ছোটবেলা আমার কাছে রোজার প্রধান আকর্ষণ ছিল ইফতার এখনো তাই। পৃথিবীর আর কোন খাবারের সাথে ইফতারির তুলনা হয় না। অন্য সময় যত ভাল খাবারই খাই না কেন, সবকিছুর চেয়ে রোজার মাসের ইফতারের ছোলা মুড়ি, শরবত খেজুরকে আমার কাছে সেরা মনে হয়। ছেলেবেলায় ডাইনিং টেবিলে না বসে আমরা ফ্লোরে চাদর বিছিয়ে ইফতার করতে বসতাম। আমার আব্বা বলতো নিচে দস্তরখানা বিছিয়ে ইফতার করলে বেশি ছওয়াব পাওয়া যায়। নানারকম ভাজাপোড়া আইটেম থাকতো ইফতারিতে,সাথে ছোলা মুড়ি । দারুণ মজা করে খেতাম সেসব ইফতারি। আমি ছোট ছিলাম তাই রোজা রাখতাম না, কিন্তু ইফতারি সময় পাঞ্জাবি টুপি পরে আগে আগে বসে পড়তাম। আব্বা বলতেন ইফতারি খেলেও অনেক ছওয়াব পাওয়া যায়,তাই অন্যরা সবাই রোজা রেখে ছওয়াব কামাই করতো আর আমি মজা করে ইফতারি খেয়ে ছওয়াব হাসিল করতাম।
রাতে আব্বার হাত ধরে তারাবি নামাজ পড়তে যেতাম। মসজিদে গেলেই অনেক বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে যেতো। নামাজ পড়ার পাশাপাশি মসজিদের বারান্দায় দুষ্টুমিও করতাম,এজন্য বড়দের কাছে বকাও খেতে হতো মাঝেমাঝে। আট রাকাত তারাবি পড়ে আহালে হাদিসের লোকেদের সাথে বাসায় চলে আসতাম। সে সময় সাড়ে আটটায় বিটিভিতে আলিফ লাইলা, নাটক, টিপু সুলতানসহ অন্যান্য আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলো প্রচারিত হতো,সেগুলো দেখার জন্যই এত তাড়াহুড়ো।
আমি ছোট ছিলাম তাই সেহেরিতে আমাকে ডাকা হতো না। তখন সেহেরি নিয়ে আমার কল্পনা ছিল অন্যরকম ,মনে করতাম সেহেরিও ইফতারির মত মজাদার কিছু। একদিন আম্মাকে আগেই বলে রেখেছিলাম আজ আমি সেহেরি খাবোই খাবো। সেহেরিতে ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই আউসের চাউলের ফেনাভাত সাথে আলু বেগুন ভর্তা, ডিম ভাজি, দুধ, দিয়ে সেহেরি করছে দেখে আমি খুবই হতাশ হলাম। সেহেরিকে কত মজার ভেবেছিলাম, এতো খুবই সাধারণ খাবার। এখনো আমাদের বাড়িতে সেহেরিতে আলুবেগুন ভর্তা দিয়ে আউসের চালের গরম ফেনাভাত খাওয়ার প্রচলন আছে। সেহেরিতে মাছ মাংসের চেয়ে এই খাবারটাকে এখনও আমার কাছে অমৃত মনে হয়। রোজার এই একমাস আম্মার ঘুমের খুবই ব্যাঘাত হয় সবসময় ,সেই দুটোর সময় উঠে ভাত রান্না করে ভর্তা বানিয়ে তবেই সবাইকে ডাকে দেন। আসলে মা'দের পরিশ্রম সারাজীবনের, যার কোন পারিশ্রমিক নেই।আর রোজার মাসের পরিশ্রম অনেক বেশি।
রোজার মাস হোক প্রকৃতই সংযমের,রোজায় খাবারের কথা বেশি না ভেবে ইবাদতে মনোনিবেশ করা উচিত। সবার রোজা আল্লাহর দরবারে কবুল হোক এটাই প্রত্যাশা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩২