-জীবনে কত শখ ছিল ছেলে বিয়ে দিবো ঘরে ফুটফুটে নাতি আসবে, হাসবে খেলবে সারা ঘর মাতিয়ে রাখবে। কিন্তু ছেলেটা নিজের পছন্দে সমবয়সী মেয়ে বিয়ে করলো। এখন বাচ্চা হচ্ছে না,আমার মেধাবী ছেলেটা কি দেখে যে এমন বউ ঘরে আনলো বুঝি না।
অনুদের গ্রামের বাড়ির উঠানের পাশে একটা আম গাছ ছিল, একদিন অনুর দাদু গাছটি বিক্রি করে দিলেন, অনু দাদুকে সেদিন বলেছিল
-দাদু গাছটি আমাদের আম না দিক ছায়াতো দেয় কেটে ফেলার দরকার কি?দাদু সেদিন বলেছিলেন
-গাছটি বেশী জায়গা দখল করে আছে। এই জায়গায় আমরা যদি একটি নতুন উন্নত জাতের আম গাছ লাগাই তবে তাড়াতাড়ি আমও খেতে পারবো আবার এত জায়গাও দখল করবে না। অনুর আজ কেন যেন সেই নিস্ফলা আম গাছটার কথা মনে পড়ছে।
পৃথিবীর প্রতিটি মেয়ের মত অনুও চায় মা হতে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা মনে হয় একজন মানুষকে একজীবনে সব কিছু দেন না। মফস্বল থেকে উঠে এসে নামি বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়াশুনা করেছে অনু , ক্লাশের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রটির সাথে তার বিয়ে হয়েছে,রাসেল এখন অনেক বড় সরকারি কর্মকর্তা। অনু নিজেও খুব ভাল একটা প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা। স্টুডেন্ট লাইফে অনু আর রাসেলের জুটি অনেকেরই হিংসার কারণ ছিল। ওরা দুজন ক্লাশের অন্যদের থেকে সবদিক থেকেই এগিয়ে ছিল। অথচ আজ অনুর কাছে সবকিছুই অসহ্য লাগে আরো অসহ্য লাগে যখন অনুকে একটু হাসি খুশি দেখলেই কেউ জিজ্ঞাসা করে
-কি এত খুশি কেন? নতুন কোন খবর আছে নাকি? সব মানুষের ভাবনা এমন
যে মেয়ের বাচ্চা হয় না তার হাসতে নেই। পৃথিবী কত রং রুপ, পৃথিবীতে সব মানুষ কতই না সুখে আছে অনুর মনে হয় সে একাই অসুখী মানুষ। পৃথিবীর সব মানুষকে নিজের শত্রু মনে হয়,পৃথিবীর মানুষেরা তাকে এমন একটি বিষয় নিয়ে দোষ দেয় যে বিষয়ে তার নিজের কোন হাত নেই। দেশে বিদেশে কোন ডাক্তার বাদ দেয়নি অনু কিন্তু কোন লাভ হয়নি। মানুষের কাছে এরচেয়ে বেশী আর কিই বা করার আছ?
উপরোক্ত ঘটনাটি গল্পের আকারে বললেও এমন ঘটনা আমাদের সমাজে আজও অহরহ ঘটছে। একটি মেয়ের মা হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণই নিয়তির হাতে, শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই বিষয়টি বুঝে। একজন মেয়ের মা হতে না পারার কষ্ট মেয়েটি ছাড়া কেউই বুঝতে পারে না। এই বিষয়ে যদি তাকে দোষারোপ করে একটি কথাও তাকে বলা হয় তবে মেয়েটি কি পরিমাণ কষ্ট পেতে পারে তা আমাদের উপলব্ধি করা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:১৫