নুসরাত রহমান প্রাচুর্য্যের মাঝে বড় হওয়া একটি সুন্দরি ও শিক্ষিতা মেয়ে। বাবা সমাজের উঁচু তলার মানুষ। বাংলা, হিন্দি,ইংরেজি,উর্দু এই চারটি ভাষার উপর সমান দখল রয়েছে নুসরাত রহমানের। নুসরাতের বিয়ে হয়েছে বিশিষ্ট শিল্পপতি শামীম রহমানের সাথে। নুসরাত এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জননী। তাছাড়া বাবার একটি প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর এবং এমডির দায়িত্ব একই সাথে পালন করছেন। নুসরাতের যোগদানের পর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা ফুলে ফেপে উঠেছে।নুসরাতের স্বামী শামীম রহমানের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। মাঝখানে কিছুটা মন্দাভাব থাকলেও বর্তমানে উনার ব্যবসা বেশ ভাল। কিছুদিন আগে শামীম সাহেব সি আই পি উপাধি পেয়েছেন। বেশ কয়েকবার প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ সফর করে এসেছেন তিনি।মোটকথা সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বলতে যা বোঝায় তার সবই আছে নুসরাত রহমানের কাছে।
শামীম রহমানের ব্যবসায়িক মস্তিষ্ক খুবই প্রখর।নিজের ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি তিনি স্ত্রীর পরিচালিত ব্যবসায়ও নাক গলান। অনেকটা বাধ্য হয়েই শ্বশুর মশাই শামীমকে কোম্পানির উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এজন্য নুসরাতের কোম্পানি থেকে দশ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয় শামীমকে। বিয়ের প্রথম তিন বছর খুব সুখেই কাটছিল নুসরাতের। শামীম যেমন শিক্ষিত তেমনি বুদ্ধিমান। শামীমের মুল ব্যবসা গার্মেন্টস হলেও ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি,এবং পোল্ট্রি ফিডের ব্যবসাও রয়েছে তাদের। সবগুলো ব্যবসা খুবই শক্ত হাতে পরিচালনা করেন শামীম সাহেব। কোম্পানি যেকোনো অসন্তোষ মেটানো শামীমের এক ধমকের ব্যাপার মাত্র। কোম্পানির কর্মচারীরা সবসময় শামীমের ভয়ে তটস্থ থাকেন। কোম্পানির কর্মচারীদের মানুষ ভাবতে শামীমের আপত্তি আছে।
সবগুলো প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে শামীমের একজনই প্রিয় মানুষ আছেন, উনি কোম্পানির জিএম সাহেব। এই লোকটাকে বেশ কয়েকটি কারনে পছন্দ করেন শামীম সাহেব। তিনি সবকিছুর চেয়ে মালিকের স্বার্থকেই বড় করে দেখেন, জিএম সাহেব আসার পর থেকে শামীমের ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয়েছে। এছাড়া তিনি শামীম রহমানের বিনোদনের বিষয়টিও খেয়াল রাখেন। জি এম সাহেব আসার পর থেকে কোম্পানিতে সুন্দরী মেয়েদের আনাগোনা বেড়ে গেছে।
শামীম সাহেবের অফিসটি খুবই পরিপাটি, সামনে খোলা জায়গা, দেশি বিদেশী নানা জাতের ফুল এবং ফলের গাছ লাগিয়েছেন তিনি। অফিসটিতে একবার ঢুকলে যেকারো মন ভাল হয়ে যাবে।আর সুন্দর অফিসটির শোভা বর্ধন করেছে সুন্দরী এবং স্মার্ট মেয়েরা। অফিসে ঢুকতেই সুন্দরী রিসিপশনিষ্ট তার লিপিস্টিক মাখা ঠোটে মুচকি হেসে সবাইকে অভ্যর্থনা জানায়। এরপর প্রতিটি ডেস্কের শোভাবর্ধন করে চলেছে সুন্দরি মেয়েরা। কেউ ল্যাপটপ, কেউ ডেস্কটপ নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন। অল্প কিছু স্মার্ট ছেলেও আছে কয়েকটি ডেস্কে। ছেলেগুলো মোটামুটি ফিক্সড, কিন্তু মেয়েদের চাকুরী ফিক্সড নয়। প্রতিমাসেই নতুন নতুন মেয়ে আসছেন, আবার অনেকেই ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
কোম্পানির নিয়োগ পত্র দেওয়ার সময় জি এম সাহেব সবাইকে বলে দেন ,
-কোম্পানির প্রয়োজনে দেশে এবং দেশের বাইরে চেয়ারম্যান স্যারের সাথে যেতে হতে পারে, আপনি কি রাজী আছেন?
যারা রাজী হন শুধুমাত্র তারাই নিয়োগ পান। অনেকে মোটা স্যালারীর লোভেও রাজী হন, পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে চাকুরী ছেড়ে চলে যান। যারা শামীম সাহেবকে খুশি করতে পারেন তারাই শুধুমাত্র থেকে যায়, বাকীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই চাকুরী ছেড়ে চলে যায়।
নুসরাত প্রথম দিকে শামীমকে দেবতা ভাবতো,কিন্তু বিয়ের বছর দুয়েকের মধ্যেই বুঝতে পারে শামীমের আসল চরিত্র। কিন্তু ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে নুসরাতকে চুপ করে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। এই বিষয়টি নিয়ে অনেকবারই শামীমের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে নুসরাতের, কিন্তু নুসরাতকেই হার মানতে হয়েছে বার বার। শামীম রেগে গেলে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেন।
গুলশান ক্লাব, ঢাকা ক্লাবের মত অভিজাত এলাকাগুলোতে নিয়মিতই যাতায়াত রয়েছে শামীমের। এখানে সমাজের উঁচু স্তরের মানুষের সাথে উঠাবসা তার। মদ নারীসহ সব ধরনের বদ অভ্যাস শামীমের নিত্যসঙ্গী। এখানে নুসরাতের কিছুই করার নেই, সমাজেই সবাই জানে নুসরাত এবং শামীম সুখী দম্পতি । বড় বড় পার্টিগুলোতে শামীম ও নুসরাত হাসি মুখের ছবি দেখা যায়। কিন্তু এই হাসির আড়ালের কান্নাগুলো কেউ দেখতে পায়না। শামীম বছরের বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থাকে অফিসের কাজের নাম করে। এই সময়গুলো ছেলেমেয়েদের এবং নিজের ব্যবসা নিয়েই কেটে যায় নুসরাতের। এভাবেই কম্প্রোমাইজ করেই কেটে যাচ্ছে নুসরাতের জীবন।
উৎসর্গ: কাওসার ভাইয়ের একটি গল্প থেকেই এই গল্পের আইডিয়া পেয়েছি,তাই কাওসার চৌধুরী ভাইকেই উৎসর্গ করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৭