somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওরা একটুর জন্য বেঁচে গেলো সেদিন রাতে

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজও ভুলতে পারিনি। ভোলা যায় না। ভোলার কথা না। মাথা থেকে পা অব্দি ভিজেছিলাম। রাত তখন সাড়ে ১০টা থেকে ২টা। কালো আধার রাতের ভয়ংকর সে দৃর্শ্য। চোখের সামনে ভাসে এখনো। সবে দুপুর বেলা আমি যাত্রাপুর থেকে ডিংশিপাড়া যাচ্ছি। আকাশে মেঘ সাথে বাতাস। আর নিঃশব্দ পথচারীরা। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি ডিংশিপাড়ায় বোনের বাড়ী পৌছে গেলাম। নদী পাড় হয়ে। সাথে নিয়ে গেলাম কালো ভয়ংকর রাত্রি। আগে জানলে আমি হয়তো যেতাম না তাহলে ওরা ও আসতো না আমার বোনের বাড়ী। কিস্তু বুঝি নাই ওরা আমার পিছু নিয়েছিল নিঃশব্দ চারিণীর মতো অতি নীরবে।তারপর দুপুরের খাওয়া শেষ করলাম। বোনের হাতের রান্না খাওয়ার জন্য পাগল ছিলাম বলতে পারেন। আমার বোন নাম টুটু।আমার বড়। মাঝে মাঝে যাই তবে যাওয়ার আগে খাওয়ার ফরমায়েশ করতাম চিংড়ি নারকেলের দুধ দিয়ে,ভেড়ার মাংস,হাঁস, কাঁকড়া,দেশি মোড়গ,বিলের ছোট কুচি মাছ আরও কত কি যে। সেও নানান খাবার তৈরী করে রাখতো মনের আনন্দে। সবাই হাসি খুসি। কিন্তু সে রাত যে হবে কাল রাত্রি তা তো বুঝি নাই। একটু বিশ্রাম নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে বাহিরে গেলাম।ওখানে আবার সাঙ্গ-পাঙ্গ আছে অনেক।ওদের সাথে দেখা করতে হয়।খবর পৌছে গেছে সবার কানে আমি এসে গেছি। বাহিরের থেকে ডাকাডাকি শুরু। গ্রামে যেমন গলা ফ্যাইরা ডাকে। মামা আইছেন। বাহিরে ঘুরতে কিছুদূর গেলাম পাঁচ-ছয় জনা। বাতাসের গতি ধীরে ধীরে বাড়ছিল। সাথে বৃষ্টি কি মনে করে সবাই একটা পুরানো বাড়ীতে বসে গল্প করতে লাগলাম। তখন বিকাল ৪টা বাজে।বাতাসের বেগ বাড়তে আরম্ভ করলো। সাথে আঁধার করা কালো রাত্রি আসছে। সবাইকে বললাম যার যার বাড়ী যেতে সাবধানে, চলেও গেলো সবাই । আমি চলে এলাম বোনের বাড়ী। ঘরের সবাই এক স্থানে বসে ছিল।বড় চৌচালা টিনের ঘর।বাতাস সাই সাই বেগে তেড়ে আসছিল। নারিকেল-সুপারীর গাছ বেকে নুইয়ে পড়ছিল। কেরোসিনের বাতি বাতাসের কাছে হার মানছিল বারবার। হারিকেনের বাতিটা কোনো মতে টিকে ছিল জান নিয়ে। হঠাৎ হঠাৎ বিকট আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল গাছের ডাল-পালা ভেঙ্গে পরার।চৌচালা টিনের ঘরের উপড় বিকট শব্দে আছড়ে পড়ছিল মনে হচ্ছিল সব ঝড় বুঝি এখানে হচ্ছে।তখন রাত আটটার মতো। বাতাসের বেগ বেড়ে চলছিল ভয়ংকর গতিতে। আমরা সবাই তাড়াতাড়ি রাতের আহার শেষ করলাম।বাতাস যেন দৈত্যের মতো চলছিল বাহিরে।মুর মুর করে ভেঙ্গে পড়ছিল আশপাশের গাছপালা। চৌচালা বড় বাড়ীর উপড় এবার নজর পড়ল দৈত্যের । কোথা থেকে এসে হুড় মুড় করে ভেঙ্গে দিয়ে গেলো স্বপ্নের মতো সাজানো দীর্ঘ দিনের ঁেচৗচালা বাড়ীখানা। দৈত্যের তান্ডবে মুর্হূতে আমরা ভিতু সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম।খুটিগুলো ভেঙ্গে পড়তে লাগলো ,চালের টিন গুলো নিচের দিকে আসতে লাগলো,বেড়াগুলো খুলে যাচ্ছিল,তার মাঝে আমরা ছয় জন- আমি,বোন,বোনজামাই,তিন জন ভাগ্নে।