গেল ১৪ মার্চ ছিল বিশ্ব কিডনি দিবস। দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে ভুগছে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করা হলে কিডনি বিকল ধীরগতি করা বা রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
কিডনি রোগ কি?
কিডনি যখন নিজস্ব কোনো রোগে আক্রান্ত হয়,অথবা অন্য কোনো রোগে কিডনি আক্রান্ত হয়,যার ফলে কিডনির কার্যকরতা তিন মাস বা ততধিক সময় পর্যন্ত লোপ পেয়ে থাকে,তখন তাকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বলা হয়।ইউনাইটেড স্টেটস 'ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের (NKF) অনুযায়ী কিডনি রোগ হল সময়ের সাথে সাথে কিডনি ফাংশন ধীরে ধীরে ক্ষয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে যদি কিডনি রোগ ছাড়াও কিডনির কার্যকরতা লোপ পায়,তাহলেও তাকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বলা যেতে পারে। যেমন, ক্রনিক নেফ্রাইটিস কিডনির ফিল্টারকে আক্রমণ করে ক্রমান্বয়ে কিডনির কার্যকরতা কমিয়ে ফেলতে পারে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হতে পারে। ঠিক তেমনি ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগ না হওয়া সত্ত্বেও কিডনির ফিল্টার/ছাঁকনি ধ্বংস করতে পারে। আবার কারও যদি জন্মগতভাবে কিডনির কার্যকরতা কম থাকে,অথবা কিডনির আকার ছোট বা বেশি বড় থাকে,তাহলেও দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হতে পারে।
ক্রনিক কিডনি রোগের কারণ দুটি হলো ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ। রোগ সৃষ্টির ডাটা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,তিন ভাগের দুই ভাগ এ জন্য দায়ী। ডায়াবেটিস হলে রক্তে সুগার অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত করে শরীরের বহু অর্গান-কিডনি,হৃদযন্ত্র,সেই সঙ্গে রক্তনালি,স্নায়ুতন্ত্র ও চোখ। অন্যদিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের ফলে রক্তনালিকার দেয়ালে রক্তের চাপ পড়ে এবং তা প্রতিনিয়ত চলতে থাকে। ফলে অনিয়ন্ত্রিত বা দুর্বলভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকলে তা হার্টঅ্যাটাক এবং ক্রনিক কিডনি ডিজিজ সৃষ্টির প্রধানতম কারণ।
কিডনি কিভাবে মানুষকে সুস্থ রাখে?
মানুষ জন্মগ্রহণ করার ছয় সপ্তাহের মধ্যেই কিডনির ছাঁকনি বা ফিল্টার মেমব্রেন পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায়। অর্থাৎ কিডনি পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিটি কিডনিতে প্রায় ১০-১২ লাখ ছাঁকনি রয়েছে এবং প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১৭০ লিটার রক্ত পরিশোধন করে। এই পরিশোধিত রক্তের মধ্যে এক থেকে তিন লিটার শরীরের বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া হয়। সুতরাং কোনো কারণে যদি এ ধরনের ফিল্টার বাধাপ্রাপ্ত হয়,তখন দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হতে পারে।কিডনি শরীর থেকে দূষিত পদার্থ ছেঁকে বের করে দেয়।
এ ছাড়া আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যেমন-
• শরীরের পানি ও রক্তের অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ যেমন সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখে।
• শরীরের দূষিত পদার্থ ও ড্রাগ পরিত্যাগে সহায়তা করে।
• শরীরের প্রয়োজনীয় হরমোন পেতে সহায়তা করে।
• রক্তের pH নিয়ন্ত্রন করে।
কিডনি রোগের লক্ষনসমূহ
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের সবচেয়ে অসুবিধা হলো,বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগীর কোনো উপসর্গ হয় না। ফলে বছরের পর বছর এরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় না। যখন তাদের উপসর্গ দেখা দেয়,তখন তাদের কিডনির কার্যকরতা ৭৫ শতাংশ লোপ পায়। ফলে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করে পরিপূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। কিডনি যখন ক্রমান্বয়ে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে,তখন তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে যদি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ নিরূপণ করা যায়,তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগগুলোকে আংশিক বা পরিপূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব হতো। সুতরাং কেউ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছে কি না,এ জন্য জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি।
অধিকাংশ রোগীর রোগ সিভিয়ার বা মারাত্মক পর্যায়ে না পৌঁছালে উল্লেখযোগ্য লক্ষণ প্রকাশিত হতে দেখা যায় না। তবুও যে বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন তা হলো নিম্নরূপ-
• ক্লান্তি ও বেশি দুর্বলতা অনুভব করা।
• মনোযোগে বিঘ্নতা।
• ক্ষুধা কম লাগা।
• ঘুমের বিঘ্নতা।
• রাতে মাসলে ক্র্যাম্পিং হওয়া।
• পায়ের পাতা ও গোড়া ঘামা।
• চোখের নিচের পাতায় পানি জমা বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা যায়।
• ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া,বিশেষ করে রাতে যেকোনো বয়সে যে কেউ ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে কারো কারো ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি রয়েছে।
