-হ্যালো!
-হ্যালো তনু!??
-শুনছি বল।
-মোবাইল বন্ধ রাখছিলি কেন?
-ইচ্ছা হইছে তাই!
-ইচ্ছে হলেই সব কাজ করতে
হবে??
- হুঁ।
-আমার কথা একটুকুও ভাবলি
না??
-ভাবা ভাবির কি আছে??
- এখনও রাগ করে থাকবি আমার
উপর?
- আমি কারো উপর রেগে নেই।
-আর কখনো করব না এরকম!
- ও আচ্ছা।
-এভাবে ও আচ্ছা বলছিস কেন??
-মন চাইলো তাই।
-তনু তুই যখন আমার সাথে এমন
ব্যবহার করিস তখন আমার খুব
কষ্ট হয়। (কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে)
-ও আচ্ছা।
-আবারও?
-সরি।
-তুই সব সময় আমাকে সরি বলে
ছোট করিস।
-আর করব না তাহলে।
-এর আগেও কিন্তু তুই অনেকবার
এই কথাটা বলেছিস, কিন্তু তুই
তোর কথা রাখিস নি।
-ও আচ্ছা, তাই নাকি!!
-তনু এবার কিন্তু আমার খুব রাগ
হচ্ছে।
-তো আমি কি করব??
-দেখা করতে পারবি???
-না।
-কলেজে আসবি না?
-আজ সারাদিন ঘুমাবো বলে
ঠিক করেছি।
-ঠিক করা ছিল না এখন ঠিক
করেছিস!!?
-জানিনা।
-আচ্ছা ঠিক আছে রাখি।
..
এই বলেই মায়া কলটা রেখে
দিল।
মেয়েটিকে অনেক রাগিয়ে
দিয়েছি। এই রাগ সহজে যাবার
নয়। মায়াকে আমি যতই বলি না
কেন আজ কলেজে আসব না,
মায়া কিন্তু ঠিকই জানে আমি
কলজে যাব আর তার রাগ
ভাঙাবো। তবে আমি কলেজে
যাব ঠিকই কিন্তু রাগ ভাঙাতে
নয়, আরো রাগিয়ে দিতে! রেগে
গিয়ে চোখ লাল হয়ে যাওয়া
মায়াকে অনেকদিন দেখা হয়
না। আজ এই সুযোগ কাজে
লাগাতে হবে।
এখন আমাকে বিছানা ছেড়ে
উঠতে হবে।
..
রাস্তায় নেমে রিকশায় উঠার
জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময়
মনে হল একটা কাজ বাকি রয়ে
গেল! কাজটা হল একটা
বিস্কুটের প্যাঁকেট!! হ্যাঁ,
আমাকে সবার আগে একটা
বিস্কুটের প্যাঁকেট কিনতে
হবে। মায়া আমাকে বলেছিল,
ওর যখন কারো প্রতি খুব রাগ
হয় তখন নাকি ওর খুব বিস্কুট
খেতে ইচ্ছে করে। আস্ত দুই-
তিন প্যাকেট বিস্কুট তখন সে
একাই সাবার করে দিতে পারে।
মেয়েটির বিস্কুট খাওয়া
দেখেও আলাদা একটা তৃপ্তি
পাওয়া যায়। কি সুন্দর করেই না
কচমচ করে আগ্রহের সঙ্গে
বিস্কুট খায়। মাঝে মাঝে
দুষ্টুমি করে ওকে 'বিস্কুট
পাগলি' বলেও ডাকতাম।
..
