নদী নিয়ে গবেষণা, কাজকারবার, আমার সেক্টর না। কিন্তু কোথাও শুকনা নদী দেখলেই খারাপ লাগে। (বিশেষ পানিপ্রীতি থাকার কারণে সম্ভবত)। গত প্রায় দুবছর যাবত চাকরি সূত্রে প্রতিদিন কর্ণফুলী নদী পেরোই। আর বাড়ি নদীর ওপারে হবার কারণে তো ছোটবেলা থেকেই মাঝেমধ্যে। বড়, পানিভর্তি একটা জিনিস... বড় ভালো লাগে। অনেক বছর ধরে এ নদীতে একটা লোহার সেতু ছিল। সেটা যখন প্রায় অকেজো, তখন দরকার পড়ল নতুন একটা সেতুর। গত জোট সরকারের আমলে নতুন সেতুটা কি ধরণের হবে সে বিষয়ে অনেকে অনেক কিছু লিখলেন, বললেন। দু ধরণের সেতুর কথা এলো। ঝুলন্ত আর বৈঠন্ত, মানে স্প্যান বসানো। বিস্তারিত পড়ে তখন থেকে বুঝলাম সেতুটা ঝুলন্ত না হলে নদীর কপালটাই ঝুলে যাবে। সবাই বিপক্ষে বলার পরও ঝুলন্ত সেতুর বদলে স্প্যান সেতুই হল। ফলে যা ভাবা তাই ঘটলো। বিশাল বিশাল স্প্যান বসানো সেতুতে শুকিয়ে অর্ধেক এখন নদীটা। সেতুটার তৈরী প্রক্রিয়াটা নিয়মিত দেখা হয়েছিল বাড়ি যা্ওয়া আসার পথে। প্রথমে নদীর একপাশ থেকে একদম অর্ধেক পর্যন্ত মাটি ফেলে ভরাট করে ফেলা হল। ফলে নদীর ভাটিতে ব্যাপকাকারে মাটি জমে যাওয়া শুরু হল। আমার সেতু নির্মাণ নিয়ে কোন ধারণা নেই। কিন্তু মনে হয় ঝুলন্ত সেতু হলে এমনটা হত না। মনে মনে সবসময় আশা করে এসেছি, সেতু হয়ে গেলে এই মাটি ড্রেজিং করে তুলে ফেলা হবে। তেমনটাই বলা হয়েছিল এই সেতুর নির্মাণের পক্ষে বলার সময়। কিন্তু তা আর হয় নি। ছবিগুলোয় দেখবেন নদীতে মাটি এখন কোন পর্যন্ত। এই অবস্থা শুধু যে ব্রীজের কারণে হয়েছে তা না। গত সাত আট বছর ধরে ধীরে ধীরে প্ল্যান করেই নদীর এজায়গাটা গলা টিপে ধরে মেরে ফেলা শুরু হয়েছে। সরকারীভাবে পার্ক বানানো হয়েছে, যে পার্কে মাছ চরে। মানে, নদী থাকাকালে যে সমস্ত মাছ ধরার আর পণ্য পরিবহনের নৌকা আর ট্রলার এখানে নোঙর ফেলত, সেগুলোর পার্কিং এর জায়গা এখন এই পার্ক। বিশেষ করে গত দু বছরে এই মেরে ফেলার প্রসেসটা খুব দ্রুত হওয়া শুরু করেছে। নদীতে বেশ কিছু খাল গিয়ে পড়েছে কিছু দূর পর পর। এগুলোতে নৌকা আর ট্রলার ঢুকতো এক বছর আগেও। এর অনেকগুলো গত ১৫,১৬ মাসের মধ্যে একদম ভরাট হয়ে শুকিয়ে গেছে। ঘাস জন্মে গেছে কতগুলোয়। আশপাশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে, আর প্রয়োজনীয় ড্রেজিংয়ের কোন কাজ কারবার চোখে পড়ছে না। যে কারবারটা চোখে পড়ছে সেটা হল দ্রুত নতুন নতুন জায়গায় বেড় দিয় ভরাটের কাজ, আর ভরাট হওয়া জায়গাগুলোয় দ্রুত টিনশেড ঘর বসানো।
কোন সাংবাদিক এই বিষয়টা নিয়ে একটা বিশদ খবর করলে ভালো হোত।
নিচের জিআইএফ ছবিটাতে গুগল আর্থের হিস্ট্রি থেকে ২০০০, ২০০৭, ২০০৮ আর ২০১৫ এর স্ক্রীন শট নিয়ে দেখানোর চেষ্টা করলাম কতটা আধপরাণ করে ফেলা হয়েছে নদীটাকে। পরপর চারটা ছবি দেখাবে, প্রথম দুটো পুরোন ব্রীজের সময়কার; একটা ব্রীজ করা শুরু হবার মাঝামাঝি সময়ের আরেকটা এই মার্চের। আসল ছবিগুলোও দিয়ে দিলাম। একসময় যেখানে পানি ছিল, সেখানে এখন ঘরবাড়ি। আরও অনেক ঘেটেঘুটে একটা বিস্তারিত লেখা দাঁড় করাবার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সময় হয় না। এটুকুতেই দিলাম। এখান থেকে কেউ উদ্যোগী হয়ে বিস্তারিত কিছু লেখেন, করেন সেটাই চাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪১