যারা প্রথম লিখাটি পড়েননি তারা এখাView this link নে গিয়ে পড়ে নিতে পারেন। তাহলে বুজতে সুবিদা হবে।
অবশ্য এই দেশের সাদা চামড়ার মেয়ে দের বয়স অনুমান করা আমার জন্য সবসময় কঠিন। আতিক ভাই সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। অসুস্থ মহিলাটি হচ্ছেন জেন, আর পিচ্ছি দুটি জেন এর সন্তান। ছেলেটার নাম জন। মেয়েটার নাম হচ্ছে লিভ। আতিক বললেন তাঞ্জিম তুমি লিভ আর জন কে নিয়ে আমার বাসায় চলে যাও। ওদের কালকে স্কুল আছে, বাসায় গিয়ে ওদের হোমওয়ার্ক করে দিবে এবং ঘুম পাড়িয়ে দিবে।
সকালে উঠিয়ে ওদের কে স্কুল এর জন্য রেডি করে বাস আসলে উঠিয়ে দিবা, দুপুরে যখন স্কুল ছুটি হবে তাদের কে নিয়ে আবার এখানে চলে আসবা। তারপর উনি বললেন যে তোমাকে আমার বাসা চিনতে হবে না,লিভ চিনিয়ে দিবে এই বলে উনি বাসার চাবি আমার হাতে দিলেন। আমি একটু অবাক হলাম, কারণ ওরা আমাকে চিনে না, আর আমি ও না। অথচ তাদের কে নাকি বাসায় নিয়ে যেতে হবে, একত্রে থাকতে হবে, হোম-ওয়ার্ক করে দিতে হবে। আতিক ভাইয়ের কথা শেষ না হতেই দেখলাম লিভ আর ...... আমার হাত ধরে দাড়িয়ে আছে, একটু অবাক হলাম। আতিক ভাই আর জেন এর কাছ থেকে বিদায় নিতে গিয়ে দেখলাম জেন কাঁদছে।
উনার কথা মত লিভ আর জন নিয়ে আমি আতিক ভাইয়ের বাসায় গেলাম। বুজলাম উনার বাসাটা আমার বাসা থেকে খুব দূরে না। ট্যাক্সি থেকে নেমে বিল দিতে গিয়ে পরলাম আরেক বিপত্তিতে। বাড়া দেওয়ার জন্য আমার কাছে খুব বেশী টাকা নেই। তাই কিছুক্ষণ মানি বাগ আর প্যান্ট এর সব ঘাঁটলাম কিন্তু ফলাফল হতাসজনক। লিভ ব্যাপারটা বুজতে পেরে তার স্কুল বাগ ওপেন করে দুইটা দশ ডলারের নোট আমাকে দিল। নিতে আমার খারাপ লাগলেও কিছুই করার ছিল না। পিচ্চি দুটি এত সুন্দর ছিল যে মনে মনে ভাবতে লাগলাম কবে যে আমার এমন পিচ্চি থাকবে। যেহেতু আমার কাছে খুব বেশী টাকা ছিল না তাই বাহির থেকে রাতের খাবার কিছুই আনতে পারলাম না। তাই আতিক ভাইয়ের বাসায় রান্না করতে হল। লিভ খুব সাহায্য করছে।
বুজতে পারলাম লিভ আর আট দশটা ৬/৭ বছরের মেয়ের মত না। লিভ অনেক পরিণত, এটাও বুজলাম হয়ত জীবনের কিছু বাস্তবতা তাকে এত পরিণত করছে। যাইহোক তাদেরকে হোমওয়ার্ক করতে সাহায্য করলাম এবং রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম। লিভ নিজেই তার বিছানা ঠিক করে ঘুমাতে গেলো আর আমাকে বলল তুমিও গিয়ে ঘুমাও। লিভ এর এমন আচরণে আপনিও অবাক না হয়ে পারতেন না। সকালে তাদেরকে উঠিয়ে দিয়ে হালকা নাস্তা করিয়ে স্কুল বাসে উঠিয়ে দিলাম। আর আমিও ল্যাবে কালকের শেষ না করা কাজটা শেষ করলাম।