মায়ার সাথে আমার পরিচয়
কলেজে উঠার পরপরই। বন্ধুত্বের
শুরুর দিকে মনে হয়েছিল
মেয়েটা খুব ভাল। কিন্তু পরে
দেখলাম যে না, মেয়েটাকে
যতটা ভাল মনে করেছিলাম সে
তারচেয়েও অনেক অনেক ভাল।
মায়া নামটা অবশ্য আমার
দেয়া। এই নামটা দেয়ার পিছনে
প্রধান কারণ হল তার চোখ। ওর
চোখ দুটি খুবি মায়াকারা।
(শ্যামলা বলেই হয়তো ওকে
আরো বেশি মায়াবী লাগে,
সাদা চামড়া হলে মনে হয় এতটা
মায়া লাগতো না।) দেখলেই
কেমন যেন প্রেমে পড়ে যেতে
ইচ্ছে করে। যে কেউ তার
চোখের দিকে তাকালে বলে
উঠবে,, 'একি!! এই মেয়ের চোখে
এত জল কেন! এখনিতো ফট করে
কেঁদে ফেলবে।'
বলা হবে, "অশ্রুকণ্যা"। সবাই
ওকে অশ্রুকণ্যা বলে ডাকবে।
যার চোখে সবসময় অশ্রু লেগে
থাকে, তাকে তো অশ্রুকণ্যা
বলেই ডাকার কথা...!!
..
রিকশা থেকে নেমে কলেজে
ঢুকলাম।
যা ভেবে আসছিলাম তাই হল।
মায়া কলেজের একটা কুনই
চুপচাপ বসে আছে। আমার প্রতি
তার এত বিশ্বাস দেখে মাঝে
মাঝে আমি খুবি অবাক হই।
আমাকে এতটা বিশ্বাস এর
আগে কখনো কেউ এভাবে করে
নি। একমাত্র মায়া ছাড়া।
..
আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।
দূর থেকে বুঝা যাচ্ছে না,
মেয়টি খুব সম্ভবত কাঁদছে! মনে
মনে ভাবলাম, আমি তাহলে
আজ সুযোগের সদ্য ব্যবহার
করতে পেরেছি। মায়ার
কান্নারত মুখটা আজ তাহলে
দেখতে পারব।
..
যা ভাবছিলাম তাই। মায়া
কাঁদছে!
হাউমাই করে কাঁন্না এমন টাইপ
না। শব্দহীন কাঁন্না। চোখ
দিয়ে পানি পড়ছে, চোখ লাল
হয়ে আছে, অথচ কোনো আওয়াজ
হচ্ছে না। মায়া ওর
কাঁন্নাটাকে বলতে গেলে
শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
কান্না প্রতিযোগিতা দিয়ে
যদি কোন প্রতিযোগিতা
থাকত, তাহলে মায়া ছাড়া আর
কেউ সেই প্রতিযোগিতায়
প্রথম হতো বলে আমার মনে হয়
না।
মায়া বোরকা পড়ে এসেছে,
কালো রঙের বোরকা। কালো
রঙের বোরকায় মায়াকে বেশ
মানিয়েছে। একটু পর পর
বোরকার হাতায় চোখ মোচ্ছে।
কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছে না।
চোখ থেকে অভিরাম জলধারা
বয়েই চলেছে। চোখে মনে হয়
কাজল দিয়ে এসেছিল, এখন সেই
কাজল আর কান্না মিশে একদম
হুলুস্থুল অবস্থা।
..
আমি কাছে এগিয়ে গিয়ে
বললাম,
-একটু লেট হয়ে গেছে, সরি।
- (চুপ করে রইল)
-একটা কাজে আটকে গেছিলাম।
- (এবারও চুপ করে রইল)
-কথা বলছ না কেন!?
মায়া আমার দিকে আগুন আগুন
চোখে তাকাচ্ছে। আমি ওর
চোখ দেখে হকচকিয়ে উঠি! কি
আশ্চর্য!! এই মেয়েটির চোখ
কথা বলছে! এই আগুন চোখের
চাহনিই বলে দিচ্ছে, 'ওই কুত্তা
এত দেরি করছস কেন? তুই জানস
তোর জন্য কখন থেকে এখানে
বসে বসে কাঁদতেছি। এখানে আর
বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না,
অন্য কোথাও চল'
আমি ওর আগুন চোখের চাহনি
সম্পূর্ণ আঘ্রায্য করে বললাম,
-আমার চকলেট কই? বের কর।
- (এবারও চুপ)
-ঐ গাধা কথা বলছ না কেন???!