কে কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।ধীরে ধীরে আমরা বাহিরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।বাহিরে আরো ভয়ংকর অবস্থা।কিছু দেখা যাচ্ছিল না।শুধু শব্দ আর বাতাস তান্ডব চালাছিল।মুর্হূ ঃ মুর্হূঃ গাছ দুমড়ানোর মোচড়ানোর শব্দ।ঐ রাতে রাজত্ব করছিল স্বৈরাচারীর মতো।হঠাৎ আমার বোনের মাথার উপর ভেঙ্গে পড়লো দরজার চৌকাঠের উপরের অংশটা কোলে ছোট ভাগ্নে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হারিকেনের আলোতে দেখা গেলো নাক থেকে গড় গড় করে রক্ত ঝড়ছিল। আমার কাছে একজন বোনজামাইর কাছে একজন।কি করবো।পথ নাই।সামনের রাস্তায় নারিকেল সুপারী আম জাম আরো অনেক গাছ পড়ে আছে।গ্রামে অনেক দূরে দূরে বাড়ী কোথায় যাবো কারে কাছে। ইতিমধ্যে চৌচালা সম্পূর্ণটা মিলে গেলো ভিটে মাটির সাথে।আমরা সবাই একবুক ভয় বুকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সামনের দিকে যাচ্ছি।রাত ১০টা।গাছ-পালা ডিঙ্গিয়ে সাবধানে সাবধানে ভিতু ভিতু পা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি নিরুদ্দেশ্যে।একজনের পিছনে একজন।আমি সবার আগে কোলে ভাগ্নে মাঝে বোন পিছনে বোনজামাই।পিপড়ারা যেমন সারি বেধে হেটে চলে আমরা তেমন চলছি ঝড়ো রাতে।ভয় দানা বাধতে ছিল এই বুঝি গাছ ভেঙ্গে পড়ে,এই পড়লো,এই পড়লো।বাতাস এসে ধাক্কা দিচ্ছে কখনো পিছন থেকে কখনো সামনে।সামনের বাড়ীতে আশ্রয় নিলাম।চারদিকে দেয়াল উপড়ে টিন দেয়া।ওরা বসে রেডিওর খবর শুনছিল। হঠাৎ আমাদের আগমনে ওরাও ভিতু হয়ে উঠলো।ওদের মনের ভিতরে কিসের ভয় ছিল সেটা তাজা হয়ে উঠলো চোখে মুখে।আমাদের বসতে দিল।বাচ্চাদের শুইয়ে দিলাম ওদের খাটে।আমরা নিচে বসে পড়লাম।একটু দম নিলাম।মনে মনে ভাবলাম একটু আশ্রয় পেলাম তো আপাততঃ।রেডিওর খবর কানের সরু গলি দিয়ে পর্দায় বারি দিচ্ছে আর ঢোলের মতো কেপে উঠছে।বাতাসের বেগ ঘন্টায় দু’শ আশি থেকে আরো বাড়তে পারে।রেডিওর কাঁপা কাঁপা কন্ঠ শোনা যাচ্ছিল।আমার ভয় ততক্ষণ ভেঙ্গে গেছে। আর কি আছে ভয়ের।যে পথ পাড়ি দিয়ে আসছি।সবাই আমরা ঝিমাচ্ছি তখন রাত ১২টার মতো।বাতাস বেড়ে চলছে তার নিজের গতিতে।বাতাস আরো বাড়ছে এক ছোবলে আমাদের মাথার উপরের টিন নিয়ে চলে গেলো চিলের মতো ছোঁ মেরে।নারিকেল গাছ ভেঙ্গে পড়লো দেয়ালোর উপড়।সুপারী গাছ ভাঙ্গছিল। আরো অনেক গাছ একে একে ভাঙ্গছিল কাল রাত্রি।বৃষ্টিতে সবাই আবার ভিজছিলাম।বাচ্চাদের এককোনে সাবধানে রেখে আমি ও এঘরের বড় ছেলে বের হলাম টিন উদ্ধারে। কিছু করার ছিল না।ঠাই নেয়ার জায়গা ছিল না।দুজন পারলাম না ।ওর মা বের হলো ।ওর বাবা বের হবে না ঘরের ভিতরে বৃষ্টিতে ভিজতেছিল বাহিরে বের হতে ভয় পাচ্ছিল সে।আমরা তিনজন টিন এনে দেয়ালের উপড় পেতে দিই তার উপড় লম্বা সুপারি গাছ তুলে উঠাই দু’টা।তখন সম্ভবত রাত ২টা। আমি রেডিওর খবর শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। এটা ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসের ১৪ তারিখে সিডরে কথা বলছি।হয়তো সে দিন মারা যেতে পারতাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:২১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×