somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইন্টারভিউ

২৮ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

---এলান টিউরিং এর নাম শুনেছেন? সে কি জন্য বিখ্যাত জানেন?

প্রশ্ন শুনে মুহিতের মাথা আউলে গেল। বায়িং হাইজের সাথে টিউরিং এর কি সম্পর্ক সে বুঝল না। অনেক ভাবছিল হয়ত এই ইন্টারভিউতে চাকরী হয়ে যাবে। ইউটিউবে টাই বাধার আট মিনিটের একটা ভিডিও দেখে সে টাই বাধা শিখে ইন্টারভিউ বোর্ডে গেল। অবশ্য টাই বাধতে তার সময় লাগল আরও অনেক বেশী। অনেক কাহিনী করে টাই বাধার পর দেখতে পেল টাইয়ের নিচের পাটি উপরেরটা থেকে লম্বা! আবার ভিডিও দেখে শুরু করল। অনেক কাহিনী করে কোন রকমে টাই পড়ে এখানে এসে টিউরিং এর ভেতরে আটকে গেল!

---এত বড় একটা ম্যাথমেটিশিয়ান, কত জটিল জটিল কোড ব্রেক করল সে কিনা মরল সুইসাইড করে? কি দুঃখজনক!

মুহিত মনে মনে বলল, শালা গরু। বায়িং হাউজের মধ্যে ম্যাথমেটিক্স নিয়ে আসছিস। তুই সুইসাইড করলে ভাল হত। বলদের বলদ। চাকরী তো দিয়ে রাখছিস আরেকজনকে। শুধু শুধুই ইন্টারভিউ নিচ্ছিস পাবলিকদের। এই যুগে একটা দারোয়ানের চাকরিও সুপারিশ ছাড়া হয় না আর তুই!

--- ইয়াং ম্যান কি ভাবছেন? সাধারণ নলেজ বাড়াতে হবে।

এবারে মুহিত চোখ তুলে তাকাল। প্রশ্নকর্তা অতীব সুন্দরী তরুণী। ঠিক প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার মত। তবে চশমা চোখের সাথে মানায় নি। চশমা থাকায় আতেল আতেল ভাব প্রকট হয়েছে। চুল খোপায় বাধা। চুল গুলো খুলে দিলে বেশি ভাল লাগত। ইশশ, এরকম একটা মেয়ে যদি তার বউ হত! অবশ্য মহিলার স্বভাব খুবই কঠিন মনে হচ্ছে। বিয়ে হলে বছরে ৩৬৩ দিনই ঝগড়া লেগে থাকবে। আর বাকি একদিন হবে কঠিন মারামারি! ভাবতে ভাবতে সম্বিত ফিরে আসল গরুটার আরেক কুয়েশ্চেনে, “আপনি চাকরী করতে আসলেন কেন? চাকরীটা কি খুব দরকার?” মুহিতের হঠাত প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সে গম্ভীর স্বরে বলল, জ্বি না। বলেই একটা সালাম দিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে বেরিয়ে আসল।



এই মুহুর্তে সে আছে একটি চা দোকানের সামনে। পকেটে আছে বিশ টাকার একটা নোট। চায়ের সাথে একটা গোল্ডলিফ ধরাল সে। জিনিস পত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। ছয় টাকার গোল্ডলিফ হয়ে গেছে আট টাকা। সাথে আছে ছয় টাকার একটা স্পেশাল চা! চায়ের স্পেশালিটি মনে হচ্ছে শরবত। ভুলে মনে হয় চার পাঁচ চামচ চিনি ঢালা হয়েছে কাপে! প্রচন্ড ঝামেলার মধ্যে থাকলে মাথা নানান উদ্ভট জিনিস নিয়ে চিন্তা করে। মুহিতের এই মূহুর্তের চিন্তা হল, চিনির দাম কি সস্তা যাচ্ছে? তা না হলে এত চিনি নিশ্চয়ই ঢালার কথা না। এদিকে এক বুড়া মত লোক চায়ের দোকানে ঝড় তুলছে। সবাই মগ্ন হয়ে আলোচনা শুনছে। হঠাত সে একটা মেয়েকে দেখিয়ে বলল, “দেখেন ভাই, মাইয়ার কান্ড কারখানা দেখেন। কি পাতলা শাড়ি পড়ছে। হি হি। ব্লাউজেরও হাতা নাই। আরে বেটি শাড়ি পড়নের কি দরকার?” আশে পাশের মানুষজনও সায় দিল। এই মুহুর্তে মুহিতের মনে হল পানের রসে লাল হয়ে যাওয়া দাঁতের বুড়োটাকে একটা পারফেক্ট খাটাশের মত লাগছে। মুহিত আরেকটা গোল্ডলিফ নেওয়ার চিন্তা করতেই মনে হল ছয় টাকায় তো আর লিফ হয় না!



রাস্তায় ভয়ানক রোদ উঠেছে আজকে। রিকশায় উঠার টাকা নেই। বাসা থেকে টাকা নেওয়া বেকার মানুষের সাজে না। এদিকে বাবু ভাই ফোন দিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। ছাগলটার কাছে যেতে মনে চায় না। কদিন আগে মুহিত গিয়েছিল। পুরাই কঠিন অবস্থা। ঘিঞ্জি ঘরে আসর মত বসিয়েছে। মুহিত ঢুকতেই বলল, “আয় ছেড়া! কি সব চাকরী বাকরি নিয়ে টেনশনের মধ্যে আছিস। এইসব জিনিস পাতি বাদ দে।” এসময় পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল, বস আপনার জিনিস রেডি। রিকশা দিয়ে এক ছেলে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল। বাইক টানার সময় হাত থেকে টান দিয়ে নিয়ে নিয়েছি। দামী মোবাইল। বেচে দিয়ে দুই লিটার কেরু আর দুইটা ব্ল্যাক লেবেল এনেছি।

বাবু ভাই বলেই যাচ্ছে, মুহিত টেস্ট করে দেখতে পারিস। দর্শনার জিনিস। কেরুর উপর কিছু নাই। এই যুগের পোলাপানের করুণ দশা। যেসব পোলাপান ঘুমের অষুধ খেয়ে নেশা করে তাদের দিয়ে আর কি হবে? ভেরী সেড।

একবার মুহিত ভাবল বলবে যে, আপনি ওই কেরুর পানি ফেলে দিন। বমি আসছে গন্ধে। তার চেয়ে একটা কাজ করেন। টাটকা ড্রেনের পানিতে বোতলটাকে চুবান। তারপর আরাম করে খান।



এসব কথা ভাবতেই মুহিতের মনে হল ওই ছাগলের ফোন ধরে লাভ নেই। মুহিত হাটতেই আছে। হাঁটতে হাঁটতে বাংলামোটর হয়ে শাহবাগ চলে আসল। বিকেলের সোহরোওয়ার্দি উদ্যান পুরোই প্রেম কানন। হু হু করে মুহিতের মনে হল নীলার কথা। প্রথম মেয়ে যার হাত ধরা। কতগুলো সময় ওরা এক সাথে কাটিয়েছে। শুধু হুমায়ুনের বই পড়ত দেখেই নীলার সাথে পরিচয়। কি অদ্ভুত ভাবেই না পরিচয়। কোন একদিন নীলাকে মুহিত বলেছিল নীল রঙ তার খুব প্রিয়। সেদিনের পর থেকে যতবারই নীলার দেখা হয়েছিল বারবার নীলে সেজেছিল নীলা। এক সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা রিকশার হুড ফেলে দিয়ে ছুটে চলা, রেস্টুরেন্টে নীলার খাইয়ে দেয়া আরও কত কি। শেষ পর্যন্ত আর তাদের মিল হয় নি। নীলা খুব সুখে আছে মুহিতকে ছাড়া। চোখ বন্ধ করে মুহিত ভাবে, আচ্ছা আমি কি সুখী? মনে মনেই উত্তর খুজে পায়, না মুহিত সুখী না। তার কোন চাকরী নেই। বাসায় পাঠানোর মত টাকা নেই। এই যুগের স্মার্ট ছেলেদের মত স্মার্টও নয়। স্মার্ট হলে তো নীলা তাকে ফেলে চলে যেত না! মাঝে মাঝে মুহিতের মনে হয় হুমায়ুনের বই থেকে উঠে আসা কোন চরিত্র। ঠিক আতাহারের মত। মুহিত কবি উপন্যাসের আতাহার হতে চায় নি। মাঝে মাঝে মুহিতের মনে হয় আতাহার চরিত্রটাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে পারলে খারাপ হত না। সবচেয়ে ভাল হত র‍্যাক ভর্তি হুমায়ুনের বই পুড়িয়ে ফেললে। তাহলে তো আর নীলার সাথে পরিচয়ই হত না! কাউকে ভাল না বাসলে কিছুই যায় আসে না কিন্তু মন থেকে প্রচন্ড ভালবেসে তা ফিরিয়ে দেওয়ার মত কষ্টের কিছু বোধ হয় আর নেই।




মুহিত আর ভাবতে পারে না। সে উঠে দাঁড়ায়। তাকে ইন্টারভিউ দিতে হবে। বাসায় টাকা পাঠাতে হবে। এইসব ছাইপাশ ভাবলে তার চলবে না। খুব ভাল একটা ইন্টারভিউ দিতে হবে। যে রকম ইন্টারভিউ দিলে চাকরী হয় ঠিক সে রকম...
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৪৬
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×