(রেগে গিয়ে)
এবার মায়া নিরবতা ভঙ্গ করে
কথা বলল
-হ্যাঁ, আমি তো গাধাই। গাধা
না হলে কি এই গরমের মাঝে
রোদে বসে থাকতাম!
(কান্নারত গলায়)
-কেঁদে মুখটার একি অবস্থা
করেছিস! তোকে দেখলে
পাবলিক তো এখন পালাবে!
বলবে ভূত এসেছে, ভূত এসেছে।
না, না। ভুল বললাম। বলবে
পেত্নি এসেছে, পেত্নি
এসেছে!!
-খবরদার, আমাকে পেত্নি
বলবি না।
-কেন? পেত্নিকে পেত্নি বলব
না তো কি বলব? শাকচুন্নি?
উঁহু। এতে পেত্নিকে অপমান
করা হবে।
-কিছুই বলতে হবেনা। আর
প্লিজ এখন আমার সাথে
রসিকতা করিস না।
-ওকে, করব না।
..
(পাঁচ মিনিটের নিরবতা)
..
আমি প্রথম নিরবতা ভঙ্গ করে
বললাম,
-আমার চকলেট!
-কিসের চকলেট?
-আজ ১৯তারিখ না?
-তো?
-তো আর কি, আমার চকলেট
দিবি।
- (মায়া চুপ করে রইল)
-আমি জানি তুই চকলেট
এনেছিলি, কিন্তু কান্না করার
সময় হাতের কাছে বিস্কিট না
পেয়ে চকলেট- টা তুই খেয়ে
ফেলেছিস। কি, তাইতো??
-হুঁ তাই। (মায়ার মুখে এবার একটু
হালকা হাসির ঝলক দেখা গেল)
-হুমম।
মায়া আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস
করল,
-কিন্তু তুই জানলি কেমনে?
-আমি জানব না তো কে
জানবে!? আমি না তোর বেস্ট
ফ্রেন্ড।
মায়া এবার মুখ টিপে হাঁসল।
আমিও এই সুযোগটা হাত ছাড়া
করলাম না।
বিস্কুটের প্যাকেটটা এগিয়ে
দিলাম ওর দিকে। মায়া বিস্কুট
প্যাকেট দেখে চট করে আমার
হাত থেকে নিয়ে গেল। আমিও
প্রস্তুতি নিচ্ছি মায়ার
বিস্কিট খাওয়া দেখব বলে।
এমন সময় মায়া গম্ভীর হয়ে
বলে উঠল,
-তোর জন্য আনা চকলেট টা
আমি খাই নি।
-কি!?
-হুঁ।
-তাহলে যে বললি খেয়ে
ফেলসিলি!!
-তোকে জিতিয়ে দিতে
চাইছি।
মায়া সত্যি আমাকে অবাক
করে দিয়ে চকলেটের প্যাঁকটা
বের করল!
-হা করে আছিস কেন? (মায়া)
-এমনি।
-এমনিমানে?
-না মানে চকলেট দেখে।
-ও,,
-ভালই করেছিস চকলেটটা না
খেয়ে। এখন আমি তোর আনা
চকলেট খাই আর তুই আমার
আনা বিস্কিট খা। চকলেটে
বিস্কুটে কাঁটাকাঁটি!!
-হিহিহিহি
মায়া হেঁসে ফেলল। ঠিক একটু
আগেই মেয়েটি খুব কাঁদছিল।
কিন্তু এখন ওকে দেখে কে
বলবে এই মেয়ে একটু আগেই বসে
বসে কাঁদছিল!!
মায়ার সাথে ঐ দিন বেশ মজা
করেছিলাম। আমার একটু
রসিকতাতেই মেয়েটি
খিলখিল করে হেঁসে ফেলে।
ঠিক ঐ মুহূর্তে তাকে পৃথিবীর
শ্রেষ্ঠ সুখি বলে মনে হচ্ছিল।..
এভাবেই চলতে থাকে বন্ধুত্ব।
চলছে, চলবে।...
ভালো আছে মায়া-তনুরা।
ভালো থাকুক পৃথিবীর
হাজারো মায়া, তনুরা।।
------------------------------
----------
লিখা:- মোঃ মাহবুবুর রহমান
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১৩