• যদি কারো ডায়াবেটিস থাকে।
• যদি কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকে।
• যদি কারো পারিবারিক ক্রনিক কিডনি রোগের ইতিহাস থাকে।
• বংশগত রোগ যেমন পলিসিস্টিক কিডনি রোগ,যা কিডনির ভেতরে সিস্ট তৈরি হয়ে ভেতরের দেয়ালের টিস্যুগুলো নষ্ট করে।
• কিডনি স্টোন, টিউমার অথবা পুরুষের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধিজনিত বিভিন্ন বাধা।
• লিউপাস এবং এ জাতীয় রোগ শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
• ঘন ঘন ইউরিনারি ইনফেকশন।
দরকার নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা
শুধু সচেতনতার মাধ্যমেই একজন রোগীর কিডনিতে সমস্যা আছে কি না, তা জানা সম্ভব। যেমন, যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক লোকের উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, তাঁর রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করা, প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নির্গত হচ্ছে কি না, তা জানা এবং ডায়াবেটিস আছে কি না, তা নিরূপণ করা প্রয়োজন। যদি কারও ডায়াবেটিস থাকে, তাকে অন্তত বছরে একবার প্রস্রাবে অ্যালবুমিন এবং মাইক্রো অ্যালবুমিন যাচ্ছে কি না এবং রক্তে ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিক কি না, তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
প্রোটিনের মাত্রা দেখে কিডনির রোগ শনাক্ত করা যেতে পারে
প্রস্রাবের মধ্যে কী পরিমাণ প্রোটিন আছে তা দেখে একজন চিকিৎসক সহজেই বুঝতে পারবেন রোগীর কিডনির অবস্থা এখন কেমন৷ এমনকি এই প্রোটিনের পরিমাণ দেখে কিডনির সমস্যা থেকেও তাকে রক্ষা করা যেতে পারে৷ সম্প্রতি একটি গবেষণায় একথাই বলা হয়েছে৷
আমেরিকান সোসাইটি অফ নেফ্রোলজি'র একটি গবেষণাপত্রে গবেষকরা বলেছেন,যেসব রোগীর মূত্রে প্রোটিন অ্যালবুমিনুরিয়ার পরিমাণ অনেক বেশি আছে তাদের কিডনির রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ৫ গুণ বেড়ে যায়৷
আমেরিকার বল্টিমোর শহরের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক দল জানান, পরীক্ষার এই পদ্ধতি সহজ৷ খরচও কম৷ এবং এই পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে আগেভাগেই৷
দেখা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে শতকরা ১.৬ জনই এসেছেন কিডনির সমস্যার চিকিৎসা নিতে৷ কেউ যদি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে আসেন ও তাঁর শরীরে অন্য কোন অসুবিধা না থাকে তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব৷ কিন্তু দেখা যায়, বেশিরভাগ রোগী এমন পর্যায়ে আসেন যখন কিডনির সাঙ্ঘাতিক রকমের ক্ষতি হয়ে গেছে৷ রক্ত থেকে দূষিত জিনিসগুলো ফিল্টার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে কিডনি৷ফলে তখন ডায়ালিসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন করা ছাড়া উপায় থাকেনা৷
ডা.মরগ্যান গ্র্যামস এ গবেষণা দলে কাজ করেছেন৷ তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা ১১ হাজার ২০০ রোগীর ওপর পরীক্ষা চালান৷ তাদের মেডিকেল রেকর্ডের ওপর চোখ রাখেন তাঁরা৷ রোগীদের আলবুমিনুরিয়া প্রোটিন পরীক্ষা ছিলো রোগীদের চিকিৎসার একটা অংশ৷ গবেষকরা দেখতে পান যে,স্বল্প মাত্রার আলবুমিনুরিয়া প্রোটিন পাওয়া গেছে যাদের প্রস্রাবে,তাদেরও কিডনির বড় রকমের ক্ষতি হতে পারে৷
কিছু সমীক্ষা
বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে,যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি অকেজো রোগে ভোগে, তাদের হূৎপিণ্ডে রোগের আশঙ্কা ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি অকেজো রোগীরা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে,২৫ শতাংশ হার্ট স্ট্রোকে এবং ২০ শতাংশ হার্ট ফেইলিওর রোগে ভুগে থাকে। ৭৫ শতাংশের হূৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ বড় হয়ে যায় এবং ছয় শতাংশের ক্ষেত্রে ব্রেইন স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। আর ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগের কারণে উপরিউক্ত হার আরও বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া কিডনি অকেজো রোগীরা সর্বদাই রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকে,যা পরবর্তীকালে হূৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠের আকার বড় করে হার্ট ফেইলিওর করতে পারে। এ ছাড়া এদের রক্তে চর্বিতে ভারসাম্য থাকে না এবং ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব হয়।
বাংলাদেশে কিডনি ফাউন্ডেশন ও বিএসএমএমইউয়ের উদ্যোগে সাভারের চাকুলিয়া গ্রামে তিন বছর ধরে কতজনের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ রয়েছে,তার ওপর গবেষণা চালানো হচ্ছে। তিন হাজার প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ওপর চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে,প্রায় ১৮ শতাংশ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ১৩ শতাংশ রোগীর রক্তে ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিকের চেয়ে ওপরে অর্থাতৎ তাদের কিডনির কার্যকরতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৩ সালে ১৫ হাজার ৬২৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ওপর সমীক্ষায় দেখা যায়,এদের ১১ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। অস্ট্রেলিয়ায় এই সংখ্যা ১৬ শতাংশ এবং আইসল্যান্ডে ১০ শতাংশ। এই সমীক্ষা থেকে এটা প্রতীয়মান হয়,বর্তমানে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ লোক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছে।
বিভিন্ন হাসপাতালের পরিসংখ্যান থেকে এটা ধারণা করা হয়,বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার রোগী কিডনি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে মারা যায়। এই ঊর্ধ্বহারে কিডনি অকেজো হওয়ার কারণ হিসেবে নেফ্রাইটিস,ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপকেই দায়ী করা হয়ে থাকে।
কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়
এটা পরীক্ষিত যে, এসিই-ইনহ্যাবিটরস এবং এআরবিজাতীয় উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কিডনি রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। ঠিক তেমনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা মাইক্রো-অ্যালবুমিন ধরা পড়লে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম,ফাস্টফুড না খাওয়া,চর্বিজাতীয় খাবারের প্রতি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা গেলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে চর্বি নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ খেলে,ধূমপান না করলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায় এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত হূদরোগ থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।
কিডনি রোগীদের সচেতন করে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্তকরণের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে লাখ লাখ কিডনি রোগীর কিডনি সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়া থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি কিডনি অকেজো রোগীরা ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনের বিশাল খরচ থেকে মুক্তি পাবে।
১. বিনা কারণে ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়া। বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম, আইবু প্রুফেন ইত্যাদি (বাজারে বহু নামে এ জাতীয় ওষুধ পাওয়া যায়) চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত গ্রহণ করলে কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
২. ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে কিডনির ওপর। ফলে কিডনি আস্তে আস্তে বিকল হতে থাকে। তাই ওষুধ গ্রহণ বা স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলার মাধ্যমে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে সহজেই কিডনি রোগ থেকে বাঁচা যায়।
৩. শিশুদের গলাব্যথা, খোঁশ-পাচড়া বা স্ক্যাবিস হলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এসব রোগের জটিলতা হিসেবে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৪. পরিমিত পরিমাণে পানি গ্রহণ করুন। কিছুতেই শরীরে পানি কম পড়তে দেয়া যাবে না। আবার বেশি বেশি পানি খেলে কিডনি ভালো থাকবে এমন কথা ঠিক নয়। স্বাভাবিক পরিবেশে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক দেড় থেকে দুই লিটার পানি প্রয়োজন। গ্লাসের হিসাবে প্রতিদিন ছয় থেকে আট গ্লাস পানি। পরিমিত পানি গ্রহণ করে যে কেউ কিডনিকে সুস্থ রাখতে পারে। শীতকালে পানির প্রয়োজন কমে গেলেও গ্রীষ্মে অধিক পরিমাণে পানি গ্রহণ করতে হয়। শরীরের প্রয়োজনমতো পানি। তবে অতিরিক্ত পানি পান করা শরীরের জন্য ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে।
৫. ডায়রিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। কেননা সঠিকভাবে ডায়রিয়ার চিকিৎসা না হলে হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে।
৬. পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিডনি টেস্ট করা উচিত।
৭. ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশন থাকলে নিয়মিত টেস্ট করে দেখা প্রয়োজন কিডনি কোনো জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছে কিনা।
৮. হাত-পা ফুলে গেলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কেননা এসব সমস্যা কিডনি রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে।
৯. ধূমপান পরিহার করুন। ধূমপানের কারণে দেহের অন্যান্য অঙ্গের মতো কিডনিও আক্রান্ত হতে পারে।
১০. কোলেস্টেরল কিডনি রোগের উপর কতখানি প্রভাব ফেলে তা জানা যায় নি। অনেকে কিডনি রোগের ভয়ে কোলেস্টেরল আছে ভেবে সয়াবিন তেল খান না। উল্লেখ্য যে কোলেস্টেরল একটি প্রাণীজ উৎস পদার্থ। উদ্ভিজ উৎসে (সয়াবিন তেল) কখনই কোনপ্রকার কোলেস্টেরল থাকে না। সুতরাং, বিজ্ঞাপন দেখে উত্তেজিত হবার কোন কারন নেই। কোলেস্টেরল নিয়ে অন্য আরেকদিন লিখবো।
রেফারেন্সঃ
১। http://www.monojagot.ws
২। http://www.sasthabangla.com
৩। http://healthz.info
৪। http://www.healthecare.us
৫। http://www.kidneygny.org/
৬। Textbook of Medical Physiology by Guyton & Hall- 9th edition
৭। Review of Medical Physiology by W. E. Ganone