-ভদ্র মহিলাদের বয়স জিজ্ঞাস করতে হয় না এটা কি জানো না?
ম্যাডাম প্রতিদিন খুব সুন্দর সেজে গুজে ক্লাশে আসতেন। ক্লাসের অনেকেই কারনে অকারনে ম্যাডামের মন জয় করার জন্য অহেতুক প্রশংসা করতো,যেমন :
ম্যাডামের একটা কলাম ইনকিলাব এ ছাপা হয়েছিল সেটা আমরা জানতামও না, একদিন ম্যাডামই বললেন
-আমার একটা লেখা ইনকিলাব এ ছাপা হয়েছে তোমরা পড়েছো? আমাদের এক বন্ধু বলে উঠলো
-আপনার লেখা পড়ার জন্য হলের পেপার রুমে গিয়ে দেখি ছাত্রদের মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে , তাই আমি পড়ার সুযোগই পায়নি। আমার রুমমেট পড়েছে,ও বলেছে ও নাকি জীবনেও এত সুন্দর লেখা পড়েনি। বুঝুন তেল দেওয়ার মাত্রাটা? ম্যাডামও বুঝতেন তাকে তেল মারা হচ্ছে তবুও তিনি খুশিই হতেন আসলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই নিজের প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে ম্যাডামও এর ব্যতিক্রম নন।
একদিন ম্যাডামের রুমে দেখলাম নতুন বইয়ের বিশাল গাট্টি। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানতে পারলাম ম্যাডামের কবিতার বই বের হয়েছে। সেদিন ক্লাশে এসে ম্যাডাম বললেন তোমরাতো অনেকেই আমার লেখার ভক্ত তাই তোমাদের জন্য আমার কবিতার বই নিয়ে আসলাম। সবাই ১৫০টাকা বের কর। সবার মুখ শুকিয়ে গেল। ম্যাডাম মুচকি মুচকি হাসছেন। এই হাসির অর্থ তোমরা চল ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায়। সেদিন থেকেই ম্যাডাম বিভিন্ন ইয়ারের ছাত্রদের কাছে উনার বই পুশিং সেল শুরু করলেন।আমরা অনেকেই বিরক্ত ছিলাম ম্যাডামের এই কাজে। ম্যাডাম ছাত্রছাত্রীদের লিস্ট করা শুরু করলেন কে কে উনার বই কিনছে তাদের। অনেকেই বাধ্য হয়ে আবার অনেকেই তোষামোদ করার জন্য ম্যাডামের কবিতার বই কিনেছিল।
সেদিন ম্যাডামের এই পুশিং সেলের কারণে বিরক্ত হয়েছিলাম। আজ মনে হয় ম্যাডামতো ঠিকই করেছিলেন, ম্যাডাম এত কষ্ট করে একটা বই লিখেছিলেন। কবিতার বইয়ের বাজার এমনিতেই খারাপ, কেউ কবিতা পড়তে চায় না, তার উপর আমরা ছাত্ররাও যদি উনার বই না কিনি তাহলে উনি কার কাছে বেচবেন উনার বই? ম্যাডাম আজ পৃথিবীতে নেই আল্লাহ ওনাকে বেহেশত নসীব করুণ।
এবারের বইমেলায় যেসব কবিদের কবিতার বই বেরিয়েছে তাদের জন্য শুভকামনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৬