নিয়াজ(বাসার ছোট ভাই) কে ফোন দিয়ে বললাম আমার অ্যাকাউন্ট এ কিছু টাকা দেওয়ার জন্য। কারন গত কালকের মত আমার মেয়ের বয়সী(বিয়ে না করতে মেয়ে??) মেয়ের কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়ার ঘটনা যেন আবার না ঘটে। লিভ আর জন তাদের স্কুলে গিয়ে তাদেরকে নিয়ে আবার আসলাম হসপিটালে। দেখলাম আতিক ভাই বসে আছে জেন এর মাথার পাশেই। বাচ্চা দুটো তাদের মায়ের বুকে জাপিয়ে পরল। আমিও গিয়ে পাসের সোফায় বসলাম। তাদের সবার অশ্রু সজল চোখ দেখে কখন যে আমার চোখ ভিজে উঠল টের পেলাম না। আর আমার মায়ের কথাই মনে পড়ছে। না জানি আমার জন্য এমন কত অশ্রু পেলেন নীরবে। কিছুক্ষণ পর আতিক ভাই বলে উঠলেন উনি একটু বাহিরে যাবেন। তাই আমাকে এখানে অপেক্ষা করতে বললেন এবং জেন এর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলি। আতিক ভাই চলে যাওয়ার সময় পিচ্ছিদের কে হসপিটালের শিশু দের জন্য খেলার জায়গায় নিয়ে গেলেন।
আমি জেন এর পাশে গিয়ে বসলাম। জেন আমার হাত টা চেপে ধরল। জেন এর শরীর শুকানোর আর কোন জায়গা ছিল না। সাদা দবদবে তার স্কিন কালার। আমার হাত টা ধরেই আবার কেঁদে দিলেন মনে হচ্ছে যেন আমি উনার খুব কাছের একজন। তারপর বলতে শুরু করলেন, তোমরা বাঙ্গালী ছেলেরা হচ্ছ স্রষ্টার একটা উপহার মেয়ে এবং মা জাতির জন্য। আমরা অস্ট্রেলিয়ান মেয়েরা এমন একজন পুরুষ কেই খুঁজি যে আমার জন্য হাজার রাত জাগতে পারবে, যে আমাকে বাথ ট্যাবে নিজ হাতে গোসল করিয়ে দিবে। যে আমার সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলবে সুধু এই জন্য যে আমি যেন ভুলে থাকতে পারি আমি মৃত্যুর সাথে লড়াই করছি। তোমাদের মেয়ে প্রিয়জন রা(বউ,মা,বন) অনেক বেশী সুখী। দূর ভাগ্য হলেও সত্য আমি সে রকম একজন কে পেয়েছি কিন্তু তাকে স্বীকৃতি দিতে পারি নি। যার সাথে আমি একটু উষ্ণতার আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারি নি। জৈবিক আনন্দের তো কথাই আসে না।
দরজার নক শুনে বুজতে পারলাম আতিক ভাই। তাই জেন এর সাথে আর কথা বলা হল না। ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, নার্স সহ ছোট খাটো একটা মিছিল ঢুকল রুমে। বেশ কিছুক্ষণ তাদের জেন এর খোজ নিয়ে এবং নতুন ওষুধ দিয়ে বের হয়ে গেলেন। নার্স কে অনেক অনুরদ করে জেন এর মেডিক্যাল হিস্ট্রি টা অনেক ক্ষণ ধরে দেখলাম। বুজলাম যে উনি আসলে বোন ক্যান্সার এ আক্রান্ত। এবং অসুখ টা মোটামুটি তার উদ্দেশ্য সফল করতেই আর একটু বাকি আছে। আতিক ভাই কিংবা জেন কাউকেই বুজতে দিলাম না জেন এর এখন বেছে থাকাটা ভাগ্যের ব্যাপার, হয়ত তারা আগেই ব্যাপারটা বুজতে পারছে, তাই আমি এইসব উনাদের সাথে আর কথা বললাম না। ডাক্তার হয়ত তাদের কাউকেই এইসব বলেন নি কারণ এতে রোগী মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়বেন। কিংবা হয়ত তারা জানেন। যাইহোক আতিক ভাই জিগাইলেন কিরে কি বুজলি,আমি বললাম ধুর এটা কোন ব্যাপার এই না, নেক্সট সপ্তাহের মদ্দে উনি সেরে যাবেন। (চলবে )