somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তারেক_মাহমুদ
আমি লেখক নই, মাঝে মাঝে নিজের মনের ভাবনাগুলো লিখতে ভাল লাগে। যা মনে আসে তাই লিখি,নিজের ভাললাগার জন্য লিখি। বর্তমানের এই ভাবনাগুলোর সাথে ভবিষ্যতের আমাকে মেলানোর জন্যই এই টুকটাক লেখালেখি।

ছোটগল্প: কম্প্রোমাইজ

১৫ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ এক একজন অভিনেতা/অভিনেত্রী। সমাজের সামনে বন্ধুদের সামনে আমরা দেখাতে চাই, দেখো দেখো আমি কত সুখে আছি! বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছি আর হ্যাপি হ্যাপি চেহারার ছবিগুলো ফেসবুকে আপলোড করছি। এই হ্যাপি চেহারার পেছনে কত কান্না, কত কষ্ট লুকিয়ে আছে তার খোজ কতজনই বা রাখে?

নুসরাত রহমান প্রাচুর্য্যের মাঝে বড় হওয়া একটি সুন্দরি ও শিক্ষিতা মেয়ে। বাবা সমাজের উঁচু তলার মানুষ। বাংলা, হিন্দি,ইংরেজি,উর্দু এই চারটি ভাষার উপর সমান দখল রয়েছে নুসরাত রহমানের। নুসরাতের বিয়ে হয়েছে বিশিষ্ট শিল্পপতি শামীম রহমানের সাথে। নুসরাত এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জননী। তাছাড়া বাবার একটি প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর এবং এমডির দায়িত্ব একই সাথে পালন করছেন। নুসরাতের যোগদানের পর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা ফুলে ফেপে  উঠেছে।নুসরাতের স্বামী শামীম রহমানের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী।  মাঝখানে কিছুটা মন্দাভাব থাকলেও বর্তমানে উনার ব্যবসা বেশ ভাল। কিছুদিন আগে শামীম সাহেব সি আই পি উপাধি পেয়েছেন। বেশ কয়েকবার প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ সফর করে এসেছেন তিনি।মোটকথা সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বলতে যা বোঝায় তার সবই আছে নুসরাত রহমানের কাছে।

শামীম রহমানের ব্যবসায়িক মস্তিষ্ক খুবই প্রখর।নিজের ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি তিনি স্ত্রীর পরিচালিত ব্যবসায়ও নাক গলান। অনেকটা বাধ্য হয়েই শ্বশুর মশাই শামীমকে কোম্পানির উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এজন্য নুসরাতের কোম্পানি থেকে দশ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয় শামীমকে। বিয়ের প্রথম তিন বছর খুব সুখেই কাটছিল নুসরাতের। শামীম যেমন শিক্ষিত তেমনি বুদ্ধিমান। শামীমের মুল ব্যবসা গার্মেন্টস  হলেও ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি,এবং পোল্ট্রি ফিডের ব্যবসাও রয়েছে তাদের। সবগুলো ব্যবসা খুবই শক্ত হাতে পরিচালনা করেন শামীম সাহেব। কোম্পানি যেকোনো অসন্তোষ মেটানো শামীমের এক ধমকের ব্যাপার মাত্র। কোম্পানির কর্মচারীরা সবসময় শামীমের ভয়ে তটস্থ থাকেন। কোম্পানির কর্মচারীদের মানুষ ভাবতে শামীমের আপত্তি আছে।

সবগুলো প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে শামীমের একজনই প্রিয় মানুষ আছেন, উনি কোম্পানির জিএম সাহেব। এই লোকটাকে বেশ কয়েকটি কারনে পছন্দ করেন শামীম সাহেব। তিনি সবকিছুর চেয়ে মালিকের স্বার্থকেই বড় করে দেখেন, জিএম সাহেব আসার পর থেকে শামীমের ব্যবসায় অনেক  উন্নতি হয়েছে। এছাড়া তিনি শামীম রহমানের বিনোদনের বিষয়টিও খেয়াল রাখেন। জি এম সাহেব আসার পর থেকে কোম্পানিতে সুন্দরী মেয়েদের আনাগোনা বেড়ে গেছে।

