বেশ ভালভাবেই কেটে যাচ্ছিল ক্যাম্পাসের দিনগুলো। নেহাল ভাইয়া প্রতি মাসে একবার করে ক্যাম্পাসে আসতেন প্রান্তির সাথে দেখা করতে। ওইদিনগুলোতে প্রান্তি অনেক খুশি থাকতো। আমরা উনার সাথে দেখা হলেই জিজ্ঞাসা করতাম
-আপনারদের বিয়ে কবে ভাইয়া , উনি উওর দিতেন
-নতুন চাকুরী, কিছুদিন যাক এদিকে প্রান্তির অনার্স শেষ হোক তারপর দেখা যাবে। আমরা উনার কথায় আশ্বস্ত হতাম।
একদিন ক্লাসে প্রান্তির মুখটা খুবই ভারি মনে হল। ক্লাশ শেষে জিজ্ঞাসা করলাম কিরে মন খারাপ নাকি? প্রান্তি নিজেকে সামলাতে পারলো না হাউমাউ করে কেঁদে দিল। আমরা অবাক হলাম হঠাৎ করে কি হল? আবার শরীর খারাপ হল নাতো? এসব প্রশ্নের উওর প্রান্তি নিজেই দিল।
-নিহাল বিয়ে করে ফেলেছে। আমরা অবাক হলাম, প্রান্তির ভয়াবহ সময়গুলোতে যে মানুষটি এতটা সাপোর্ট দিয়েছিল আর আজ সেই মানুষটাই এমন করলো! আর একটা ভাবনা আমাদের মাথায় এলো, নিহাল ভাই ফ্যামিলির একমাত্র ছেলে, হয়তো উনার ফ্যামিলি চাইনি একটা ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়ের সাথে নিহাল ভাইয়ার বিয়ে হোক। মরণব্যাধিকে যে মেয়েটি হাসিমুখে জয় করেছে তার চোখেই আজ পানি, বিষয়টি মানতে আমাদের কষ্ট হচ্ছিল। মরণব্যাধীর সাথে যুদ্ধকরা একজন বীর যোদ্ধার চোখে আসলে পানি মানায় না।
ক্লাশ পড়াশুনা আড্ডা এভাবেই কেটে যাচ্ছিল সময়। একসময় আমাদের অনার্স, মাষ্টার্স পরিক্ষা শেষ হয়ে গেল। আমরা সবাই ক্যাম্পাসকে বিদায় জানিয়ে জীবিকার তাগিদে বের হয়ে গেলাম। ইতিমধ্যে মোবাইল ফোনের আগমন ঘটেছে তাই প্রান্তিসহ অন্য বন্ধুদের সাথে মোবাইল ফোনে মাঝেমধ্যে যোগাযোগ হয়। এরই মধ্যে প্রান্তি একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে বেশ ভাল একটা চাকুরী পেয়ে গেল। একদিন আমরা একটা গেটটুগেদার আয়োজন করি, সব পুরানো বন্ধুদের সাথে আবার দেখা হয়। ভালবাসার মানুষগুলোকে আবার কাছে পাওয়ার আনন্দই আলাদা। সেদিন দারুণ মজা হল, প্রান্তি এখনো সেই আগের মতই সুন্দর, তবে কথাবার্তা চালচলনে আগের চেয়ে অনেকবেশী স্মার্ট। ওর বাসায় আমাদের দাওয়াত দিলো। একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে প্রান্তি আর ওর ছোট ভাই একসাথে থাকে। অবশ্য কোনদিন যাওয়া হয়নি প্রান্তির বাসায়।
একদিন প্রান্তি ফোন করে একটি অবাক করা তথ্য দিল, আগামী সপ্তাহে তার বিয়ে। ফেসবুকের ইনবক্সে বরের ছবিও দিয়ে দিলো। আমি জিজ্ঞাস করলাম তোর অসুখের কথাকি জানে?
-বললো হ্যা আমি সবই জানিয়েছি। জেনে শুনেই বিয়েতে রাজী হয়েছে। আমার বিস্ময় আরো বেড়ে গেল, একজন ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়েকে বিয়ে করার মত মানুষ এই দুনিয়াতে আছে? বিয়েতে বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র আমিই গিয়েছিলাম। অনেক ধুমধাম করে প্রান্তির বিয়ে হয়ে গেল। এখন ফেসবুকে বরের সাথে সুন্দর সুন্দর মুহুর্তের ছবি আপলোড করে।
প্রান্তি এখন সুখে আছে, সংসার, চাকুরীর পাশাপাশি মরণব্যাধী ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। গত ১৫ বছর ধরে প্রান্তির এই সংগ্রাম চলছে অবিরাম। ক্রিকেটার যুবরাজ সিংয়ের মত প্রান্তিও একজন বীর যোদ্ধার নাম, মরণব্যাধি ক্যান্সার যার কাছে পরাজিত।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:২৩