করেই রোনাল্ডের চেহারা আতঙ্কে সাদা হয়ে যায় গলা চিরে বেরিয়ে আসে একটা তীক্ষ্ম চিৎকার। দৌড়ে কাছে গিয়ে স্টিভেন্ষ আঁকড়ে ধরে ভাইকে, শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। অপ্রকৃতিস্থ মানুষের মত বলতে থাকে, "পোড়াবাড়ি......... পোড়া মানুষ......" বলতে বলতেই মাটিতে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায় রোনাল্ড। অসহায়ের মত ভাইয়ের পাশে বসে পড়ে স্টিভেন্স। এই জন মানুষহীন জঙ্গলের ভিতরে সে কি করবে এখন!
কিছুক্ষন চিন্তা করার পর মনে হয় প্রথমে তার রোনাল্ডকে নিয়ে এই জায়গা থেকে সরে যাওয়া উচিত। তার সর্বশক্তি দিয়ে যতটুকু দূরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব সে রোনাল্ডকে ততদূরে নিয়ে গেল। শুইয়ে দিল মাটিতে একটা জায়গায়। তার কাছে পানিও নেই যে সে রোনাল্ডের মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে তাকে জাগানোর চেষ্টা করবে। এমনি অনেকক্ষন নানা ভাবে চেষ্টা করার পর জ্ঞান ফিরল রোনাল্ডের। জ্ঞান ফিরেই উঠে বসতে চায় সে, বাঁধা দেয় স্টিভেন্স। কিছুটা সময় শান্ত হওয়ার জন্য দিয়ে প্রশ্ন করে, "কি হয়েছিল? হঠাৎ তুমি ভয় পেলে কেন?"
উত্তর দেয় রোনাল্ড তুমি দেখ নি? ওখানে একটা পোড়া বাড়ি ছিলম বাড়ি থেকে দু'টো পোড়ো মানুষ আমার দিকে এগিয়ে আসছিল", বলেই চোখ বন্ধ করে ফেলে আতঙ্কে যেন সম্পূর্ন ব্যাপারটা সে চোখের সামনে এখনও দেখতে পাচ্ছে।
কোন উত্তর না দিয়ে স্টিভেন্স বলে, "তুমি কি এখন হেঁটে তাঁবুর দিকে যেতে পারবে, নাকি আরো কিছুক্ষন এখানে শুয়ে থাকবে?"
না, আমি তাঁবুতে যাব, উত্তর দেয় সে।
আস্তে আস্তে দু'জনে হেঁটে তাঁবুতে পৌছে যায়। পৌছে ভাইকে স্টিভেন্স বিশ্রাম করতে বলে। অনেক্ষন পর তার ভাই ঘুমিয়ে পড়লে তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে সে ভাবতে থাকে। রোনাল্ড একটা পোড়ো বাড়ির, আর পোড়ো মানুষের কথা বলল, অথচ সে তার পাশে থেকেও কিছুই দেখে নি। কোন হিসেব মেলাতে পারে না স্টিভেন্স। মনে মনে ভাবতে থাকে যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে সরে পড়া দরকার। রোনাল্ডের আর্তচিৎকার তার চিন্তার সুঁতো ছিড়ে দেয়। তাঁবুতে ছুটে গিয়ে দেখে আত্ঙ্কে কুঁকড়ে শুয়ে আছে রোনাল্ড। ভাইকে দেখে কিছুটা আস্বস্ত হয়ে বলে দু্ঃস্বপ্ন দেখছিলাম।
সাথে আনা ওষুধগুলো থেকে একটা ঘুমের ওষুধ বের করে রোনাল্ডকে খাইয়ে দেয় স্টিভেন্স। আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়লে আবার তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসে সে।
সকাল পেরিয়ে এখন দুপুরও প্রায় যায় যায় করছে। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে আজকে আর বন থেকে বের হওয়া সম্ভব না।
বিকেলের শেষের দিকে ঘুম ভাঙে রোনাল্ডের। ঘুম থেকে ওঠার পর স্টিভেন্স লক্ষ্য করে রোনাল্ডকে আরো বেশী অস্বাভাবিক। চোখের দৃষ্টি ঘোলাটে, কথায়, আচরনে প্রচন্ড রকম অস্বাভাবিকতা। ভাইয়ের কাছেই বসে থাকে স্টিভেন্স।
স্টিভেন্স শুনতে পা্য রোনাল্স কেমন যেন বিড় বিড় করছে আপনমনে, কি বলে সে বুঝতে পারে না। কি করবে ভেবে না পেয়ে আরো একটা ঘুমের ওষুধ কোনমতে খাইয়ে দেয় রোনাল্ডকে।
ধীরে ধীরে দীর্ঘ অশুভ রাত্রি পেরিয়ে সকাল আসে। অনেক কষ্টে অপ্রকৃতিস্থ ভাইকে সাথে করে বন থেকে বেরিয়ে আসে স্টিভেন্স। সকালে ওঠার পর অস্বাভাবিকতা অনেকটা করে এসেছিল বলে অনেকটাই রক্ষা হয়েছিল।
শহরে ফেরার কয়েকদিন পরে।
আতঙ্ক আগের থেকে অনেকটা কমলেও, অস্বাভাবিকতা না কমায় সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে এসেছিল ভাইকে। সাইকোলজিস্ট সবকিছু শুনে পরে জানায় রোনাল্ডের পুরো ব্যাপারটাই ছিল এক ধরনের হ্যালুসিনেসন।
ছোট বেলায় রোনাল্ড ও স্টিভেন্সের বাবা-মা একটি দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। তখন রোনাল্ড বেশ ছোট ছিল, ঘটনাটা মারাত্নকভাবে প্রভাব ফেলেছিল রোনাল্ডের মনে। সেই ঘটনার সূত্র ধরেই একটা আতঙ্ক জন্মে রোনাল্ডের মনে আর কোন এক বিচিত্র ভাবে তার থেকেই জন্মে এই হ্যালুসিনেসন।
তবুও কেন যেন স্টিভেন্সের মনে একটা সন্দেহ খচ খচ করতে থাকে। ঘটনাটা হ্যালুসিনেসন হতে পারে, কিন্তু পুরো ব্যাপারটা ঘটে একটা নির্দিষ্ট জায়গাকে কেন্দ্র করে, ওই জায়গার সাথে হ্যালুসিনেসনের সম্পর্কটা খুঁজে পায় না সে......
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১১ দুপুর ২:০১