somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলছবি - প্রথম পর্ব

৩০ শে মে, ২০১২ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ডেস্কের সামনে বসে আছে শায়লা।একটু আগে কম্পিউটারে রিজাইন লেটার লেখা শেষ করেছে। এখন বানান ভুলগুলো দেখছে। প্রিন্ট দিয়েই এমডির রুমে জমা দিয়ে আসবে। শায়লা মনে মনে অবশ্য একবার ভাবলো কিছু বানান ভুল রেখে দিতে। তাতে এমডিকে কিছুটা বিরক্ত করা যাবে। সাধারণ শব্দের ভুল বানান দেখলে এমডি খুব বিরক্ত হয়। তবে রাগের মাথায় চাকরি ছেড়ে দেওয়া উচিত হচ্ছে কি না বুঝতে পারছে না শায়লা। সে কাজ করে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানীতে। রাজধানীর অদূরে পানির ওপর ওদের রিয়েল এস্টেট কোম্পানীটির বেশ কিছু প্রজেক্ট রয়েছে। কোম্পানীর এমডির পিএস হিসেবে কাজ করছে সে। এমডি বিবাহিত, আট নয় বছরের কন্যাসন্তানও রয়েছে। এজন্যই কিছুটা ভরসা করে চাকরিতে ঢুকেছিল। চাকরির প্রথম দুয়েক মাস খুব ভালো চলে। অফিসের সবাই মোটামুটি তাকে সহযোগিতা করে। হয়তো কোম্পানীর সর্বোচ্চ কর্মকর্তার পিএস বলেই কেউ কেউ বাড়তি সমীহও করে। সমস্যার শুরু হলে চাকরিতে জয়েন করার কয়েক মাস পর। শায়লার এমডি স্যার কারণে অকারণে রুমে ডেকে নিয়ে বসিয়ে রাখা। এটা সেটা জিজ্ঞেস করে। বেশিরভাগ সময়ই ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে। বিয়ে করবে কবে, প্রেম আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়। একদিন যখন কথায় কথায় এমডি জিজ্ঞেস করেছিল, কারও সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক হয়েছে কি-না তখন খুব বিরক্ত হয়েছিল শায়লা। মাথা নিচু করে কিছু বলেনি শায়লা। এমডি তখন উল্টো শুনিয়ে দিল, তোমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা যে কেনো সেক্স ট্যাবুতে আক্রান্ত বুঝি না। বিয়ের আগ পর্যন্ত ভার্জিন থাকতে হবে এমন নিয়ম কে করে দিয়েছে! এসব আলোচনা শুনতে শুনতে শায়লার বিরক্তি বাড়তে থাকে।হাতের কিছু কাজ বাকি থাকার অযুহাত দিয়ে এমডির রুম থেকে বেরিয়ে আসে সে।
এভাবে মাঝেমধ্যেই রুমে ডেকে নিয়ে আজগুবি গল্প বলা শুরু করলো এমডি। শায়লা প্রায়ইভাবে চাকরিটা ছেড়ে দিবে। কিন্তু নতুন চাকরি কোথায় পাবে তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় থেকে চাকরি ছাড়া হয় না। কিন্তু সংকট ঘনিভূত হলো যখন এমডি ডেকে নিয়ে শহরের বাইরে অফিস ট্যুরে যেতে বললো। এক দুপুরে এমডি বললো-
আমাকে অফিসের কাজে শহরের বাইরে যেতে হবে। তোমাকেও সঙ্গে যেতে হবে।রাতে সেখানে থাকতে হবে। সমস্যা নাই অফিস এর জন্য তোমাকে আলাদা পে করবে।
কিন্তু স্যার বাসা থেকে তো পারমিশন দিবে না। শায়লার তাৎক্ষণিক জবাব।
পারমিশন যোগাড় করে ফেলো।এমন চান্স আর পাবে নাকি? যদি আমি সন্তুষ্ট থাকি তাহলে সেখান থেকে ফিরে এসেই তোমার পদোন্নতি হয়ে যাবে।
ইঙ্গিতপূর্ণ এই কথায় মনে মনে খুব বিরক্ত হলো শায়লা। এই লোকটার সংসার আছে, এক মেয়ে আছে, তারপরেও শায়লা বিজনেস ট্যুরের নামে শায়লাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চায়। কিভাবে এই ট্যুর বাতিল করা যায় তা ভেবে কূল পেল না শায়লা।