শামীম সাহেবের অফিসটি খুবই পরিপাটি, সামনে খোলা জায়গা, দেশি বিদেশী নানা জাতের ফুল এবং ফলের গাছ লাগিয়েছেন তিনি। অফিসটিতে একবার ঢুকলে যেকারো মন ভাল হয়ে যাবে।আর সুন্দর অফিসটির শোভা বর্ধন করেছে সুন্দরী এবং স্মার্ট মেয়েরা। অফিসে ঢুকতেই সুন্দরী রিসিপশনিষ্ট তার লিপিস্টিক মাখা ঠোটে মুচকি হেসে সবাইকে অভ্যর্থনা জানায়।  এরপর প্রতিটি ডেস্কের শোভাবর্ধন করে চলেছে সুন্দরি মেয়েরা। কেউ ল্যাপটপ, কেউ ডেস্কটপ নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন। অল্প কিছু স্মার্ট ছেলেও আছে কয়েকটি ডেস্কে। ছেলেগুলো মোটামুটি ফিক্সড, কিন্তু মেয়েদের চাকুরী ফিক্সড নয়। প্রতিমাসেই নতুন নতুন মেয়ে আসছেন, আবার অনেকেই ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

কোম্পানির নিয়োগ পত্র দেওয়ার সময় জি এম সাহেব সবাইকে বলে দেন ,
-কোম্পানির প্রয়োজনে দেশে এবং দেশের বাইরে চেয়ারম্যান স্যারের সাথে যেতে হতে পারে, আপনি কি রাজী আছেন?
যারা রাজী হন শুধুমাত্র তারাই নিয়োগ পান। অনেকে মোটা স্যালারীর লোভেও রাজী হন, পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে চাকুরী ছেড়ে চলে যান। যারা শামীম সাহেবকে খুশি করতে পারেন তারাই শুধুমাত্র থেকে যায়, বাকীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই চাকুরী ছেড়ে চলে যায়।


নুসরাত প্রথম দিকে শামীমকে দেবতা ভাবতো,কিন্তু বিয়ের বছর দুয়েকের মধ্যেই বুঝতে পারে শামীমের আসল চরিত্র। কিন্তু ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে নুসরাতকে চুপ করে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। এই বিষয়টি নিয়ে অনেকবারই শামীমের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে নুসরাতের, কিন্তু নুসরাতকেই হার মানতে হয়েছে বার বার। শামীম রেগে গেলে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেন।


গুলশান ক্লাব, ঢাকা ক্লাবের মত অভিজাত এলাকাগুলোতে নিয়মিতই যাতায়াত রয়েছে শামীমের। এখানে সমাজের উঁচু স্তরের মানুষের সাথে উঠাবসা তার। মদ নারীসহ সব ধরনের বদ অভ্যাস শামীমের নিত্যসঙ্গী। এখানে নুসরাতের কিছুই করার নেই, সমাজেই সবাই জানে নুসরাত এবং শামীম সুখী দম্পতি । বড় বড় পার্টিগুলোতে শামীম ও নুসরাত হাসি মুখের ছবি দেখা যায়। কিন্তু এই হাসির আড়ালের কান্নাগুলো কেউ দেখতে পায়না। শামীম বছরের বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থাকে অফিসের কাজের নাম করে। এই সময়গুলো ছেলেমেয়েদের এবং নিজের ব্যবসা নিয়েই কেটে যায় নুসরাতের। এভাবেই কম্প্রোমাইজ করেই কেটে যাচ্ছে নুসরাতের জীবন।

উৎসর্গ: কাওসার ভাইয়ের একটি গল্প থেকেই এই গল্পের আইডিয়া পেয়েছি,তাই কাওসার চৌধুরী ভাইকেই উৎসর্গ করলাম।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৭
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×