পরদিন অফিসে কাজের অযুহাতে সন্ধ্যা পর্যন্ত শায়লাকে আটকে রাখলো এমডি। ততক্ষণে প্রায় সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী দিনের কাজ শেষে অফিস ছাড়া শেষ করেছেন। তখনই রুমে ঢেকে নিয়ে অফিস ট্যুরে যাওয়ার আপডেট জানতে চাইলো এমডি। শায়লার না সূচক জবাবে রেগে গেল এমডি। বলেই ফেললো, ‘তোমার মতো ব্যাকড্যাটেড একটা মেয়েকে পিএস নিয়োগ দেওয়াই ভুল হয়েছে।’ তারপর কিছুক্ষণের নিরবতা। হঠাৎ শায়লা খেয়াল করলো এমডি স্যার তার দিকে টানা চেয়ে আছে। চোখে চোখ পড়তেই হতভম্ব হয়ে বললো-তোমার গাল লাল হয়ে আছে কেন? দেখি কী হয়েছে। বলেই এগিয়ে গিয়ে শায়লাকে স্পর্শ করে ফেললো। শায়লা সরে যেতে চাইলো। তখন অসভ্যের মতো এমডি বললো-গালে হাত দেওয়ার তোমার কী ক্ষতি হলো যে এভাবে পিছিয়ে গেলে। না-কি তোমার ভার্জিনিটি নষ্ট হয়ে গেল? বলেই হা হা করে হাসতে লাগলো এমডি।
শায়লা কোনোমতন বাইরে বের হয়ে আসলো। এবার আর কান্না আটকে রাখতে পারল না। অনেকক্ষণ পানি দিয়ে চোখমুখ ধুয়ে ফেললো। চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্তটা তখনই নিল। চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মনে মনে নিজের অদৃষ্টকে গালাগালি করলো কিছুক্ষণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় সে হয়েছিল ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড। একটু চেষ্টা করলেই ফার্স্ট পজিশনটা পেতে পারতো অবশ্য তার দোষেই যে সেকেন্ড পজিশন পেয়েছে তাও নয়। থার্ড ইয়ার পর্যন্ত ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট পজিশন ছিল তার দখলে। মার্কস এর ব্যবধান ছিল ৭। ফোর্থ ইয়ারে গিয়ে হঠাৎ করেই অন্য ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড মেয়েটি প্রথম হয়ে হায়। পরে মার্কশীটে দেখা গেল, এক বিষয়ে তার থেকে ১৫ নাম্বার বেশি পেয়েছে ছাত্রীটি। মেয়েটি আবার সেই স্যারের খুব পছন্দের ছাত্রী। কারণে অকারণে স্যারের রুমে যাওয়া নিয়ে ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা গুঞ্জনও ছিল। হতাশ হয়ে পড়ার মাস্টার্সের রেজাল্টও ভালো হয়নি।

হুট করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিপদে পড়ে গেল শায়লা। ছোটবোন লায়লা ইউনিভার্সিটিরি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। মা, ছোটবোন নিয়ে ছোট সংসার। বাবা মারা গেছে যখন শায়লা ক্লাস সেভেনের পড়ে। তারপর থেকে বাবার রেখে যাওয়া টাকা পয়সা খরচ করে আসছে তার মা। নিজের চেষ্টাও ছিল। দুই মেয়েকে শিক্ষিত করে তুলতে চেষ্টার অন্ত ছিল শায়লার মা রাফেয়া খানমের। শায়লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পরই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দুই মাস বিছানায় ছিলেন শায়লার মা। তখন হাসপাতাল ও ঔষুধের খরচ যোগাতে গিয়ে বাবার রেখে যাওয়া প্রায় সব অর্থই খরচ করে ফেলতে হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১২ রাত ১২:১২
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×